Ajker Patrika

আইনগত বাধা যেহেতু নেই, তাই এনসিপিকে শাপলা দিতে হবে: সারজিস

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহে জেলা এনসিপির সমন্বয় সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহে জেলা এনসিপির সমন্বয় সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আইনগত বাধা যেহেতু নেই, তাই এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মহানগরীর তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে জেলা এনসিপির সমন্বয় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সারজিস আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ও সচিবের কথা শুনে মনে হয়েছে যে, শাপলা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকা না থাকা সেগুলো তাদের কাছে কোনো বিষয় না, সেটা তাদের মন-মর্জির ওপর নির্ভর করে।’

সারজিস আরও বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থেকে মন-মর্জিমতো চলার স্বেচ্ছাচারিতা করার যে আচরণ, এটা আমরা প্রত্যাশা করি না এবং মেনে নেব না।

‘আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাই, তারা জনগণের মুখাপেক্ষী নাকি ক্ষমতায় কাল্পনিকভাবে আসতে চাচ্ছে—এমন দলের মুখাপেক্ষী। না কোনো অস্ত্রের ভয়ে প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সির মুখাপেক্ষী—এ জবাব তাদের দিতে হবে। আইনগত বাধা যেহেতু নেই, তাই নির্বাচন কমিশনকে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে হবে।’

জোট গঠনের প্রসঙ্গে এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘কয়েকটা সিটের জন্য এনসিপি কারও সঙ্গে ঐক্য করবে—সেই নীতি বিশ্বাস করে না। এক বা একাধিক রাজনৈতিক দল যদি তাদের জায়গা থেকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে পরিবর্তনের জন্য প্রতিজ্ঞা করে সেই অনুযায়ী কাজ করে, তখন আমরা ঐক্যের চিন্তা করতে পারি।’

সারজিস আলম আরও বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্য করলেও এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে যাবে। এনসিপি উচ্চকক্ষে পিআরের পক্ষে আর নিম্নকক্ষে বিপক্ষে।

এ সময় এনসিপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশেকীন আলম, জেলা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এ টি এম মাহবুব আলম, ইকরাম এলাহী খান সাজ, মোজাম্মেল হক, মাহমুদুল হাসান সোহেল, মোকারম আদনান, ফুয়াদ খান, জিকে ওমর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ন্যায়, নৈতিকতা আর ক্ষমাশীলতার পথই ভবিষ্যৎ গড়ে: তারেক রহমান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে সবার জন্য মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এসব কথা লিখেছেন তিনি।

পোস্টে তারেক রহমান লেখেন, আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনীতির চেয়েও বড় কিছু—একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে সবার জন্য মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে, যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, বিরোধী মত যেখানে হুমকি না হয়ে বরং গণতন্ত্রের অংশ হবে। যেখানে ভিন্ন মতের কারণে কাউকে নিপীড়িত হতে হবে না বা গুম হয়ে যেতে হবে না।

বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি করে না উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লিখেছেন, বিএনপি আজ প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে, আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী। আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী।

১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়— মানবাধিকারই মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত মন্তব্য করে তারেক রহমান পোস্টে লেখেন, আমরা আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর-রুনি— আর অসংখ্য শহীদের গল্প মনে রাখি, যেন ভবিষ্যতে এমন নিপীড়ন আর দায়মুক্তি আর কখনো ফিরে না আসে।

১৬টা বছর ধরে বাংলাদেশ যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল বলে পোস্টে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি লেখেন, কেউ সেই অন্ধকারকে খুব তীব্রভাবে টের পেয়েছে, কেউ চুপচাপ বয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক অবস্থান তখনকার পতিত সরকারের বিপরীতে ছিল, তাদের জন্য এই অন্ধকার ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর অসংখ্য পরিবার অপেক্ষা করেছে সেই প্রিয়জনদের জন্য, যারা আর কোনো দিন ঘরে ফিরে আসেনি। এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই জানিয়ে তিনি লেখেন, ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা— সব জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ মানুষ— সবাই সেই ভয়ংকর পরিবেশের ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছে, ন্যূনতম মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত মর্যাদা, নিরাপত্তা, মত প্রকাশের অধিকারের মতো মৌলিক সব বিষয়গুলো ছিল হুমকির মুখে।

পোস্টে তারেক রহমান তাঁকে ও তাঁর মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৌলিক অধিকার বঞ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, এই বছরগুলোতে আমাকেও কথা বলার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে আমার কথা বলার অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেওয়া হয়। দেশের কোনো পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়া যেন আমার কোনো বক্তব্য প্রকাশ না করা হয়, এমন নির্দেশনা জারি ছিল। তবুও এই চাপিয়ে দেয়া নীরবতার মধ্যেও আমি অধিকার, গণতন্ত্র আর মানুষের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছি, কারণ সত্যের স্পিরিটকে আদেশ দিয়ে থামানো যায় না। এই পুরো অন্ধকার সময়টায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ছিলেন আমাদের ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক। মিথ্যা মামলা, কারাবাস, তাঁকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা- এসবই পুরো দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবুও তিনি তাঁর গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে কখনো সরে যাননি। তাঁর বিশ্বাস একটাই— অধিকার সবার; ভয় দেখিয়ে দেশকে এগোনো যায় না।

এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান আরও লেখেন, আমি ব্যক্তিগতভাবেও সেই দুঃসহ সময়ের সাক্ষী। আমার মা, যিনি দেশনেত্রী, নিজে সহ্য করেছেন তাঁর ছেলেকে জেলে নেওয়া, নির্যাতন করার মানসিক যন্ত্রণা। তাঁর আরেক ছেলেকে আমরা চিরতরে হারিয়েছি। বাংলাদেশের হাজারো পরিবারের মতো আমাদের পরিবারও ছিল লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু ইতিহাসের একটা সত্য আছে- কষ্ট মানুষকে সব সময় তিক্ত করে না। কখনো কখনো কষ্ট মানুষকে আরও মহান করে তোলে। দেশনেত্রী, আমার মা- এটাই প্রমাণ করেছেন। তিনি শিখিয়েছেন—যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারও জীবনে না আসে। দেশকে বদলাতে হলে, ঘৃণার পথ নয়— ন্যায়, নৈতিকতা আর ক্ষমাশীলতার পথই ভবিষ্যৎ গড়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১১
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে এনসিপি। ছবি: স্ক্রিনশট
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে এনসিপি। ছবি: স্ক্রিনশট

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১২৫টি আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে জুলাই অভ্যুত্থানের পাটাতনে জন্ম নেওয়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

আজ বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করে জানান, এটি প্রথম ধাপ। পরবর্তী সময়ে আরও আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আলোচিত মুখ ও এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসনে, সদস্যসচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ আসনে, ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-৯ আসনে, ডা. তাজনূভা জাবীন ঢাকা-১৭ আসনে, ঢাকা-১৮ আসনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং নরসিংদী-২ আসনে সারোয়ার তুষার।

এ ছাড়া সারজিস আলম মনোনয়ন পেয়েছেন পঞ্চগড়-১ আসনে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ইকবাল হোসেন। হাসনাত আবদুল্লাহ মনোনয়ন পেয়েছেন কুমিল্লা-৪ আসনে। এর বাইরে নোয়াখালী-৬ আসনে আব্দুল হান্নান মাসউদ এবং চট্রগ্রাম-৮ আসনে জোবাইরুল হাসান আরিফ এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংসদ নির্বাচন: আসন ছাড় নিয়ে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ শরিকেরা

  • বোঝাপড়া না হলে বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার কথা বলছেন কেউ কেউ।
  • বাস্তবতার নিরিখে শরিকদের মূল্যায়ন করার কথা বলছে বিএনপি।
  • ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হতে পারে আজ।
রেজা করিম, ঢাকা 
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ১৫
সংসদ নির্বাচন: আসন ছাড় নিয়ে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ শরিকেরা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসন ছাড় নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না মেলায় শরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। এই অবস্থায় বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার চিন্তাও করছেন শরিকদের কেউ কেউ। এর আগে অবশ্য বিএনপি কী করে, তা দেখার জন্য অপেক্ষায় তাঁরা।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কার্যকর পদক্ষেপ না এলে রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়বে।’ ফলে নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিতও পাওয়া যায় এই নেতার কথায়। তিনি বলেন, ‘বোঝাপড়া হলে (বিএনপির সঙ্গে) এক রকমের, আর বোঝাপড়া না হলে আরেক রকমের।’ এ ক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দলগুলোকে নিয়ে অন্য একটা জোটও হতে পারে।

অবশ্য আসন ছাড় নিয়ে শরিকদের মনোভাব প্রসঙ্গে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে জিতে আসতে পারে, এমন প্রার্থীদের বেছে নেওয়া হচ্ছে। এ বাস্তবতা বুঝতে হবে।

নাম প্রকাশ না করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, এবারের ভোট অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। শেখ হাসিনার আমলের মতো যাঁদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হবে, তাঁরাই জিতে যাবেন—এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। অনেকে জাতীয় নেতা হলেও বেশির ভাগেরই ভোট করে জিতে আসার রেকর্ড নেই। এরপরও শরিকদের বিষয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা চলছে। যাঁরা বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন, তাঁদের জন্য আসন ছাড় দেওয়া হবে।

আসন ছাড় নিয়ে শরিকদের সঙ্গে মনোমালিন্যের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। গতকাল তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা-ভাবনা করছি। আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে।’

সব ঠিক থাকলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে দুই দফায় ২৭২টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। সম্ভাব্য বলা হলেও ঘোষিত এসব আসনে প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা খুব কম বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তফসিল ঘোষণার পর অবশিষ্ট ২৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার কথা বলছে বিএনপি।

ঘোষিত প্রার্থী তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির শরিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত ৩৬ আসনের মধ্যে মিত্র তিন দলের তিন নেতাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোটের শরিক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর আগে ওই আসনে তাঁকে কাজ করার জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছিল বিএনপি থেকে।

নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। এবারও এই আসনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেছিলেন এনপিপির নেতা-কর্মীরা। তবে এই আসনে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলামকেই বেছে নিয়েছে দলটি।

এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘বিএনপি তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এটা গণতন্ত্রের জন্য একধরনের অশনিসংকেত। আমরা আশা করছি, তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং শরিকদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবে।’

একইভাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি পিরোজপুর-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। তাঁর বাড়িও এই জেলায়। তবে এবার তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনে শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, ফ্যাসিবাদের কঠিন সময়ে কোনো কিছু চিন্তা না করে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরা রাজপথে ঝুঁকি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে থেকে সরকার পতনে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। বিএনপিও সে সময়ে ঘোষণা দিয়েছিল, তারা যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন ও সরকার গঠন করবে। ৫ আগস্টের পরও বিএনপির শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলেছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে শরিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা-সমঝোতা ছাড়াই বিএনপি এককভাবে ২৭২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে বর্তমানে বিএনপি নির্বাচনী জোট নিয়ে তেমন আগ্রহী নয়, হয়তো মিত্রদের কিছু আসনে তারা প্রার্থী দেবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই শেষ পর্যন্ত বিএনপি কী ভূমিকা নেয়। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।’

বিএনপির সূত্র বলছে, বিএনপির কাছ থেকে অন্তত ২৫-৩০টি আসন ছাড়ের প্রত্যাশা করছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো। এ প্রত্যাশার সঙ্গে বিএনপির হিসাব-নিকাশের মিল নেই। শরিকদের অবদানের কথা অস্বীকার করছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শরিকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন মোকাবিলা ও বিজয়ী হলে সরকার গঠন করতে চান তাঁরা। কিন্তু নির্বাচন যেহেতু হারজিতের খেলা, সে খেলায় জিততে পারে এমন প্রার্থী ঠিক করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে শরিক দলগুলো থেকে বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী খুবই কম। এ বিষয়ে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি সিদ্ধান্ত নেবে।

গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আসন ছাড় নিয়ে শরিকদের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্বের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ বুধবার ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্য দল ও জোটের সঙ্গেও বৈঠক করবে বিএনপি।

গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনো ২৮টি আসন তো বাকি আছে। জোটের আলোচনা তো এখনো শেষ হয় নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১২
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) ফাতেমী রুমির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে বক্তব্য শেষে তারেক রহমান দুঃখ প্রকাশ করেন।

এ সময় ১০১ জন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরিচালনা করেন মেজর জেনারেল (অবঃ) ফজলে এলাহী আকবর।

তারেক রহমান তার বক্তব্যে বলেন, 'আমি স্ক্রিনে একজনকে দেখতে চাচ্ছি, এটা একটু পার্সোনাল ব্যাপার তারপরেও আমি এখানে উল্লেখ করতে চাচ্ছি। আমাদের সামনে এখানে আম্মার সময় উনি ডিজিএসএসএফ ছিলেন। রুমি সাহেব। রুমি সাহেব উপস্থিত আছেন? রুমি সাহেব আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যে একটা মিছিল হয়েছিল একবার। সেই পুরান ঢাকা থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত এবং পুরো মিছিলটা আমি হেঁটে এসেছিলাম, আম্মাও (বেগম খালেদা জিয়া) ছিলেন। সেই মিছিলে অনেক ভিড় হট্টগোল ছিল। আপনি আমাকে একটা কিছু বলেছিলেন। আমি সেদিন আপনার সাথে একটু খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। সবকিছু মিলে আই অ্যাম ভেরি সরি ফর দ্যাট। আমি অনেকদিন চেষ্টা করেছি, আপনাকে রিচ করার জন্যে। কিন্তু সুযোগ পাইনি। আজকে সুযোগ পেয়েছি ওই ঘটনার জন্য দুঃখিত। সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আপনাদের সকলের কাছে আমি সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।'

তারেক রহমান তার মা বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে বলেন, আম্মা অসুস্থ হওয়ার আগে সর্বশেষ যেই (সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান) অনুষ্ঠানটিতে উনি গিয়েছিলেন ২১ তারিখে। সেখান থেকে আসার পরে উনি অসুস্থ হয়েছেন। উনি যে অনুষ্ঠানটিতে গিয়েছিলেন যাবার আগেও কিন্তু উনি একটু অসুস্থ ছিলেন। ওনাকে ডাক্তাররা কয়েকবার বলেছিলেন যে ম্যাডাম মনে হয় না গেলে বোধহয় ভালো হয়। কিন্তু ওই অসুস্থ শরীরেও উনি উনার মনের সর্বোচ্চ শক্তি, অসুস্থ শরীরের সর্বোচ্চ শক্তিকে এক করে ওই অনুষ্ঠানটিতে উনি গিয়েছিলেন। উনি যখন অনুষ্ঠানটি থেকে ফিরে আসেন তখন আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বলছিল যে, আম্মা অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর যতক্ষণ ওখানে ছিলেন এবং উনি ফিরে আসার পরে মানসিকভাবে উনি এতটা বুস্ট আপ ছিলেন, যে উনার মনেই হচ্ছিল না যে উনি অসুস্থ একজন মানুষ। এই কথাটা দিয়ে আমার মনে হয় আর বুঝতে কারো বাকি থাকে না যে, আপনাদের সাথে সার্ভিসে অথবা যে অবস্থায় থাকুন, আপনাদের সাথে জিয়া পরিবারের সম্পর্কটা কি, আমি পুরো বিষয়টা এই ছোট্ট ঘটনা দিয়ে আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম। আমি বিশ্বাস করি এই ঘটনার মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পেরেছেন, যারা এই ঘরেই আছেন, অনলাইনে যারা দেখছেন, সবাই বোধহয় বিষয়টা বুঝতে পারবেন। উনার মনটা কোন জায়গায় আছে। উনি কিভাবে দেখেন পুরা ডিফেন্সকে। বাংলাদেশের আর্মি হোক, নেভি হোক, এয়ারফোর্স হোক, পুরো ডিফেন্সটাকে উনি কিভাবে দেখেন তা এই ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

তিনি বলেন, দয়া করে আপনারা ভুল বুঝবেন না। বিগত স্বৈরাচারের সময় যে রিক্রুটমেন্টগুলো হয়েছিল, সেখানে বিএনপি, শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া সম্পর্কে একটা নেতিবাচক পারসেপশন বা ন্যারেটিভ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। মেজর রেজা বা মেজর মান্নান যেটা বলেছেন, সামান্য কিছু ভ্রান্ত ধারণা স্বৈরাচার তৈরি করেছিল। একটা দূরত্ব তৈরি করার জন্য। আমাদের ধারণা এটি সম্পূর্ণভাবে তাদের তৈরি ছিল। আমার মনে হয় এই বিষয়টি বোধহয় আজকে ক্লিয়ার হয়ে গেছে। আমি আমাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক একটি ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি, আমার মনে হয় এটার মাধ্যমে পুরা বিষয়টি ক্লিয়ার হয়ে গেছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, লেঃ কর্ণেল (অব.) শামসুজ্জোহা, মেজর (অব.) রেজা করিম, মেজর (অব.) সামসুজ্জোহা, মেজর (অব.) জামাল হায়দার, মেজর (অব.) আজিজুল হক, কর্ণেল (অব.) হারুনুর রশিদ, এয়ার কমোডর (অব.) শফিক আহমেদ, রিয়ার এডমিরাল (অব.) মোস্তাফিজ, লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (অব.) জয়নাল আবেদীন, কর্ণেল (অব.) জগলুল, লেফটেনেন্ট (অব.) ইমরান কাজল, মেজর (অব.) গোলাম মান্নান চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) রেজাউর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান বীর প্রতীক, কর্ণেল (অব.) হান্নান মৃধা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত