অজয় দাশগুপ্ত
মব, কিশোর গ্যাং, তৌহিদি জনতা—এসব নতুন নামের আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে আমাদের অতীত ও বর্তমান। বলা বাহুল্য, ভবিষ্যৎও ছেড়ে কথা বলবে না। সে কারণে আমি আজ এমন তিনজন বাঙালিকে স্মরণ করছি, যাঁদের আলোয় আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতি পথ খুঁজে পেয়েছিল। যাঁদের কথা ও কীর্তি আমাদের বহুকাল বাঙালি করে রাখতে পারে।
তখনকার আইসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি। অসামান্য কৃতিত্ব শিক্ষাজীবনে। বলছি অন্নদাশংকর রায়ের কথা। বিয়ে করলেন অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ড নামের এক আমেরিকান লেডিকে। কিন্তু এই ছিপছিপে মানুষটির এমনই প্রভাব যে তাঁর সান্নিধ্যে লেডি হয়ে গেলেন লীলা রায়। বাংলা শিখে বাংলা বলেন। অন্নদাশংকরের বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন তিনি। কর্মসূত্রে আমাদের চট্টগ্রামেও ছিলেন অন্নদাশংকর রায়। আমার মতে, সুকুমার রায়ের পর তিনি সেরা ছড়াকার। সে যদি না-ই হবে, এত হাজার হাজার ছড়াকার-কবি লিখলেন কিন্তু অমর হয়ে গেল তাঁর দুটি লেখা।
সাতচল্লিশের পর লিখেছিলেন—
‘তেলের শিশি ভাঙল বলে
খুকুর ’পরে রাগ করো
তোমরা যে সব ধেড়ে খোকা
বাংলা ভেঙে ভাগ করো’
এই মানুষটিই একাত্তরে লিখলেন—
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা
গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।’
কালজয়ী হতে এর বেশি কিছুর দরকার পড়ে না।
রোগা-পাতলা হওয়ায় থুতু ফেলে ফেলে দেখতেন রক্ত বেরোয় কি না, যক্ষ্মার ভয়ে গুটিয়ে থাকতেন। অথচ বেঁচেছিলেন ৯৯ বছর। ভাগ্যিস, তা না হলে কি হতো এসব অমর লেখার জন্ম? তাঁর একটা কথা খুব মনে রাখি আমি। লিখেছিলেন, ‘ভুল করেও যদি কেউ মাটিতে বিষবৃক্ষের বীজ পুঁতে কোনো সময় একদিন তার বিষাক্ত নিঃশ্বাস আকাশকেও স্পর্শ করে। সমসাময়িক ঘটনাগুলো দেখলে এটাই মনে পড়ে যায়।’
২. গান শুনতে ভালোবাসি। নিজের ইচ্ছেমতো গাইতেও ভালো লাগে। গানপাগল বলেই হয়তো এমন মানুষের সঙ্গ বা স্নেহ মিলে গিয়েছিল জীবনে। এঁরা বড় মাপের মানুষ। তাঁদের হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসাও বড় কোনো আকাশের মতো। আজাদ রহমান দেশের সুর ও সংগীতের এক নক্ষত্র। যখন যেখানে হাত দিয়েছিলেন, সোনা ফলেছিল। সিনেমার গানে, রেডিওর গানে, শেষ বয়সে বাংলা খেয়ালের গবেষণায় তাঁর কৃতিত্ব অনস্বীকার্য।
সিডনিতে এক অনুষ্ঠানে পরিচয়। সেদিন তাড়াহুড়োয় তেমন কথাও হয়নি। আমিও বলার সুযোগ পেয়েছিলাম সে অনুষ্ঠানে। তাঁর মতো খ্যাতিমান সুরকার, গানওয়ালা মানুষের সামনে কিছু বলা ধৃষ্টতাতুল্য। তবু সেদিনকার সামান্য কথা ও আলাপেই গড়ে উঠেছিল আন্তরিক বলয়।
এরপর যখনই সিডনি আসতেন, কথা বা দেখা হতো। শেষবারের দেখাটা ছিল অন্য কিছু। হঠাৎ অচেনা একটা ফোন রিসিভ করে শুনি তাঁর কণ্ঠ। তিনি টের পেয়েছিলেন ওই অনুষ্ঠানে আমি না-ও যেতে পারি। যখন তিনি যেতে বললেন, তখন তো যেতেই হয়।
কে জানত সেটাই হবে শেষ দেখা! খেয়াল বিষয়ে তাঁর লেখা পত্র ওপার বাংলার সংগীতবিশারদদের আগ্রহ, শান্তিনিকেতনে তাঁর সমাদর—সবকিছু বলেছিলেন এক এক করে। চলে আসার আগে কিছু কথা বলতেই হলো। ছবিটা দেখে এখন মনে হয় কী পরিমাণ ভালোবাসা নিয়ে শুনতেন, যা এখন কেউ শোনে না। তাঁর মতো প্রমিত বাংলায় বিশুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার বাঙালিও বিরল।
সেদিন স্বয়ং তাঁর স্ত্রী সেলিনা আজাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়েছিলাম—
‘মনের রঙে রাঙাবো
বনের ঘুম ভাঙাবো...’
আজাদ রহমানের জাদুকরি সুরে ওই এক গানেই সেলিনা আজাদ কিংবদন্তিতুল্য। মানুষ এই পৃথিবীতে যাযাবর। আসে, যায়। কেউ কেউ এমন ছাপ রেখে যায়, সময়ও তা মুছতে দিতে চায় না। তিনি সুরে সুরে অমর করে রেখে গেছেন—
‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো
এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাকো...’
এমন জন্মদাগ মোছে কার সাধ্য? আপনার সঙ্গসুধা আজীবন মনে রাখব প্রিয় আজাদ রহমান।
৩. আজকের ভুঁইফোড় রাজনীতিবিদদের পক্ষে এ-জাতীয় মনীষার মূল্যায়ন অসম্ভব। ঝোপ বুঝে কোপ মারা কূটনীতিক বা দলীয় লেজুড় হয়ে কূটনীতিক হওয়া এক কথা, মেধা, শ্রম ও দেশপ্রেমে তারকা হওয়া ভিন্ন বিষয়।
এখন যাঁরা কূটনীতিক, তাঁরা বাস করেন ওপরের জগতে। তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন। জানি না, মাটির কাছাকাছি এক কূটনীতিকের গল্প এখন কাউকে টানে কি না। যাঁর কথা বলছি তিনি লেখক, পররাষ্ট্রসচিব ও ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী, জাতিসংঘে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বাংলা ভাষণের ইংরেজি অনুবাদের পাঠক ফারুক চৌধুরী। তাঁর কন্যা থাকতেন অস্ট্রেলিয়ায়। এই আত্মজাকে লেখা চিঠিগুলো ছিল অসাধারণ গদ্যের এক ঐতিহাসিক দলিল। একটিতে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু তখন নবীন রাষ্ট্রের নতুন প্রধানমন্ত্রী। কোনো এক আন্তর্জাতিক সভায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল আরেকটি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি অভিযোগ জানিয়ে বলেছিলেন, “এটা তুমি কী করলে মুজিব? একটি মুসলিম দেশ, পাকিস্তানকে দু টুকরো করে দিলে? এতে আমরা হীনবল হয়ে যাব না?”’
তিনি লিখেছেন, ‘আমরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে নেতার মুখের দিকে তাকিয়ে। কূটনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন বঙ্গবন্ধু কীভাবে এর জবাব দেন। বঙ্গবন্ধু হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “তোমার কথা যদি মানি বন্ধু, আরবের দেশগুলো একসাথে থাকতে পারলে এক দেশ হলে কি আরো ভালো হতো না? তারচেয়ে কি আরো ভালো হতো না দুনিয়ার সব মুসলিম দেশগুলো একটি রাষ্ট্র হলে? সেটা কি হয়েছে?” এরপর তিনি বাংলাদেশ হওয়ার কারণগুলো তুলে ধরেন। ততক্ষণে প্রশ্নকর্তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।’
এমন অজস্র বাস্তব অজানা কাহিনির বই ‘প্রিয় ফারজানা’। বইটি আমি সময় পেলে ইতিহাস জানতে হলেই ফিরে ফিরে পড়ি। নেহরুর ইন্দিরাকে লেখা চিঠি ভারত দুনিয়াকে জানিয়েছে। আমরা পারিনি। এই ভদ্রলোক বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার দিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন। দিল্লি থেকে বঙ্গবন্ধু কলকাতা না গিয়ে কেন সরাসরি ঢাকায় এসেছিলেন, সে কাহিনি তিনি না বললে কোনোকালেও জানা হতো না। তিনিই জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কতটা দূরদর্শী আর মহানুভব। তিনি তাঁকে ডেকে বলেছিলেন ঢাকায় তখন পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক আলোর অভাব। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ঢাকায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হলে আলোহীনতায় জনগণের কষ্ট হবে। তারা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকবেন। তাই তিনি কলকাতা না গিয়ে সরাসরি চলে এসেছিলেন ঢাকায়। খুব কম মানুষই ফারুক চৌধুরীকে জানে। বঙ্গবন্ধুর দলের লোকেরাও জানায়নি, চেনায়নি কোনো দিন। সজ্জন, ধীমান, মেধাবী বাঙালির শেষ প্রজন্মের এই গুণীকে জানাই শ্রদ্ধা।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
মব, কিশোর গ্যাং, তৌহিদি জনতা—এসব নতুন নামের আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে আমাদের অতীত ও বর্তমান। বলা বাহুল্য, ভবিষ্যৎও ছেড়ে কথা বলবে না। সে কারণে আমি আজ এমন তিনজন বাঙালিকে স্মরণ করছি, যাঁদের আলোয় আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতি পথ খুঁজে পেয়েছিল। যাঁদের কথা ও কীর্তি আমাদের বহুকাল বাঙালি করে রাখতে পারে।
তখনকার আইসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি। অসামান্য কৃতিত্ব শিক্ষাজীবনে। বলছি অন্নদাশংকর রায়ের কথা। বিয়ে করলেন অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ড নামের এক আমেরিকান লেডিকে। কিন্তু এই ছিপছিপে মানুষটির এমনই প্রভাব যে তাঁর সান্নিধ্যে লেডি হয়ে গেলেন লীলা রায়। বাংলা শিখে বাংলা বলেন। অন্নদাশংকরের বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন তিনি। কর্মসূত্রে আমাদের চট্টগ্রামেও ছিলেন অন্নদাশংকর রায়। আমার মতে, সুকুমার রায়ের পর তিনি সেরা ছড়াকার। সে যদি না-ই হবে, এত হাজার হাজার ছড়াকার-কবি লিখলেন কিন্তু অমর হয়ে গেল তাঁর দুটি লেখা।
সাতচল্লিশের পর লিখেছিলেন—
‘তেলের শিশি ভাঙল বলে
খুকুর ’পরে রাগ করো
তোমরা যে সব ধেড়ে খোকা
বাংলা ভেঙে ভাগ করো’
এই মানুষটিই একাত্তরে লিখলেন—
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা
গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।’
কালজয়ী হতে এর বেশি কিছুর দরকার পড়ে না।
রোগা-পাতলা হওয়ায় থুতু ফেলে ফেলে দেখতেন রক্ত বেরোয় কি না, যক্ষ্মার ভয়ে গুটিয়ে থাকতেন। অথচ বেঁচেছিলেন ৯৯ বছর। ভাগ্যিস, তা না হলে কি হতো এসব অমর লেখার জন্ম? তাঁর একটা কথা খুব মনে রাখি আমি। লিখেছিলেন, ‘ভুল করেও যদি কেউ মাটিতে বিষবৃক্ষের বীজ পুঁতে কোনো সময় একদিন তার বিষাক্ত নিঃশ্বাস আকাশকেও স্পর্শ করে। সমসাময়িক ঘটনাগুলো দেখলে এটাই মনে পড়ে যায়।’
২. গান শুনতে ভালোবাসি। নিজের ইচ্ছেমতো গাইতেও ভালো লাগে। গানপাগল বলেই হয়তো এমন মানুষের সঙ্গ বা স্নেহ মিলে গিয়েছিল জীবনে। এঁরা বড় মাপের মানুষ। তাঁদের হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসাও বড় কোনো আকাশের মতো। আজাদ রহমান দেশের সুর ও সংগীতের এক নক্ষত্র। যখন যেখানে হাত দিয়েছিলেন, সোনা ফলেছিল। সিনেমার গানে, রেডিওর গানে, শেষ বয়সে বাংলা খেয়ালের গবেষণায় তাঁর কৃতিত্ব অনস্বীকার্য।
সিডনিতে এক অনুষ্ঠানে পরিচয়। সেদিন তাড়াহুড়োয় তেমন কথাও হয়নি। আমিও বলার সুযোগ পেয়েছিলাম সে অনুষ্ঠানে। তাঁর মতো খ্যাতিমান সুরকার, গানওয়ালা মানুষের সামনে কিছু বলা ধৃষ্টতাতুল্য। তবু সেদিনকার সামান্য কথা ও আলাপেই গড়ে উঠেছিল আন্তরিক বলয়।
এরপর যখনই সিডনি আসতেন, কথা বা দেখা হতো। শেষবারের দেখাটা ছিল অন্য কিছু। হঠাৎ অচেনা একটা ফোন রিসিভ করে শুনি তাঁর কণ্ঠ। তিনি টের পেয়েছিলেন ওই অনুষ্ঠানে আমি না-ও যেতে পারি। যখন তিনি যেতে বললেন, তখন তো যেতেই হয়।
কে জানত সেটাই হবে শেষ দেখা! খেয়াল বিষয়ে তাঁর লেখা পত্র ওপার বাংলার সংগীতবিশারদদের আগ্রহ, শান্তিনিকেতনে তাঁর সমাদর—সবকিছু বলেছিলেন এক এক করে। চলে আসার আগে কিছু কথা বলতেই হলো। ছবিটা দেখে এখন মনে হয় কী পরিমাণ ভালোবাসা নিয়ে শুনতেন, যা এখন কেউ শোনে না। তাঁর মতো প্রমিত বাংলায় বিশুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার বাঙালিও বিরল।
সেদিন স্বয়ং তাঁর স্ত্রী সেলিনা আজাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়েছিলাম—
‘মনের রঙে রাঙাবো
বনের ঘুম ভাঙাবো...’
আজাদ রহমানের জাদুকরি সুরে ওই এক গানেই সেলিনা আজাদ কিংবদন্তিতুল্য। মানুষ এই পৃথিবীতে যাযাবর। আসে, যায়। কেউ কেউ এমন ছাপ রেখে যায়, সময়ও তা মুছতে দিতে চায় না। তিনি সুরে সুরে অমর করে রেখে গেছেন—
‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো
এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাকো...’
এমন জন্মদাগ মোছে কার সাধ্য? আপনার সঙ্গসুধা আজীবন মনে রাখব প্রিয় আজাদ রহমান।
৩. আজকের ভুঁইফোড় রাজনীতিবিদদের পক্ষে এ-জাতীয় মনীষার মূল্যায়ন অসম্ভব। ঝোপ বুঝে কোপ মারা কূটনীতিক বা দলীয় লেজুড় হয়ে কূটনীতিক হওয়া এক কথা, মেধা, শ্রম ও দেশপ্রেমে তারকা হওয়া ভিন্ন বিষয়।
এখন যাঁরা কূটনীতিক, তাঁরা বাস করেন ওপরের জগতে। তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন। জানি না, মাটির কাছাকাছি এক কূটনীতিকের গল্প এখন কাউকে টানে কি না। যাঁর কথা বলছি তিনি লেখক, পররাষ্ট্রসচিব ও ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী, জাতিসংঘে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বাংলা ভাষণের ইংরেজি অনুবাদের পাঠক ফারুক চৌধুরী। তাঁর কন্যা থাকতেন অস্ট্রেলিয়ায়। এই আত্মজাকে লেখা চিঠিগুলো ছিল অসাধারণ গদ্যের এক ঐতিহাসিক দলিল। একটিতে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু তখন নবীন রাষ্ট্রের নতুন প্রধানমন্ত্রী। কোনো এক আন্তর্জাতিক সভায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল আরেকটি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি অভিযোগ জানিয়ে বলেছিলেন, “এটা তুমি কী করলে মুজিব? একটি মুসলিম দেশ, পাকিস্তানকে দু টুকরো করে দিলে? এতে আমরা হীনবল হয়ে যাব না?”’
তিনি লিখেছেন, ‘আমরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে নেতার মুখের দিকে তাকিয়ে। কূটনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন বঙ্গবন্ধু কীভাবে এর জবাব দেন। বঙ্গবন্ধু হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “তোমার কথা যদি মানি বন্ধু, আরবের দেশগুলো একসাথে থাকতে পারলে এক দেশ হলে কি আরো ভালো হতো না? তারচেয়ে কি আরো ভালো হতো না দুনিয়ার সব মুসলিম দেশগুলো একটি রাষ্ট্র হলে? সেটা কি হয়েছে?” এরপর তিনি বাংলাদেশ হওয়ার কারণগুলো তুলে ধরেন। ততক্ষণে প্রশ্নকর্তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।’
এমন অজস্র বাস্তব অজানা কাহিনির বই ‘প্রিয় ফারজানা’। বইটি আমি সময় পেলে ইতিহাস জানতে হলেই ফিরে ফিরে পড়ি। নেহরুর ইন্দিরাকে লেখা চিঠি ভারত দুনিয়াকে জানিয়েছে। আমরা পারিনি। এই ভদ্রলোক বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার দিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন। দিল্লি থেকে বঙ্গবন্ধু কলকাতা না গিয়ে কেন সরাসরি ঢাকায় এসেছিলেন, সে কাহিনি তিনি না বললে কোনোকালেও জানা হতো না। তিনিই জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কতটা দূরদর্শী আর মহানুভব। তিনি তাঁকে ডেকে বলেছিলেন ঢাকায় তখন পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক আলোর অভাব। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ঢাকায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হলে আলোহীনতায় জনগণের কষ্ট হবে। তারা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকবেন। তাই তিনি কলকাতা না গিয়ে সরাসরি চলে এসেছিলেন ঢাকায়। খুব কম মানুষই ফারুক চৌধুরীকে জানে। বঙ্গবন্ধুর দলের লোকেরাও জানায়নি, চেনায়নি কোনো দিন। সজ্জন, ধীমান, মেধাবী বাঙালির শেষ প্রজন্মের এই গুণীকে জানাই শ্রদ্ধা।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদ যেন পরিণত হয়েছে এক অলিখিত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে—যেখান থেকে বিরোধ, অভিযোগ আর অস্থিরতার যেন শেষ নেই। নাজমুল হাসান পাপনের দীর্ঘ শাসনের পর এলেন ফারুক আহমেদ, আর এবার আলোচনার কেন্দ্রে আমিনুল ইসলাম বুলবুল। প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি এই পদ মানুষকে বিগড়ে দেয়? নাকি এ
৩ ঘণ্টা আগেগত কয়েক দশকের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের আচার-আচরণ মোটের ওপর বিশ্লেষণ করলে মোটা দাগে বলা যায়, গত শতাব্দীর রাজনীতিবিদদের চেয়ে তাঁরা আলাদা বৈশিষ্ট্যের। রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের এই পরিবর্তনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা দরকার।
৪ ঘণ্টা আগেআমাদের দেশের খামারিরা কোরবানি সামনে রেখে সারা বছর পশুপালন করে থাকেন। এ সময় তাঁরা খামারের অধিকাংশ পশু বিক্রি করে দেন। এতে একদিকে যেমন তাঁরা লাভবান হন, অন্যদিকে আমাদের অর্থনীতিও সচল হয়। কিন্তু কোরবানির সময় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাই পথে গরু আসার কারণে সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশীয় খামারিরা। তাঁ
৪ ঘণ্টা আগেসুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল জেলার স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হলেও বর্তমানে এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত। ১ জুন আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত ‘চিকিৎসকের অনুপস্থিতিই যেন নিয়ম’ শিরোনামটিই হাসপাতালের বর্তমান দুরবস্থার এক করুণ চিত্র তুলে ধরছে। রোগীদের অভিযোগ হলো, প্রতিদিন আউটডোরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলে না
৪ ঘণ্টা আগে