Ajker Patrika

কেষ্টা বেটাই চোর

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

বাংলাদেশ প্রশাসনের হৃৎপিণ্ড হিসেবে পরিচিত সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি খুব সাধারণ একটি দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হবে অনেকেরই। দেশের অন্যতম নিরাপদ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক স্থান, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড কেবল একটি ভবন ধ্বংস বা কিছু নথি পুড়ে যাওয়া নয়, এর সঙ্গে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত।

বুধবার গভীর রাতে কীভাবে সেই ভবনে আগুন লাগল, তার প্রকৃত কারণ জানতে কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, তা কেউ বলতে পারবেন না? সচিবালয়ের আগুনের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপেও সময় লাগবে। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে নবম তলা পর্যন্ত পুরো ভবন পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের নথি এবং ফাইল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের মন্তব্য, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে’।

এই অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা আসিফ জানিয়েছেন, কয়েক হাজার কোটি টাকার লুটপাটের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মন্ত্রণালয়গুলোতে ছিল। পুড়ে যাওয়া ফাইলগুলো সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির সাক্ষ্য বহন করত, যা এখন ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের চেষ্টায় ছয় ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ধ্বংস হয়ে যাওয়া তথ্য ও উপকরণ ফিরে পাওয়ার কোনো উপায় নেই। প্রাথমিক তদন্ত না হওয়া সত্ত্বেও এটাকে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি ফেসবুক পোস্টে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে লিখেছেন, ‘আমাদের ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে কেউ ছাড় পাবে না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেছেন, এ অগ্নিকাণ্ড কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এটি রাষ্ট্রের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজ চক্রের চক্রান্ত। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, আমলাতান্ত্রিক চক্র এই আগুন লাগিয়ে তাদের দুর্নীতি ঢাকার চেষ্টা করেছে।

আসিফ মাহমুদ বা সারজিস আলম কি অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটনে তৎপর, নাকি দোষ চাপানোর নীতি অবলম্বন করছেন? এইসব বক্তব্যের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনিক দুর্বলতা আড়াল করে একটি ভিন্নমুখী রাজনৈতিক আলোচনা জন্ম দেওয়ার কৌশলের অংশ নয় তো? তাঁরা কি জাতীয় উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর বক্তব্য দিয়েছেন? নাকি আরও অস্থিরতা ও সন্দেহ উসকে দিয়েছেন? তাঁদের কথার মাধ্যমে কি মানুষের উদ্বেগের সমাধান পাওয়া যাবে?

ক্ষমতার লড়াইয়ের কৌশলগুলো এমনই যে প্রতিপক্ষকে কলুষিত করতে বা নিজেদের সুবিধা বজায় রাখতে সংকটের মধ্যেও ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলতে থাকে।

অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটনে অবিলম্বে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া অত্যাবশ্যক। কাল্পনিক অভিযোগে মশগুল না হয়ে প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। যেকোনো সংকট থেকে ফায়দা হাসিলের মতলবি রাজনীতি যদি বন্ধ না হয় তাহলে আমরা পুরোনো বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে থাকব, সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। আগুনের ধোঁয়া যেন আমাদের বোধবুদ্ধি আচ্ছন্ন করে না ফেলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত