Ajker Patrika

সরকারি হাসপাতাল বলে কথা

সম্পাদকীয়
সরকারি হাসপাতাল বলে কথা

ফটোথেরাপি মেশিনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিশেষ করে নবজাতকের জন্ডিস হলে ফটোথেরাপি দিতে হয়, যা শিশুর শরীরকে স্বাভাবিক আলোতে রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি ত্বকের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, বিলিরুবিনের মতো পদার্থের ভাঙন ত্বরান্বিত করে এবং শরীর থেকে তা বের করে দিতে সাহায্য করে। এ কারণে যেকোনো শিশু হাসপাতালে এ যন্ত্র থাকা আবশ্যক। কিন্তু ঝিনাইদহ ২৫ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি শিশু হাসপাতালের চারটি ফটোথেরাপি মেশিনের মধ্যে তিনটি এক বছর ধরে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে।

নবজাতকের জন্ডিস হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু জন্ডিসের চিকিৎসা যথাসময়ে না হলে, পরবর্তী সময়ে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। সে জন্য নবজাতকের জন্ডিস হলে তাৎক্ষণিকভাবে ফটোথেরাপি দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে যখন এ যন্ত্রের বেশির ভাগ কাজ করে না, তখন শিশুদের বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। এই হাসপাতালে গত বছর কর্মচারী সংকট নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবছর যখন একই হাসপাতালে ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা থাকে, তখন তা নিজেই রুগ্‌ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। রুগ্‌ণ হাসপাতাল কখনো কি ভালো চিকিৎসা দিতে পারে?

বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় সরকারপ্রধানেরা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করে থাকেন। কিন্তু সমস্যার যে আদৌ সমাধান হয়নি, তা এ ধরনের সংবাদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। কোনো সরকারপ্রধানের মুখের বুলিকে বন্ধ করার সাধ্য কার আছে! কারণ হাসপাতাল হয়েছে ঠিকই; কিন্তু দেখা গেল ভবন পড়ে আছে। চালু হলেও দেখা যায় চিকিৎসক ও জনবলের মারাত্মক সংকট রয়েছে। আবার এসব ঠিক থাকলেও দেখা যায় যন্ত্রপাতি নেই অথবা তা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এসব হলো দেশের সরকারি হাসপাতালের নিত্যচিত্র। আর এই নানা সমস্যা সৃষ্টি হয় মূলত সিভিল সার্জন কার্যালয় বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবহেলার কারণেই।

দেশের অনেক সরকারি হাসপাতালেই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করছে না। অথচ দেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকে কয়েক হাজার কোটি টাকা। সামর্থ্যবানেরা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে টাকার জোরে ভালো চিকিৎসা পেলেও, হতদরিদ্ররা সরকারি হাসপাতালে যথোপযুক্ত চিকিৎসা পায় না।

স্বাস্থ্যসেবা মানে শুধুই ধনিকশ্রেণির স্বাস্থ্যসেবা নয়, এর মানে দেশের পুরো জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা। দেশের সব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। পয়সাওয়ালারা চিকিৎসার জন্য ভারত, সিঙ্গাপুর, ইউরোপ ও আমেরিকা যেখানেই যান না কেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার; কিন্তু সাধারণ খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ নিজ দেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন না, এ কেমন কথা! সব শ্রেণির মানুষ ভালো চিকিৎসা তখনই পাবেন, যখন সরকারি হাসপাতালগুলোতে সুচিকিৎসার জন্য সব আয়োজন থাকবে। আমরা ঝিনাইদহ সরকারি শিশু হাসপাতালে যে ফটোথেরাপি মেশিনের নষ্ট হয়ে পড়ে থাকার কথা বলেছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত সেগুলোকে যথাসম্ভব দ্রুত কার্যকর করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...