বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় দলীয় এক কর্মসূচিতে বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা আগে ছিলাম কুকুরের মুখে, এখন বাঘের মুখে পড়েছি। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি, কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়।
আজাদুর রহমান চন্দন

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কাজ ত্বরান্বিত করতে রীতিমতো জোরালো তাগিদ দিয়েছেন। ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনের পর বন্দর ও নৌপরিবহন খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেছেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় ‘পৃথিবীর সেরা’ যারা, তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ রাজি না থাকলে রাজি করাতে হবে। সরকারপ্রধান ‘পৃথিবীর সেরা’ হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনা একটি ব্রিটিশ কোম্পানির কাছ থেকে অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কায় এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল মার্কিন কংগ্রেস। ফলে ডিপি ওয়ার্ল্ড ওই বন্দরগুলোর পরিচালনার ভার পোর্ট আমেরিকা নামে সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি মার্কিন কোম্পানির কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ওই পোর্ট আমেরিকাই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল অপারেটর।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন বা প্রাণকেন্দ্র তো বটেই, জাতীয় সার্বভৌমত্বেরও প্রতীক। দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই এই বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে প্রতিবছর জাহাজ থেকে ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো-নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে। জানা মতে, দেশি অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ করেছে। এমন পারফরম্যান্স সত্ত্বেও কাকে খুশি করতে বা কোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে এমন তাড়াহুড়া চলছে? বন্দরসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা বলছেন, টার্মিনালটি বিদেশি অপারেটরকে দিয়ে পরিচালনা করালে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয় অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে। ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে নিয়োজিত স্থানীয় শ্রমশক্তি কর্মসংস্থান হারাবে। বিদেশি অপারেটররা লাভের অংশ বিদেশি মুদ্রায় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে। অথচ নতুনভাবে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। ফলে টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আত্মঘাতী। এর পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বাইরে কিছুই দেখছে না দেশের অনেক রাজনৈতিক দলও।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র ১২ দলীয় জোটের নেতারা ১৫ মে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেশি প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। নেতারা আরও বলেন, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত প্রধান সমুদ্রবন্দর বিদেশি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে দেওয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। এত বড় জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়ার কোনো এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। একই দিনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশ, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা তৈরি করে যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে। কথিত মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়ানোর চক্রান্ত ও নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়ার প্রতিবাদে এবং কাতারকে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার অনুমতি না দেওয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে জোটের নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দেশের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তায় জড়িত এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দেবে না। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করেন নেতারা।
দুর্নীতিগ্রস্ত ও দমন-পীড়নকারী সরকারের পতন ঘটানোর পর জরুরি করণীয় ছিল দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জনমুখী জনপ্রশাসন প্রতিষ্ঠা; অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগসহ নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে মনোযোগ দেওয়া। সেখানে নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের নতুন নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ডাকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনের সড়ক আটকে অবস্থান নেয় কয়েকটি রাজনৈতিক দল। পরে তারা শাহবাগেও সমাবেশ করে। তাদের সেসব কর্মসূচিতে কোনো রকম বাধা দেওয়া তো দূরের কথা, বরং সমাবেশে ঢাকা ওয়াসাকে খাওয়ার পানি বিতরণ করতে এবং পরিবেশ শীতল করতে সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটাতে দেখা যায়। অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি নিয়ে ১৪ মে যমুনা অভিমুখে মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে নিক্ষেপ করা হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড। ব্যবহার করা হয় জলকামান। এর পর থেকেই আন্দোলনের পক্ষভেদে সরকারের আলাদা অবস্থান নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে, কোনো আন্দোলনে কেন সরকারের ‘সদয় আচরণ’ আর কোনো আন্দোলনে কেন এমন বলপ্রয়োগ?
রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এই করিডরের মাধ্যমে রাখাইনে দুর্যোগকবলিত মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা সহজতর হবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, মানবিকতার মোড়কে বাস্তবে এটি স্ট্র্যাটেজিক উপস্থিতি নিশ্চিত করার পথ মাত্র। আগেই বলেছি, বিশ্বের যেসব জায়গায় এ ধরনের মানবিক করিডর হয়েছে, তার কোনো কোনোটি বিবদমান পক্ষগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনার মাধ্যমে, আবার কোনোটি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোনো একটি পক্ষ যদি এই উদ্যোগে সায় না দেয়, তাহলে জটিলতা দেখা দিতে বাধ্য। আলোচিত করিডর নিয়ে মিয়ানমার সরকার নাখোশ বলে এরই মধ্যে খবর মিলছে নানা মাধ্যমে। মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিরক্ষা শাখার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আফতাব হোসেনকে জরুরি ভিত্তিতে দায়িত্ব হস্তান্তরপূর্বক ‘প্রতিস্থাপক ব্যতিরেকে’ দেশে প্রত্যাবর্তনের আদেশ দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমের দাবি, মিয়ানমার সরকারের অসন্তোষের কারণেই আফতাব হোসেনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কত-কী যে দেখতে হবে!
কোনো দেশ যখন নিজের প্রধান বন্দর বিদেশি সামরিক বাহিনী বা তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়, তখন সে তার বাণিজ্যের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বও অনেকাংশে তুলে দেয়। বন্দর পরিচালনার ভার কাকে দেওয়া হবে বা না হবে, তা শুধু কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না। একটি দেশের বন্দর হলো স্ট্র্যাটেজিক সম্পদ, যার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত। ইচ্ছা হলেই কোনো বিদেশি কোম্পানির হাতে তার পরিচালনার ভার তুলে দেওয়া ঠিক নয়। তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও কর্তৃত্বকে আর দশটা বিনিয়োগের মতো দেখে না, দেখেনি। জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় যে প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৬ সালে টার্মিনাল পরিচালনা করতে দেয়নি, সেই ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতেই অন্তর্বর্তী সরকার কোন বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক টার্মিনাল পরিচালনার ভার তুলে দিতে চাইছে? ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর ঘনিষ্ঠতার কথা বিশ্বব্যাপী সুবিদিত।
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া কিংবা রাখাইনের জন্য করিডর চালুর সরাসরি বিরোধিতা না করলেও বিএনপি কৌশলে বিপক্ষেই কথা বলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় দলীয় এক কর্মসূচিতে বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা আগে ছিলাম কুকুরের মুখে, এখন বাঘের মুখে পড়েছি। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি, কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দেওয়ার সরকার, দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সরকার নয়। মিয়ানমারের রাখাইনে করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার, এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক আপনারা নন।’
বাঘের মুখে পড়ার এই মন্তব্য কি কেবলই রাজনৈতিক, নাকি প্রকৃত বাস্তবতা? কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কাজ ত্বরান্বিত করতে রীতিমতো জোরালো তাগিদ দিয়েছেন। ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনের পর বন্দর ও নৌপরিবহন খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেছেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় ‘পৃথিবীর সেরা’ যারা, তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ রাজি না থাকলে রাজি করাতে হবে। সরকারপ্রধান ‘পৃথিবীর সেরা’ হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনা একটি ব্রিটিশ কোম্পানির কাছ থেকে অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কায় এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল মার্কিন কংগ্রেস। ফলে ডিপি ওয়ার্ল্ড ওই বন্দরগুলোর পরিচালনার ভার পোর্ট আমেরিকা নামে সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি মার্কিন কোম্পানির কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ওই পোর্ট আমেরিকাই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল অপারেটর।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন বা প্রাণকেন্দ্র তো বটেই, জাতীয় সার্বভৌমত্বেরও প্রতীক। দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই এই বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে প্রতিবছর জাহাজ থেকে ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো-নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে। জানা মতে, দেশি অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ করেছে। এমন পারফরম্যান্স সত্ত্বেও কাকে খুশি করতে বা কোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে এমন তাড়াহুড়া চলছে? বন্দরসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা বলছেন, টার্মিনালটি বিদেশি অপারেটরকে দিয়ে পরিচালনা করালে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয় অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে। ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে নিয়োজিত স্থানীয় শ্রমশক্তি কর্মসংস্থান হারাবে। বিদেশি অপারেটররা লাভের অংশ বিদেশি মুদ্রায় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে। অথচ নতুনভাবে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। ফলে টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আত্মঘাতী। এর পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বাইরে কিছুই দেখছে না দেশের অনেক রাজনৈতিক দলও।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র ১২ দলীয় জোটের নেতারা ১৫ মে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেশি প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। নেতারা আরও বলেন, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত প্রধান সমুদ্রবন্দর বিদেশি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে দেওয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। এত বড় জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়ার কোনো এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। একই দিনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশ, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা তৈরি করে যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে। কথিত মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়ানোর চক্রান্ত ও নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়ার প্রতিবাদে এবং কাতারকে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার অনুমতি না দেওয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে জোটের নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দেশের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তায় জড়িত এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দেবে না। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করেন নেতারা।
দুর্নীতিগ্রস্ত ও দমন-পীড়নকারী সরকারের পতন ঘটানোর পর জরুরি করণীয় ছিল দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জনমুখী জনপ্রশাসন প্রতিষ্ঠা; অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগসহ নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে মনোযোগ দেওয়া। সেখানে নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের নতুন নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ডাকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনের সড়ক আটকে অবস্থান নেয় কয়েকটি রাজনৈতিক দল। পরে তারা শাহবাগেও সমাবেশ করে। তাদের সেসব কর্মসূচিতে কোনো রকম বাধা দেওয়া তো দূরের কথা, বরং সমাবেশে ঢাকা ওয়াসাকে খাওয়ার পানি বিতরণ করতে এবং পরিবেশ শীতল করতে সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটাতে দেখা যায়। অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি নিয়ে ১৪ মে যমুনা অভিমুখে মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে নিক্ষেপ করা হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড। ব্যবহার করা হয় জলকামান। এর পর থেকেই আন্দোলনের পক্ষভেদে সরকারের আলাদা অবস্থান নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে, কোনো আন্দোলনে কেন সরকারের ‘সদয় আচরণ’ আর কোনো আন্দোলনে কেন এমন বলপ্রয়োগ?
রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এই করিডরের মাধ্যমে রাখাইনে দুর্যোগকবলিত মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা সহজতর হবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, মানবিকতার মোড়কে বাস্তবে এটি স্ট্র্যাটেজিক উপস্থিতি নিশ্চিত করার পথ মাত্র। আগেই বলেছি, বিশ্বের যেসব জায়গায় এ ধরনের মানবিক করিডর হয়েছে, তার কোনো কোনোটি বিবদমান পক্ষগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনার মাধ্যমে, আবার কোনোটি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোনো একটি পক্ষ যদি এই উদ্যোগে সায় না দেয়, তাহলে জটিলতা দেখা দিতে বাধ্য। আলোচিত করিডর নিয়ে মিয়ানমার সরকার নাখোশ বলে এরই মধ্যে খবর মিলছে নানা মাধ্যমে। মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিরক্ষা শাখার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আফতাব হোসেনকে জরুরি ভিত্তিতে দায়িত্ব হস্তান্তরপূর্বক ‘প্রতিস্থাপক ব্যতিরেকে’ দেশে প্রত্যাবর্তনের আদেশ দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমের দাবি, মিয়ানমার সরকারের অসন্তোষের কারণেই আফতাব হোসেনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কত-কী যে দেখতে হবে!
কোনো দেশ যখন নিজের প্রধান বন্দর বিদেশি সামরিক বাহিনী বা তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়, তখন সে তার বাণিজ্যের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বও অনেকাংশে তুলে দেয়। বন্দর পরিচালনার ভার কাকে দেওয়া হবে বা না হবে, তা শুধু কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না। একটি দেশের বন্দর হলো স্ট্র্যাটেজিক সম্পদ, যার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত। ইচ্ছা হলেই কোনো বিদেশি কোম্পানির হাতে তার পরিচালনার ভার তুলে দেওয়া ঠিক নয়। তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও কর্তৃত্বকে আর দশটা বিনিয়োগের মতো দেখে না, দেখেনি। জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় যে প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৬ সালে টার্মিনাল পরিচালনা করতে দেয়নি, সেই ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতেই অন্তর্বর্তী সরকার কোন বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক টার্মিনাল পরিচালনার ভার তুলে দিতে চাইছে? ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর ঘনিষ্ঠতার কথা বিশ্বব্যাপী সুবিদিত।
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া কিংবা রাখাইনের জন্য করিডর চালুর সরাসরি বিরোধিতা না করলেও বিএনপি কৌশলে বিপক্ষেই কথা বলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় দলীয় এক কর্মসূচিতে বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা আগে ছিলাম কুকুরের মুখে, এখন বাঘের মুখে পড়েছি। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি, কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দেওয়ার সরকার, দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সরকার নয়। মিয়ানমারের রাখাইনে করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার, এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক আপনারা নন।’
বাঘের মুখে পড়ার এই মন্তব্য কি কেবলই রাজনৈতিক, নাকি প্রকৃত বাস্তবতা? কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় দলীয় এক কর্মসূচিতে বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা আগে ছিলাম কুকুরের মুখে, এখন বাঘের মুখে পড়েছি। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি, কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়।
আজাদুর রহমান চন্দন

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কাজ ত্বরান্বিত করতে রীতিমতো জোরালো তাগিদ দিয়েছেন। ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনের পর বন্দর ও নৌপরিবহন খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেছেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় ‘পৃথিবীর সেরা’ যারা, তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ রাজি না থাকলে রাজি করাতে হবে। সরকারপ্রধান ‘পৃথিবীর সেরা’ হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনা একটি ব্রিটিশ কোম্পানির কাছ থেকে অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কায় এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল মার্কিন কংগ্রেস। ফলে ডিপি ওয়ার্ল্ড ওই বন্দরগুলোর পরিচালনার ভার পোর্ট আমেরিকা নামে সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি মার্কিন কোম্পানির কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ওই পোর্ট আমেরিকাই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল অপারেটর।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন বা প্রাণকেন্দ্র তো বটেই, জাতীয় সার্বভৌমত্বেরও প্রতীক। দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই এই বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে প্রতিবছর জাহাজ থেকে ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো-নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে। জানা মতে, দেশি অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ করেছে। এমন পারফরম্যান্স সত্ত্বেও কাকে খুশি করতে বা কোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে এমন তাড়াহুড়া চলছে? বন্দরসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা বলছেন, টার্মিনালটি বিদেশি অপারেটরকে দিয়ে পরিচালনা করালে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয় অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে। ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে নিয়োজিত স্থানীয় শ্রমশক্তি কর্মসংস্থান হারাবে। বিদেশি অপারেটররা লাভের অংশ বিদেশি মুদ্রায় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে। অথচ নতুনভাবে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। ফলে টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আত্মঘাতী। এর পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বাইরে কিছুই দেখছে না দেশের অনেক রাজনৈতিক দলও।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র ১২ দলীয় জোটের নেতারা ১৫ মে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেশি প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। নেতারা আরও বলেন, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত প্রধান সমুদ্রবন্দর বিদেশি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে দেওয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। এত বড় জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়ার কোনো এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। একই দিনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশ, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা তৈরি করে যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে। কথিত মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়ানোর চক্রান্ত ও নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়ার প্রতিবাদে এবং কাতারকে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার অনুমতি না দেওয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে জোটের নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দেশের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তায় জড়িত এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দেবে না। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করেন নেতারা।
দুর্নীতিগ্রস্ত ও দমন-পীড়নকারী সরকারের পতন ঘটানোর পর জরুরি করণীয় ছিল দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জনমুখী জনপ্রশাসন প্রতিষ্ঠা; অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগসহ নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে মনোযোগ দেওয়া। সেখানে নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের নতুন নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ডাকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনের সড়ক আটকে অবস্থান নেয় কয়েকটি রাজনৈতিক দল। পরে তারা শাহবাগেও সমাবেশ করে। তাদের সেসব কর্মসূচিতে কোনো রকম বাধা দেওয়া তো দূরের কথা, বরং সমাবেশে ঢাকা ওয়াসাকে খাওয়ার পানি বিতরণ করতে এবং পরিবেশ শীতল করতে সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটাতে দেখা যায়। অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি নিয়ে ১৪ মে যমুনা অভিমুখে মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে নিক্ষেপ করা হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড। ব্যবহার করা হয় জলকামান। এর পর থেকেই আন্দোলনের পক্ষভেদে সরকারের আলাদা অবস্থান নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে, কোনো আন্দোলনে কেন সরকারের ‘সদয় আচরণ’ আর কোনো আন্দোলনে কেন এমন বলপ্রয়োগ?
রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এই করিডরের মাধ্যমে রাখাইনে দুর্যোগকবলিত মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা সহজতর হবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, মানবিকতার মোড়কে বাস্তবে এটি স্ট্র্যাটেজিক উপস্থিতি নিশ্চিত করার পথ মাত্র। আগেই বলেছি, বিশ্বের যেসব জায়গায় এ ধরনের মানবিক করিডর হয়েছে, তার কোনো কোনোটি বিবদমান পক্ষগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনার মাধ্যমে, আবার কোনোটি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোনো একটি পক্ষ যদি এই উদ্যোগে সায় না দেয়, তাহলে জটিলতা দেখা দিতে বাধ্য। আলোচিত করিডর নিয়ে মিয়ানমার সরকার নাখোশ বলে এরই মধ্যে খবর মিলছে নানা মাধ্যমে। মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিরক্ষা শাখার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আফতাব হোসেনকে জরুরি ভিত্তিতে দায়িত্ব হস্তান্তরপূর্বক ‘প্রতিস্থাপক ব্যতিরেকে’ দেশে প্রত্যাবর্তনের আদেশ দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমের দাবি, মিয়ানমার সরকারের অসন্তোষের কারণেই আফতাব হোসেনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কত-কী যে দেখতে হবে!
কোনো দেশ যখন নিজের প্রধান বন্দর বিদেশি সামরিক বাহিনী বা তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়, তখন সে তার বাণিজ্যের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বও অনেকাংশে তুলে দেয়। বন্দর পরিচালনার ভার কাকে দেওয়া হবে বা না হবে, তা শুধু কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না। একটি দেশের বন্দর হলো স্ট্র্যাটেজিক সম্পদ, যার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত। ইচ্ছা হলেই কোনো বিদেশি কোম্পানির হাতে তার পরিচালনার ভার তুলে দেওয়া ঠিক নয়। তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও কর্তৃত্বকে আর দশটা বিনিয়োগের মতো দেখে না, দেখেনি। জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় যে প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৬ সালে টার্মিনাল পরিচালনা করতে দেয়নি, সেই ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতেই অন্তর্বর্তী সরকার কোন বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক টার্মিনাল পরিচালনার ভার তুলে দিতে চাইছে? ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর ঘনিষ্ঠতার কথা বিশ্বব্যাপী সুবিদিত।
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া কিংবা রাখাইনের জন্য করিডর চালুর সরাসরি বিরোধিতা না করলেও বিএনপি কৌশলে বিপক্ষেই কথা বলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় দলীয় এক কর্মসূচিতে বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা আগে ছিলাম কুকুরের মুখে, এখন বাঘের মুখে পড়েছি। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি, কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দেওয়ার সরকার, দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সরকার নয়। মিয়ানমারের রাখাইনে করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার, এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক আপনারা নন।’
বাঘের মুখে পড়ার এই মন্তব্য কি কেবলই রাজনৈতিক, নাকি প্রকৃত বাস্তবতা? কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কাজ ত্বরান্বিত করতে রীতিমতো জোরালো তাগিদ দিয়েছেন। ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনের পর বন্দর ও নৌপরিবহন খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেছেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় ‘পৃথিবীর সেরা’ যারা, তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ রাজি না থাকলে রাজি করাতে হবে। সরকারপ্রধান ‘পৃথিবীর সেরা’ হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনা একটি ব্রিটিশ কোম্পানির কাছ থেকে অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কায় এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল মার্কিন কংগ্রেস। ফলে ডিপি ওয়ার্ল্ড ওই বন্দরগুলোর পরিচালনার ভার পোর্ট আমেরিকা নামে সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি মার্কিন কোম্পানির কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ওই পোর্ট আমেরিকাই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল অপারেটর।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন বা প্রাণকেন্দ্র তো বটেই, জাতীয় সার্বভৌমত্বেরও প্রতীক। দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই এই বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে প্রতিবছর জাহাজ থেকে ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো-নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে। জানা মতে, দেশি অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ করেছে। এমন পারফরম্যান্স সত্ত্বেও কাকে খুশি করতে বা কোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে এমন তাড়াহুড়া চলছে? বন্দরসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা বলছেন, টার্মিনালটি বিদেশি অপারেটরকে দিয়ে পরিচালনা করালে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয় অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে। ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে নিয়োজিত স্থানীয় শ্রমশক্তি কর্মসংস্থান হারাবে। বিদেশি অপারেটররা লাভের অংশ বিদেশি মুদ্রায় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে। অথচ নতুনভাবে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। ফলে টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আত্মঘাতী। এর পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বাইরে কিছুই দেখছে না দেশের অনেক রাজনৈতিক দলও।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র ১২ দলীয় জোটের নেতারা ১৫ মে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেশি প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। নেতারা আরও বলেন, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত প্রধান সমুদ্রবন্দর বিদেশি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে দেওয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। এত বড় জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়ার কোনো এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। একই দিনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশ, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা তৈরি করে যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে। কথিত মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়ানোর চক্রান্ত ও নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়ার প্রতিবাদে এবং কাতারকে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার অনুমতি না দেওয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে জোটের নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দেশের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তায় জড়িত এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দেবে না। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করেন নেতারা।
দুর্নীতিগ্রস্ত ও দমন-পীড়নকারী সরকারের পতন ঘটানোর পর জরুরি করণীয় ছিল দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জনমুখী জনপ্রশাসন প্রতিষ্ঠা; অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগসহ নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে মনোযোগ দেওয়া। সেখানে নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের নতুন নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ডাকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনের সড়ক আটকে অবস্থান নেয় কয়েকটি রাজনৈতিক দল। পরে তারা শাহবাগেও সমাবেশ করে। তাদের সেসব কর্মসূচিতে কোনো রকম বাধা দেওয়া তো দূরের কথা, বরং সমাবেশে ঢাকা ওয়াসাকে খাওয়ার পানি বিতরণ করতে এবং পরিবেশ শীতল করতে সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটাতে দেখা যায়। অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি নিয়ে ১৪ মে যমুনা অভিমুখে মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে নিক্ষেপ করা হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড। ব্যবহার করা হয় জলকামান। এর পর থেকেই আন্দোলনের পক্ষভেদে সরকারের আলাদা অবস্থান নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে, কোনো আন্দোলনে কেন সরকারের ‘সদয় আচরণ’ আর কোনো আন্দোলনে কেন এমন বলপ্রয়োগ?
রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এই করিডরের মাধ্যমে রাখাইনে দুর্যোগকবলিত মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা সহজতর হবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, মানবিকতার মোড়কে বাস্তবে এটি স্ট্র্যাটেজিক উপস্থিতি নিশ্চিত করার পথ মাত্র। আগেই বলেছি, বিশ্বের যেসব জায়গায় এ ধরনের মানবিক করিডর হয়েছে, তার কোনো কোনোটি বিবদমান পক্ষগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনার মাধ্যমে, আবার কোনোটি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোনো একটি পক্ষ যদি এই উদ্যোগে সায় না দেয়, তাহলে জটিলতা দেখা দিতে বাধ্য। আলোচিত করিডর নিয়ে মিয়ানমার সরকার নাখোশ বলে এরই মধ্যে খবর মিলছে নানা মাধ্যমে। মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিরক্ষা শাখার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আফতাব হোসেনকে জরুরি ভিত্তিতে দায়িত্ব হস্তান্তরপূর্বক ‘প্রতিস্থাপক ব্যতিরেকে’ দেশে প্রত্যাবর্তনের আদেশ দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমের দাবি, মিয়ানমার সরকারের অসন্তোষের কারণেই আফতাব হোসেনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কত-কী যে দেখতে হবে!
কোনো দেশ যখন নিজের প্রধান বন্দর বিদেশি সামরিক বাহিনী বা তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়, তখন সে তার বাণিজ্যের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বও অনেকাংশে তুলে দেয়। বন্দর পরিচালনার ভার কাকে দেওয়া হবে বা না হবে, তা শুধু কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না। একটি দেশের বন্দর হলো স্ট্র্যাটেজিক সম্পদ, যার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত। ইচ্ছা হলেই কোনো বিদেশি কোম্পানির হাতে তার পরিচালনার ভার তুলে দেওয়া ঠিক নয়। তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও কর্তৃত্বকে আর দশটা বিনিয়োগের মতো দেখে না, দেখেনি। জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় যে প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৬ সালে টার্মিনাল পরিচালনা করতে দেয়নি, সেই ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতেই অন্তর্বর্তী সরকার কোন বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক টার্মিনাল পরিচালনার ভার তুলে দিতে চাইছে? ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর ঘনিষ্ঠতার কথা বিশ্বব্যাপী সুবিদিত।
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া কিংবা রাখাইনের জন্য করিডর চালুর সরাসরি বিরোধিতা না করলেও বিএনপি কৌশলে বিপক্ষেই কথা বলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় দলীয় এক কর্মসূচিতে বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা আগে ছিলাম কুকুরের মুখে, এখন বাঘের মুখে পড়েছি। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি, কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দেওয়ার সরকার, দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সরকার নয়। মিয়ানমারের রাখাইনে করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার, এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক আপনারা নন।’
বাঘের মুখে পড়ার এই মন্তব্য কি কেবলই রাজনৈতিক, নাকি প্রকৃত বাস্তবতা? কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
১ দিন আগে
আমরা এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে নানা ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের মানুষ পরস্পরের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জারিত হয়ে সমাজের বৈচিত্র্যকে উদ্যাপন করবে। আমরা এমন এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যে রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিকের মানবিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবে।
১ দিন আগে
পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা গুরুতর অপরাধ এবং এটি জনস্বাস্থ্য ও পশু সুরক্ষার দিক থেকে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের পশু হত্যা নিষ্ঠুরতা এবং মানবিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১ দিন আগে
মানুষের জীবন শুধু বেঁচে থাকার নাম নয়; জীবন মানে হচ্ছে পূর্ণতার সন্ধান, মানসিক শান্তি ও শারীরিক সুস্থতার সুষম সমন্বয়। এই সমন্বয় সাধনের দুটি প্রধান উপাদান হলো সংগীত ও শরীরচর্চা। সংগীত আত্মাকে প্রশান্ত করে, মনকে উজ্জীবিত করে; আর শরীরচর্চা দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
এই দেড় বছরে মেট্রোরেল লাইনে কাপড়, ব্যাগ, ড্রোন, তার নিক্ষেপের কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এখনই যদি এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একটা ভালো ব্যাপার যে, মেট্রোরেলের নিরাপত্তাব্যবস্থা এমন যে রেললাইনে সামান্যতম বাধা সৃষ্টি হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন থেমে যায়। এটি দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ভালো দিক হলেও, মানবসৃষ্ট কারণে ঘন ঘন এই থমকে যাওয়া আধুনিক এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কর্তৃপক্ষকে সেসব সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
জনগণ দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে করণীয় নিয়ে এখনই ভাবতে হবে কর্তৃপক্ষকে। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যাও যে আছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিছুদিন আগে ফার্মগেট এলাকায় বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজনের নিহত হওয়ার ঘটনাটি এই আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি করেছে। বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সরঞ্জাম বারবার বিকল হওয়া বা খুলে পড়ার ঘটনাটি মেট্রোরেলের কারিগরি তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণে আরও গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। এক সূত্র থেকে জানা যায়, এই নিহতের ঘটনা এবং অন্যান্য ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোরেলে আগের তুলনায় ১০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন মেট্রোরেলের লাইনে বস্তু শনাক্ত করতে ‘অবজেক্ট ডিটেকশন সেন্সর’ ও ‘এআই-চালিত সিসিটিভি’ স্থাপন করা, ড্রোন পড়া প্রতিরোধে ‘ড্রোন ডিটেকশন রাডার’ ও ‘জিওফেন্সিং সিস্টেম’ ব্যবহার করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক লাইনে সুরক্ষা নেট বসালে বাইরে থেকে তার বা বস্তু নিক্ষেপ ঠেকানো সম্ভব।
মেট্রোরেল দেশের সম্পদ। জনগণের মধ্যে সে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। ডিএমটিসিএলকে প্রযুক্তিগত ত্রুটিগুলো দ্রুত সমাধান এবং রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে তাদের সামান্য ভুল বা অসচেতনতা হাজার হাজার যাত্রীর ভোগান্তি এবং মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সচেতনতা ও প্রযুক্তিগত সুরক্ষা—এই দুইয়ের সমন্বয়েই কেবল মেট্রোরেলের মসৃণ ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব। এই আধুনিক পরিষেবা যেন মাঝে মাঝে থমকে যাওয়ার দুর্নাম থেকে মুক্তি পায়, সেই প্রত্যাশা আমাদের।

ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
এই দেড় বছরে মেট্রোরেল লাইনে কাপড়, ব্যাগ, ড্রোন, তার নিক্ষেপের কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এখনই যদি এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একটা ভালো ব্যাপার যে, মেট্রোরেলের নিরাপত্তাব্যবস্থা এমন যে রেললাইনে সামান্যতম বাধা সৃষ্টি হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন থেমে যায়। এটি দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ভালো দিক হলেও, মানবসৃষ্ট কারণে ঘন ঘন এই থমকে যাওয়া আধুনিক এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কর্তৃপক্ষকে সেসব সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
জনগণ দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে করণীয় নিয়ে এখনই ভাবতে হবে কর্তৃপক্ষকে। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যাও যে আছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিছুদিন আগে ফার্মগেট এলাকায় বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজনের নিহত হওয়ার ঘটনাটি এই আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি করেছে। বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সরঞ্জাম বারবার বিকল হওয়া বা খুলে পড়ার ঘটনাটি মেট্রোরেলের কারিগরি তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণে আরও গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। এক সূত্র থেকে জানা যায়, এই নিহতের ঘটনা এবং অন্যান্য ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোরেলে আগের তুলনায় ১০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন মেট্রোরেলের লাইনে বস্তু শনাক্ত করতে ‘অবজেক্ট ডিটেকশন সেন্সর’ ও ‘এআই-চালিত সিসিটিভি’ স্থাপন করা, ড্রোন পড়া প্রতিরোধে ‘ড্রোন ডিটেকশন রাডার’ ও ‘জিওফেন্সিং সিস্টেম’ ব্যবহার করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক লাইনে সুরক্ষা নেট বসালে বাইরে থেকে তার বা বস্তু নিক্ষেপ ঠেকানো সম্ভব।
মেট্রোরেল দেশের সম্পদ। জনগণের মধ্যে সে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। ডিএমটিসিএলকে প্রযুক্তিগত ত্রুটিগুলো দ্রুত সমাধান এবং রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে তাদের সামান্য ভুল বা অসচেতনতা হাজার হাজার যাত্রীর ভোগান্তি এবং মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সচেতনতা ও প্রযুক্তিগত সুরক্ষা—এই দুইয়ের সমন্বয়েই কেবল মেট্রোরেলের মসৃণ ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব। এই আধুনিক পরিষেবা যেন মাঝে মাঝে থমকে যাওয়ার দুর্নাম থেকে মুক্তি পায়, সেই প্রত্যাশা আমাদের।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ।
১৯ মে ২০২৫
আমরা এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে নানা ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের মানুষ পরস্পরের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জারিত হয়ে সমাজের বৈচিত্র্যকে উদ্যাপন করবে। আমরা এমন এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যে রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিকের মানবিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবে।
১ দিন আগে
পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা গুরুতর অপরাধ এবং এটি জনস্বাস্থ্য ও পশু সুরক্ষার দিক থেকে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের পশু হত্যা নিষ্ঠুরতা এবং মানবিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১ দিন আগে
মানুষের জীবন শুধু বেঁচে থাকার নাম নয়; জীবন মানে হচ্ছে পূর্ণতার সন্ধান, মানসিক শান্তি ও শারীরিক সুস্থতার সুষম সমন্বয়। এই সমন্বয় সাধনের দুটি প্রধান উপাদান হলো সংগীত ও শরীরচর্চা। সংগীত আত্মাকে প্রশান্ত করে, মনকে উজ্জীবিত করে; আর শরীরচর্চা দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে।
১ দিন আগেবিধান রিবেরু

আমরা এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে নানা ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের মানুষ পরস্পরের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জারিত হয়ে সমাজের বৈচিত্র্যকে উদ্যাপন করবে। আমরা এমন এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যে রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিকের মানবিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবে। বৈষম্য ও দারিদ্র্যকে মুখে মুখে নয়, প্রকৃত অর্থেই জাদুঘরে পাঠাবে। এমন সমাজ ও রাষ্ট্র পাওয়ার স্বপ্ন আমরা মূর্ত করে তুলেছিলাম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু গন্ডগোলটা বাধল যখন একটি গোষ্ঠী বা ব্যক্তি নিজের মত ও বিশ্বাসকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করতে শুরু করল এবং চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। এতে করে সমাজে দেখা দিল সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ, রাষ্ট্রে প্রতিভাত হলো স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ।
একটি সমাজে নানা মত ও পথের মানুষ থাকবে। বিশ্বাসী থাকবে। অবিশ্বাসী থাকবে। সবাইকে নিয়েই সমাজ ও রাষ্ট্র। ভিন্ন ভিন্ন দল ও মতের হয়েও তাহলে কেমন করে মানুষ এক সূত্রে গাঁথা থাকবে? কেমন করে একটি মানচিত্রের ভেতর চিহ্নিত হবে অভিন্নতা? জাতি থেকে জাতীয়তাবোধ, সেখান থেকে আমরা পেলাম জাতিরাষ্ট্র। সাতচল্লিশের আগে ভারতবর্ষে ধর্মকে জাতি ঠাওরে বা সুবিধার জন্য মনে মনে ধরে নিয়ে, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করা হলো। কিন্তু ধর্মভিত্তিক জাতি যে সোনার পাথরবাটি, তা ১৯৭১ সালেই আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। জাতি গঠনে গণমানুষের সম্মিলিত কল্পনাশক্তির একটা ভূমিকা আছে সত্যি, কিন্তু সেটার সুবিধা নিয়ে কেউ যদি জাতি গঠনের জন্য ধর্মকে ভিত্তি বানায়, তাহলে বলতে হয় কেউ চোরাবালির ওপর প্রাসাদ নির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। দুই যুগ পূরণ হওয়ার আগেই তাই স্বপ্নভঙ্গের ঘটনাও ঘটেছে। বাস্তবে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। তখন ভেবেছি এবার অসাম্প্রদায়িক ও সমতার সমাজ গঠন করা সহজ হবে। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো কি?
কেউ বলেন জাতি হলো এক কল্পিত জনগোষ্ঠী। কেউবা বলেন এটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য এক সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তি। আমাদের ভেতর একটি সামাজিক অনুভূতি কাজ করে যে, আমরা সবাই একই দেশের নাগরিক। এখানে যদি ফাটল থাকে, তাহলে সে দেশের ললাট থেকে শনির দশা কাটে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যতই প্রচার করা হোক না কেন বাঙালি জাতীয়তাবাদ কিংবা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, কোথায় গিয়ে যেন তৃতীয় আরেকটি মতবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং তারা ১৯৪৭-এর দিকে তাকিয়ে ১৯৭১ সালকে গৌণ করে দিতে চায়। সাতচল্লিশে ধর্মকে জাতি জ্ঞান করে যে বিভাজন হয়েছিল, ১৯৭১ সালে কিন্তু সেই ভ্রম কেটে যায় এবং স্পষ্টতই মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে জালিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। কিন্তু আজ সেই তৃতীয় পক্ষ ১৯৭১ সালকে অস্বীকার করতে চায়, ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসেবেও তারা মানতে নারাজ। এমনকি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ তারিখ নিয়েও কেউ কেউ অত্যন্ত আপত্তিজনক মন্তব্য করে ফেলছেন। যেটি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। তবে কি জাতি হিসেবে নিজেদের ভাবার ক্ষেত্রে পাটাতনে আবার সেই ধর্মভিত্তিক চিন্তাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে? নয় তো কেন হঠাৎ আবার এত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটল? কেনইবা সমাজে ধর্মের প্রতি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি এই পক্ষপাত লক্ষ করা যাচ্ছে? বাংলাদেশের সমাজে ইদানীং মানুষ নিজেদের মানব, বিশ্বনাগরিক বা একটি জাতিগোষ্ঠীর পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার বদলে ধর্মপরিচয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, সর্বাগ্রে স্থান দিচ্ছে। এই পরিবর্তন কেন ঘটল, কেমন করে ঘটল, তার হদিস সমাজবিজ্ঞানীরা ভালো করতে পারবেন। তবে এই পরিবর্তনের দায় কোনোভাবেই রাজনীতিবিদ ও শাসকশ্রেণি এড়াতে পারবে না।
যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরব করার মতো আত্মপরিচয় দিয়েছে, যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যে মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ এক সাগর রক্ত ঢালতে পারে অনায়াসে, সেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আজ অত্যন্ত আপত্তিকর কথা উঠছে। তারা ফিরে যেতে চাইছে সাতচল্লিশে। কী উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ! একটি গোষ্ঠী ও কিছু তথাকথিক কনটেন্ট ক্রিয়েটর নিজেদের বিপুল অনুসারী সহযোগে মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত যে ভয়ংকর মিথ্যা তথ্য প্রচার এবং চরম অপমানজনক বাক্য ব্যবহার করছে, তাতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হয়ে উপায় নেই। যেকোনো সুস্থ মানুষ, যাঁরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে সব দল-মত ও পথের ঊর্ধ্বে রেখে, যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান, ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের কথা মাথায় রেখে, বাংলাদেশকে নিজেদের অস্তিত্বের অংশ মনে করেন, তাঁদের প্রত্যেকেই আজ বিমর্ষবোধ করছেন। মুক্তিযুদ্ধ যে শোষণহীন ও বৈষম্যমুক্ত সমাজের আকাঙ্ক্ষা থেকে উৎসারিত পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ও জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে জনযুদ্ধ ছিল, সেটিকে যেন ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দেখা যাচ্ছে, অনেকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও নির্যাতিতদের সংখ্যা নিয়ে কুতর্কের দোকান খুলে বসেছে। ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান ‘জয় বাংলা’র পর ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছিলেন কি না, সেটি আবিষ্কার করতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। যেন শেখ মুজিবুর রহমান ‘জয় পাকিস্তান’ বললেই গোটা ৭ মার্চের উত্তাল ভাষণ ও ভাষণ শুনতে আসা লাখো মানুষের মনের ভেতর থাকা স্বাধীনতার জন্য সমুদ্রসমান কল্লোল মিথ্যা হয়ে যায়। যদিও তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে সেদিনের বিশাল জনসভায় সশরীরের উপস্থিত থাকা অনেক বিশিষ্ট মানুষই শোনেননি ‘জয় পাকিস্তান’ বলা হচ্ছে। তাহলে এখন কেন এসব ছোটখাটো কথা নিয়ে এত সময়ক্ষেপণ? এসব করলেই কি এই জনপদের মানুষ যে পাকিস্তানি শাসকদের, বলতে গেলে খালি হাতে যুদ্ধ করে পরাজিত করেছিল, তা লুকিয়ে ফেলা যাবে? কারা এই অপচেষ্টা করছে আজকে? যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে গৌরব ও অর্জনের ইতিহাস, তাই একে প্রশ্নবিদ্ধ করে তর্ক জুড়ে দিলে, মনে করা হচ্ছে মানুষ ওটা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। আর এই ফাঁকে স্বার্থ উদ্ধার করে নেবে সুযোগসন্ধানীরা।
আরেকটি বিষয় নিয়ে কথা না বললেই নয়, ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক কারণেই ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে গিয়েছিল। এটা ঠিক, তাদের জনতুষ্টিমূলক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে চলচ্চিত্রে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখানো হয়, এটা নিয়ে আপত্তি বজায় রেখেই বলতে চাই, সে সময় ভারত পূর্ববঙ্গের লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দিয়ে যে নজির স্থাপন করেছিল, সেটি অস্বীকার করার জো নেই। তাদের আচরণ অনেক সময় বড়ভাইসুলভ ও কিছুটা আপত্তিজনক হলেও, মুক্তিযুদ্ধে তাদের যে সেনাসদস্য মারা গেছেন তা তো আর মিথ্যা নয়। কাজেই যার যেটা প্রাপ্য তাকে সেটা দিতে হয়। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।
ইদানীং যে প্রবণতা প্রবল আকারে দেখা যাচ্ছে, সেটিকে আমি বলব, মাছির লক্ষণাক্রান্ত। ধরুন শেখ মুজিবুর রহমানের যে ভূমিকা রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে, সেটি যেকোনো বিচারেই বাংলাদেশ গঠনের পর বাকশাল গঠনের চেয়ে অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু আজকাল দেখি তাঁর ওই অবদানের কথা উল্লেখ না করে কেবল বাকশাল নিয়ে আলাপ করা হয়। বাকশাল নিয়ে অবশ্যই আলাপ করা জরুরি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে ছাপিয়ে সেটিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার ভেতর যে ভাষাবলয় পরিলক্ষিত হয়, যে বয়ান প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চোখে পড়ে, সেটি হুবহু বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসরদের বয়ানের সঙ্গে মিলে যায়। স্বাধীনতালাভের অর্ধশতাব্দী পর এসেও বাংলাদেশ-বিরোধিতা এমনভাবে ফিরে আসার জন্য আমি মনে করি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেছেন তাঁরাই মূলত দায়ী। তাঁরাই আসলে খাল কেটে কুমির এনেছেন। এখন খাল খননকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পলাতক, কিন্তু জনপদের মানুষ কুমিরের ভয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছে।
শুধু এটুকু বলে শেষ করি, গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়। ভোট দেওয়ার ভেতর দিয়ে মানুষকে গণিতে পরিণত করা হয়। মাথা গোনার আরেক নাম ভোট। গণতন্ত্র তার চেয়েও বেশি কিছু। ভোট প্রদান জরুরি, কিন্তু তার চেয়েও অধিক জরুরি এই জনপদের মানুষের কাছে গণতন্ত্রের ধারণাকে স্পষ্ট করে তোলা। এটা যত দিন না হচ্ছে, তত দিন আসলে এই খাল কাটা ও কুমিরের খেলা চলতে থাকবে। কারণ, এতে খননকারী ও কুমির উভয়েরই লাভ রয়েছে।

আমরা এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে নানা ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের মানুষ পরস্পরের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জারিত হয়ে সমাজের বৈচিত্র্যকে উদ্যাপন করবে। আমরা এমন এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যে রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিকের মানবিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবে। বৈষম্য ও দারিদ্র্যকে মুখে মুখে নয়, প্রকৃত অর্থেই জাদুঘরে পাঠাবে। এমন সমাজ ও রাষ্ট্র পাওয়ার স্বপ্ন আমরা মূর্ত করে তুলেছিলাম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু গন্ডগোলটা বাধল যখন একটি গোষ্ঠী বা ব্যক্তি নিজের মত ও বিশ্বাসকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করতে শুরু করল এবং চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। এতে করে সমাজে দেখা দিল সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ, রাষ্ট্রে প্রতিভাত হলো স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ।
একটি সমাজে নানা মত ও পথের মানুষ থাকবে। বিশ্বাসী থাকবে। অবিশ্বাসী থাকবে। সবাইকে নিয়েই সমাজ ও রাষ্ট্র। ভিন্ন ভিন্ন দল ও মতের হয়েও তাহলে কেমন করে মানুষ এক সূত্রে গাঁথা থাকবে? কেমন করে একটি মানচিত্রের ভেতর চিহ্নিত হবে অভিন্নতা? জাতি থেকে জাতীয়তাবোধ, সেখান থেকে আমরা পেলাম জাতিরাষ্ট্র। সাতচল্লিশের আগে ভারতবর্ষে ধর্মকে জাতি ঠাওরে বা সুবিধার জন্য মনে মনে ধরে নিয়ে, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করা হলো। কিন্তু ধর্মভিত্তিক জাতি যে সোনার পাথরবাটি, তা ১৯৭১ সালেই আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। জাতি গঠনে গণমানুষের সম্মিলিত কল্পনাশক্তির একটা ভূমিকা আছে সত্যি, কিন্তু সেটার সুবিধা নিয়ে কেউ যদি জাতি গঠনের জন্য ধর্মকে ভিত্তি বানায়, তাহলে বলতে হয় কেউ চোরাবালির ওপর প্রাসাদ নির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। দুই যুগ পূরণ হওয়ার আগেই তাই স্বপ্নভঙ্গের ঘটনাও ঘটেছে। বাস্তবে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। তখন ভেবেছি এবার অসাম্প্রদায়িক ও সমতার সমাজ গঠন করা সহজ হবে। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো কি?
কেউ বলেন জাতি হলো এক কল্পিত জনগোষ্ঠী। কেউবা বলেন এটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য এক সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তি। আমাদের ভেতর একটি সামাজিক অনুভূতি কাজ করে যে, আমরা সবাই একই দেশের নাগরিক। এখানে যদি ফাটল থাকে, তাহলে সে দেশের ললাট থেকে শনির দশা কাটে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যতই প্রচার করা হোক না কেন বাঙালি জাতীয়তাবাদ কিংবা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, কোথায় গিয়ে যেন তৃতীয় আরেকটি মতবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং তারা ১৯৪৭-এর দিকে তাকিয়ে ১৯৭১ সালকে গৌণ করে দিতে চায়। সাতচল্লিশে ধর্মকে জাতি জ্ঞান করে যে বিভাজন হয়েছিল, ১৯৭১ সালে কিন্তু সেই ভ্রম কেটে যায় এবং স্পষ্টতই মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে জালিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। কিন্তু আজ সেই তৃতীয় পক্ষ ১৯৭১ সালকে অস্বীকার করতে চায়, ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসেবেও তারা মানতে নারাজ। এমনকি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ তারিখ নিয়েও কেউ কেউ অত্যন্ত আপত্তিজনক মন্তব্য করে ফেলছেন। যেটি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। তবে কি জাতি হিসেবে নিজেদের ভাবার ক্ষেত্রে পাটাতনে আবার সেই ধর্মভিত্তিক চিন্তাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে? নয় তো কেন হঠাৎ আবার এত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটল? কেনইবা সমাজে ধর্মের প্রতি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি এই পক্ষপাত লক্ষ করা যাচ্ছে? বাংলাদেশের সমাজে ইদানীং মানুষ নিজেদের মানব, বিশ্বনাগরিক বা একটি জাতিগোষ্ঠীর পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার বদলে ধর্মপরিচয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, সর্বাগ্রে স্থান দিচ্ছে। এই পরিবর্তন কেন ঘটল, কেমন করে ঘটল, তার হদিস সমাজবিজ্ঞানীরা ভালো করতে পারবেন। তবে এই পরিবর্তনের দায় কোনোভাবেই রাজনীতিবিদ ও শাসকশ্রেণি এড়াতে পারবে না।
যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরব করার মতো আত্মপরিচয় দিয়েছে, যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যে মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ এক সাগর রক্ত ঢালতে পারে অনায়াসে, সেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আজ অত্যন্ত আপত্তিকর কথা উঠছে। তারা ফিরে যেতে চাইছে সাতচল্লিশে। কী উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ! একটি গোষ্ঠী ও কিছু তথাকথিক কনটেন্ট ক্রিয়েটর নিজেদের বিপুল অনুসারী সহযোগে মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত যে ভয়ংকর মিথ্যা তথ্য প্রচার এবং চরম অপমানজনক বাক্য ব্যবহার করছে, তাতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হয়ে উপায় নেই। যেকোনো সুস্থ মানুষ, যাঁরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে সব দল-মত ও পথের ঊর্ধ্বে রেখে, যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান, ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের কথা মাথায় রেখে, বাংলাদেশকে নিজেদের অস্তিত্বের অংশ মনে করেন, তাঁদের প্রত্যেকেই আজ বিমর্ষবোধ করছেন। মুক্তিযুদ্ধ যে শোষণহীন ও বৈষম্যমুক্ত সমাজের আকাঙ্ক্ষা থেকে উৎসারিত পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ও জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে জনযুদ্ধ ছিল, সেটিকে যেন ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দেখা যাচ্ছে, অনেকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও নির্যাতিতদের সংখ্যা নিয়ে কুতর্কের দোকান খুলে বসেছে। ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান ‘জয় বাংলা’র পর ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছিলেন কি না, সেটি আবিষ্কার করতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। যেন শেখ মুজিবুর রহমান ‘জয় পাকিস্তান’ বললেই গোটা ৭ মার্চের উত্তাল ভাষণ ও ভাষণ শুনতে আসা লাখো মানুষের মনের ভেতর থাকা স্বাধীনতার জন্য সমুদ্রসমান কল্লোল মিথ্যা হয়ে যায়। যদিও তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে সেদিনের বিশাল জনসভায় সশরীরের উপস্থিত থাকা অনেক বিশিষ্ট মানুষই শোনেননি ‘জয় পাকিস্তান’ বলা হচ্ছে। তাহলে এখন কেন এসব ছোটখাটো কথা নিয়ে এত সময়ক্ষেপণ? এসব করলেই কি এই জনপদের মানুষ যে পাকিস্তানি শাসকদের, বলতে গেলে খালি হাতে যুদ্ধ করে পরাজিত করেছিল, তা লুকিয়ে ফেলা যাবে? কারা এই অপচেষ্টা করছে আজকে? যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে গৌরব ও অর্জনের ইতিহাস, তাই একে প্রশ্নবিদ্ধ করে তর্ক জুড়ে দিলে, মনে করা হচ্ছে মানুষ ওটা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। আর এই ফাঁকে স্বার্থ উদ্ধার করে নেবে সুযোগসন্ধানীরা।
আরেকটি বিষয় নিয়ে কথা না বললেই নয়, ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক কারণেই ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে গিয়েছিল। এটা ঠিক, তাদের জনতুষ্টিমূলক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে চলচ্চিত্রে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখানো হয়, এটা নিয়ে আপত্তি বজায় রেখেই বলতে চাই, সে সময় ভারত পূর্ববঙ্গের লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দিয়ে যে নজির স্থাপন করেছিল, সেটি অস্বীকার করার জো নেই। তাদের আচরণ অনেক সময় বড়ভাইসুলভ ও কিছুটা আপত্তিজনক হলেও, মুক্তিযুদ্ধে তাদের যে সেনাসদস্য মারা গেছেন তা তো আর মিথ্যা নয়। কাজেই যার যেটা প্রাপ্য তাকে সেটা দিতে হয়। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।
ইদানীং যে প্রবণতা প্রবল আকারে দেখা যাচ্ছে, সেটিকে আমি বলব, মাছির লক্ষণাক্রান্ত। ধরুন শেখ মুজিবুর রহমানের যে ভূমিকা রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে, সেটি যেকোনো বিচারেই বাংলাদেশ গঠনের পর বাকশাল গঠনের চেয়ে অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু আজকাল দেখি তাঁর ওই অবদানের কথা উল্লেখ না করে কেবল বাকশাল নিয়ে আলাপ করা হয়। বাকশাল নিয়ে অবশ্যই আলাপ করা জরুরি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে ছাপিয়ে সেটিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার ভেতর যে ভাষাবলয় পরিলক্ষিত হয়, যে বয়ান প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চোখে পড়ে, সেটি হুবহু বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসরদের বয়ানের সঙ্গে মিলে যায়। স্বাধীনতালাভের অর্ধশতাব্দী পর এসেও বাংলাদেশ-বিরোধিতা এমনভাবে ফিরে আসার জন্য আমি মনে করি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেছেন তাঁরাই মূলত দায়ী। তাঁরাই আসলে খাল কেটে কুমির এনেছেন। এখন খাল খননকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পলাতক, কিন্তু জনপদের মানুষ কুমিরের ভয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছে।
শুধু এটুকু বলে শেষ করি, গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়। ভোট দেওয়ার ভেতর দিয়ে মানুষকে গণিতে পরিণত করা হয়। মাথা গোনার আরেক নাম ভোট। গণতন্ত্র তার চেয়েও বেশি কিছু। ভোট প্রদান জরুরি, কিন্তু তার চেয়েও অধিক জরুরি এই জনপদের মানুষের কাছে গণতন্ত্রের ধারণাকে স্পষ্ট করে তোলা। এটা যত দিন না হচ্ছে, তত দিন আসলে এই খাল কাটা ও কুমিরের খেলা চলতে থাকবে। কারণ, এতে খননকারী ও কুমির উভয়েরই লাভ রয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ।
১৯ মে ২০২৫
ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
১ দিন আগে
পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা গুরুতর অপরাধ এবং এটি জনস্বাস্থ্য ও পশু সুরক্ষার দিক থেকে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের পশু হত্যা নিষ্ঠুরতা এবং মানবিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১ দিন আগে
মানুষের জীবন শুধু বেঁচে থাকার নাম নয়; জীবন মানে হচ্ছে পূর্ণতার সন্ধান, মানসিক শান্তি ও শারীরিক সুস্থতার সুষম সমন্বয়। এই সমন্বয় সাধনের দুটি প্রধান উপাদান হলো সংগীত ও শরীরচর্চা। সংগীত আত্মাকে প্রশান্ত করে, মনকে উজ্জীবিত করে; আর শরীরচর্চা দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে।
১ দিন আগেঅ্যাডভোকেট সাহিদা আক্তার

পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা গুরুতর অপরাধ এবং এটি জনস্বাস্থ্য ও পশু সুরক্ষার দিক থেকে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের পশু হত্যা নিষ্ঠুরতা এবং মানবিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশের আইনে পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা অমানবিক আচরণ রোধ করার জন্য বিশেষ বিধান রয়েছে। ১৯২০ সালে প্রণীত ‘পশু সুরক্ষা আইন’-এর মাধ্যমে পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা অমানবিক আচরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি জেনেবুঝে বা অবহেলায় কোনো প্রাণীকে আঘাত করে বা হত্যা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে এবং শাস্তি হতে পারে।
২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার ‘পশু সুরক্ষা আইন সংশোধনী ২০১০’ প্রণয়ন করে, যাতে পশু হত্যা বা তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য আরও কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করা হয়।
পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা হলে সাধারণত অভিযোগ দায়েরের দায়িত্ব স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বা স্থানীয় পরিষদের ওপর পড়ে। তবে, এটি শুধু পুলিশের কাজ নয়; যেকোনো নাগরিক, পশু অধিকার রক্ষা সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে মামলা করতে পারে।
যেকোনো হত্যা বা পশু নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ করতে হলে, পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রাথমিক তদন্ত করতে হবে।
স্থানীয় মানুষ বা প্রত্যক্ষদর্শীরা যদি এই হত্যার সাক্ষী হন, তাঁরা এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এ ছাড়া প্রাণী অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলোরও সক্রিয় ভূমিকা থাকে এবং তারা এগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহায্য করে।
পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা করার শাস্তি বাংলাদেশে নির্দিষ্ট। ‘পশু সুরক্ষা আইন’ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি জেনেবুঝে বা অমানবিকভাবে কোনো প্রাণীকে আঘাত করে বা হত্যা করে, তাহলে তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়।
জরিমানা: পশু হত্যার অপরাধে একজন ব্যক্তির ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তবে, এটি সাধারণত প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে নির্ধারিত হয়।
কারাদণ্ড: কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষত যদি হত্যাটি অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে সংঘটিত হয়, তাহলে শাস্তি হিসেবে এক মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। এই শাস্তি সংশ্লিষ্ট আদালত নির্ধারণ করবেন।
অবহেলাজনিত হত্যা: যদি কেউ অবহেলাজনিত কোনো প্রাণীকে হত্যা করে, যেমন সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বা কোনো অজ্ঞাত কারণে, তখনো শাস্তি আরোপ করা হতে পারে। তবে, যদি হত্যা প্রমাণিত না হয়, শাস্তি কিছুটা কম হতে পারে।
বিষ প্রয়োগ: যদি কেউ প্রাণীকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে, তাহলে শাস্তি আরও কঠোর হতে পারে। বিষ প্রয়োগ বা নিষিদ্ধ কোনো উপাদান দিয়ে প্রাণী হত্যার জন্য তিন বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে এবং জরিমানাও আদায় করা হতে পারে।
বাংলাদেশে যদিও আইন রয়েছে, তবে পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকে।
প্রমাণের অভাব: অনেক সময় পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা প্রমাণ করা কঠিন হয়, কারণ এই ধরনের ঘটনা সাধারণত অপরিচিত জায়গায় ঘটে এবং প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
আবেগগত দ্বন্দ্ব: অনেক মানুষের কাছে পথকুকুর বা বিড়াল হত্যার গুরুত্ব তেমন অনুভূত হয় না, কারণ তারা মনে করে এসব প্রাণী কেবল ‘যাযাবর’ এবং তাদের কোনো বিশেষ মূল্য নেই। কিন্তু, এটি একটি ভুল ধারণা এবং এ ধরনের চিন্তা সমাজে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার পথ প্রশস্ত করে।
আইন প্রয়োগের দুর্বলতা: অনেক সময় পুলিশের মনোযোগ এবং কার্যকর তদন্তের অভাবের কারণে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা বন্ধ করতে এবং তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা কমাতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন:
সচেতনতা বৃদ্ধি: মানুষের মধ্যে পশুর প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা তৈরি করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে যে পশু হত্যা শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং এটি মানবিকতারও প্রশ্ন।
আইনের প্রয়োগ আরও কঠোর করা: আইন প্রয়োগে গাফিলতি দূর করতে পুলিশের প্রশিক্ষণ এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
প্রাণী অধিকার রক্ষা সংগঠনের সহায়তা: প্রাণী অধিকার রক্ষা সংস্থাগুলোর তদারকি এবং কাজকে আরও সক্রিয় ও জনপ্রিয় করতে হবে।
সাহিদা আক্তার, আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা

পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা গুরুতর অপরাধ এবং এটি জনস্বাস্থ্য ও পশু সুরক্ষার দিক থেকে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের পশু হত্যা নিষ্ঠুরতা এবং মানবিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশের আইনে পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা অমানবিক আচরণ রোধ করার জন্য বিশেষ বিধান রয়েছে। ১৯২০ সালে প্রণীত ‘পশু সুরক্ষা আইন’-এর মাধ্যমে পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা অমানবিক আচরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি জেনেবুঝে বা অবহেলায় কোনো প্রাণীকে আঘাত করে বা হত্যা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে এবং শাস্তি হতে পারে।
২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার ‘পশু সুরক্ষা আইন সংশোধনী ২০১০’ প্রণয়ন করে, যাতে পশু হত্যা বা তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য আরও কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করা হয়।
পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা হলে সাধারণত অভিযোগ দায়েরের দায়িত্ব স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বা স্থানীয় পরিষদের ওপর পড়ে। তবে, এটি শুধু পুলিশের কাজ নয়; যেকোনো নাগরিক, পশু অধিকার রক্ষা সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে মামলা করতে পারে।
যেকোনো হত্যা বা পশু নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ করতে হলে, পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রাথমিক তদন্ত করতে হবে।
স্থানীয় মানুষ বা প্রত্যক্ষদর্শীরা যদি এই হত্যার সাক্ষী হন, তাঁরা এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এ ছাড়া প্রাণী অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলোরও সক্রিয় ভূমিকা থাকে এবং তারা এগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহায্য করে।
পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা করার শাস্তি বাংলাদেশে নির্দিষ্ট। ‘পশু সুরক্ষা আইন’ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি জেনেবুঝে বা অমানবিকভাবে কোনো প্রাণীকে আঘাত করে বা হত্যা করে, তাহলে তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়।
জরিমানা: পশু হত্যার অপরাধে একজন ব্যক্তির ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তবে, এটি সাধারণত প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে নির্ধারিত হয়।
কারাদণ্ড: কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষত যদি হত্যাটি অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে সংঘটিত হয়, তাহলে শাস্তি হিসেবে এক মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। এই শাস্তি সংশ্লিষ্ট আদালত নির্ধারণ করবেন।
অবহেলাজনিত হত্যা: যদি কেউ অবহেলাজনিত কোনো প্রাণীকে হত্যা করে, যেমন সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বা কোনো অজ্ঞাত কারণে, তখনো শাস্তি আরোপ করা হতে পারে। তবে, যদি হত্যা প্রমাণিত না হয়, শাস্তি কিছুটা কম হতে পারে।
বিষ প্রয়োগ: যদি কেউ প্রাণীকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে, তাহলে শাস্তি আরও কঠোর হতে পারে। বিষ প্রয়োগ বা নিষিদ্ধ কোনো উপাদান দিয়ে প্রাণী হত্যার জন্য তিন বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে এবং জরিমানাও আদায় করা হতে পারে।
বাংলাদেশে যদিও আইন রয়েছে, তবে পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকে।
প্রমাণের অভাব: অনেক সময় পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা প্রমাণ করা কঠিন হয়, কারণ এই ধরনের ঘটনা সাধারণত অপরিচিত জায়গায় ঘটে এবং প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
আবেগগত দ্বন্দ্ব: অনেক মানুষের কাছে পথকুকুর বা বিড়াল হত্যার গুরুত্ব তেমন অনুভূত হয় না, কারণ তারা মনে করে এসব প্রাণী কেবল ‘যাযাবর’ এবং তাদের কোনো বিশেষ মূল্য নেই। কিন্তু, এটি একটি ভুল ধারণা এবং এ ধরনের চিন্তা সমাজে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার পথ প্রশস্ত করে।
আইন প্রয়োগের দুর্বলতা: অনেক সময় পুলিশের মনোযোগ এবং কার্যকর তদন্তের অভাবের কারণে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা বন্ধ করতে এবং তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা কমাতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন:
সচেতনতা বৃদ্ধি: মানুষের মধ্যে পশুর প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা তৈরি করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে যে পশু হত্যা শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং এটি মানবিকতারও প্রশ্ন।
আইনের প্রয়োগ আরও কঠোর করা: আইন প্রয়োগে গাফিলতি দূর করতে পুলিশের প্রশিক্ষণ এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
প্রাণী অধিকার রক্ষা সংগঠনের সহায়তা: প্রাণী অধিকার রক্ষা সংস্থাগুলোর তদারকি এবং কাজকে আরও সক্রিয় ও জনপ্রিয় করতে হবে।
সাহিদা আক্তার, আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ।
১৯ মে ২০২৫
ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
১ দিন আগে
আমরা এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে নানা ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের মানুষ পরস্পরের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জারিত হয়ে সমাজের বৈচিত্র্যকে উদ্যাপন করবে। আমরা এমন এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যে রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিকের মানবিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবে।
১ দিন আগে
মানুষের জীবন শুধু বেঁচে থাকার নাম নয়; জীবন মানে হচ্ছে পূর্ণতার সন্ধান, মানসিক শান্তি ও শারীরিক সুস্থতার সুষম সমন্বয়। এই সমন্বয় সাধনের দুটি প্রধান উপাদান হলো সংগীত ও শরীরচর্চা। সংগীত আত্মাকে প্রশান্ত করে, মনকে উজ্জীবিত করে; আর শরীরচর্চা দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে।
১ দিন আগেসুধীর বরণ মাঝি

মানুষের জীবন শুধু বেঁচে থাকার নাম নয়; জীবন মানে হচ্ছে পূর্ণতার সন্ধান, মানসিক শান্তি ও শারীরিক সুস্থতার সুষম সমন্বয়। এই সমন্বয় সাধনের দুটি প্রধান উপাদান হলো সংগীত ও শরীরচর্চা। সংগীত আত্মাকে প্রশান্ত করে, মনকে উজ্জীবিত করে; আর শরীরচর্চা দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে। এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবেই গড়ে ওঠে এক পরিপূর্ণ, ভারসাম্যপূর্ণ ও অর্থবহ জীবন। যে সমাজে মানুষ সংগীতের মাধুর্য ও শরীরচর্চার শৃঙ্খলাকে গ্রহণ করে, সে সমাজ হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত, সৃজনশীল ও মানবিক গুণে পরিপূর্ণ।
সংগীত মানুষের হৃদয়ের ভাষা। ভাষা যখন থেমে যায়, তখন সুরই হয়ে ওঠে প্রকাশের মাধ্যম। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তার অনুভূতি, আনন্দ, দুঃখ, প্রেম, প্রার্থনা কিংবা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে সংগীতকে বেছে নিয়েছে। প্রকৃতির শব্দের ভেতরেও সংগীতের ছোঁয়া—বৃষ্টির ঝরঝর শব্দ, পাখির কলতান, ঢেউয়ের মৃদু গর্জন—সবই জীবনের ছন্দের বহিঃপ্রকাশ। এই ছন্দ থেকেই মানুষ খুঁজে পেয়েছে সংগীতের রূপ, যা তাকে দিয়েছে মানসিক মুক্তি, সৃষ্টিশীলতার প্রেরণা ও আত্মার প্রশান্তি। আজও যখন কোনো মানুষ ক্লান্ত, উদ্বিগ্ন বা নিঃসঙ্গ হয়, তখন সংগীতই তার একমাত্র সান্ত্বনা হয়ে ওঠে।
মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখা যায়, সংগীত মানুষের মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সংগীত থেরাপি আজ বিশ্বজুড়ে একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। মানসিক অবসাদ, হতাশা বা উদ্বেগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যখন সংগীতের ছন্দে নিজেকে মেলে ধরতে পারে, তখন তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। তাই সংগীত শুধু বিনোদন নয়, এটি এক গভীর মানসিক ও আত্মিক চিকিৎসা। শিশুরা যখন ছোটবেলা থেকেই সংগীতচর্চায় যুক্ত হয়, তখন তাদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, শৃঙ্খলা ও আবেগময় সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ সংগীত শুধু মনোরঞ্জন নয়, এটি চরিত্র গঠনেরও সহায়কশক্তি।
অন্যদিকে, শরীরচর্চা মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয় বিকাশের অন্যতম প্রধান অনুঘটক। একটি লাতিন প্রবাদ হলো, ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন’। শারীরিক সুস্থতা ছাড়া মানসিক উৎকর্ষ সম্ভব নয়। নিয়মিত শরীরচর্চা হৃদ্যন্ত্রকে শক্তিশালী করে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ উন্নত করে এবং বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধে সহায়তা করে। কিন্তু এর থেকেও বড় কথা হলো, শরীরচর্চা মানুষকে দেয় আত্মনিয়ন্ত্রণ, অধ্যবসায়, সাহস ও ইতিবাচক মনোভাব। প্রতিদিনের শরীরচর্চা যেন জীবনের এক ধ্রুব অনুশাসন, যা আমাদের শেখায় পরিশ্রম, ধৈর্য ও শৃঙ্খলার মূল্য।
আজকের যুগে যখন প্রযুক্তিনির্ভর জীবন মানুষকে ক্রমেই নিস্তেজ ও স্থবির করে তুলছে, তখন শরীরচর্চা আমাদের জাগ্রত রাখে। অফিস, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়—সব জায়গায় এখন বসে থাকার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, বিষণ্নতা ইত্যাদি নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠছে। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার বা যোগব্যায়াম কেবল শরীরকে সুস্থ রাখে না, মানসিক চাপও কমায়।
সংগীত ও শরীরচর্চার মধ্যে এক গভীর সম্পর্কও রয়েছে। যেমন যোগব্যায়াম বা ধ্যানের সময় সুমধুর সংগীত মনকে কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে। আবার অনেক ব্যায়াম বা ক্রীড়া কার্যক্রমে ছন্দময় সংগীত শরীরকে উদ্দীপিত করে তোলে। জিমে ব্যায়াম করার সময় বা দৌড়ানোর সময় অনুপ্রেরণাদায়ক গান শুনলে শরীরে নতুন শক্তির সঞ্চার হয়।
শিক্ষার ক্ষেত্রেও সংগীত ও শরীরচর্চার ভূমিকা অপরিসীম। আধুনিক শিক্ষা শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়; এটি দেহ, মন ও বুদ্ধির সমন্বিত বিকাশ চায়। তাই বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। সংগীত শিক্ষার্থীর কল্পনাশক্তি ও নান্দনিক বোধকে জাগিয়ে তোলে, আর শরীরচর্চা তাকে করে তোলে সুস্থ, পরিশ্রমী ও আত্মনিয়ন্ত্রিত। আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতেও এই দুই বিষয়কে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ এ দুটি ছাড়া পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব গঠন অসম্ভব।
সংগীত ও শরীরচর্চা জীবনের দুটি অনিবার্য স্তম্ভ। একদিকে সংগীত আত্মাকে দেয় শান্তি, অন্যদিকে শরীরচর্চা দেহে আনে শক্তি। এই দুইয়ের সমন্বয়ই আমাদের দেয় জীবনকে উপভোগ করার সক্ষমতা। যে ব্যক্তি সংগীতের সৌন্দর্য বোঝে ও নিয়মিত শরীরচর্চা করে, সে শুধু দীর্ঘজীবীই নয়, প্রকৃত অর্থে সুখী মানুষ। জীবন তখন আর নিছক বেঁচে থাকা নয়; বরং এক সুরেলা, উদ্দীপনাময়, অর্থবহ যাত্রা। তাই বলা যায়, সংগীত ও শরীরচর্চা ছাড়া জীবন বোধহীন, প্রাণহীন এক জড় অস্তিত্বমাত্র।
শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর

মানুষের জীবন শুধু বেঁচে থাকার নাম নয়; জীবন মানে হচ্ছে পূর্ণতার সন্ধান, মানসিক শান্তি ও শারীরিক সুস্থতার সুষম সমন্বয়। এই সমন্বয় সাধনের দুটি প্রধান উপাদান হলো সংগীত ও শরীরচর্চা। সংগীত আত্মাকে প্রশান্ত করে, মনকে উজ্জীবিত করে; আর শরীরচর্চা দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে। এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবেই গড়ে ওঠে এক পরিপূর্ণ, ভারসাম্যপূর্ণ ও অর্থবহ জীবন। যে সমাজে মানুষ সংগীতের মাধুর্য ও শরীরচর্চার শৃঙ্খলাকে গ্রহণ করে, সে সমাজ হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত, সৃজনশীল ও মানবিক গুণে পরিপূর্ণ।
সংগীত মানুষের হৃদয়ের ভাষা। ভাষা যখন থেমে যায়, তখন সুরই হয়ে ওঠে প্রকাশের মাধ্যম। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তার অনুভূতি, আনন্দ, দুঃখ, প্রেম, প্রার্থনা কিংবা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে সংগীতকে বেছে নিয়েছে। প্রকৃতির শব্দের ভেতরেও সংগীতের ছোঁয়া—বৃষ্টির ঝরঝর শব্দ, পাখির কলতান, ঢেউয়ের মৃদু গর্জন—সবই জীবনের ছন্দের বহিঃপ্রকাশ। এই ছন্দ থেকেই মানুষ খুঁজে পেয়েছে সংগীতের রূপ, যা তাকে দিয়েছে মানসিক মুক্তি, সৃষ্টিশীলতার প্রেরণা ও আত্মার প্রশান্তি। আজও যখন কোনো মানুষ ক্লান্ত, উদ্বিগ্ন বা নিঃসঙ্গ হয়, তখন সংগীতই তার একমাত্র সান্ত্বনা হয়ে ওঠে।
মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখা যায়, সংগীত মানুষের মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সংগীত থেরাপি আজ বিশ্বজুড়ে একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। মানসিক অবসাদ, হতাশা বা উদ্বেগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যখন সংগীতের ছন্দে নিজেকে মেলে ধরতে পারে, তখন তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। তাই সংগীত শুধু বিনোদন নয়, এটি এক গভীর মানসিক ও আত্মিক চিকিৎসা। শিশুরা যখন ছোটবেলা থেকেই সংগীতচর্চায় যুক্ত হয়, তখন তাদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, শৃঙ্খলা ও আবেগময় সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ সংগীত শুধু মনোরঞ্জন নয়, এটি চরিত্র গঠনেরও সহায়কশক্তি।
অন্যদিকে, শরীরচর্চা মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয় বিকাশের অন্যতম প্রধান অনুঘটক। একটি লাতিন প্রবাদ হলো, ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন’। শারীরিক সুস্থতা ছাড়া মানসিক উৎকর্ষ সম্ভব নয়। নিয়মিত শরীরচর্চা হৃদ্যন্ত্রকে শক্তিশালী করে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ উন্নত করে এবং বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধে সহায়তা করে। কিন্তু এর থেকেও বড় কথা হলো, শরীরচর্চা মানুষকে দেয় আত্মনিয়ন্ত্রণ, অধ্যবসায়, সাহস ও ইতিবাচক মনোভাব। প্রতিদিনের শরীরচর্চা যেন জীবনের এক ধ্রুব অনুশাসন, যা আমাদের শেখায় পরিশ্রম, ধৈর্য ও শৃঙ্খলার মূল্য।
আজকের যুগে যখন প্রযুক্তিনির্ভর জীবন মানুষকে ক্রমেই নিস্তেজ ও স্থবির করে তুলছে, তখন শরীরচর্চা আমাদের জাগ্রত রাখে। অফিস, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়—সব জায়গায় এখন বসে থাকার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, বিষণ্নতা ইত্যাদি নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠছে। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার বা যোগব্যায়াম কেবল শরীরকে সুস্থ রাখে না, মানসিক চাপও কমায়।
সংগীত ও শরীরচর্চার মধ্যে এক গভীর সম্পর্কও রয়েছে। যেমন যোগব্যায়াম বা ধ্যানের সময় সুমধুর সংগীত মনকে কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে। আবার অনেক ব্যায়াম বা ক্রীড়া কার্যক্রমে ছন্দময় সংগীত শরীরকে উদ্দীপিত করে তোলে। জিমে ব্যায়াম করার সময় বা দৌড়ানোর সময় অনুপ্রেরণাদায়ক গান শুনলে শরীরে নতুন শক্তির সঞ্চার হয়।
শিক্ষার ক্ষেত্রেও সংগীত ও শরীরচর্চার ভূমিকা অপরিসীম। আধুনিক শিক্ষা শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়; এটি দেহ, মন ও বুদ্ধির সমন্বিত বিকাশ চায়। তাই বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। সংগীত শিক্ষার্থীর কল্পনাশক্তি ও নান্দনিক বোধকে জাগিয়ে তোলে, আর শরীরচর্চা তাকে করে তোলে সুস্থ, পরিশ্রমী ও আত্মনিয়ন্ত্রিত। আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতেও এই দুই বিষয়কে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ এ দুটি ছাড়া পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব গঠন অসম্ভব।
সংগীত ও শরীরচর্চা জীবনের দুটি অনিবার্য স্তম্ভ। একদিকে সংগীত আত্মাকে দেয় শান্তি, অন্যদিকে শরীরচর্চা দেহে আনে শক্তি। এই দুইয়ের সমন্বয়ই আমাদের দেয় জীবনকে উপভোগ করার সক্ষমতা। যে ব্যক্তি সংগীতের সৌন্দর্য বোঝে ও নিয়মিত শরীরচর্চা করে, সে শুধু দীর্ঘজীবীই নয়, প্রকৃত অর্থে সুখী মানুষ। জীবন তখন আর নিছক বেঁচে থাকা নয়; বরং এক সুরেলা, উদ্দীপনাময়, অর্থবহ যাত্রা। তাই বলা যায়, সংগীত ও শরীরচর্চা ছাড়া জীবন বোধহীন, প্রাণহীন এক জড় অস্তিত্বমাত্র।
শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ।
১৯ মে ২০২৫
ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
১ দিন আগে
আমরা এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে নানা ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের মানুষ পরস্পরের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জারিত হয়ে সমাজের বৈচিত্র্যকে উদ্যাপন করবে। আমরা এমন এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যে রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিকের মানবিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবে।
১ দিন আগে
পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা গুরুতর অপরাধ এবং এটি জনস্বাস্থ্য ও পশু সুরক্ষার দিক থেকে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের পশু হত্যা নিষ্ঠুরতা এবং মানবিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১ দিন আগে