Ajker Patrika

এনসিপিকে বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সায়ান বললেন, রাজাকারের খালাস উদ্‌যাপন করে আমাদের ভোট চান?

অনলাইন ডেস্ক
সংগীতশিল্পী ও অ্যাকটিভিস্ট ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। ছবি: সংগৃহীত
সংগীতশিল্পী ও অ্যাকটিভিস্ট ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। ছবি: সংগৃহীত

মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির এই অ্যাকটিভিস্ট এনসিপিকে বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘রাজাকারের “বেকসুর খালাস” উদ্‌যাপন করে আমাদের ভোট চান?’

আজ বুধবার বেলা ১টায় (২৮ মে) দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ওই পোস্টে সায়ান লেখেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোলাকুলি করে “ভোটের রাজনীতি” করতে গিয়ে এই দেশে কিছুদিন আগেই একটা বড় দলের ত্রাহি মধুসূদন দশা হয়েছিল। আওয়ামী এমন নতুন ধারাবাহিক-গুরুতর পাপকর্ম করেছে দেশের মানুষের বিপক্ষে, যে সেই দলের গুরু-পাপকে ভুলিয়ে দিয়েছে প্রায়। নতুন দল এনসিপির সার্জিসরা, হাসনাতরা প্রথম থেকেই তাদের রাজনীতি পরিষ্কার করে দিয়েছে। ধন্যবাদ। সেই হিসেবে দেশের মানুষের, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অনেক সুবিধা হলো। দিনের শেষে ভোটেই তো দাঁড়াতে হবে আপনাদের। জামায়াতকে বুকের সাথে আগলে রেখে, রাজাকারের “বেকসুর খালাসকে” উদ্‌যাপন করে আপনারা আমাদের ভোট চান? বিবেকবান স্বাভাবিক সাধারণ মানুষের?’

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘একাত্তরের পরে জন্মেছি বলে কি জামায়াত চিনি না? আলবদর চিনি না? বীরাঙ্গনার ব্যথা বুঝি না?? এই দেশের ছোট ছোট বাচ্চারা ইতিহাসবিদদের মতন দিন-তারিখের রেফারেন্স দিয়ে জামায়াতের জন্ম ইতিহাস বলতে পারবে না হয়তো। কিন্তু জামায়াত কি, তাদের আদর্শ কি, তারা এই দেশের মানুষকে নিয়ে কি করতে চায়—তা আজকে সকালে জন্ম নেওয়া বাচ্চাটাও কালকে বিকেলের মধ্যে শিখে যায়।’

এনসিপির সমালোচনা করে সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান লিখেছেন, ‘এনসিপি যে এই জায়গাটা ধরতে পারে নাই, তা তাদের বুদ্ধিমত্তার নির্দেশক। তারা নতুন দেশ গড়ার কথা বলে নিজেদের ভোটের জন্য জামায়াতকে বুকে টেনেছে বলে মনে হয়। আবার তাদের আরেকটি সঞ্চয় হলো ‘আওয়ামী-ঘৃণা’। আজকে দেশে অনেক অন্যায় ঘটছে। তাদের সেসবে হেলদোল নাই। কিন্তু জামায়াত আর আলবদরকে ভালোবাসায় তারা আগুয়ান। ধন্যবাদ এই স্বচ্ছতার জন্য।’

এ ছাড়া ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রতি মুহূর্তে নিজের রাজনীতিকে পরিবর্তন করার পক্ষে। আজকে যাকে ভালো লাগছে, কালকে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করি না, মাটির প্রশ্নে। সেই হিসেবে আমার রাজনৈতিক-ঈমান খুব তরল এবং সেটাই আমি চাই। নাহিদরা যখন বুক পেতে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল গত জুলাইতে, ওদের জন্য ভালোবাসা ছিল, সমর্থন ছিল। সেদিন সেটাই ছিল আমার রাজনীতি। ওদের সেই মৃত্যুর মুখে দাঁড়ানো, সেটাকে সেই সময়ের সত্যিকারের দেশপ্রেম, আর মানুষ-প্রেম, মাটি-প্রেম মনে হয়েছিল। তার জন্য আমি একটুও দুঃখিত হবো না কোনো দিন। আমার সেই দিনের সমর্থনের জন্য আমি কোনো দিন অনুতপ্ত হবো না। নেভার!’

ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান লিখেছেন, ‘কিন্তু গত কয়েক মাসের তাদের অনেক আচরণ, অনেক কিছু দেখতে দেখতে দেখছি, আজকে সেই একই দলের ছেলে-মেয়েরা যে আজহারের বেকসুর খালাসকে উদ্‌যাপন করল, আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমর্থন করল, (এমনকি লজ্জায় বা কৌশলে চুপ করে থাকল না, প্রকাশ্যে সমর্থন করল), আর নাদিরা ইয়াসমিনের অন্যায়ভাবে বদলির বিরুদ্ধে একটা কথাও বললো না, এই দেশের একজন মানুষ হিসেবে এটাই আমার আপাতত রাজনীতি, এরপর এই নতুন দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আজকে থেকে বর্জন করলাম। এইটুকু করার কথা ভেবেই নিজের অশান্ত মনকে আমি খানিকটা শান্তি দিতে পারছি। আগামী নির্বাচনে আমি এনসিপি, জামায়াত, এই সমমনা দলগুলোকে ভোট নিজে তো দেবই না এবং মানুষকে অনুরোধ করব, যেন তারা এই দলগুলো থেকে দূরে থাকেন। একজন একক ব্যক্তি হিসেবে এটাই আমার সাধ্য।’

ইংরেজিতে তিনি আরও লিখেছেন, আই উইল নেভার সাপোর্ট এনসিপি (আমি কখনো এনসিপিকে সমর্থন করব না)!

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ যেকোনো অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। তিনি গান-কবিতার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এ ছাড়া রাজপথেও তিনি থাকেন সামনের সারিতে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সোচ্চার ছিলেন সায়ান। পরবর্তী সময়েও অন্যায়-অবিচারে নিজের প্রতিবাদ থামিয়ে রাখেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত