বিভুরঞ্জন সরকার
খুলনা জেলার চুকনগরে যাওয়ার পথে মাওয়া ফেরিঘাটে পৌঁছে আজকের পত্রিকা অফিস থেকে সহকর্মী মন্টি বৈষ্ণবের ফোনে জানতে পারলাম, প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর নেই। একটি কড়া ধমক দিয়ে মন্টিকে বললাম, ‘এসব রসিকতা করা ভালো না।’ মন্টি থতমত খেয়ে বলে, ‘না দাদা, ঘটনা সত্যি।’ ওর কাছে আমার দেওয়া লন্ডনের একটি নম্বর আছে। ওই নম্বরে ফোন করেই ও গাফ্ফার ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত হয়েছে।
যদিও জানতাম গাফ্ফার ভাই অসুস্থ, বেশ কিছুদিন ধরেই হাসপাতালে আছেন—তবু তাঁর এই চলে যাওয়ার খবর বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ, গত সোমবার রাতেই তিনি আমাকে দুইবার ফোন করেছিলেন। দুই দফায় কমপক্ষে আধা ঘণ্টা কথা হয়েছে। তিনিই বলেছেন বেশি, আমি শুনেছি। কয়েক দিন আগে তাঁর এক মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। তারপর ভারী গলায় বললেন, ‘আমিও বুঝি আর বেশি দিন বাঁচব না, বিভু।’
আমি হেসে জবাব দিয়েছি, ‘আপনি সেঞ্চুরি করবেন গাফ্ফার ভাই। আপনার কাজ এখনো শেষ হয়নি। ইতিহাস আপনার কাঁধে যেসব দায়িত্ব অর্পণ করেছে, তার সবগুলো তো আপনি এখনো শেষ করেননি।’
গাফ্ফার ভাইকে স্বচক্ষে দেখতে না পেলেও স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম, কথা বলতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে। তারপরও বললেন, ‘বিভু, বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা লাগে। আমার সমবয়সী কিংবা আমার থেকে বয়সে ছোট অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। আমি বেঁচে আছি। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে শুয়ে স্মৃতি হাতড়াই আর ভারাক্রান্ত হই।’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মনে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে বলেও মনে হলো। বললেন, ‘আওয়ামী লীগ পথ হারিয়েছে...।’
গাফ্ফার ভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই মেয়েকেই কন্যার মতো ভালোবাসতেন। তবে বড় বোনের চেয়ে ছোট বোনের সঙ্গে তাঁর নৈকট্য বেশি বলে আমার ধারণা। শেখ রেহানা লন্ডনে কয়েক বছর থাকায় তাঁর সঙ্গে গাফ্ফার ভাইয়ের হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে বেশি। শেখ রেহানাকে গাফ্ফার ভাই ‘মা’ বলে সম্বোধন করতেন।
আমি গাফ্ফার ভাইকে বলি, ‘আপনি আজকের পত্রিকায় লিখুন আপনার ইচ্ছের কথা।’ তিনি বলেছিলেন, ‘শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাব। শনিবার আপনি ফোন করবেন। আমি পরের সপ্তাহ থেকেই আপনাদের পত্রিকায় লিখব। আমি শুনেছি, আজকের পত্রিকা ভালো হচ্ছে।’
হায়! এ কী ঘটে গেল। শুক্রবার আসার আগেই গাফ্ফার ভাই চলে গেলেন। তাঁর আরও কত কথা বলার ছিল। সে সব আর বলা হলো না।
কত কথা মনে পড়ছে। গাফ্ফার চৌধুরীর নাম প্রথম শুনেছি তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’র মাধ্যমে। খুব গুরুগম্ভীর বাণী নয়, সাধারণ সব শব্দ, সবাই বুঝতে পারেন, প্রতিটি শব্দের অর্থ কম লেখাপড়া জানা মানুষও বুঝতে পারে। এই গান বা কবিতা গাফ্ফার চৌধুরীকে অমর ও স্মরণীয় করে রাখবে বাঙালির মনে। তিনি আরও কিছু গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। চমৎকার গদ্য তাঁর। যদি রাজনৈতিক কলাম লেখা নিয়ে মেতে না উঠতেন, তাহলে বাংলা গদ্য সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারতেন গাফ্ফার ভাই।
গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৯৭৪ সালে। তখন তিনি জনপদ নামের একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক। পত্রিকা যেখান থেকে বের হতো, সেখানকার প্রেসেই ছাপা হতো ছাত্র ইউনিয়নের মুখপত্র জয়ধ্বনি। আমি জয়ধ্বনির কাজে সপ্তাহে তিন দিন প্রেসে যেতাম। তখনই গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে দেখা এবং পরিচয়। তবে তাঁর লেখালেখির সঙ্গে পরিচয় আরও আগেই।
অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য গাফ্ফার ভাই সত্তরের দশকের মাঝামাঝি লন্ডনে চলে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। দেশের মধ্যেও ঘটে যায় বড় রাজনৈতিক বিপর্যয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির উল্টো যাত্রা শুরু হয়। গাফ্ফার চৌধুরী দেশে ফেরার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর ছিল গভীর আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক। তিনজন সাংবাদিককে বঙ্গবন্ধু ‘আপদ-বিপদ-মুসিবত’ বলতেন। এঁদের দুজন এ বি এম মূসা ও এম আর আক্তার মুকুল আগেই চলে গেছেন। ত্রিরত্নের শেষজন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আজ গেলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক স্মৃতি আমাদের সঙ্গে ভাগ করেছেন গাফ্ফার ভাই।
গত শতকের আশির দশকে এরশাদের স্বৈরশাসনের সময় সাপ্তাহিক যায়যায়দিন বাজারে এসেই ঝড় তোলে। গাফ্ফার চৌধুরী তাঁর বন্ধু শফিক রেহমানের যায়যায়দিনে লেখা শুরু করেন। বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে গাফ্ফার চৌধুরীকে নতুন করে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে যায়যায়দিন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমিও যায়যায়দিনে রাজনৈতিক প্রতিবেদন লিখতাম। সামরিক স্বৈরশাসকের লাল চোখের জন্য তখন আমাকে ছদ্মনাম নিতে হয়েছিল—তারিখ ইব্রাহিম। যায়যায়দিনের মাধ্যমে আমাদের সেই যে সম্পর্কের ঝালাই হয়, তাতে আর মরিচা পড়েনি।
গাফ্ফার চৌধুরী আমার লেখা পছন্দ করতেন। আমাকেও তাঁর প্রিয়জনদের তালিকায় নিয়েছেন। আমি যখন যে পত্রিকায় কাজ করেছি সে পত্রিকাতেই গাফ্ফার ভাই সানন্দে লিখতে সম্মত হয়েছেন, লিখেছেন। আজকের পত্রিকাতেও লিখতে শুরু করেছিলেন। অসুস্থতার কারণে ছেদ পড়েছে। আজ থেকে তিনি আর কোথাও লিখবেন না।
গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে কত স্মৃতি। যখনই ঢাকা এসেছেন, আমরা চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছি। কত কথা যে তিনি জানতেন। স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। কাগজপত্র হাতের কাছে না থাকলেও স্মৃতি থেকে যা লিখতেন, তা-ই হতো সুপার।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তিনি ঢাকা এলে সাপ্তাহিক চলতিপত্রের পক্ষ থেকে গাফ্ফার চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি চলতিপত্রের সম্পাদক। গাফ্ফার ভাইয়ের ওই সংবর্ধনা সভায় ঢাকার প্রায় সব বিশিষ্টজনেরই উপস্থিতি ছিল। গাফ্ফার ভাই খুব খুশি হয়েছিলেন তাঁর অনেক বন্ধুজনের সঙ্গে দেখা হওয়ায়।
আমার বাসায়ও গাফ্ফার ভাই এসেছেন। আমার স্ত্রী-কন্যা-পুত্রের প্রতি ছিল তাঁর অশেষ স্নেহ। সোমবার ফোনেও আমার পরিবারের সবার খোঁজ নিয়েছেন। আমার ছোট ভাই চিররঞ্জনের লেখাও তাঁর পছন্দের ছিল। সেদিন বলেছিলেন, পরের বার ঢাকা এলে আমার বাসায় অবশ্যই আসবেন।
না, কথা রাখতে পারলেন না গাফ্ফার ভাই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাংবাদিকতার বটবৃক্ষকে হারিয়ে আমি অসহায় বোধ করছি।
গাফ্ফার ভাই আমাদের কী এক দীর্ঘ অপেক্ষায় রেখে চলে গেলেন। তাঁর প্রতি জানাই শ্রদ্ধা।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
খুলনা জেলার চুকনগরে যাওয়ার পথে মাওয়া ফেরিঘাটে পৌঁছে আজকের পত্রিকা অফিস থেকে সহকর্মী মন্টি বৈষ্ণবের ফোনে জানতে পারলাম, প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর নেই। একটি কড়া ধমক দিয়ে মন্টিকে বললাম, ‘এসব রসিকতা করা ভালো না।’ মন্টি থতমত খেয়ে বলে, ‘না দাদা, ঘটনা সত্যি।’ ওর কাছে আমার দেওয়া লন্ডনের একটি নম্বর আছে। ওই নম্বরে ফোন করেই ও গাফ্ফার ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত হয়েছে।
যদিও জানতাম গাফ্ফার ভাই অসুস্থ, বেশ কিছুদিন ধরেই হাসপাতালে আছেন—তবু তাঁর এই চলে যাওয়ার খবর বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ, গত সোমবার রাতেই তিনি আমাকে দুইবার ফোন করেছিলেন। দুই দফায় কমপক্ষে আধা ঘণ্টা কথা হয়েছে। তিনিই বলেছেন বেশি, আমি শুনেছি। কয়েক দিন আগে তাঁর এক মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। তারপর ভারী গলায় বললেন, ‘আমিও বুঝি আর বেশি দিন বাঁচব না, বিভু।’
আমি হেসে জবাব দিয়েছি, ‘আপনি সেঞ্চুরি করবেন গাফ্ফার ভাই। আপনার কাজ এখনো শেষ হয়নি। ইতিহাস আপনার কাঁধে যেসব দায়িত্ব অর্পণ করেছে, তার সবগুলো তো আপনি এখনো শেষ করেননি।’
গাফ্ফার ভাইকে স্বচক্ষে দেখতে না পেলেও স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম, কথা বলতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে। তারপরও বললেন, ‘বিভু, বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা লাগে। আমার সমবয়সী কিংবা আমার থেকে বয়সে ছোট অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। আমি বেঁচে আছি। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে শুয়ে স্মৃতি হাতড়াই আর ভারাক্রান্ত হই।’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মনে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে বলেও মনে হলো। বললেন, ‘আওয়ামী লীগ পথ হারিয়েছে...।’
গাফ্ফার ভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই মেয়েকেই কন্যার মতো ভালোবাসতেন। তবে বড় বোনের চেয়ে ছোট বোনের সঙ্গে তাঁর নৈকট্য বেশি বলে আমার ধারণা। শেখ রেহানা লন্ডনে কয়েক বছর থাকায় তাঁর সঙ্গে গাফ্ফার ভাইয়ের হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে বেশি। শেখ রেহানাকে গাফ্ফার ভাই ‘মা’ বলে সম্বোধন করতেন।
আমি গাফ্ফার ভাইকে বলি, ‘আপনি আজকের পত্রিকায় লিখুন আপনার ইচ্ছের কথা।’ তিনি বলেছিলেন, ‘শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাব। শনিবার আপনি ফোন করবেন। আমি পরের সপ্তাহ থেকেই আপনাদের পত্রিকায় লিখব। আমি শুনেছি, আজকের পত্রিকা ভালো হচ্ছে।’
হায়! এ কী ঘটে গেল। শুক্রবার আসার আগেই গাফ্ফার ভাই চলে গেলেন। তাঁর আরও কত কথা বলার ছিল। সে সব আর বলা হলো না।
কত কথা মনে পড়ছে। গাফ্ফার চৌধুরীর নাম প্রথম শুনেছি তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’র মাধ্যমে। খুব গুরুগম্ভীর বাণী নয়, সাধারণ সব শব্দ, সবাই বুঝতে পারেন, প্রতিটি শব্দের অর্থ কম লেখাপড়া জানা মানুষও বুঝতে পারে। এই গান বা কবিতা গাফ্ফার চৌধুরীকে অমর ও স্মরণীয় করে রাখবে বাঙালির মনে। তিনি আরও কিছু গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। চমৎকার গদ্য তাঁর। যদি রাজনৈতিক কলাম লেখা নিয়ে মেতে না উঠতেন, তাহলে বাংলা গদ্য সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারতেন গাফ্ফার ভাই।
গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৯৭৪ সালে। তখন তিনি জনপদ নামের একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক। পত্রিকা যেখান থেকে বের হতো, সেখানকার প্রেসেই ছাপা হতো ছাত্র ইউনিয়নের মুখপত্র জয়ধ্বনি। আমি জয়ধ্বনির কাজে সপ্তাহে তিন দিন প্রেসে যেতাম। তখনই গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে দেখা এবং পরিচয়। তবে তাঁর লেখালেখির সঙ্গে পরিচয় আরও আগেই।
অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য গাফ্ফার ভাই সত্তরের দশকের মাঝামাঝি লন্ডনে চলে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। দেশের মধ্যেও ঘটে যায় বড় রাজনৈতিক বিপর্যয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির উল্টো যাত্রা শুরু হয়। গাফ্ফার চৌধুরী দেশে ফেরার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর ছিল গভীর আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক। তিনজন সাংবাদিককে বঙ্গবন্ধু ‘আপদ-বিপদ-মুসিবত’ বলতেন। এঁদের দুজন এ বি এম মূসা ও এম আর আক্তার মুকুল আগেই চলে গেছেন। ত্রিরত্নের শেষজন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আজ গেলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক স্মৃতি আমাদের সঙ্গে ভাগ করেছেন গাফ্ফার ভাই।
গত শতকের আশির দশকে এরশাদের স্বৈরশাসনের সময় সাপ্তাহিক যায়যায়দিন বাজারে এসেই ঝড় তোলে। গাফ্ফার চৌধুরী তাঁর বন্ধু শফিক রেহমানের যায়যায়দিনে লেখা শুরু করেন। বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে গাফ্ফার চৌধুরীকে নতুন করে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে যায়যায়দিন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমিও যায়যায়দিনে রাজনৈতিক প্রতিবেদন লিখতাম। সামরিক স্বৈরশাসকের লাল চোখের জন্য তখন আমাকে ছদ্মনাম নিতে হয়েছিল—তারিখ ইব্রাহিম। যায়যায়দিনের মাধ্যমে আমাদের সেই যে সম্পর্কের ঝালাই হয়, তাতে আর মরিচা পড়েনি।
গাফ্ফার চৌধুরী আমার লেখা পছন্দ করতেন। আমাকেও তাঁর প্রিয়জনদের তালিকায় নিয়েছেন। আমি যখন যে পত্রিকায় কাজ করেছি সে পত্রিকাতেই গাফ্ফার ভাই সানন্দে লিখতে সম্মত হয়েছেন, লিখেছেন। আজকের পত্রিকাতেও লিখতে শুরু করেছিলেন। অসুস্থতার কারণে ছেদ পড়েছে। আজ থেকে তিনি আর কোথাও লিখবেন না।
গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে কত স্মৃতি। যখনই ঢাকা এসেছেন, আমরা চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছি। কত কথা যে তিনি জানতেন। স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। কাগজপত্র হাতের কাছে না থাকলেও স্মৃতি থেকে যা লিখতেন, তা-ই হতো সুপার।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তিনি ঢাকা এলে সাপ্তাহিক চলতিপত্রের পক্ষ থেকে গাফ্ফার চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি চলতিপত্রের সম্পাদক। গাফ্ফার ভাইয়ের ওই সংবর্ধনা সভায় ঢাকার প্রায় সব বিশিষ্টজনেরই উপস্থিতি ছিল। গাফ্ফার ভাই খুব খুশি হয়েছিলেন তাঁর অনেক বন্ধুজনের সঙ্গে দেখা হওয়ায়।
আমার বাসায়ও গাফ্ফার ভাই এসেছেন। আমার স্ত্রী-কন্যা-পুত্রের প্রতি ছিল তাঁর অশেষ স্নেহ। সোমবার ফোনেও আমার পরিবারের সবার খোঁজ নিয়েছেন। আমার ছোট ভাই চিররঞ্জনের লেখাও তাঁর পছন্দের ছিল। সেদিন বলেছিলেন, পরের বার ঢাকা এলে আমার বাসায় অবশ্যই আসবেন।
না, কথা রাখতে পারলেন না গাফ্ফার ভাই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাংবাদিকতার বটবৃক্ষকে হারিয়ে আমি অসহায় বোধ করছি।
গাফ্ফার ভাই আমাদের কী এক দীর্ঘ অপেক্ষায় রেখে চলে গেলেন। তাঁর প্রতি জানাই শ্রদ্ধা।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আবদুল হাই তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে তুলে ধরেছেন ঈদের উৎসব কীভাবে সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে। আগে ঈদ ছিল আন্তরিকতা, ভাগাভাগি ও আত্মত্যাগের প্রতীক; আজ তা হয়ে উঠেছে প্রদর্শন, প্রতিযোগিতা ও বাহ্যিক আয়োজনের উৎসব। লেখক আক্ষেপ করেন, এখন ঈদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ‘কন্টেন্ট’, গরুর নাম, ব্যানার আর মোবাইল ক্যাম
৯ ঘণ্টা আগে২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে এক বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে একটি অভ্যুত্থানোত্তর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে রয়েছে এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র একধরনের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও বৈষম্যের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। আশা করা হয়েছিল, অরাজনৈতিক সরকারের বাজেটে
১ দিন আগেসংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত কোনো কোনো শিরোনাম ও সংবাদ বিশেষ আগ্রহ নিয়ে পড়তে চান পাঠক। আজকের পত্রিকায় ৩১ মে প্রকাশিত প্রধান শিরোনাম, ‘৬ মাসের টানাটানিতে ভোট’ শীর্ষক সংবাদটি সম্পর্কে আমাকে একজন সম্পাদক ফোন করে প্রশংসা করলেন। আমি বুঝতে পারলাম শিরোনামটি যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভোট নিয়ে জনগণের আগ
৩ দিন আগেঈদ—এই শব্দটির সঙ্গে অগণিত মানুষের হৃদয়ে যে অনুভব জাগে, তা আনন্দ, উৎসব আর মিলনের। ঘরে ঘরে নতুন জামা, সুস্বাদু খাবার, কোলাকুলি আর রঙিন খুশির চিত্র যেন ঈদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সেই পরিচিত দৃশ্যের বাইরে যে একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায়, তা হলো—ঈদ কি সবার জন্য একরকম? ঈদের দিন কি সকলের মুখেই সমান হাসি? ঈদের আনন
৩ দিন আগে