Ajker Patrika

নির্বাচন নিয়ে একেকবার একেক কথা জনগণ ভালোভাবে দেখছে না: রিজভী

 উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি 
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমি ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে বলতে চাই, আপনি একবার বলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন, আবার বলেন, জুনে নির্বাচন। কয়েক দিন আগেও বলেছেন। আপনার কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকতে হবে। আপনি নির্বাচনের যে কথা ডিসেম্বরে বলেছেন, সেটা একবার মার্চে বলেন, একবার জুনে বলেন, মানুষ এটা ভালোভাবে দেখছে না। মানুষের কাছে স্পষ্ট ও সত্য অঙ্গীকার করে নির্বাচন দেবেন; সেটা জনগণের কাছে বলবেন, তারপর রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবেন।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরখানের হেলাল মার্কেট এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এ মন্তব্য করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আপনাকে দেশের মানুষ সম্মান করে। আপনি একজন গুণী মানুষ। এ কথা শেখ হাসিনার মুখে সাজত। কিন্তু আপনার মতো একজন গুণী মানুষ, যিনি দেশের প্রধান উপদেষ্টা, অনেক কার্যক্রম আপনি সিনসিয়ারলি করছেন, এটা সত্য কথা। আজকে মার্কেট সিন্ডিকেটগুলো অনেকাংশে ভাঙার চেষ্টা করছেন, জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমে এসেছে। এটাও ঠিক। কিন্তু চালের দাম, ডিমের ও মুরগির দাম কমেনি। এই জিনিসগুলোর জন্যও আপনাকে শক্ত হাতে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘একটি দেশ সুষ্ঠুভাবে চলতে গেলে জনগণের সরকার দরকার। জনগণ তো মালিক। শেখ হাসিনা জনগণের এই মালিকানা কেড়ে নিয়েছে। তিনি মালিক সেজেছেন। তিনি রাজা, তিনি রানি, তিনি জমিদার। তাঁর কথায়, তাঁর আঙুলে দেশ উঠবে, বসবে। এটা তিনি ভাবতেন। কিন্তু জনগণ যে বহুগুণে শক্তিশালী, সেটা তিনি টের পাননি। যখন ছাত্র-জনতা জেগে উঠেছে, তাঁকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। যাদের দিয়ে তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছেন, যাদের হাতে তিনি অস্ত্র তুলে দিয়েছেন, তাদের ফেলে দিয়ে তিনি পালিয়ে গেছেন।’

রিজভী বলেন, ‘মানুষ না খেয়ে রাস্তার ধারে পড়ে আছে, লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। আর প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বিয়ে হচ্ছে মাথায় সোনার মুকুট পরে। এটার জন্য তো মানুষ জীবন দেয় নাই। এই দেশ তো মানুষ চায়নি। আবার তারা মানুষকে ১০ টাকা কেজি চাল, ঘরে ঘরে চাকরি ও বিনা মূল্যে সার বিতরণ করার কথা বলে ক্ষমতায় আসে। আবার দেখি, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেকার বেশি বাংলাদেশে। ঘরে ঘরে চাকরি হলো কই?’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘তারা সব সময় মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে, মিথ্যা কথা বলেছে, জনগণের রক্ত চুষেছে। ওরা ওদের পরিবার ছাড়া কাউকে চিনত না। রাজউকের আইন অনুযায়ী, ঢাকা শহরে যদি কারও একটি জায়গা থাকে, তাহলে সে আর জায়গা পাবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা তাঁর ক্ষমতার দম্ভে, তাঁর মেয়ে, ভাগনে, ছেলে ও বোনের জন্য প্রায় ৬০ কাঠা জমি পূর্বাচলে নিয়েছে। অথচ প্রত্যেকের ঢাকা শহরে ঘর আছে। শেখ রেহেনাকে তো সরকার থেকে বিশাল বাড়ি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং লুটপাটের আদর্শ ধারণ করে আওয়ামী লীগ।’

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আপনারা রাজনীতি করতে চান কোন মুখ নিয়ে? আপনাদের মাঝে তো বাকশালের বিষ, সাপ, সেই সাপ তো আপনাদের হৃদয়ের মধ্যে আছে। সেই সাপ তো আপনারা ছাড়াতে পারেন নাই, সেই বিষ তো আপনারা ছাড়াতে পারেন নাই। মানুষের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলে ক্ষমতায় এসে আবার জনগণকে বিষাক্ত ছোবল দেন। যার প্রমাণ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে। প্রত্যেকটা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। এই লুটের টাকার ভাগ শেখ পরিবার পেয়েছে, নয়তো শেখ পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজনেরা পেয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘জনগণ কিছুই পায়নি। জনগণ যখন ক্ষুধার্ত পেটে মেট্রোরেল দেখে, তখন তারা বিস্মিত হয়। আমার পেটের ক্ষুধা তো যায়নি। এই মেট্রোরেল, এই ফ্লাইওভার ও পদ্মা সেতু, এগুলো কিসের জন্য। কারণ, এগুলো দেখিয়ে টাকা পাচার করার সুবিধা রয়েছে। এই টাকা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে, কানাডার ব্যাংকে, পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যাংকে পাবেন। তার তো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে এখন।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনার ছেলে কী কাজ করে, কোন কোম্পানিতে জব করে? সে নাকি আমেরিকা, দুবাই, বিভিন্ন জায়গাতে নাকি থাকে, কীভাবে থাকে? তার পরিবারেরা বিদেশে থাকে। তাদের উপার্জন কী, তাদের কাজ কী?’

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সাবধানে থাকবেন। শেখ হাসিনার লোকেরা যে অনাচার করেছে, অবিচার করেছে, মাস্তানি করেছে, সন্ত্রাসী করেছে, জায়গা–জমি দখল করেছে, আমাদের নামে যেন কেউ অভিযোগ না দেয়। এ ব্যাপারে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একেবারে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছেন, কোনো ছাড় দিচ্ছেন না। কারও নামে কোনো অনাচার, অবিচার প্রশ্রয় দিচ্ছেন না। সে যত বড়ই নেতা হোক না কেন।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার যে ভয়, যে আতঙ্ক, আমরা ছায়া দেখলে ভয় পেতাম, কখন কার সন্তানকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, গায়েব করে দেয়, কার লাশ আমরা তুরাগ নদীর ধারে পাব, শীতলক্ষ্যা নদীর ধারে পাব—এই ধরনের আশঙ্কায় আমাদের জীবন যাপন করতে হয়েছে। এখন তো সেই আশঙ্কা নেই।’

বিএনপির নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রিজভী বলেন, ‘যারা সমাজের মধ্যে সন্ত্রাস করবে, চুরি–ডাকাতি করবে, যারা অপকর্মে লিপ্ত আছে, তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া যাবে না। তাদের জন্য দলের নামে কিছু বললে, তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘খুনি হাসিনা, ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাদের ওপর হামলা করেছে, জেল জুলুম–নির্যাতন করেছে, শান্তিতে ঘুমাতে দেয় নাই। উত্তরখান থানার সাতটি মামলায় সাজা হয়েছে। যা রাজধানীর কোথাও হয়নি।’

অনুষ্ঠানে উত্তরখান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুকুল সরকারের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য মোতালেব হোসেন রতন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম কফিল উদ্দিন আহমেদ, উত্তরখানের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার আমলে গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলাম: আহসান এইচ মনসুর

আলোচনায় ড. ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী দেখার আকাঙ্ক্ষা, আইনি পথ কী

এক দশক পর প্রকাশ্যে গায়িকা ডাফি, শোনালেন অপহরণ ও ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা

তিস্তায় বড় প্রকল্প নিয়ে সতর্ক থাকার তাগিদ

জাতীয় ঈদগাহে যাবেন না রাষ্ট্রপতি, ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়বেন বঙ্গভবনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত