ড. আর এম দেবনাথ
এ মাস গেলেই পবিত্র রমজান মাস। দীর্ঘ এক মাস সংযমের পর আসবে পবিত্র ঈদ। তখনই আবার উঠবে বোরো, যা এখন আমাদের প্রধান ফসল। অর্থাৎ আগামী দুই-তিন মাস আমাদের অর্থনীতির জন্য ব্যস্ত সময়। গুরুত্বপূর্ণও বটে। এর আরেক কারণ, এই সময়টা আবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিক। এখন বেচাকেনায় মন্দা চলছে। আবাসনশিল্পে চলছে মন্দা। মূল্যস্ফীতি যথারীতি চলমান। বাজারে ‘ক্যাশের’ অভাব আছে।
এর মধ্যে সবার আশা—হয়তো এবার ঈদের বাজার জমবে। তখন কৃষকের হাতে ধান বিক্রির টাকা থাকবে। হাতে আবার থাকবে পাট। সেটা দেবে নগদ টাকা। প্রবাসীরাও ভালো পরিমাণ টাকা পাঠাবে বলে আশা করা যায়। এরই মধ্যে আবার চলছে বিশাল বইমেলা। বেশ কেনাবেচা। এর আগে গেছে ‘হাতে হাতে’ বই উৎসব। প্রতিবছর জানুয়ারিতে সরকার কোটি কোটি টাকার বই দেয় ছাত্রছাত্রীদের বিনা মূল্যে। এ উপলক্ষে জমে উঠেছিল বাংলাবাজারসহ প্রকাশনা স্থলগুলো। প্রিন্টার, পাবলিশার, কম্পিউটার, বাঁধাই কারখানা—সব জমে উঠেছিল।
শোনা যাচ্ছে এখনো চলছে তার রেশ। তার মানে এখন ব্যবসার সময়, বেচাকেনার সময়। হয়তো মন্দার মধ্যেই। বস্তুত মন্দার মধ্যেই একধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। আগামী দুই-তিন মাস এটাই হবে। আমরা জানি, দুটি পবিত্র ঈদ বড় ব্যবসার সময়। লোকজন এই দুই মাসের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। রমজান মাস আর কোরবানির মাসের ব্যবসা বস্তুত সারা বছরের ব্যবসা। বাকি সময় ব্যবসায়ীরা খরচ চালান। সেই ব্যবসার সময়ই আসছে।
সাধারণভাবে অবশ্য এখন সময়টা ভালো নয়। অর্থনীতি এক গভীর চাপের মধ্যে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির চাপ। ডজন ডজন পদক্ষেপ গ্রহণের পরও এখন পর্যন্ত শুধু আশাবাদ। অর্থ উপদেষ্টার কথা বিশ্বাস করলে হয়তো ছয় মাস পর মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশে নেমে আসবে। আসুক, তাও ভালো। মূল্যস্ফীতির চাপের প্রধান কারণ এই মুহূর্তে খাদ্যশস্যের মূল্য। অর্থাৎ চালের দাম। আমন মৌসুমে চালের দাম কমবে, আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। চালের দাম বরং উল্টো বেড়েছে। বরাবরের মতোই এর কারণ সম্পর্কে কেউ একমত হতে পারেনি। আমন মৌসুম গেছে। অর্থনীতির ওপর চাপ অব্যাহত আছে। আসছে বোরোর সময়। আশা করা হচ্ছে, শ্রীহট্ট অঞ্চল থেকে বোরোর মৌসুমে ২০-২৫ লাখ টন চাল পাওয়া যাবে। অবশ্য বোরোর ফলন নিয়ে উদ্বেগ আছে। আশানুরূপ ফলন না-ও হতে পারে। তাহলেই বিপদ। কারণ চালের দাম তাহলে কমবে না।
চালের দাম না কমলে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে মনে হয়, চালের স্টক সরকারের হাতে ভালোই আছে। কাজেই খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে সেভাবে ভাবার কিছু নেই। চাল ছাড়া শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদির দামেও কোনো স্বস্তি নেই। দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে রমজানের মাস। ব্যবসায়ীরা সাধারণত এই মাসে পাগলের মতো ব্যবহার করেন। চাল নয় শুধু, রমজানে বিশেষ কিছু দ্রব্যের চাহিদা বাড়ে। ওই সব দ্রব্যের বাজার থাকে চড়া। ভোক্তাদের আশঙ্কা, এবারও তা-ই হবে। যদিও সরকার থেকে বলা হচ্ছে, রমজান মাসের চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত মাল আমদানি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিদা মোতাবেক ডলার দিচ্ছে বলে খবর। এর ওপর ভিত্তি করে সরকার আশা করছে, এবার রমজান মাসে বাজার থাকবে স্থিতিশীল। বাকিটা বাস্তবে দেখতে হবে।
এবারের আশাবাদের ভিত্তি কিছুটা আছে। একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে যে ডলারের রিজার্ভের পরিস্থিতি স্থিতিশীল। দীর্ঘদিন ধরেই তা ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে না। ডলারের দামও কিছুটি স্থিতিশীল। লাফিয়ে লাফিয়ে তা এখন বাড়ছে না। এদিকে রপ্তানির বাজারও মোটামুটি স্থিতিশীল। এবং কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি যথারীতি নিয়ন্ত্রিত। ঋণপত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে এই যে এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। এই লক্ষণ ভালো নয় মোটেই। এটা বিনিয়োগের জন্য ভালো খবর নয়। দেখাই যাচ্ছে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছেই না। নিয়ন্ত্রিত আমদানি এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আবার নিয়ন্ত্রিত আমদানিনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে অন্যান্য জরুরি খাতের চাহিদা মেটানোর জন্য।
তবে ভালো খবর আছে। এবং তা প্রবাসী আয়ের। ২০২৪ সালে প্রবাসী আয় ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। আগে মাসে ২ বিলিয়ন ডলার দেশে আসত না। কিন্তু এখন তা হয়। দু-একটি মাস বাদে ২০২৪ সালে প্রতি মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। ২০২৩ সালে যেখানে মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ২১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৪ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৬ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। উল্লেখ্য, এই প্রবণতা ২০২৫ সালেও অব্যাহত। জানুয়ারি মাসে মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এর পরিমাণ বাড়বে। কারণ সামনে দুটো ঈদ অনুষ্ঠান। ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠান।
এত কথা কেন লিখছি? কারণ, প্রবাসী আয় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষণে কাজে লাগছে। এর পরিমাণ বেশ স্থিতিশীল। রিজার্ভ স্থিতিশীল মানে ডলারের মূল্যও বেশ স্থিতিশীল। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। ডলারের মূল্য স্থিতিশীল থাকলে জিনিসপত্রের মূল্যও স্থিতিশীল থাকে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই ঘটনাটাই এখন ঘটছে। এদিকে রপ্তানি অল্পস্বল্প বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে ‘রিজার্ভ’ পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হচ্ছে। অবশ্য এটাকে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলা যায় না। কারণ আমদানি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। স্বাভাবিক পরিমাণে মাল আমদানি হলে ডলারের প্রয়োজন হতো অনেক বেশি। তাতে ডলারের টানাটানি বাড়ত। আমাদের অবশ্য খারাপ খবরও আছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরটিতে প্রবৃদ্ধি একটা জায়গায় আটকে আছে।
কাগজে দেখলাম, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে জিডিপি বৃদ্ধির পরিমাণ অনেক কম হয়েছে। এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২ শতাংশও না। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকও চলে গেছে (অক্টোবর-ডিসেম্বর)। এই প্রান্তিকের খবরও ভালো না। রাজনৈতিক অস্থিরতাই এর কারণ বলে মনে হয়। প্রবৃদ্ধির জন্য যা যা প্রয়োজন, তা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরটি শেষ হবে কীভাবে তা গভীর চিন্তার বিষয়। এর মধ্যে আরও বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে রাজস্ব। সরকারি রাজস্ব কোনোভাবেই আশানুরূপ হচ্ছে না। অথচ বেতন-ভাতা নিয়মিতভাবেই বাড়ছে। সুদব্যয় বাড়ছে দ্রুতগতিতে। সরকারের অনেক বকেয়া আছে, দেশীয়ভাবে এবং বিদেশে। এসব মেটাতে হচ্ছে। অথচ রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।
চলতি অর্থবছর, ২০২৪-২৫-এ প্রথম ছয় মাসেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব ঘাটতি ৫৭ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এই ঘাটতি কোনো বছরের একই সময়ের তুলনায়ও বেশি। বলাই বাহুল্য, এত ঘাটতি নিয়ে সরকার চালানো যায় না। সরকারকে ঋণ করতে হয় ব্যাংক থেকে। আবার ঋণ, অর্থাৎ ব্যাংক ঋণের সুদের হার অনেক বেশি। মানুষ সঞ্চয়পত্রও কিনতে চায় না। রাজস্ব ঘাটতির শেষ পরিণতি কী? একটাই পরিণতি। উন্নয়নের কাজে ভাটা! টাকা নেই। উন্নয়নের/এডিপির টাকা আসছে কোত্থেকে? একটি রিপোর্টে দেখলাম, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নাকি মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত বছরের এই সময়ে খরচ হয়েছিল একটু বেশি। এর মধ্যেই দেখতে দেখতে এসে যাবে ২০২৫-২৬ নতুন অর্থবছর। এর প্রস্তুতির কথাও শোনা যাচ্ছে। বর্তমান হতাশাজনক প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার কি বড় বাজেটের দিকে নজর দেবে? বড় বাজেট মানে বেশি বেশি কর। ইতিমধ্যেই কয়েক ডজন পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এসব ঘটনা-আশঙ্কার মধ্যেই আসছে নতুন বাজেট।
লেখক: সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
এ মাস গেলেই পবিত্র রমজান মাস। দীর্ঘ এক মাস সংযমের পর আসবে পবিত্র ঈদ। তখনই আবার উঠবে বোরো, যা এখন আমাদের প্রধান ফসল। অর্থাৎ আগামী দুই-তিন মাস আমাদের অর্থনীতির জন্য ব্যস্ত সময়। গুরুত্বপূর্ণও বটে। এর আরেক কারণ, এই সময়টা আবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিক। এখন বেচাকেনায় মন্দা চলছে। আবাসনশিল্পে চলছে মন্দা। মূল্যস্ফীতি যথারীতি চলমান। বাজারে ‘ক্যাশের’ অভাব আছে।
এর মধ্যে সবার আশা—হয়তো এবার ঈদের বাজার জমবে। তখন কৃষকের হাতে ধান বিক্রির টাকা থাকবে। হাতে আবার থাকবে পাট। সেটা দেবে নগদ টাকা। প্রবাসীরাও ভালো পরিমাণ টাকা পাঠাবে বলে আশা করা যায়। এরই মধ্যে আবার চলছে বিশাল বইমেলা। বেশ কেনাবেচা। এর আগে গেছে ‘হাতে হাতে’ বই উৎসব। প্রতিবছর জানুয়ারিতে সরকার কোটি কোটি টাকার বই দেয় ছাত্রছাত্রীদের বিনা মূল্যে। এ উপলক্ষে জমে উঠেছিল বাংলাবাজারসহ প্রকাশনা স্থলগুলো। প্রিন্টার, পাবলিশার, কম্পিউটার, বাঁধাই কারখানা—সব জমে উঠেছিল।
শোনা যাচ্ছে এখনো চলছে তার রেশ। তার মানে এখন ব্যবসার সময়, বেচাকেনার সময়। হয়তো মন্দার মধ্যেই। বস্তুত মন্দার মধ্যেই একধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। আগামী দুই-তিন মাস এটাই হবে। আমরা জানি, দুটি পবিত্র ঈদ বড় ব্যবসার সময়। লোকজন এই দুই মাসের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। রমজান মাস আর কোরবানির মাসের ব্যবসা বস্তুত সারা বছরের ব্যবসা। বাকি সময় ব্যবসায়ীরা খরচ চালান। সেই ব্যবসার সময়ই আসছে।
সাধারণভাবে অবশ্য এখন সময়টা ভালো নয়। অর্থনীতি এক গভীর চাপের মধ্যে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির চাপ। ডজন ডজন পদক্ষেপ গ্রহণের পরও এখন পর্যন্ত শুধু আশাবাদ। অর্থ উপদেষ্টার কথা বিশ্বাস করলে হয়তো ছয় মাস পর মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশে নেমে আসবে। আসুক, তাও ভালো। মূল্যস্ফীতির চাপের প্রধান কারণ এই মুহূর্তে খাদ্যশস্যের মূল্য। অর্থাৎ চালের দাম। আমন মৌসুমে চালের দাম কমবে, আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। চালের দাম বরং উল্টো বেড়েছে। বরাবরের মতোই এর কারণ সম্পর্কে কেউ একমত হতে পারেনি। আমন মৌসুম গেছে। অর্থনীতির ওপর চাপ অব্যাহত আছে। আসছে বোরোর সময়। আশা করা হচ্ছে, শ্রীহট্ট অঞ্চল থেকে বোরোর মৌসুমে ২০-২৫ লাখ টন চাল পাওয়া যাবে। অবশ্য বোরোর ফলন নিয়ে উদ্বেগ আছে। আশানুরূপ ফলন না-ও হতে পারে। তাহলেই বিপদ। কারণ চালের দাম তাহলে কমবে না।
চালের দাম না কমলে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে মনে হয়, চালের স্টক সরকারের হাতে ভালোই আছে। কাজেই খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে সেভাবে ভাবার কিছু নেই। চাল ছাড়া শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদির দামেও কোনো স্বস্তি নেই। দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে রমজানের মাস। ব্যবসায়ীরা সাধারণত এই মাসে পাগলের মতো ব্যবহার করেন। চাল নয় শুধু, রমজানে বিশেষ কিছু দ্রব্যের চাহিদা বাড়ে। ওই সব দ্রব্যের বাজার থাকে চড়া। ভোক্তাদের আশঙ্কা, এবারও তা-ই হবে। যদিও সরকার থেকে বলা হচ্ছে, রমজান মাসের চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত মাল আমদানি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিদা মোতাবেক ডলার দিচ্ছে বলে খবর। এর ওপর ভিত্তি করে সরকার আশা করছে, এবার রমজান মাসে বাজার থাকবে স্থিতিশীল। বাকিটা বাস্তবে দেখতে হবে।
এবারের আশাবাদের ভিত্তি কিছুটা আছে। একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে যে ডলারের রিজার্ভের পরিস্থিতি স্থিতিশীল। দীর্ঘদিন ধরেই তা ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে না। ডলারের দামও কিছুটি স্থিতিশীল। লাফিয়ে লাফিয়ে তা এখন বাড়ছে না। এদিকে রপ্তানির বাজারও মোটামুটি স্থিতিশীল। এবং কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি যথারীতি নিয়ন্ত্রিত। ঋণপত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে এই যে এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। এই লক্ষণ ভালো নয় মোটেই। এটা বিনিয়োগের জন্য ভালো খবর নয়। দেখাই যাচ্ছে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছেই না। নিয়ন্ত্রিত আমদানি এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আবার নিয়ন্ত্রিত আমদানিনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে অন্যান্য জরুরি খাতের চাহিদা মেটানোর জন্য।
তবে ভালো খবর আছে। এবং তা প্রবাসী আয়ের। ২০২৪ সালে প্রবাসী আয় ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। আগে মাসে ২ বিলিয়ন ডলার দেশে আসত না। কিন্তু এখন তা হয়। দু-একটি মাস বাদে ২০২৪ সালে প্রতি মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। ২০২৩ সালে যেখানে মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ২১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৪ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৬ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। উল্লেখ্য, এই প্রবণতা ২০২৫ সালেও অব্যাহত। জানুয়ারি মাসে মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এর পরিমাণ বাড়বে। কারণ সামনে দুটো ঈদ অনুষ্ঠান। ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠান।
এত কথা কেন লিখছি? কারণ, প্রবাসী আয় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষণে কাজে লাগছে। এর পরিমাণ বেশ স্থিতিশীল। রিজার্ভ স্থিতিশীল মানে ডলারের মূল্যও বেশ স্থিতিশীল। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। ডলারের মূল্য স্থিতিশীল থাকলে জিনিসপত্রের মূল্যও স্থিতিশীল থাকে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই ঘটনাটাই এখন ঘটছে। এদিকে রপ্তানি অল্পস্বল্প বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে ‘রিজার্ভ’ পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হচ্ছে। অবশ্য এটাকে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলা যায় না। কারণ আমদানি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। স্বাভাবিক পরিমাণে মাল আমদানি হলে ডলারের প্রয়োজন হতো অনেক বেশি। তাতে ডলারের টানাটানি বাড়ত। আমাদের অবশ্য খারাপ খবরও আছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরটিতে প্রবৃদ্ধি একটা জায়গায় আটকে আছে।
কাগজে দেখলাম, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে জিডিপি বৃদ্ধির পরিমাণ অনেক কম হয়েছে। এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২ শতাংশও না। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকও চলে গেছে (অক্টোবর-ডিসেম্বর)। এই প্রান্তিকের খবরও ভালো না। রাজনৈতিক অস্থিরতাই এর কারণ বলে মনে হয়। প্রবৃদ্ধির জন্য যা যা প্রয়োজন, তা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরটি শেষ হবে কীভাবে তা গভীর চিন্তার বিষয়। এর মধ্যে আরও বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে রাজস্ব। সরকারি রাজস্ব কোনোভাবেই আশানুরূপ হচ্ছে না। অথচ বেতন-ভাতা নিয়মিতভাবেই বাড়ছে। সুদব্যয় বাড়ছে দ্রুতগতিতে। সরকারের অনেক বকেয়া আছে, দেশীয়ভাবে এবং বিদেশে। এসব মেটাতে হচ্ছে। অথচ রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।
চলতি অর্থবছর, ২০২৪-২৫-এ প্রথম ছয় মাসেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব ঘাটতি ৫৭ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এই ঘাটতি কোনো বছরের একই সময়ের তুলনায়ও বেশি। বলাই বাহুল্য, এত ঘাটতি নিয়ে সরকার চালানো যায় না। সরকারকে ঋণ করতে হয় ব্যাংক থেকে। আবার ঋণ, অর্থাৎ ব্যাংক ঋণের সুদের হার অনেক বেশি। মানুষ সঞ্চয়পত্রও কিনতে চায় না। রাজস্ব ঘাটতির শেষ পরিণতি কী? একটাই পরিণতি। উন্নয়নের কাজে ভাটা! টাকা নেই। উন্নয়নের/এডিপির টাকা আসছে কোত্থেকে? একটি রিপোর্টে দেখলাম, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নাকি মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত বছরের এই সময়ে খরচ হয়েছিল একটু বেশি। এর মধ্যেই দেখতে দেখতে এসে যাবে ২০২৫-২৬ নতুন অর্থবছর। এর প্রস্তুতির কথাও শোনা যাচ্ছে। বর্তমান হতাশাজনক প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার কি বড় বাজেটের দিকে নজর দেবে? বড় বাজেট মানে বেশি বেশি কর। ইতিমধ্যেই কয়েক ডজন পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এসব ঘটনা-আশঙ্কার মধ্যেই আসছে নতুন বাজেট।
লেখক: সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
এবারের মার্চ মাসটাকে কীভাবে দেখা হবে? কে কীভাবে দেখবে? উন্মাতাল এই শহরের ফুঁসে ওঠা দেখে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ৩ মার্চের ইত্তেফাকের শিরোনাম করেছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
১১ ঘণ্টা আগেএবার সিডনির বইমেলায়ও মানুষের সমাগম কম হয়েছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেলাটিতে ছিল সামান্যসংখ্যক মানুষ। পরদিন রোববার দীর্ঘকালের মেলাটি গতবারের মতো মানুষ টানতে পারেনি। আমি যখন মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছাই, তখন যা দেখেছি তাতে এটা বলা চলে যে মানুষ আগের মতো আসেনি।
১১ ঘণ্টা আগেকতভাবে যে লুটপাটের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন চলছে, তার হিসাব কোনো জ্যোতিষী হিসাববিজ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তিও করতে পারবেন বলে মনে হয় না। ২৪ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘২০০ বছরের মাঠ কেটে পুকুর, উজাড় গাছও’ শিরোনামের খবরটি পড়লে...
১২ ঘণ্টা আগেড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন...
১ দিন আগে