বিভুরঞ্জন সরকার
১১ জুন লন্ডনের চ্যাথাম হাউসের পরিচালক ব্রনওয়ে ম্যাডক্সের সঞ্চালনায় এক আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের তিন দায়িত্ব—সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিস্তারিত তুলে ধরেন। সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরিতে কাজ চলছে এবং আগামী জুলাই মাসে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সেখানে সঞ্চালক তাঁকে প্রশ্ন করেন, যে জুলাই সনদ হচ্ছে, সমালোচকেরা বলবেন, অনেক রাজনৈতিক দলকে এর বাইরে রাখা হচ্ছে, যারা এর সঙ্গে একমত নয়, যেমন আওয়ামী লীগ; তাদের জন্য কোনো জায়গা রাখছেন না। সুতরাং, মানুষকে কোনো বিকল্প দেওয়া হচ্ছে না। তারা বলছে, এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। এটা ঐকমত্য সম্পর্কে অনেক কথায় সুন্দরভাবে মোড়ানো বাংলাদেশের জন্য একটি কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপ।
জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘হ্যাঁ। ঠিক আছে, এ নিয়েও বিতর্ক আছে। বিতর্ক হলো, আওয়ামী লীগ কি রাজনৈতিক দল? যদি তারা রাস্তায় এভাবে তরুণদের হত্যা করতে পারে, এভাবে মানুষকে গুম করতে পারে, এভাবে টাকা চুরি করতে পারে, আমরা কি তখনো এটিকে রাজনৈতিক দল বলব? সুতরাং এটি একটি বিতর্ক। এটি কোনো সিদ্ধান্ত নয়।’
তাহলে এটা বোঝা যাচ্ছে, বিতর্ক ও সিদ্ধান্ত এক নয়। আসুন, আমরা তাহলে বিতর্ক ও সিদ্ধান্ত—শব্দ দুটি একটু ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।
মানুষ তার জ্ঞানের সীমার মধ্যে অবস্থিত হয়ে যখন নতুন কোনো ধারণার মুখোমুখি হয়, তখন সবচেয়ে স্বাভাবিক যে প্রতিক্রিয়াটি দেখা যায়, তা হলো বিতর্ক। আর সেই বিতর্কের পথ পেরিয়েই আমরা পৌঁছাই সিদ্ধান্তের দরজায়। বিতর্ক আর সিদ্ধান্ত—একটি প্রশ্ন তোলে, অপরটি উত্তর খোঁজে। একটি দ্বন্দ্ব তৈরি করে, অন্যটি সেই দ্বন্দ্বকে অর্থ দেয়। এই দুইয়ের সম্পর্ক যেন বাতাস ও শ্বাসের মতো—পৃথক নয়, অথচ অভিন্ন নয় বলেই তারা জীবনের অনিবার্য দুই প্রান্ত।
বিতর্ক কেবল কথা বা যুক্তি নয়, এটি আসলে বাস্তবতার এক অনুরণন। যখন আমি বলি ‘আমি ঠিক’, তখন যে-ই বলে ‘তুমি ভুল’, সে শুধু আমার মতের বিরোধিতা করছে না, সে তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি ভিন্ন মানচিত্র তুলে ধরছে।
বিতর্ক অনেক সময় যুদ্ধের মতো—দুই পক্ষই জয় চায়। কিন্তু বিতর্কের আসল সৌন্দর্য তখনই ফুটে ওঠে, যখন তা প্রতিপক্ষকে হারাতে নয়, বরং তাকে বোঝাতে চায়। বিতর্ক তখনই সভ্য হয়, যখন সে শ্রবণ করে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের চেয়ে সত্য অন্বেষণের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। একজন দার্শনিক বলেছেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে একমত নই, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের অধিকারের জন্য আমি লড়ব।’ এই বাক্য শুধু বাক্স্বাধীনতার কথা বলে না, এটি বিতর্ককে চিন্তার উন্নততর প্রয়োগ হিসেবে তুলে ধরে।
অন্যদিকে, সিদ্ধান্ত কখনো একটি দরজা বন্ধ করে দেয়, কখনো একটি জানালা খুলে দেয়। বিতর্কে মানুষ দ্বিধান্বিত থাকে, সিদ্ধান্তে সে স্থির হয় বা অন্তত স্থির হওয়ার অভিনয় করে। সিদ্ধান্তের সৌন্দর্য তার চূড়ান্ততায় নয়, বরং তার দায়িত্বে। একটি সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে যখন তা বহু মত, বহু প্রেক্ষাপট আর বহু মানসিক টানাপোড়েনের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে, তখন সেটি একধরনের মনস্তাত্ত্বিক পরিণতি পায়। এটি কখনো স্বাধীনতা, কখনো বোঝা। অন্যদিকে, সব সিদ্ধান্ত যে বিতর্কের পরেই আসে, তা নয়। অনেক সিদ্ধান্ত আসে চুপিসারে, গভীর আত্মসংলাপের ভেতর দিয়ে। যেখানে বাইরে কেউ নেই, কেবল নিজের অন্তর্দ্বন্দ্ব।
ভাবা যাক, বিতর্ক এবং সিদ্ধান্ত দুটি চরিত্র। বিতর্ক অস্থির, কৌতূহলী, তর্কপ্রিয়, উত্তেজনায় ভরপুর। তার চোখে আগুন, কণ্ঠে বিদ্যুৎ। সে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন তোলে: তুমি কেন এভাবে ভাবছ? এর অন্য পথ নেই?
আর সিদ্ধান্ত? সে শান্ত, ধীর, ভারসাম্যপূর্ণ। তার চোখে গভীরতা, মুখে মৃদু হাসি। সে বলে, সব শুনেছি, এখন সময় হয়েছে এগিয়ে যাওয়ার।
তাদের সম্পর্কটা যেন একদম মানব সম্পর্কের মতো—প্রথমে ভুল-বোঝাবুঝি, তারপর বোঝাপড়া, শেষে কোনো এক সন্ধিক্ষণে একসঙ্গে হাঁটতে থাকা।
সমাজে বিতর্ক কখনো বিপ্লবের জন্ম দেয়, কখনো ভাঙনের। একটি মুক্তচিন্তার সমাজে বিতর্ক হচ্ছে প্রাণ; পক্ষান্তরে দমনমূলক সমাজে বিতর্ক হয় গোপনে, সিদ্ধান্ত হয় একতরফা।
রাজনীতিতে বিতর্ক যদি হয় জনগণের কণ্ঠস্বর, তবে সিদ্ধান্ত হয়ে ওঠে শাসকের প্রতিশ্রুতি বা প্রবঞ্চনা। একনায়কতন্ত্রে সিদ্ধান্ত আগে আসে, বিতর্ক পরে নিষিদ্ধ হয়। গণতন্ত্রে বিতর্ক আগে, সিদ্ধান্ত পরে—কিন্তু তা-ও কখনো কখনো কণ্ঠ রোধ হয়ে পড়ে।
আর আত্মার ভেতর? আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্ক চলতেই থাকে—চাই কি না চাই, ছাড়ব না নেব, ভালোবাসব না বিদায় বলব? আমরা নিজের ভেতরেই যুদ্ধ করি। সেই যুদ্ধ শেষে যে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ উচ্চারণ করি, সেটাই তো সিদ্ধান্ত।
বিতর্ক আমাদের মন খুলে দেয়, সিদ্ধান্ত তাকে দিগন্ত দেয়। কিন্তু যদি আমরা বিতর্ক না করি—অর্থাৎ প্রশ্ন না তুলি, দ্বিধা না প্রকাশ করি, তবে কি আমাদের সিদ্ধান্ত আদৌ আমাদের হয়? অথবা উল্টোটা ভাবুন, যদি আমরা শুধু বিতর্ক করেই যাই, কিন্তু সিদ্ধান্ত না নিই, তবে কি আমরা কেবল স্থবির চক্রে ঘুরতে থাকব না? সত্যি বলতে কি, বিতর্ক এবং সিদ্ধান্ত দুটিই পরস্পরের প্রয়োজন। তারা আলাদা হতে পারে, কিন্তু বিচ্ছিন্ন নয়। বিতর্ক যেমন সিদ্ধান্তের পূর্বশর্ত, তেমনি সিদ্ধান্ত হলো বিতর্কের অন্তিম অনুরণন। কখনো আমরা বিতর্ক করি, সিদ্ধান্ত নিই। কখনো সিদ্ধান্ত নিই, পরে বিতর্ক করি—নিজের সঙ্গে বা অন্যদের সঙ্গে। কিন্তু এই চক্র চলতে থাকে, কারণ মানুষ অনন্ত দ্বিধার সন্তান, আর সেই দ্বিধাকে অর্থ দেওয়ার জন্যই প্রয়োজন—বিতর্ক ও সিদ্ধান্ত।
পুনশ্চঃ হয়তো এই লেখা নিজেই একটি বিতর্ক, আর আপনি—এই লেখা পড়ার পর—একটি সিদ্ধান্ত নেবেন। কী সিদ্ধান্ত? তা নিয়েও হয়তো আপনার মনে শুরু হয়ে গেছে এক নিঃশব্দ বিতর্ক...
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
১১ জুন লন্ডনের চ্যাথাম হাউসের পরিচালক ব্রনওয়ে ম্যাডক্সের সঞ্চালনায় এক আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের তিন দায়িত্ব—সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিস্তারিত তুলে ধরেন। সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরিতে কাজ চলছে এবং আগামী জুলাই মাসে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সেখানে সঞ্চালক তাঁকে প্রশ্ন করেন, যে জুলাই সনদ হচ্ছে, সমালোচকেরা বলবেন, অনেক রাজনৈতিক দলকে এর বাইরে রাখা হচ্ছে, যারা এর সঙ্গে একমত নয়, যেমন আওয়ামী লীগ; তাদের জন্য কোনো জায়গা রাখছেন না। সুতরাং, মানুষকে কোনো বিকল্প দেওয়া হচ্ছে না। তারা বলছে, এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। এটা ঐকমত্য সম্পর্কে অনেক কথায় সুন্দরভাবে মোড়ানো বাংলাদেশের জন্য একটি কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপ।
জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘হ্যাঁ। ঠিক আছে, এ নিয়েও বিতর্ক আছে। বিতর্ক হলো, আওয়ামী লীগ কি রাজনৈতিক দল? যদি তারা রাস্তায় এভাবে তরুণদের হত্যা করতে পারে, এভাবে মানুষকে গুম করতে পারে, এভাবে টাকা চুরি করতে পারে, আমরা কি তখনো এটিকে রাজনৈতিক দল বলব? সুতরাং এটি একটি বিতর্ক। এটি কোনো সিদ্ধান্ত নয়।’
তাহলে এটা বোঝা যাচ্ছে, বিতর্ক ও সিদ্ধান্ত এক নয়। আসুন, আমরা তাহলে বিতর্ক ও সিদ্ধান্ত—শব্দ দুটি একটু ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।
মানুষ তার জ্ঞানের সীমার মধ্যে অবস্থিত হয়ে যখন নতুন কোনো ধারণার মুখোমুখি হয়, তখন সবচেয়ে স্বাভাবিক যে প্রতিক্রিয়াটি দেখা যায়, তা হলো বিতর্ক। আর সেই বিতর্কের পথ পেরিয়েই আমরা পৌঁছাই সিদ্ধান্তের দরজায়। বিতর্ক আর সিদ্ধান্ত—একটি প্রশ্ন তোলে, অপরটি উত্তর খোঁজে। একটি দ্বন্দ্ব তৈরি করে, অন্যটি সেই দ্বন্দ্বকে অর্থ দেয়। এই দুইয়ের সম্পর্ক যেন বাতাস ও শ্বাসের মতো—পৃথক নয়, অথচ অভিন্ন নয় বলেই তারা জীবনের অনিবার্য দুই প্রান্ত।
বিতর্ক কেবল কথা বা যুক্তি নয়, এটি আসলে বাস্তবতার এক অনুরণন। যখন আমি বলি ‘আমি ঠিক’, তখন যে-ই বলে ‘তুমি ভুল’, সে শুধু আমার মতের বিরোধিতা করছে না, সে তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি ভিন্ন মানচিত্র তুলে ধরছে।
বিতর্ক অনেক সময় যুদ্ধের মতো—দুই পক্ষই জয় চায়। কিন্তু বিতর্কের আসল সৌন্দর্য তখনই ফুটে ওঠে, যখন তা প্রতিপক্ষকে হারাতে নয়, বরং তাকে বোঝাতে চায়। বিতর্ক তখনই সভ্য হয়, যখন সে শ্রবণ করে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের চেয়ে সত্য অন্বেষণের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। একজন দার্শনিক বলেছেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে একমত নই, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের অধিকারের জন্য আমি লড়ব।’ এই বাক্য শুধু বাক্স্বাধীনতার কথা বলে না, এটি বিতর্ককে চিন্তার উন্নততর প্রয়োগ হিসেবে তুলে ধরে।
অন্যদিকে, সিদ্ধান্ত কখনো একটি দরজা বন্ধ করে দেয়, কখনো একটি জানালা খুলে দেয়। বিতর্কে মানুষ দ্বিধান্বিত থাকে, সিদ্ধান্তে সে স্থির হয় বা অন্তত স্থির হওয়ার অভিনয় করে। সিদ্ধান্তের সৌন্দর্য তার চূড়ান্ততায় নয়, বরং তার দায়িত্বে। একটি সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে যখন তা বহু মত, বহু প্রেক্ষাপট আর বহু মানসিক টানাপোড়েনের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে, তখন সেটি একধরনের মনস্তাত্ত্বিক পরিণতি পায়। এটি কখনো স্বাধীনতা, কখনো বোঝা। অন্যদিকে, সব সিদ্ধান্ত যে বিতর্কের পরেই আসে, তা নয়। অনেক সিদ্ধান্ত আসে চুপিসারে, গভীর আত্মসংলাপের ভেতর দিয়ে। যেখানে বাইরে কেউ নেই, কেবল নিজের অন্তর্দ্বন্দ্ব।
ভাবা যাক, বিতর্ক এবং সিদ্ধান্ত দুটি চরিত্র। বিতর্ক অস্থির, কৌতূহলী, তর্কপ্রিয়, উত্তেজনায় ভরপুর। তার চোখে আগুন, কণ্ঠে বিদ্যুৎ। সে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন তোলে: তুমি কেন এভাবে ভাবছ? এর অন্য পথ নেই?
আর সিদ্ধান্ত? সে শান্ত, ধীর, ভারসাম্যপূর্ণ। তার চোখে গভীরতা, মুখে মৃদু হাসি। সে বলে, সব শুনেছি, এখন সময় হয়েছে এগিয়ে যাওয়ার।
তাদের সম্পর্কটা যেন একদম মানব সম্পর্কের মতো—প্রথমে ভুল-বোঝাবুঝি, তারপর বোঝাপড়া, শেষে কোনো এক সন্ধিক্ষণে একসঙ্গে হাঁটতে থাকা।
সমাজে বিতর্ক কখনো বিপ্লবের জন্ম দেয়, কখনো ভাঙনের। একটি মুক্তচিন্তার সমাজে বিতর্ক হচ্ছে প্রাণ; পক্ষান্তরে দমনমূলক সমাজে বিতর্ক হয় গোপনে, সিদ্ধান্ত হয় একতরফা।
রাজনীতিতে বিতর্ক যদি হয় জনগণের কণ্ঠস্বর, তবে সিদ্ধান্ত হয়ে ওঠে শাসকের প্রতিশ্রুতি বা প্রবঞ্চনা। একনায়কতন্ত্রে সিদ্ধান্ত আগে আসে, বিতর্ক পরে নিষিদ্ধ হয়। গণতন্ত্রে বিতর্ক আগে, সিদ্ধান্ত পরে—কিন্তু তা-ও কখনো কখনো কণ্ঠ রোধ হয়ে পড়ে।
আর আত্মার ভেতর? আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্ক চলতেই থাকে—চাই কি না চাই, ছাড়ব না নেব, ভালোবাসব না বিদায় বলব? আমরা নিজের ভেতরেই যুদ্ধ করি। সেই যুদ্ধ শেষে যে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ উচ্চারণ করি, সেটাই তো সিদ্ধান্ত।
বিতর্ক আমাদের মন খুলে দেয়, সিদ্ধান্ত তাকে দিগন্ত দেয়। কিন্তু যদি আমরা বিতর্ক না করি—অর্থাৎ প্রশ্ন না তুলি, দ্বিধা না প্রকাশ করি, তবে কি আমাদের সিদ্ধান্ত আদৌ আমাদের হয়? অথবা উল্টোটা ভাবুন, যদি আমরা শুধু বিতর্ক করেই যাই, কিন্তু সিদ্ধান্ত না নিই, তবে কি আমরা কেবল স্থবির চক্রে ঘুরতে থাকব না? সত্যি বলতে কি, বিতর্ক এবং সিদ্ধান্ত দুটিই পরস্পরের প্রয়োজন। তারা আলাদা হতে পারে, কিন্তু বিচ্ছিন্ন নয়। বিতর্ক যেমন সিদ্ধান্তের পূর্বশর্ত, তেমনি সিদ্ধান্ত হলো বিতর্কের অন্তিম অনুরণন। কখনো আমরা বিতর্ক করি, সিদ্ধান্ত নিই। কখনো সিদ্ধান্ত নিই, পরে বিতর্ক করি—নিজের সঙ্গে বা অন্যদের সঙ্গে। কিন্তু এই চক্র চলতে থাকে, কারণ মানুষ অনন্ত দ্বিধার সন্তান, আর সেই দ্বিধাকে অর্থ দেওয়ার জন্যই প্রয়োজন—বিতর্ক ও সিদ্ধান্ত।
পুনশ্চঃ হয়তো এই লেখা নিজেই একটি বিতর্ক, আর আপনি—এই লেখা পড়ার পর—একটি সিদ্ধান্ত নেবেন। কী সিদ্ধান্ত? তা নিয়েও হয়তো আপনার মনে শুরু হয়ে গেছে এক নিঃশব্দ বিতর্ক...
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ‘জাতীয় ঐকমত্য’ শব্দটি যেমন তাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর বাস্তব প্রয়োগ অত্যন্ত জটিল ও বিতর্কিত। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক সংস্কার ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে একাধিক পর্বে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।
৩ ঘণ্টা আগেসাড়ে তিন বছর হতে চলল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। শুরু হওয়ার এক বছর পর থেকেই বিভিন্ন মহল বিভিন্নভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধে কয়েক মাসের মাথায় ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
৩ ঘণ্টা আগেআগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে চাঁদাবাজির কী সম্পর্ক? এখন যাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে চলেছেন, তাঁদের ব্যাপারে এই সরকারের মনোভাব কী? সবকিছুই যখন লেজেগোবরে হয়ে গেছে, তখন আন্দোলনের পিঠে কারা ছুরি মারছে, সেটা কি ভেঙে বলে দিতে হবে?
৩ ঘণ্টা আগেভূ-রাজনৈতিক কারণেই আমাদের এই ছোট্ট ভূখণ্ডটির ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শ্যেনদৃষ্টি অনেক আগে থেকে। কিন্তু ইদানীং যেন তারা আমাদের দেশটিকে গিলে খেতে মরিয়া। মিয়ানমারের আরাকান আর্মির স্বার্থে করিডর আর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দিতে বাধ্য করার আলোচনার রেশ কাটতে না
১ দিন আগে