মামুনুর রশীদ
বড়দিনের সপ্তাহ চলছে। গতকাল সারা বিশ্বেই পালিত হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব। আমাদের দেশেও শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনন্দের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল বড়দিন। আমারও বেশ কয়েকবার সৌভাগ্য হয়েছে একবারে গ্রামে হাজার হাজার খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর মাঝে বড়দিনের উৎসবে অংশ নেওয়ার। এর মধ্যে রয়েছে বরিশালের জোবারপাড় গির্জায়, ঢাকা জেলার (বর্তমানে গাজীপুর) নাগরী মিশনে, হালুয়াঘাটের আচকিপাড়ায়। আচকিপাড়ায় মিশন নেই। কিন্তু বড়দিন পালিত হয় একেবারেই অন্যভাবে। কয়েকটি গ্রামের মানুষ একত্রে কয়েক দিন ধরেই নৃত্যগীত সহকারে ভালো খাবার আর জামাকাপড় পরে আনন্দ করতে থাকেন আর ২৫ ডিসেম্বর সকাল থেকে ফাদাররা অল্প সময়ের মধ্যেই প্রার্থনার কাজটি শেষ করেন। তারপর শুরু হয় গণভোজের আয়োজন। হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু একত্র হয় ফসলের মাঠে। সেখানেই হয় ওই খাবারের আয়োজন। এই আয়োজন অনেক সময় ধরে চলতে থাকে। তারপর শীতের সন্ধ্যা নামে। কিন্তু উৎসবের রেশ তখনো থাকে।
নওগাঁ, দিনাজপুর অঞ্চলেও এমনই আয়োজন চলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। সারা বছর ধরে শ্রমজীবী মানুষ পরিশ্রম করে সামান্য যে সঞ্চয়টুকু করতে সক্ষম হন, তা-ই বছর শেষে ব্যয় করে আবার নতুন প্রেরণা নিয়ে পরিশ্রম শুরু করেন। মাঝে মাঝে বিস্মিত হই ধর্মপ্রচারকেরা কী করে এইসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসেছিলেন! এসব অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা ছিল একেবারেই দুর্গম। বরিশাল অঞ্চলে নৌপথটা খোলা ছিল কিন্তু ছিল বিপৎসংকুল। বড় বড় নদীতে ছোট নৌকা নিয়ে আসতে হতো। অবশ্য নৌপথ আবিষ্কারের সুযোগ নিয়েছিল পর্তুগিজরা, সেই চতুর্দশ শতাব্দীতে। পর্তুগিজরা সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম হয়ে হুগলি পর্যন্ত যাতায়াত করত। তারা দুটি কাজই করত—ধর্মপ্রচার এবং ব্যবসা। যদিও পরবর্তীকালে তারা রাজনীতিতে অংশ নিয়ে যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েছিল। মোগল সম্রাটদের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করেছে, সন্দ্বীপে রাজত্ব করেছে। তারও আগে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুর্কি অশ্বারোহীরা একদিকে সাম্রাজ্য স্থাপন করেছে, অন্যদিকে ইসলাম ধর্ম প্রচারে নেমেছে।
প্রত্যন্ত এসব অঞ্চলে একদিকে ছিল দুঃশাসন, শ্রেণিগত নিপীড়ন; অন্যদিকে সীমাহীন দারিদ্র্য। পরবর্তীকালে যদিও বিশাল বিশাল সাম্রাজ্যের নির্মাণেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ধর্ম। দারিদ্র্যবিমোচনে এবং শিক্ষা বিস্তারে খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারকেরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এ দেশের বিশেষ জাতিসত্তার একটা বড় অংশের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মুখে তাঁরা মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
মানবকল্যাণের জন্য পৃথিবীতে যে ধর্মের আগমন, তা-ও একসময় নানা মতে নানা পথে বিভক্ত হয়েছে। ধর্মে-ধর্মে বৈরিতা হয়েছে। রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মযাজকদের বিরোধ হয়েছে। ধর্ম পালনেও একসময় রাষ্ট্রশক্তি বলপ্রয়োগ করেছে। পৃথিবীতে দুই হাজার বছরের ধর্মের ইতিহাস ছাড়াও অসংখ্য ধর্মের ইতিহাস রয়েছে। সেইসব সনাতন ধর্মের সঙ্গে আধুনিক ধর্মের বিরোধ অস্বাভাবিক নয়। সেইসব বিরোধের ফলে বহু নগর প্রায়ই রক্তাক্ত হয়েছে, মানুষও বিভক্ত হয়েছে। আবার অনেক মহান ধর্মযাজকেরা ধর্মের সমন্বয়ও করতে চেয়েছেন। উপমহাদেশের অনেক মাজারেই দেখা যায় সব ধর্মের মানুষ এসে তাঁদের শান্তি খুঁজছেন। ধীরে ধীরে রাজশক্তিতে ধর্ম এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল যে ধর্মে-ধর্মে বিরোধ মানুষকে বিভক্ত করে ফেলল। সে জন্যই ফরাসি বিপ্লবের সময় আমরা বলতে শুনি, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’।
এবার ফিরে আসি বড়দিনে। বড়দিনের মতোই বিশ্বে মুসলমানদের ঈদ, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণ এবং অন্য ধর্মের মানুষদেরও রয়েছে বড় উৎসব। এই উৎসবগুলো আসলে মানুষকে কী করে? মানুষ তার জীবন-জীবিকা নিয়ে যেমন ব্যস্ত, তেমনি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই বিচ্ছিন্নতা মানুষকে কখনো কখনো ভীষণভাবে নিঃসঙ্গ করে দেয়। সেই নিঃসঙ্গ জীবনে উৎসব একজন মানুষকে একত্র করে বলেই সে ভাবতে শুরু করে, সে একা নয়। সেখান থেকেই সে শক্তি সঞ্চয় করে এবং সামনের দিকে আশা নিয়ে তাকায়।
আজকের দিনে ধর্ম কোনো অঞ্চলে আবদ্ধ নয়। প্রতিটি ধর্মই কোনো না কোনোভাবে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের দেশে আরও একটি ধর্ম বহু বর্ষ ধরে মানবকল্যাণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছে, তা হলো বৌদ্ধধর্ম। আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের দরিদ্র, অসহায় মানুষের পাশে বৌদ্ধভিক্ষুরা দাঁড়িয়ে আছেন বহু কষ্ট, ক্লেশ নিয়েই। সম্প্রতি রাঙামাটির মোনঘর আশ্রমের ৫০ বছর পূর্তিতে গিয়েছিলাম। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল এবং কঠিন সংগ্রামের ইতিহাস। ষাটের দশকে কাপ্তাইয়ের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাঙামাটিসহ বিশাল একটি এলাকা এক রাতের মধ্যে প্লাবিত করা হয়। একেবারে কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই ঘটনাটি ঘটে। মানুষজন, গবাদিপশু, চাষযোগ্য জমি এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সার্কেলের রাজার বাড়িটিও পানির নিচে ডুবে যায়। এমন মর্মান্তিক ঘটনার দায় তৎকালীন সরকার একেবারেই অগ্রাহ্য করে। এই অসহায় বিশাল জনগোষ্ঠীর হাহাকার সেদিন কারও কানে পৌঁছায়নি।
তারপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার আরেক সংকট শুরু হয়। অনেক আত্মাহুতি, অশান্তিতে, মৃত্যুতে বিপর্যস্ত এই লোকালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মোনঘর শিশুসদন, স্কুল এবং আবাসিক ব্যবস্থা। এর ব্যবস্থাপনায় থাকেন বৌদ্ধভিক্ষুরা। সারা পৃথিবীর সহৃদয় মানুষেরা সাহায্যের হাত এগিয়ে দেন তাদের জন্য। অনেক অনাথ ছাত্র-ছাত্রী এখান থেকে পরবর্তীকালে শিক্ষা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমার সৌভাগ্য হয়েছে অনেক বৌদ্ধভিক্ষুর সঙ্গে চিন্তা বিনিময় করার। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ভিক্ষুনেতা শ্রদ্ধালংকার মহোদয়ের সঙ্গেও দিনের পর দিন পার্বত্য চট্টগ্রামের বেদনার ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছি।
এবার রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে একজন ভিক্ষু আমাদের সহায় হয়েছিলেন। তাঁর জ্ঞান, ধৈর্য ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি। এঁরা জীবনকে উৎসর্গ করেছেন মানবকল্যাণের জন্য। অথচ পাশের দেশ মিয়ানমারে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী শাসককুল কী নিষ্ঠুরতার সঙ্গে সে দেশের মানুষদের ওপর দমন-পীড়ন করছে!
গতকাল বড়দিন হয়ে গেল। সারা বিশ্বেই তা পালিত হয়েছে সাড়ম্বরে বা অনাড়ম্বরে। ধর্মের কল্যাণের বাণী উচ্চারিত হয়েছে সর্বত্র। খ্রিষ্টধর্মের মানুষেরা পরম আনন্দে এই দিনটি পালন করেছেন। এই উৎসব বৃহত্তর মানবকল্যাণের বাণী বয়ে আনুক। মানুষে-মানুষে, জাতিতে-জাতিতে সব ভেদাভেদের, হিংসার অবসান হোক।
বড়দিনের সপ্তাহ চলছে। গতকাল সারা বিশ্বেই পালিত হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব। আমাদের দেশেও শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনন্দের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল বড়দিন। আমারও বেশ কয়েকবার সৌভাগ্য হয়েছে একবারে গ্রামে হাজার হাজার খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর মাঝে বড়দিনের উৎসবে অংশ নেওয়ার। এর মধ্যে রয়েছে বরিশালের জোবারপাড় গির্জায়, ঢাকা জেলার (বর্তমানে গাজীপুর) নাগরী মিশনে, হালুয়াঘাটের আচকিপাড়ায়। আচকিপাড়ায় মিশন নেই। কিন্তু বড়দিন পালিত হয় একেবারেই অন্যভাবে। কয়েকটি গ্রামের মানুষ একত্রে কয়েক দিন ধরেই নৃত্যগীত সহকারে ভালো খাবার আর জামাকাপড় পরে আনন্দ করতে থাকেন আর ২৫ ডিসেম্বর সকাল থেকে ফাদাররা অল্প সময়ের মধ্যেই প্রার্থনার কাজটি শেষ করেন। তারপর শুরু হয় গণভোজের আয়োজন। হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু একত্র হয় ফসলের মাঠে। সেখানেই হয় ওই খাবারের আয়োজন। এই আয়োজন অনেক সময় ধরে চলতে থাকে। তারপর শীতের সন্ধ্যা নামে। কিন্তু উৎসবের রেশ তখনো থাকে।
নওগাঁ, দিনাজপুর অঞ্চলেও এমনই আয়োজন চলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। সারা বছর ধরে শ্রমজীবী মানুষ পরিশ্রম করে সামান্য যে সঞ্চয়টুকু করতে সক্ষম হন, তা-ই বছর শেষে ব্যয় করে আবার নতুন প্রেরণা নিয়ে পরিশ্রম শুরু করেন। মাঝে মাঝে বিস্মিত হই ধর্মপ্রচারকেরা কী করে এইসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসেছিলেন! এসব অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা ছিল একেবারেই দুর্গম। বরিশাল অঞ্চলে নৌপথটা খোলা ছিল কিন্তু ছিল বিপৎসংকুল। বড় বড় নদীতে ছোট নৌকা নিয়ে আসতে হতো। অবশ্য নৌপথ আবিষ্কারের সুযোগ নিয়েছিল পর্তুগিজরা, সেই চতুর্দশ শতাব্দীতে। পর্তুগিজরা সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম হয়ে হুগলি পর্যন্ত যাতায়াত করত। তারা দুটি কাজই করত—ধর্মপ্রচার এবং ব্যবসা। যদিও পরবর্তীকালে তারা রাজনীতিতে অংশ নিয়ে যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েছিল। মোগল সম্রাটদের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করেছে, সন্দ্বীপে রাজত্ব করেছে। তারও আগে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুর্কি অশ্বারোহীরা একদিকে সাম্রাজ্য স্থাপন করেছে, অন্যদিকে ইসলাম ধর্ম প্রচারে নেমেছে।
প্রত্যন্ত এসব অঞ্চলে একদিকে ছিল দুঃশাসন, শ্রেণিগত নিপীড়ন; অন্যদিকে সীমাহীন দারিদ্র্য। পরবর্তীকালে যদিও বিশাল বিশাল সাম্রাজ্যের নির্মাণেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ধর্ম। দারিদ্র্যবিমোচনে এবং শিক্ষা বিস্তারে খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারকেরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এ দেশের বিশেষ জাতিসত্তার একটা বড় অংশের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মুখে তাঁরা মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
মানবকল্যাণের জন্য পৃথিবীতে যে ধর্মের আগমন, তা-ও একসময় নানা মতে নানা পথে বিভক্ত হয়েছে। ধর্মে-ধর্মে বৈরিতা হয়েছে। রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মযাজকদের বিরোধ হয়েছে। ধর্ম পালনেও একসময় রাষ্ট্রশক্তি বলপ্রয়োগ করেছে। পৃথিবীতে দুই হাজার বছরের ধর্মের ইতিহাস ছাড়াও অসংখ্য ধর্মের ইতিহাস রয়েছে। সেইসব সনাতন ধর্মের সঙ্গে আধুনিক ধর্মের বিরোধ অস্বাভাবিক নয়। সেইসব বিরোধের ফলে বহু নগর প্রায়ই রক্তাক্ত হয়েছে, মানুষও বিভক্ত হয়েছে। আবার অনেক মহান ধর্মযাজকেরা ধর্মের সমন্বয়ও করতে চেয়েছেন। উপমহাদেশের অনেক মাজারেই দেখা যায় সব ধর্মের মানুষ এসে তাঁদের শান্তি খুঁজছেন। ধীরে ধীরে রাজশক্তিতে ধর্ম এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল যে ধর্মে-ধর্মে বিরোধ মানুষকে বিভক্ত করে ফেলল। সে জন্যই ফরাসি বিপ্লবের সময় আমরা বলতে শুনি, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’।
এবার ফিরে আসি বড়দিনে। বড়দিনের মতোই বিশ্বে মুসলমানদের ঈদ, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণ এবং অন্য ধর্মের মানুষদেরও রয়েছে বড় উৎসব। এই উৎসবগুলো আসলে মানুষকে কী করে? মানুষ তার জীবন-জীবিকা নিয়ে যেমন ব্যস্ত, তেমনি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই বিচ্ছিন্নতা মানুষকে কখনো কখনো ভীষণভাবে নিঃসঙ্গ করে দেয়। সেই নিঃসঙ্গ জীবনে উৎসব একজন মানুষকে একত্র করে বলেই সে ভাবতে শুরু করে, সে একা নয়। সেখান থেকেই সে শক্তি সঞ্চয় করে এবং সামনের দিকে আশা নিয়ে তাকায়।
আজকের দিনে ধর্ম কোনো অঞ্চলে আবদ্ধ নয়। প্রতিটি ধর্মই কোনো না কোনোভাবে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের দেশে আরও একটি ধর্ম বহু বর্ষ ধরে মানবকল্যাণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছে, তা হলো বৌদ্ধধর্ম। আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের দরিদ্র, অসহায় মানুষের পাশে বৌদ্ধভিক্ষুরা দাঁড়িয়ে আছেন বহু কষ্ট, ক্লেশ নিয়েই। সম্প্রতি রাঙামাটির মোনঘর আশ্রমের ৫০ বছর পূর্তিতে গিয়েছিলাম। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল এবং কঠিন সংগ্রামের ইতিহাস। ষাটের দশকে কাপ্তাইয়ের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাঙামাটিসহ বিশাল একটি এলাকা এক রাতের মধ্যে প্লাবিত করা হয়। একেবারে কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই ঘটনাটি ঘটে। মানুষজন, গবাদিপশু, চাষযোগ্য জমি এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সার্কেলের রাজার বাড়িটিও পানির নিচে ডুবে যায়। এমন মর্মান্তিক ঘটনার দায় তৎকালীন সরকার একেবারেই অগ্রাহ্য করে। এই অসহায় বিশাল জনগোষ্ঠীর হাহাকার সেদিন কারও কানে পৌঁছায়নি।
তারপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার আরেক সংকট শুরু হয়। অনেক আত্মাহুতি, অশান্তিতে, মৃত্যুতে বিপর্যস্ত এই লোকালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মোনঘর শিশুসদন, স্কুল এবং আবাসিক ব্যবস্থা। এর ব্যবস্থাপনায় থাকেন বৌদ্ধভিক্ষুরা। সারা পৃথিবীর সহৃদয় মানুষেরা সাহায্যের হাত এগিয়ে দেন তাদের জন্য। অনেক অনাথ ছাত্র-ছাত্রী এখান থেকে পরবর্তীকালে শিক্ষা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমার সৌভাগ্য হয়েছে অনেক বৌদ্ধভিক্ষুর সঙ্গে চিন্তা বিনিময় করার। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ভিক্ষুনেতা শ্রদ্ধালংকার মহোদয়ের সঙ্গেও দিনের পর দিন পার্বত্য চট্টগ্রামের বেদনার ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছি।
এবার রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে একজন ভিক্ষু আমাদের সহায় হয়েছিলেন। তাঁর জ্ঞান, ধৈর্য ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি। এঁরা জীবনকে উৎসর্গ করেছেন মানবকল্যাণের জন্য। অথচ পাশের দেশ মিয়ানমারে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী শাসককুল কী নিষ্ঠুরতার সঙ্গে সে দেশের মানুষদের ওপর দমন-পীড়ন করছে!
গতকাল বড়দিন হয়ে গেল। সারা বিশ্বেই তা পালিত হয়েছে সাড়ম্বরে বা অনাড়ম্বরে। ধর্মের কল্যাণের বাণী উচ্চারিত হয়েছে সর্বত্র। খ্রিষ্টধর্মের মানুষেরা পরম আনন্দে এই দিনটি পালন করেছেন। এই উৎসব বৃহত্তর মানবকল্যাণের বাণী বয়ে আনুক। মানুষে-মানুষে, জাতিতে-জাতিতে সব ভেদাভেদের, হিংসার অবসান হোক।
মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী। তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।
১৬ ঘণ্টা আগেসরকার ১৫ মে ২০২৫ তারিখে এক প্রজ্ঞাপন দ্বারা ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছকে আগ্রাসী গাছ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সেই প্রজ্ঞাপনে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিপর্যায়ে বৃক্
১৬ ঘণ্টা আগেখারাপ খবরের ভিড়ে হাঁপিয়ে ওঠা সমাজে যখন ইতিবাচক বা ভালো কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, তখন রংপুরের কাউনিয়ার একটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানের খবর পড়ে মন ভালো না হয়ে পারে না।
১৬ ঘণ্টা আগে১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তা কি খুব অপ্রত্যাশিত ছিল? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘গোপালগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। কিন্তু ঘটনা এত বড় হবে, সে তথ্য ছিল না।’ অর্থাৎ ছোটখাটো ঘটনা ঘটবে, সেটা সরকারের জানা ছিল।
২ দিন আগে