Ajker Patrika

আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতির, ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে চাই: নাহিদ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৩৩
টাঙ্গাইলে এনসিপির আয়োজনে জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষে সমাবেশে বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
টাঙ্গাইলে এনসিপির আয়োজনে জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষে সমাবেশে বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যিনি ধর্ম অবমাননা করেছে, তাকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই, ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে চাই, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলে এনসিপির আয়োজনে জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষে সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে নাহিদ এসব কথা বলেন। জেলা শহরের নিরালা মোড়ে এই সমাবেশ হয়।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আমাদের হিন্দু জনগোষ্ঠীর বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে, লুটপাত চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের নবীজিকে সেখানে কটূক্তি করা হয়েছে। আমাদের নবীজিকে কেউ কটূক্তি করলে, আমাদের ধর্মকে কেউ অবমাননা করলে, আমরা অবশ্যই তার বিচার চাই। কিন্তু সেই বিচার হতে হবে আইনের আওতায়। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি সেই সম্প্রদায়ের ওপর কেউ আঘাত হানে, তা আমরা কখনোই মেনে নেব না। আমাদের ধর্ম এটাকে পারমিট করে না। আমাদের ধর্মে বলা আছে, পিতার অপরাধের জন্য পুত্রকে দায়ী করা যাবে না, পুত্রের অপরাধের জন্য পিতাকে দায়ী করা যাবে না। অন্য ধর্মের ওপর আঘাত দেওয়া আমাদের নবীজি শিক্ষা দেন নাই। নবীজি সব সময় অন্য ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন। ফলে এই ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য ধর্মীয় নয়, তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক, তাদের উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক, তাদের উদ্দেশ্য লুটপাট করা। এ রাজনীতি শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। এটা সংখ্যালঘুদের জমি দখল এবং লুটপাটের রাজনীতি ও বিচার না করার রাজনীতি।’

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে ইতিহাসে স্মরণ করা হয় না উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘শেরেবাংলা ফজলুল হক, মওলানা ভাসানীর মতো মহান রাজনীতিক পুরুষ, যাঁরা এ বাংলাদেশের স্থপতি, তাঁদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশের জাতির পিতা শুধু একজন ব্যক্তিকে ঘোষণা করা হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে পূজা করা হয়েছে গত ৫৪ বছর ধরে। কিন্তু মওলানা ভাসানী না থাকলে শেখ মুজিব সৃষ্টি হতে পারতেন না। যে ’৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নিয়েছে, সেই অভ্যুত্থানের অন্যতম কারিগর, নেপথ্যের পুরুষ ছিলেন মওলানা ভাসানী। তিনি কৃষক-শ্রমিকের জন্য লড়াই করেছেন, গণমানুষের জন্য লড়াই করেছেন। আমরা মওলানা ভাসানীর সেই আদর্শকে ধারণ করে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। মওলানা ভাসানী শুধু রাজনীতিবিদ ছিলেন না, ছিলেন রাজনৈতিক দার্শনিক। আমরা ভাসানীকে বাংলাদেশের অন্যতম ফাউন্ডিং ফাদার মনে করি। বাংলাদেশে কোনো একজন জাতির পিতা নয়, বাংলাদেশে অনেকজন জাতির পিতা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম মওলানা ভাসানী।’

সমাবেশে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম অভিযোগ করেন, বিগত বছরগুলোতে ফ্যাসিবাদের পছন্দের কিছু জেলা বাদে বাকি জেলাগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল নিজ স্বকীয়তায় বাংলাদেশের জনগণের কাছে এবং বহির্বিশ্বে গুরুত্বের জায়গায় থাকতে পারত। কিন্তু কিছু ব্যক্তি নিজের এবং দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এত বড় একটি ঐতিহ্যবাহী জেলার স্বার্থকে প্রতিনিয়ত বিসর্জন দিয়েছেন।

সারজিস বলেন, ‘প্রশাসনকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্পষ্ট করে একটি জিনিস বলতে চাই, আমরা ’২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে প্রশাসনকে, পুলিশকে, অন্যান্য বাহিনীকে বাংলাদেশের জন্য দেখতে চাই। আমরা কোনো দল, ব্যক্তি, গোষ্ঠীর জন্য আর প্রশাসনকে দেখতে চাই না। আমরা স্পষ্ট করে আরেকটি কথা বলি, আমরা মিডিয়াকেও কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের দালাল হিসেবে দেখতে চাই না। মিডিয়া যেন কোনো ব্যক্তি বা দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজে না লাগে। এই মিডিয়া যেন প্রোপাগান্ডা বাস্তবায়নের সেলের অংশ হিসেবে কাজ না করে। ’২৪-পূর্ববর্তী সময়ে কয়েকটি মিডিয়া অন্ধভাবে দলের দালালি করেছে। তাদের সংবাদকর্মীরা আজ তারা যে সে চ্যানেলে কাজ করে, সেটা বলতেও লজ্জা পায়। আমরা চাই না ’২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো মিডিয়ার আর এই করুণ দশা হোক।’

সমাবেশে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক নাহিদা সারওয়ার, জ্যেষ্ঠ সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাইফুল্লাহ হায়দার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) অলীক মৃ, সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আজাদ খান ভাসানী, কেন্দ্রীয় সদস্য সালাহউদ্দিন, জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান প্রমুখ। তবে দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে বক্তব্য দেননি।

এনসিপি নেতারা দুপুর ১২টার দিকে শহরের জেলা সদর শামসুল হক তোরণের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। পদযাত্রার আগে সকালে শহরের একটি হোটেলে নাহিদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা জুলাই আন্দোলনে টাঙ্গাইলে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকে শহরে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়।

কর্মসূচি উপলক্ষে এনসিপি নেতারা গতকাল রাতে টাঙ্গাইলে পৌঁছানোর পর সন্তোষে মওলানা ভাসানীর কবর জিয়ারত করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত