Ajker Patrika

মতামত /শেখ হাসিনার জঙ্গি দমনের পেছনের গল্প

এম আবুল কালাম আজাদ
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ০১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় এক অধ্যায় রচিত হয় জঙ্গিদমন অভিযানে, কিন্তু সেটা মানুষের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে শুধু সরকার ও তার বাহিনীর বয়ান তুলে ধরা, যেখানে কতটা দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে তারা জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করেছে সে চিত্র ফুটে উঠত। এর পেছনে যে এক অন্যায় ও অমানবিক দিক রয়েছে তা মিডিয়ায় উঠে আসেনি, ফলে সেটা অন্ধকারেই রয়ে যায়।

আমরা জানি, ২০১৩ সাল থেকে জুলাই ২০১৬ পর্যন্ত দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা হয় হলি আর্টিজান বেকারিতে। এসব হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। আওয়ামী লীগ সরকার সেসব হামলা প্রতিহত করতে না পারলেও শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে সংসদে দাবি করেন জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।

এমন দাবির পেছনে কারণ রয়েছে বলে যুক্তিও দেওয়া হয়। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গিদের দমনে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ে। তাই যেকোনো মূল্যে জঙ্গিদমনে সাফল্য দেখানোর প্রয়োজন। এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জঙ্গিদের আটক করতে মরিয়া হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে হঠাৎ তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পায় এবং সফল অভিযানে বড় বড় জঙ্গির মৃত্যু ঘটে। একই সঙ্গে শুরু হয় জঙ্গি আটকের হিড়িক। নবগঠিত সিটিটিসি ছাড়াও পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবি দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে শত শত মানুষকে জঙ্গি হিসেবে আটক শুরু করে।

পরিস্থিতি দেখে মনে হয় যে পুরো দেশ জঙ্গিতে ছেয়ে গেছে। বাংলাদেশ যেন এক জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সাংবাদিক হিসেবে জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি আটকের ঘটনা নিয়ে আমাদের মাঝে সন্দেহ জন্মে। অনেকে মনে করে, অভিযান বা আটকের অনেক কিছু সাজানো। তবে যেহেতু তখন কেউ তা খতিয়ে দেখেনি বা আনুসন্ধান করেনি তাই পুলিশের দেওয়া তথ্য বা ন্যারেটিভের বাইরে অন্যকোনো গল্প থাকলেও তা চাপা পড়ে যায়।

দু-তিনটি ঘটনা নিয়ে মিডিয়া আনুসন্ধান করলে ভিন্ন রকম তথ্য বেরিয়ে আসে, যার সঙ্গে পুলিশ বা র‍্যাবের দেওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা হয়, প্রতিটি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো অন্য গল্প লুকিয়ে আছে।

সে সময় জঙ্গি ধরার এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে। প্রকৃত জঙ্গিদের ধরার পাশাপাশি নিরীহ নারী-পুরুষদের জঙ্গি বানানোর প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। এ ক্ষেত্রে তারা নানান রকম গল্পের আশ্রয় নেয়। কিন্তু কীভাবে, কেন এমন অন্যায় করা হয় তা জানতেই ২০২১ সালে নারী জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান শুরু করি। অবাক হয়ে দেখি, জঙ্গিদমনে সাজানো নাটক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপকতা দেখে। ঘটনার যত ভেতরে প্রবেশ করি ততই জানতে পারি র‍্যাব, পুলিশ, ডিবি একই ধরনের গল্পের অবতারণা করে কীভাবে নিরপরাধ মানুষদের আটক করেছে, অনেককে বড় জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

পরিসং‌খ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানের অনেক ঘটনাই অসত্য। অর্থাৎ জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিদমন অভিযান সম্পর্কে আমরা বাইরে থেকে বা গণমাধ্যম থেকে যা জানি, তার বাইরেও আছে অন্য ঘটনা। সারা দেশ চষে বেড়িয়ে যেসব ঘটনা তুলে এনেছিলাম তার কয়েকটির কথা আজ তুলে ধরলেই বোঝা যাবে কেন ঘটনার পেছনের ঘটনা খুঁজতে হবে।

ভুয়া সুইসাইড স্কোয়াড মেম্বার

২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ চার নারীকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে জানায় যে, তারা নব্য জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য এবং ফিদায়ি হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিবি রাত আড়াইটায় তাদের এক গ্রাম থেকে আটক করে। আটক এক নারীর বাড়িতে তারা গোপন বৈঠক করছিল।

নারীদের মধ্যে ছিল একজন মা ও তার দুই অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, আর মধ্য বয়সী আরেকজন। যারা দুজনেই নিরক্ষর।

এই ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম আটক নারীদের ছবি ও ভিডিওসহ ফলাও করে রিপোর্ট করে।

অথচ প্রকৃত ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই নারীদের ডিবি পুলিশ এক মাস পূর্বে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং সেটা দিনের বেলায় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে। এরপর তাদের পুলিশ ডিবি অফিসে আটকে রেখে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও শারীরিক নির্যাতন করে জবানবন্দী আদায় করা হয়।

সত্য ঘটনা বের করা কঠিন ছিল না। এই নারীদের সিরাজগাঞ্জ শহর থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরের গ্রাম থেকে তুলে আনা হয়। গণমাধ্যম চাইলেই সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে পারত। তা করা হয়নি। ফলে পুলিশের বানানো গল্প সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, গ্রামের নিরীহ নারীরা সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে খ্যাতি পায়।

সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের এমন ভূমিকায় পুলিশ আরও উৎসাহিত হয়।

সিরাজগঞ্জ ডিবির ওই টিম একই ধরনের আরেকটি ঘটনার জন্ম দেয়। আবার তারা চার নারীকে হাজির করে দাবি করে যে, তাদের শহরের এক বাড়িতে মধ্যরাতে গোপন বৈঠক করার সময় আটক করা হয়। সাংবাদিকেরা এবারও যাচাই বা অনুসন্ধান না করে পুলিশের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরে।

এই দুই ঘটনার অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, ওই নারীদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায় এবং ডিবি একেক জনকে একেক স্থান একেক সময়ে তুলে এনে পূর্বের ঘটনার মতো অফিসে আটকে রেখে ও একই কায়দায় জবানবন্দী আদায় করে। এভাবেই তারা সফলভাবে জঙ্গি দমনের একেকটা উদাহরণ তৈরি করতে থাকে।

পহেলা বৈশাখবিরোধী লিফলেট ও ৯ জঙ্গি

২০১৮ সালে রাজশাহী জেলার এক বালিকা বিদ্যালয়ে দুজন ছাত্রী লিফলেট বিলি করে, যেখানে লেখা ছিল পহেলা বৈশাখ পালন করা ইসলামবিরোধী তাই তা পরিহার করা উচিত। তারা স্থানীয় ইসলামি ছাত্রী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ঘটনার তিন দিন পর পুলিশ স্থানীয় এক জামায়াত নেতার বাড়িতে মধ্যরাতে অভিযান করে জামায়াত নেতা, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও তাঁর ভাইয়ের তিন মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন সকালে সাংবাদিকদের সামনে তাঁদের উপস্থাপন করে পুলিশ জানায়, আটককৃতরা নব্য জেএমবির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা রাত ২টার সময় গোপন বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। বৈঠকে বোমা হামলা চালিয়ে জীবন দিয়ে হলেও তাঁরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রতিহত করবে বলে সভায় তাঁরা আলোচনা করেন।

স্থানীয় সাংবাদিকেরা পুলিশের ভাষ্যমতে রিপোর্ট করে।

ওই এলাকায় কয়েকদিন অনুসন্ধানের পর জানা যায়, ঘটনাটা এক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের নেতারা লিফলেটের ঘটনাকে ঘিরে ওই জামায়াত নেতাকে শায়েস্তা করতে চায়। আর তাই মধ্যরাতে অভিযান চালাতে দেরি হয়। স্থানীয় অনেক বাসিন্দা এসব জানেন। জঙ্গি ধরতে পুলিশ এতোটাই বেপরোয়া হয় যে, ওই ঘটনায় করা মামলায় তারা দূরের আরেকটি গ্রাম থেকে জামায়াত নেতার আত্মীয় দুজন নারীকে আটক করে।

স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, তিনি প্রকৃত ঘটনা জানলেও সেটা নিয়ে রিপোর্ট করার সাহস পাননি।

২ দিনব্যাপী বন্দুক যুদ্ধ, ২টি লাশ

২০১৭ সালের এপ্রিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে জঙ্গি অভিযানে পারদর্শী সিটিটিসি ও সোয়াতের সদস্যরা সেখানে যায়। গ্রামবাসীদের সরিয়ে দিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে দুই দিনব্যাপী গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয় যেন বড় এক সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। দুই দিন পর আস্তানার বাড়িতে ঢুকে পুলিশ দুটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। দাবি করে, এরা নিজেরা বোমা ফাটিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পায়ে গুলিবদ্ধ এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এমন ভাষ্য সব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।

পুলিশের নথিতে বলা হয়, পুলিশ মোট ২ হাজার রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর বিপরীতে জঙ্গিদের দিক থেকেও অনেক গুলি করার কথা। সে ক্ষেত্রে জঙ্গিদের কাছে ভারি অস্ত্র ও গুলি থাকার কথা। কিন্তু তার প্রমাণ অভিযান শেষে পাওয়া যায়নি।

আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত বাড়ির দেয়ালে অনেক গুলির দাগ থাকলেও আশপাশের কোনো বাড়ির দেয়ালে দেখা যায়নি। জঙ্গিরা গুলি করলে তা থাকার কথা।

এখানেও সন্দেহের অনেক উপাদান থাকায় অনুসন্ধানে করতে নেমে অন্যরকম তথ্য পাওয়া যায়। আহত নারী ও তাঁর স্বামী যে বাড়িতে বসবাস করতেন সেটি ছিল এক প্রবাসীর। তিনি তাঁদের সেখানে থাকতে দিয়েছিলেন। ওই নারীর স্বামী যাকে পুলিশ বড় জঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে খুব ধার্মিক ও ভিন্নভাবে নামাজ পড়ার কারণে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখত বলে আহত নারী ও আশপাশের গ্রামবাসীরা জানায়।

অন্য যে ব্যক্তির লাশ সেখানে পাওয়া গেছে তিনি বড় জঙ্গি ছিলেন। ওই জঙ্গি ঢাকার ডিবি অফিস থেকে পালিয়ে যান। তবে পুলিশ তাঁকে আবার আটক করে। অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের দুজন সদস্য জানান, তাঁকে আগেই মেরে লাশ ওই বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। আর আহত নারীর স্বামীকে পয়েন্ট ব্লাঙ্ক গুলি করা হয় বলে তাঁরা জানান।

ফলে মধ্যরাতের অনেক গোপন বৈঠক আসলেই যে সংগঠিত হয়নি এগুলো তার প্রমাণ।

সত্যিকার অর্থে প্রায় সব জঙ্গি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো গল্প আছে যা আমরা জানি না।

যেমন, ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর আশকোনায় শাকিরা নামের এক নারী আত্মঘাতী হামলা চালায়। দেশের ইতিহাসে সেটা প্রথম। সারা দুনিয়ার মিডিয়ায় সেটা প্রকাশিত হয়। আত্মসমর্পণ না করে ওই নারী তার কোমরে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে সেখানে তার মৃত্যু হয়। সঙ্গে থাকা তার মেয়ে আহত হলেও উপস্থিত কোনো পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়নি।

এই ঘটনা নিয়ে কেউ সন্দেহ পোষণ করেনি। তবে এর সঙ্গেও অন্য এক সত্য লুকিয়ে আছে। আর তা হলো, শাকিরাকে খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়, যা সিটিটিসি একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছে।

সোয়াতের এক শুটার যিনি সে সময় উপস্থিত ছিলেন সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, তিনি নিজেও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন এবং সেগুলো শাকিরাকে বিদ্ধ করে। মজার ব্যাপার হলো, শাকিরার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে গুলির কথা উল্লেখ করা হয়নি। এমন ঘটনাও ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। শাকিরা আত্মঘাতী হয়েছে, নাকি গুলিতে মারা গেছে সে প্রশ্ন অমীমাংসিত।

বাংলাদেশের নারী জঙ্গিদের আগাপাশতলা জানতে প্রায় তিন বছর আমরা গবেষণা করেছি। গবষেণালব্ধ ফল জার্মানি থেকে ২০২৩ সালে ‘উইমেন ইন টেরোরিজম ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বইটির সহ-লেখক জার্মান গবেষক ও লেখক ড. ইয়াসমিন লরচ।

সেই বইয়ে নিহত শাকিরার ঘটনার মতো আরো অনেক কাহিনীর বর্ণনা উঠে এসেছে।

যৌথ এই গবেষণায় বেরিয়ে আসে, ১২০ জন নারীকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে, যাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন নিরপরাধ। এই সংখ্যা পুরুষ জঙ্গিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি বলে পুলিশ ও র‍্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

জঙ্গি দমনে নাটক কেন?

জঙ্গি দমনে হাসিনা সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ছাড়াও সফল জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি ধরার জন্য বিশেষ প্রণোদনা, পুরস্কার, পদোন্নতি, ভালো পদায়ন ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় আকর্ষণের বিষয় ছিল মিডিয়ায় ব্যাপক কাভারেজ।

২০১৬ সাল থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে জঙ্গি ধরার এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যে যত সফল জঙ্গি অভিযান ও জঙ্গি আটক করেছে তারা ততই বাহিনী ও সরকারের বাহাবা পেয়েছে। বিপিএম ও পিপিএম তো ছিলই। ফলে এই প্রতিযোগিতা মাঠ পর্যায়ের পুলিশের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।

আবার অভিযানের ঘটনাকে বড় করে দেখানো হয় বেশি মিডিয়া কাভারেজ ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির জন্য। প্রমাণ করার চেষ্টা হয় যে, ভয়ঙ্কর জঙ্গিদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই পুলিশ দমন করতে পারে।

২০১৫ সাল থেকে নারী জঙ্গির সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। যেহেতু নারীদের সংবাদমূল্য বেশি ফলে প্রকৃত নারী জঙ্গির সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদে জড়িত না এমন অনেককে আটক করা হয়। নারীদের একটা গ্রুপ হিসেবে দেখালে গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এই প্রবণতা প্রবল আকার ধারণ করে।

গবেষণা ও অনুসন্ধানের সময় অনেক পুলিশ ও র‍্যাবের কর্মকর্তা তথ্য ও নথি দিয়ে সহায়তা করেন।

এদের অনেকে জানিয়েছেন কীভাবে তৈরি গল্পের মাধ্যমে নিরাপরাধ নারী-পুরুষদের জঙ্গি বানানো হয়েছে। আর এটা বেশি করেছে র‍্যাব। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে এটা করতে হয়েছে বলেও দাবি তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্র্যাপ করে কিছু ধার্মিক ব্যক্তিকে জঙ্গি হিসেবে ধরা হয়, সে তথ্য অবলীলায় স্বীকার করেছেন দুই কর্মকর্তা।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে সবাই জানতেন কীভাবে এমন অন্যায় কাজ করা হচ্ছে। সবাই নীরব ছিলেন। কারণ এ থেকে তাঁরা নিজেরা ও সরকার বড় ধরনের সুবিধা পেত।

ব্যাপারটা সরকারের ভেতরে অজানা ছিল না। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক শহিদুল হকের লেখা বই থেকে এর প্রমাণ মেলে। তিনি তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, পান্থপথে জঙ্গি অভিযানের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বলেছিলেন, এখানে এসে এমন নাটক না করলেও পারতে।

প্রকৃত ও ফেইক জঙ্গি সবাই নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। ধনী পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউই সহজে আইনি সুবিধা পায়নি, জামিনও পায়নি। জঙ্গিদের আইনি সহযোগিতা না দেওয়ার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেই উকিলদের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

এটা নিরপরাধ ব্যক্তিদের জন্য বেশি মর্মান্তিক। একদিকে তারা জঙ্গিবাদে জড়িত না, অন্যদিকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের জন্য উকিল না পাওয়া, বছরের পর বছর কারাবন্দি থাকা তাদের জন্য অনেক বড় অন্যায়। জামিনের পর মামলার ঘানি বয়ে বেড়ানো তো আছেই।

একজন নিরপরাধ নারী বা পুরুষকে জঙ্গি তকমা দিলে তার ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যায়। এই কালিমা তার পক্ষে মুছে ফেলা সম্ভব হয় না। রাষ্ট্রের সব ধরনের সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত হয়। চাকরি না পেয়ে তারা পরিবার ও সমাজে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তারা অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের কাছে জঙ্গিবাদ বড় একটি রাজনৈতিক কার্ড ছিল। এই কার্ড তারা শেষ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করেছে। কিন্তু জঙ্গি দমনের নামে বড় সংখ্যক নিরপরাধ মানুষের ওপর অত্যাচার ও তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করা বড় ধরনের অন্যায়। কিন্তু মিডিয়া জেনে অথবা না জেনে বিষয়টি এড়িয়ে যায় বলে এখনো মানুষ সে সম্পর্কে জানে না।

মিডিয়া যে কোনো ঘটনা বিনা প্রশ্নে বা খতিয়ে দেখা ছাড়া প্রকাশ করলে সেটা মানুষ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনে না, বরং অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। জঙ্গিবাদ সাংবাদিকতা এর বড় উদাহরণ।

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিষাক্ত গ্যাস

সম্পাদকীয়
বিষাক্ত গ্যাস

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।

সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?

চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।

বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।

শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।

আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?

এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রশ্নবিদ্ধ উপদেষ্টারা ও সরকারের নিরপেক্ষতা

অরুণ কর্মকার
প্রশ্নবিদ্ধ উপদেষ্টারা ও সরকারের নিরপেক্ষতা

না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ এক্সিটের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। আর এবার তো জানা গেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দৃষ্টিতে দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নামধামের তালিকাই নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওই দিন সেই তালিকা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়নি। প্রয়োজন হলে পরে দেবে। এবার শুধু বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কয়েকজন উপদেষ্টা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।

শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলারও, যাঁরা তাদের দৃষ্টিতে কোনো না কোনো দলের হয়ে, বিশেষত বিএনপির হয়ে কাজ করছেন। আর বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতারা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই বিএনপির। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত বলেছে, নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে রদবদল আনতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আরও অভিযোগ, বিএনপি রাজনৈতিক চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হলেও এখন জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।

এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। শাপলা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না, তার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, সেই দায়ও সরকারের ওপরই পড়বে।

উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপিরও। জামায়াত ও এনসিপির এক দিন আগে, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে তারাও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কারও নাম উল্লেখ না করেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তাঁরা তখনই তাতে রাজি হননি। উপদেষ্টাদের ছাড়াও প্রশাসন নিয়েও অন্য দুই দলের মতোই উদ্বেগ আছে বিএনপিরও। মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা এই বলে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের প্রায় ৫০ ভাগ ফ্যাসিস্টের দোসর।

তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’

তা প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, যেখানে সব দলের কাছেই উপদেষ্টাদের (সবার নয়) এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে উল্লেখ করে যখন প্রকাশ্যে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিশ্চিন্তে নিশ্চিত থাকতে পারে! তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই তো দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন আরও একটু শক্ত কথা—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’ সরকার ভাবতে পারে যে এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বাহাস। এটা নিয়ে তাদের অতটা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বাহাসগুলো তো রাজনৈতিক বাস্তবতা। এগুলো তো রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।

তারপর উল্লেখ করা যায় মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে সম্পর্কে এনসিপির প্রতিক্রিয়ার কথা। এনসিপি বলল হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শটি দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি তাদের ম্যান্ডেট। অথচ বিএনপির বক্তব্যটি ছিল—নিরপেক্ষতার নিরিখে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে।

এইসব রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছাড়াও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। যেমন জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া। বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ছাড়া এই তিনটি দলের কাছেই (হয়তো আরও অনেক দলের কাছে) সাধারণ ইস্যু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় প্রতিটি দল চায় না। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই ভূমিকা নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রতীয়মান হওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জই বটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাঠকের লেখা /স্বার্থের সমাজে বন্ধুত্ব

হেনা শিকদার
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ১১
স্বার্থের সমাজে বন্ধুত্ব

সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি। এমন এক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে সম্পর্কটি, মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে—বন্ধুত্ব।

একসময় বন্ধুত্ব ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক দারুণ উদাহরণ। সেখানে লেনদেনের কোনো হিসাব ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতা। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে আজও অনেকের মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। টিফিনের খাবার ভাগ করে খাওয়া, বন্ধুর দুঃখে নির্দ্বিধায় পাশে দাঁড়ানো, কিংবা সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া করে আবার মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরার মধ্যে যে পবিত্রতা ছিল, আজকের যান্ত্রিক সভ্যতায় তা যেন এক দুর্লভ বস্তু।

বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সবকিছুকে ব্যক্তিগত লাভের নিরিখে বিচার করতে হয়। আমরা এখন বন্ধু বানানোর আগেও অবচেতন মনে বিচার করে নিই—এই সম্পর্কটি আমার জীবনে কতটা মূল্য যোগ করবে? তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কিংবা তার মাধ্যমে আমার কোনো উপকার হবে কি না—এইসব প্রশ্নই এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একধরনের ‘শর্তাধীন’ বন্ধুত্বের জন্ম হচ্ছে, যেখানে স্বার্থের লেনদেন শেষ হলেই সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের বন্ধুত্ব অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানোই মূল উদ্দেশ্য।

এই স্বার্থপরতার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। প্রথমত, আধুনিক জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং প্রতিযোগিতা মানুষকে এতটাই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, সে নিজের জগৎ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার এক মায়াবী জগতের সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা হাজার হাজার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভরসা করার মতো বন্ধুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আসলে একধরনের লোকদেখানো সম্পর্ক, যার গভীরে কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। এখানে সবাই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে—কার কত বন্ধু, কে কতটা জনপ্রিয়। এই জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। স্বার্থের এই ঝোড়ো হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়েও কিছু মানুষ এখনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব মানে শুধু দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক টান, যা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় না। একজন সত্যিকারের বন্ধু আয়নার মতো, যে কেবল আমাদের ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে না, বরং আমাদের ভুলগুলোও দেখিয়ে দেয়। সে আমাদের বিপদের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এবং আনন্দের দিনে মন খুলে হাসে।

এই স্বার্থপর সময়ে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যদি আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে মুক্ত করতে পারি, তবেই এর আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব। বন্ধুত্ব কোনো পণ্য নয় যে তাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে হবে। এটি একটি চারা গাছের মতো, যাকে যত্ন, বিশ্বাস এবং সময় দিয়ে বড় করে তুলতে হয়। যখন একজন মানুষ সব ধরনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তখনই জন্ম নেয় এক নির্মল বন্ধুত্ব।

স্বার্থের এই সমাজে বন্ধুত্বের মানে হলো এক নিঃস্বার্থ আশ্রয়। এমন এক সম্পর্ক, যেখানে আপনি কোনো মুখোশ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কেউ উপহাস করবে না, বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই বন্ধুত্ব আপনাকে শেখাবে যে পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অর্থ বা ক্ষমতার বিনিময়ে কেনা যায় না, যা কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে খুঁজে বের করা এবং পরম মমতায় সেগুলো আগলে রাখা। কারণ, দিন শেষে এই সম্পর্কগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার আসল প্রেরণা জোগায়।

শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাঠকের লেখা /বাঘ সংরক্ষণের গুরুত্ব

রিয়াদ হোসেন
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৪৩
বাঘ সংরক্ষণের গুরুত্ব

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

সাধারণ মানুষের মতো বাঘেরও প্রধান দুটি মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য ও বাসস্থান। বিশেষ করে খাদ্যের জোগান এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে বাঘ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা তাদের প্রজনন বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বাঘসহ অন্য প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন বাঘের অস্তিত্ব আছে। বাঘ বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বাঘ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বাঘের প্রধান হুমকি। কিছু অতিলোভী চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের জন্য দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সবশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। কয়েক বছর আগে বড় বড় বনদস্যু দলের আত্মসমর্পণের ফলে বাঘনিধন কিছুটা কমে এসেছে। দুই বছর আগেও খাদ্যসংকটে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। বন সংরক্ষণে বন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। এ জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জীবিকায় সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।

সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাঘ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ জন্য বন বিভাগ কিংবা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সুন্দরবন বা বাঘ কোনোটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না; যদি আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই। পাশাপাশি বাঘনিধন ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যে আইনের ৩৬ ধারায় বাঘশিকারি বা হত্যাকারী জামিন-অযোগ্য হবেন এবং সর্বোচ্চ সাত বছর সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনটিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন বাঁচানোর পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত