জাহাঙ্গীর আলম
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক বক্তৃতার ভাষাও পাল্লা দিয়ে কঠোর হয়ে উঠছে। এই কঠোর ও আক্রমণাত্মক বাগাড়ম্বর কেবল বিতর্ক বা মতাদর্শগত লড়াইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে বাস্তব সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ‘অস্তিত্বের হুমকি’ বা ‘শত্রুপক্ষ’ হিসেবে চিত্রিত করার এই প্রবণতা সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে, সহিংসতাকে স্বাভাবিক করে তুলছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্মী চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পরেই পরিচালিত রয়টার্স/ইপসোস পোলের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আমেরিকান মনে করেন, রাজনীতি নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তৃতা বা আলোচনার ধরনই সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। দলীয় বিভাজন এবং রাজনৈতিক সহিংসতার বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কিত একটি জাতির উদ্বেগের চিত্র ফুটে উঠেছে এই জরিপে। ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, আমেরিকানরা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে যেভাবে কথা বলেন, তা সহিংসতা উসকে দিতে ‘অনেকখানি’ ভূমিকা রাখে। ৭১ শতাংশ এই ভেবে শঙ্কিত যে ‘আমেরিকান সমাজ ভেঙে পড়েছে।’ ৬৬ শতাংশ মানুষ রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে সহিংসতার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের গবেষক মাইক জেনসেনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৫০টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ঘটেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর সহিংসতার জ্বালানি জোগানোর মূল প্রক্রিয়াটি শুরু হয় প্রতিপক্ষকে অমানবিকীকরণের মাধ্যমে। যখন নেতারা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ‘শয়তান’, ‘পশু’ বা ‘শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করেন, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি কমে যায়, ফলে তাঁদের ওপর সহিংসতা চালানো নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মনে হওয়ার শর্ত তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াটি মানুষের ভীতি এবং ক্রোধের মতো নেতিবাচক আবেগগুলো আলোড়িত করে।
নেতারা যখন প্রতিপক্ষকে এমনভাবে তুলে ধরেন যে এই লোকেরা জিতে গেলে সমাজের বা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করবে, তখন এই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ নেওয়াকে সমর্থকেরা ‘আত্মরক্ষা’ হিসেবে ন্যায্যতা দেন।
এ ছাড়া এমন বাগাড়ম্বরে ক্রমাগত সহিংস রূপক (যেমন: ‘লড়াই’, ‘যুদ্ধ’ বা ‘জিহাদ’) ব্যবহার করার মাধ্যমে আগ্রাসী ভাষাকে সমাজে স্বাভাবিক করে তোলা হয়। এটি এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগুলোকে উৎসাহিত করে, যাদের মধ্যে এমনিতেই পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব বা আক্রমণাত্মক প্রবণতা রয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, যখন নেতারা হুমকি বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করেন, তখন রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকায় রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতি জনসমর্থন ২০১০ সালে প্রায় ১৬ শতাংশ ছিল, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়ে ৩৪-৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সামাজিকমাধ্যম এবং ‘ইকো চেম্বারগুলো’ এই চরমপন্থার বিস্তারকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে, ভুল তথ্যকে প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডের আবেগীয় জ্বালানিতে পরিণত করে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিকল্প গণমাধ্যমসহ মূলধারার অনেক গণমাধ্যমও ‘ইকো চেম্বার’ পরিস্থিতি তৈরি করছে, যেখানে পাঠক, দর্শক ও ব্যবহারকারীরা এমন প্রচার-প্রপাগান্ডার পরিবেশের মধ্যে ডুবে থাকছে, যা তাদের বিদ্যমান বিশ্বাসকে আরও প্রশস্ত বা শক্তিশালী করছে।
ঐতিহাসিকভাবে ডানপন্থী চরমপন্থী সহিংসতা বেশি মারাত্মক ও ঘন ঘন ঘটেছে। যেমন ২০০১ সাল থেকে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের কারণে মৃত্যুর প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ ডানপন্থীদের দ্বারা সংঘটিত। যেখানে বামপন্থীসংশ্লিষ্ট ঘটনার হার ১০-১৫ শতাংশ। তবে ২০১৬ সালের পর থেকে বামপন্থী সহিংসতাও তীব্রভাবে বেড়েছে। চরম মেরুকরণের মধ্যে এই সহিংসতা সরকার-বিরোধী বা সরকারদলীয় চরমপন্থার দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে। উভয় পক্ষের বাগাড়ম্বরই যেকোনো হুমকি বা ঝুঁকিকে অতিরঞ্জিত করে এবং সহিংসতাকে ন্যায়সংগত প্রতিক্রিয়া হিসেবে তুলে ধরে। এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিশোধের একটি চক্র তৈরি করছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে দক্ষিণপন্থী ডেমোক্র্যাট রাজনীতিকেরা জাতিগত রেটোরিক ব্যবহার করে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন। এর ফলস্বরূপ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কাউন্টিগুলোতে নির্বাচনের সময় লিনচিংয়ের (গণপিটুনি) ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল।
ইদানীংকালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে ভয়াবহ অস্থিরতা তৈরি করেছে। মেক্সিকান অভিবাসীদের ‘ধর্ষক’ বলা বা কোভিড-১৯-কে ‘চায়নিজ ভাইরাস’ বলার মতো বিদ্বেষমূলক মন্তব্যগুলো ঘৃণামূলক অপরাধ বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। ট্রাম্প কথায় কথায় প্রতিপক্ষের জীবন ‘জাহান্নাম’ বানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার সময় একইভাবে সমর্থকদের উসকানি দিয়েছিলেন তিনি।
আবার সাম্প্রতিককালে বামপন্থীদের অনেকের ডানপন্থী ব্যক্তিত্বদের ‘ফ্যাসিস্ট’ বা ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ হিসেবে চিত্রিত করার উসকানিমূলক ভাষা কিছু ঘটনাকে ইন্ধন জুগিয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে পোর্টল্যান্ড বিক্ষোভে একজন অ্যান্টিফা কর্মীর গুলিতে আরন ড্যানিয়েলসনের মৃত্যু এবং করপোরেট-বিরোধী চরমপন্থায় অনুপ্রাণিত কিছু আক্রমণের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এমনকি, চার্লি কার্ককে হত্যার সঙ্গেও বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার সম্পর্ক রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সুতরাং, রাজনৈতিক বাগ্মিতা কাউকে রাতারাতি সেলিব্রিটি বানিয়ে দিতে পারে, কিন্তু এর মূল্য অনেক সময় রক্ত দিয়ে শুধতে হয়। এই ধরনের বাগাড়ম্বর নিছক শব্দ নয়; এগুলো সমাজকে বিভক্ত করার, আবেগীয় উত্তেজনা বাড়ানোর এবং বাস্তবে সহিংস কাজগুলোকে বৈধতা দেওয়ার একটি হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। যখন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বরা প্রতিপক্ষকে লক্ষ্যবস্তু করেন, তখন তা প্রায়ই সুনির্দিষ্ট আক্রমণের দিকে পরিচালিত করে। এ ধরনের প্রবণতা চরমপন্থী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রমকেও জটিল করে তুলতে পারে।
রাজনীতিতে এই বিপজ্জনক প্রবণতা মোকাবিলা করার জন্য নেতাদের দায়িত্বশীল ভাষা ব্যবহারে সজাগ থাকা উচিত। অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তেজনা বন্ধে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে জবাবদিহি নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সমাজকে এই সহিংস চক্র থেকে রক্ষা করতে হলে ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ এবং প্রতিপক্ষকে ‘শত্রু সাব্যস্ত’ করার ভাষা পরিহার করে সংলাপ এবং সহনশীলতার দিকে ফিরতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক বক্তৃতার ভাষাও পাল্লা দিয়ে কঠোর হয়ে উঠছে। এই কঠোর ও আক্রমণাত্মক বাগাড়ম্বর কেবল বিতর্ক বা মতাদর্শগত লড়াইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে বাস্তব সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ‘অস্তিত্বের হুমকি’ বা ‘শত্রুপক্ষ’ হিসেবে চিত্রিত করার এই প্রবণতা সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে, সহিংসতাকে স্বাভাবিক করে তুলছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্মী চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পরেই পরিচালিত রয়টার্স/ইপসোস পোলের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আমেরিকান মনে করেন, রাজনীতি নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তৃতা বা আলোচনার ধরনই সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। দলীয় বিভাজন এবং রাজনৈতিক সহিংসতার বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কিত একটি জাতির উদ্বেগের চিত্র ফুটে উঠেছে এই জরিপে। ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, আমেরিকানরা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে যেভাবে কথা বলেন, তা সহিংসতা উসকে দিতে ‘অনেকখানি’ ভূমিকা রাখে। ৭১ শতাংশ এই ভেবে শঙ্কিত যে ‘আমেরিকান সমাজ ভেঙে পড়েছে।’ ৬৬ শতাংশ মানুষ রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে সহিংসতার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের গবেষক মাইক জেনসেনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৫০টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ঘটেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর সহিংসতার জ্বালানি জোগানোর মূল প্রক্রিয়াটি শুরু হয় প্রতিপক্ষকে অমানবিকীকরণের মাধ্যমে। যখন নেতারা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ‘শয়তান’, ‘পশু’ বা ‘শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করেন, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি কমে যায়, ফলে তাঁদের ওপর সহিংসতা চালানো নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মনে হওয়ার শর্ত তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াটি মানুষের ভীতি এবং ক্রোধের মতো নেতিবাচক আবেগগুলো আলোড়িত করে।
নেতারা যখন প্রতিপক্ষকে এমনভাবে তুলে ধরেন যে এই লোকেরা জিতে গেলে সমাজের বা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করবে, তখন এই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ নেওয়াকে সমর্থকেরা ‘আত্মরক্ষা’ হিসেবে ন্যায্যতা দেন।
এ ছাড়া এমন বাগাড়ম্বরে ক্রমাগত সহিংস রূপক (যেমন: ‘লড়াই’, ‘যুদ্ধ’ বা ‘জিহাদ’) ব্যবহার করার মাধ্যমে আগ্রাসী ভাষাকে সমাজে স্বাভাবিক করে তোলা হয়। এটি এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগুলোকে উৎসাহিত করে, যাদের মধ্যে এমনিতেই পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব বা আক্রমণাত্মক প্রবণতা রয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, যখন নেতারা হুমকি বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করেন, তখন রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকায় রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতি জনসমর্থন ২০১০ সালে প্রায় ১৬ শতাংশ ছিল, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়ে ৩৪-৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সামাজিকমাধ্যম এবং ‘ইকো চেম্বারগুলো’ এই চরমপন্থার বিস্তারকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে, ভুল তথ্যকে প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডের আবেগীয় জ্বালানিতে পরিণত করে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিকল্প গণমাধ্যমসহ মূলধারার অনেক গণমাধ্যমও ‘ইকো চেম্বার’ পরিস্থিতি তৈরি করছে, যেখানে পাঠক, দর্শক ও ব্যবহারকারীরা এমন প্রচার-প্রপাগান্ডার পরিবেশের মধ্যে ডুবে থাকছে, যা তাদের বিদ্যমান বিশ্বাসকে আরও প্রশস্ত বা শক্তিশালী করছে।
ঐতিহাসিকভাবে ডানপন্থী চরমপন্থী সহিংসতা বেশি মারাত্মক ও ঘন ঘন ঘটেছে। যেমন ২০০১ সাল থেকে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের কারণে মৃত্যুর প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ ডানপন্থীদের দ্বারা সংঘটিত। যেখানে বামপন্থীসংশ্লিষ্ট ঘটনার হার ১০-১৫ শতাংশ। তবে ২০১৬ সালের পর থেকে বামপন্থী সহিংসতাও তীব্রভাবে বেড়েছে। চরম মেরুকরণের মধ্যে এই সহিংসতা সরকার-বিরোধী বা সরকারদলীয় চরমপন্থার দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে। উভয় পক্ষের বাগাড়ম্বরই যেকোনো হুমকি বা ঝুঁকিকে অতিরঞ্জিত করে এবং সহিংসতাকে ন্যায়সংগত প্রতিক্রিয়া হিসেবে তুলে ধরে। এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিশোধের একটি চক্র তৈরি করছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে দক্ষিণপন্থী ডেমোক্র্যাট রাজনীতিকেরা জাতিগত রেটোরিক ব্যবহার করে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন। এর ফলস্বরূপ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কাউন্টিগুলোতে নির্বাচনের সময় লিনচিংয়ের (গণপিটুনি) ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল।
ইদানীংকালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে ভয়াবহ অস্থিরতা তৈরি করেছে। মেক্সিকান অভিবাসীদের ‘ধর্ষক’ বলা বা কোভিড-১৯-কে ‘চায়নিজ ভাইরাস’ বলার মতো বিদ্বেষমূলক মন্তব্যগুলো ঘৃণামূলক অপরাধ বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। ট্রাম্প কথায় কথায় প্রতিপক্ষের জীবন ‘জাহান্নাম’ বানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার সময় একইভাবে সমর্থকদের উসকানি দিয়েছিলেন তিনি।
আবার সাম্প্রতিককালে বামপন্থীদের অনেকের ডানপন্থী ব্যক্তিত্বদের ‘ফ্যাসিস্ট’ বা ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ হিসেবে চিত্রিত করার উসকানিমূলক ভাষা কিছু ঘটনাকে ইন্ধন জুগিয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে পোর্টল্যান্ড বিক্ষোভে একজন অ্যান্টিফা কর্মীর গুলিতে আরন ড্যানিয়েলসনের মৃত্যু এবং করপোরেট-বিরোধী চরমপন্থায় অনুপ্রাণিত কিছু আক্রমণের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এমনকি, চার্লি কার্ককে হত্যার সঙ্গেও বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার সম্পর্ক রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সুতরাং, রাজনৈতিক বাগ্মিতা কাউকে রাতারাতি সেলিব্রিটি বানিয়ে দিতে পারে, কিন্তু এর মূল্য অনেক সময় রক্ত দিয়ে শুধতে হয়। এই ধরনের বাগাড়ম্বর নিছক শব্দ নয়; এগুলো সমাজকে বিভক্ত করার, আবেগীয় উত্তেজনা বাড়ানোর এবং বাস্তবে সহিংস কাজগুলোকে বৈধতা দেওয়ার একটি হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। যখন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বরা প্রতিপক্ষকে লক্ষ্যবস্তু করেন, তখন তা প্রায়ই সুনির্দিষ্ট আক্রমণের দিকে পরিচালিত করে। এ ধরনের প্রবণতা চরমপন্থী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রমকেও জটিল করে তুলতে পারে।
রাজনীতিতে এই বিপজ্জনক প্রবণতা মোকাবিলা করার জন্য নেতাদের দায়িত্বশীল ভাষা ব্যবহারে সজাগ থাকা উচিত। অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তেজনা বন্ধে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে জবাবদিহি নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সমাজকে এই সহিংস চক্র থেকে রক্ষা করতে হলে ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ এবং প্রতিপক্ষকে ‘শত্রু সাব্যস্ত’ করার ভাষা পরিহার করে সংলাপ এবং সহনশীলতার দিকে ফিরতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক
হাসনাত কাইয়ুম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি। হাওরের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে কারাভোগ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।
১০ মিনিট আগেআমরা এমন এক যুগে বসবাস করছি, যেখানে মানুষের মূল্য আর তার চিন্তার গভীরতা, সততা বা মেধার ওপর নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে সে কতটা ‘ভাইরাল’ হতে পারে তার ওপর। ‘ভাইরাল’ এখন শুধু একটি শব্দ নয়, এটি এক প্রজন্মের মানদণ্ড, এক সমাজের সফলতার পরিমাপক।
২০ মিনিট আগেবিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য ও বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতার একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়ার পর তা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। যদিও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি এডিট করা, তবু যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে শোনা গেছে এই নেতাকে...
৩০ মিনিট আগেআমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমান বিরোধ প্রসঙ্গে গালাগালিকে গলাগলিতে রূপান্তরিত করতে বলেছিলেন একদা। তাঁর এই পরামর্শ কতটা কাজে লেগেছে, তা নিয়ে আর মন্তব্য না করাই ভালো। ন্যূনতম সহনশীলতারও মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নিয়েও ভাবছে মানুষ। রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি...
১ দিন আগে