আবদুল হাই
আমার বয়স আশি পেরিয়েছে আরও বছর পাঁচেক আগে। আমি বলি, ত্রিকাল দেখেছি। এক কালে পাগড়ি পরা ইংরেজ সাহেবদের ঘোড়ায় চড়ে যেতে দেখেছি। পাকিস্তানি শাসকদের গোঁজামিল বুঝেছি। আর এই বাংলাদেশ নামের একটা বেদনাঘন স্বাধীন দেশকে দেখছি— প্রতিদিন বদলে যেতে, ভেঙে পড়তে, আবার দাঁড়াতে, আবার হোঁচট খেতে।
আমি এক সময়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিছু জায়গা-জমি আছে। নিজে কৃষিকাজও করেছি। মাসিক বেতন পঁচিশ টাকা দিয়ে শিক্ষকতার শুরু। সেই টাকায় সংসার, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, ঈদ আনন্দ—সবই চালিয়ে নিয়েছি। গায়ে হাওয়া দিতো অভাবের গন্ধ, তবু বুক ভরে শ্বাস নিতাম। আজকের মতো কষ্ট লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করতাম না। বরং গর্ব ছিল— আমি সৎ, আমি শিক্ষক, আমি মানুষ গড়ার কারিগর।
ঈদের কথা মনে পড়ে খুব। সেকালের ঈদ...
ঈদ মানেই ছিল অন্তরের খুশি। আগে থেকেই প্রস্তুতি হতো, কিন্তু সেটা বাহারি নয়। সব বাড়িতে কোরবানি হতো না। গরু কোরবানি হতো খুব কম। অনেকে ভাগে গরু কোরবানি দিত, ছাগল কোরবানি হতো বেশি। আবার কারও বাড়িতে শুধু সাদা ভাত আর ডিমের কারি। কিন্তু সে নিয়েও কারও আফসোস ছিল না। বরং যার বাড়িতে কোরবানি হতো না, তার বাড়ির শিশুরাও আনন্দে ভেসে যেত। পাড়া-পড়শিরা বলতো, ‘আজ তোমার ছেলেকে আমাদের বাড়িতে পাঠিও, দেলোয়ার ভাইয়ের কোরবানি হবে তো, ওরাও খাবে।’
যারা কোরবানি দিতেন, তাঁদের মাংস ভাগ হতো তিন ভাগে— গরিব আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী, নিজের ঘর। সেই তিন ভাগেই তৃপ্তি ছিল। কোরবানির আগে আল্লাহর নামে পশুর মাথায় হাত রেখে বলতাম, ‘হে আল্লাহ, মন থেকে দিচ্ছি’। কে কোন ব্র্যান্ডের ছুরি দিল, কে কত টাকায় গরু কিনল, এসব বিষয় ছিলই না। দেখানোর জন্য নয়, দানের জন্যই কোরবানি ছিল। একবার আমার এক ছাত্র বলেছিল, ‘স্যার, আমার বাবা বলেছেন, কোরবানি করলে পাপ কাটে না, মন পরিষ্কার রাখতে হয়।’ আমি বলেছিলাম, ‘তোমার বাবার কথাই সত্য।’
আজকাল...
যখন রাস্তায় এক গাদা গরু, হরিণের মতো দামি ছাগল, ব্যানার লাগানো ‘কোরবানি স্পনসর্ড বাই...’ দেখি, তখন বুকের ভেতরটা হিম হয়ে যায়। ঈদ কি এতটা প্রতিযোগিতার বিষয়? হিন্দি ছবির ডায়লগে যেমন বলে— ‘দুনিয়াদারি হি সব কুছ হ্যায়’। এই দুনিয়াদারিতেই ঈদের রুহ, কোরবানির মহিমা সব চাপা পড়ে গেছে।
মানি ইজ নো প্রবলেম—এই বাতিক কবে ধরলো আমাদের?
যদ্দূর মনে পড়ে, সত্তর দশকের শেষ ও আশির দশকের শুরুর দিক থেকে। তখন বিদেশে যারা কাজ করতেন, তাদের রেমিট্যান্সে বাড়ি, গরু, কোরবানি, জামা-কাপড়—সব পাল্টাতে লাগলো। তারপর রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতার খেলা খেলতে খেলতে সমাজটাকে এমন একটা অবস্থায় এনে ফেললো, যেখানে ‘কে কতোটা বেশি দেখাতে পারে’— এই হলো মূল সূচক।
রাজনীতি সর্বগ্রাসী হয়ে উঠলো ঠিক তখনই, যখন সমাজের নেতৃত্ব চলে গেল টাকার মালিকদের হাতে। আগে নেতা মানে ছিল, যে গ্রামের মানুষের সেবায় এগিয়ে আসে। এখন নেতা মানে, যার ৫০টা গরু, বিশাল ব্যানার, বড় মাইকে ঈদের বাণী।
আমার প্রশ্ন: মানুষ কি অন্তরের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে? সেই মায়া, সেই হাসি, সেই একবেলার মাংস ভাগাভাগি, সেই ‘আমার বাড়িতে খেতে এসো’ ডাক— সব কি কেবল স্মৃতি হয়ে যাবে?
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সম্ভবত মোবাইল ফোন ঢুকছে দেশে। বিদেশফেরত লোকদের হাতে অনেক টাকা। গ্রামের মানুষ ভাবলো—ওরা উন্নত। ওদের মতো হতে হবে। ঈদের গরুর মাপ তখন ধীরে ধীরে মানুষের মাপের চেয়ে বড় হয়ে উঠলো।
আমার ছোট ছেলে তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। ঈদের সময় বললো, ‘আমরা এতো ছোট গরু কোরবানি দিই কেন? মজনুদের বাড়িতে দেখি বিশাল ষাঁড় আসছে।’ আমি চুপ করে ছিলাম। বললাম না, কারণ বললেই হয়তো আমার আয়ের সীমাবদ্ধতা বোঝা যাবে। আমার মনে কষ্ট হলো না, হলো ভয়। এই ছেলেটি যদি বড় হয়ে শুধু দেখার জন্য কোরবানি দেয়, তাহলে আমি কী শেখাতে পেরেছি?
এই সময় থেকেই মিডিয়ার প্রভাব বাড়লো। টিভিতে ঈদের গরুর মেলা, ঢাকায় কে কতো বড় গরু আনলো, ‘রাজাবাবু’, ‘সুলতান’, ‘বাহুবলী’ নামের ষাঁড় নিয়ে হৈচৈ। গ্রামের হাটেও তার প্রভাব পড়লো। মানুষ গরু না দেখে নাম দেখে কিনতে লাগলো। একজনকে বলতে শুনেছি, ‘এইটা সেই “বম্বে বাবু” না?’
এই হুজুগ তৈরি করলো কারা?
ব্যবসায়ী আর রাজনীতিকেরা। ঈদের বাজার মানেই এখন কোটি টাকার খেলা। গরু মানেই প্যাকেজ—সার্ভিসিং, ডেলিভারি, ফেসবুক লাইভ, পোস্টার। ঈদের নামাজ পড়ে যখন দেখি পাশের লোক জামার হাতা উঁচু করে তার ব্র্যান্ড দেখাচ্ছে, মনে হয় নামাজের দোয়া পড়ার সময় ভুলে যাচ্ছে, কিন্তু স্টাইল ঠিকঠাক আছে।
রাজনীতি তো পরে আসলো। আগে রাজনীতি ছিল ত্যাগের জায়গা। এখন সেটা হচ্ছে সম্পদের প্রদর্শন। আগে যে নেতা মাঠে নামতো গরিবের ঈদের কাপড় জোগাড় করতে, এখন সে হাটে যায় ছবি তুলতে। ব্যানারে লেখে, ‘মাননীয় নেতার পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা’। নেতার পক্ষ থেকে মানে কী? উনি নিজে কোরবানি দিচ্ছেন না?
এইসব দেখে কষ্ট পাই, কিন্তু বেশি কষ্ট হয় নিজের সন্তানদের চোখে দেখি যখন তাদের ঈদের আনন্দে মাংসের চেয়ে মোবাইল ক্যামেরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা ঈদ বলে না, বলে—‘কন্টেন্ট’।
প্রশ্ন করি নিজেকে—কোথায় সেই অন্তরের সৌন্দর্য? মানুষ এখন এতটাই বাহ্যিক রঙে বিভোর যে একবেলার শান্তি, এক টুকরো হাসিমুখ, এক মুঠো মাংসের ভাগ—এগুলো আর মূল্য রাখে না। অথচ আমি জানি, আল্লাহ তাকওয়া দেখেন, পশু নয়।
আমার ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত। তারা চেষ্টা করে আমাকে ভালো রাখার। ঈদের সময় পাকা মাংস আসে আমার বাসায়, ফ্রিজ ভর্তি থাকে। কিন্তু আমি বসে থাকি জানালার পাশে। অপেক্ষা করি যদি কেউ বলে— ‘চাচা, খাইতে আসেন।’ আজকাল কেউ বলে না। শহর বদলে দিয়েছে সম্পর্কের প্রকৃতি। দানের চেয়ে দৃষ্টির খোঁজ বেশি।
স্মৃতির এক কোণে আটকে আছি, যেখানে কোরবানির পর গরুর চামড়ায় পানি ঢেলে রাখতাম যেন শুকিয়ে না যায়, যেন মাদ্রাসার হুজুর এসে নিতে পারেন। আজ সেটা নিয়ে মারামারি হয়, কে নেবে, কোথায় দেবে। আল্লাহর নামে কোরবানি হয়, কিন্তু তা নিয়ে হিংসা, ঝগড়া— এ কেমন ত্যাগ?
আমার বিশ্বাস ছিল, ঈদ মানুষকে এক করে। এখন মনে হয়, ঈদ মানুষকে আলাদা করে দিচ্ছে— কে কতোটা পারছে, কে কতোটা দেখাতে পারছে।
তবু আশায় থাকি। নতুন প্রজন্ম আসুক আবার অন্তরের রঙ নিয়ে। প্যাকেজ ঈদ না, প্রাণের ঈদ ফিরে আসুক। কে কত বড় গরু দিল, তা নিয়ে নয়— কে কাকে ভালোবাসলো, কে কার পাশে দাঁড়ালো, সেই গল্প হোক ঈদের গল্প। ঈদ তো শেষ পর্যন্ত কোরবানির নাম, আত্মত্যাগের নাম। যদি তা ভুলে যাই, তাহলে সবকিছুই শুধু আয়োজন হয়ে যাবে— আনন্দ নয়।
আমি জানি, আমি বুড়ো। আমার কথার ওজন নেই। কিন্তু আমি ইতিহাসের একজন সাক্ষী। বলার অধিকার আমার আছে। তাই বলি—যারা ঈদের ভেতরের সৌন্দর্য ভুলে যাচ্ছো, তারা ভবিষ্যৎ হারিয়ে ফেলবে। ঈদের আনন্দ তখন আর থাকবে না, শুধু থাকবে শোরগোল।
আসুন, অন্তরের ঈদ ফিরিয়ে আনি!
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক
আমার বয়স আশি পেরিয়েছে আরও বছর পাঁচেক আগে। আমি বলি, ত্রিকাল দেখেছি। এক কালে পাগড়ি পরা ইংরেজ সাহেবদের ঘোড়ায় চড়ে যেতে দেখেছি। পাকিস্তানি শাসকদের গোঁজামিল বুঝেছি। আর এই বাংলাদেশ নামের একটা বেদনাঘন স্বাধীন দেশকে দেখছি— প্রতিদিন বদলে যেতে, ভেঙে পড়তে, আবার দাঁড়াতে, আবার হোঁচট খেতে।
আমি এক সময়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিছু জায়গা-জমি আছে। নিজে কৃষিকাজও করেছি। মাসিক বেতন পঁচিশ টাকা দিয়ে শিক্ষকতার শুরু। সেই টাকায় সংসার, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, ঈদ আনন্দ—সবই চালিয়ে নিয়েছি। গায়ে হাওয়া দিতো অভাবের গন্ধ, তবু বুক ভরে শ্বাস নিতাম। আজকের মতো কষ্ট লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করতাম না। বরং গর্ব ছিল— আমি সৎ, আমি শিক্ষক, আমি মানুষ গড়ার কারিগর।
ঈদের কথা মনে পড়ে খুব। সেকালের ঈদ...
ঈদ মানেই ছিল অন্তরের খুশি। আগে থেকেই প্রস্তুতি হতো, কিন্তু সেটা বাহারি নয়। সব বাড়িতে কোরবানি হতো না। গরু কোরবানি হতো খুব কম। অনেকে ভাগে গরু কোরবানি দিত, ছাগল কোরবানি হতো বেশি। আবার কারও বাড়িতে শুধু সাদা ভাত আর ডিমের কারি। কিন্তু সে নিয়েও কারও আফসোস ছিল না। বরং যার বাড়িতে কোরবানি হতো না, তার বাড়ির শিশুরাও আনন্দে ভেসে যেত। পাড়া-পড়শিরা বলতো, ‘আজ তোমার ছেলেকে আমাদের বাড়িতে পাঠিও, দেলোয়ার ভাইয়ের কোরবানি হবে তো, ওরাও খাবে।’
যারা কোরবানি দিতেন, তাঁদের মাংস ভাগ হতো তিন ভাগে— গরিব আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী, নিজের ঘর। সেই তিন ভাগেই তৃপ্তি ছিল। কোরবানির আগে আল্লাহর নামে পশুর মাথায় হাত রেখে বলতাম, ‘হে আল্লাহ, মন থেকে দিচ্ছি’। কে কোন ব্র্যান্ডের ছুরি দিল, কে কত টাকায় গরু কিনল, এসব বিষয় ছিলই না। দেখানোর জন্য নয়, দানের জন্যই কোরবানি ছিল। একবার আমার এক ছাত্র বলেছিল, ‘স্যার, আমার বাবা বলেছেন, কোরবানি করলে পাপ কাটে না, মন পরিষ্কার রাখতে হয়।’ আমি বলেছিলাম, ‘তোমার বাবার কথাই সত্য।’
আজকাল...
যখন রাস্তায় এক গাদা গরু, হরিণের মতো দামি ছাগল, ব্যানার লাগানো ‘কোরবানি স্পনসর্ড বাই...’ দেখি, তখন বুকের ভেতরটা হিম হয়ে যায়। ঈদ কি এতটা প্রতিযোগিতার বিষয়? হিন্দি ছবির ডায়লগে যেমন বলে— ‘দুনিয়াদারি হি সব কুছ হ্যায়’। এই দুনিয়াদারিতেই ঈদের রুহ, কোরবানির মহিমা সব চাপা পড়ে গেছে।
মানি ইজ নো প্রবলেম—এই বাতিক কবে ধরলো আমাদের?
যদ্দূর মনে পড়ে, সত্তর দশকের শেষ ও আশির দশকের শুরুর দিক থেকে। তখন বিদেশে যারা কাজ করতেন, তাদের রেমিট্যান্সে বাড়ি, গরু, কোরবানি, জামা-কাপড়—সব পাল্টাতে লাগলো। তারপর রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতার খেলা খেলতে খেলতে সমাজটাকে এমন একটা অবস্থায় এনে ফেললো, যেখানে ‘কে কতোটা বেশি দেখাতে পারে’— এই হলো মূল সূচক।
রাজনীতি সর্বগ্রাসী হয়ে উঠলো ঠিক তখনই, যখন সমাজের নেতৃত্ব চলে গেল টাকার মালিকদের হাতে। আগে নেতা মানে ছিল, যে গ্রামের মানুষের সেবায় এগিয়ে আসে। এখন নেতা মানে, যার ৫০টা গরু, বিশাল ব্যানার, বড় মাইকে ঈদের বাণী।
আমার প্রশ্ন: মানুষ কি অন্তরের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে? সেই মায়া, সেই হাসি, সেই একবেলার মাংস ভাগাভাগি, সেই ‘আমার বাড়িতে খেতে এসো’ ডাক— সব কি কেবল স্মৃতি হয়ে যাবে?
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সম্ভবত মোবাইল ফোন ঢুকছে দেশে। বিদেশফেরত লোকদের হাতে অনেক টাকা। গ্রামের মানুষ ভাবলো—ওরা উন্নত। ওদের মতো হতে হবে। ঈদের গরুর মাপ তখন ধীরে ধীরে মানুষের মাপের চেয়ে বড় হয়ে উঠলো।
আমার ছোট ছেলে তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। ঈদের সময় বললো, ‘আমরা এতো ছোট গরু কোরবানি দিই কেন? মজনুদের বাড়িতে দেখি বিশাল ষাঁড় আসছে।’ আমি চুপ করে ছিলাম। বললাম না, কারণ বললেই হয়তো আমার আয়ের সীমাবদ্ধতা বোঝা যাবে। আমার মনে কষ্ট হলো না, হলো ভয়। এই ছেলেটি যদি বড় হয়ে শুধু দেখার জন্য কোরবানি দেয়, তাহলে আমি কী শেখাতে পেরেছি?
এই সময় থেকেই মিডিয়ার প্রভাব বাড়লো। টিভিতে ঈদের গরুর মেলা, ঢাকায় কে কতো বড় গরু আনলো, ‘রাজাবাবু’, ‘সুলতান’, ‘বাহুবলী’ নামের ষাঁড় নিয়ে হৈচৈ। গ্রামের হাটেও তার প্রভাব পড়লো। মানুষ গরু না দেখে নাম দেখে কিনতে লাগলো। একজনকে বলতে শুনেছি, ‘এইটা সেই “বম্বে বাবু” না?’
এই হুজুগ তৈরি করলো কারা?
ব্যবসায়ী আর রাজনীতিকেরা। ঈদের বাজার মানেই এখন কোটি টাকার খেলা। গরু মানেই প্যাকেজ—সার্ভিসিং, ডেলিভারি, ফেসবুক লাইভ, পোস্টার। ঈদের নামাজ পড়ে যখন দেখি পাশের লোক জামার হাতা উঁচু করে তার ব্র্যান্ড দেখাচ্ছে, মনে হয় নামাজের দোয়া পড়ার সময় ভুলে যাচ্ছে, কিন্তু স্টাইল ঠিকঠাক আছে।
রাজনীতি তো পরে আসলো। আগে রাজনীতি ছিল ত্যাগের জায়গা। এখন সেটা হচ্ছে সম্পদের প্রদর্শন। আগে যে নেতা মাঠে নামতো গরিবের ঈদের কাপড় জোগাড় করতে, এখন সে হাটে যায় ছবি তুলতে। ব্যানারে লেখে, ‘মাননীয় নেতার পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা’। নেতার পক্ষ থেকে মানে কী? উনি নিজে কোরবানি দিচ্ছেন না?
এইসব দেখে কষ্ট পাই, কিন্তু বেশি কষ্ট হয় নিজের সন্তানদের চোখে দেখি যখন তাদের ঈদের আনন্দে মাংসের চেয়ে মোবাইল ক্যামেরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা ঈদ বলে না, বলে—‘কন্টেন্ট’।
প্রশ্ন করি নিজেকে—কোথায় সেই অন্তরের সৌন্দর্য? মানুষ এখন এতটাই বাহ্যিক রঙে বিভোর যে একবেলার শান্তি, এক টুকরো হাসিমুখ, এক মুঠো মাংসের ভাগ—এগুলো আর মূল্য রাখে না। অথচ আমি জানি, আল্লাহ তাকওয়া দেখেন, পশু নয়।
আমার ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত। তারা চেষ্টা করে আমাকে ভালো রাখার। ঈদের সময় পাকা মাংস আসে আমার বাসায়, ফ্রিজ ভর্তি থাকে। কিন্তু আমি বসে থাকি জানালার পাশে। অপেক্ষা করি যদি কেউ বলে— ‘চাচা, খাইতে আসেন।’ আজকাল কেউ বলে না। শহর বদলে দিয়েছে সম্পর্কের প্রকৃতি। দানের চেয়ে দৃষ্টির খোঁজ বেশি।
স্মৃতির এক কোণে আটকে আছি, যেখানে কোরবানির পর গরুর চামড়ায় পানি ঢেলে রাখতাম যেন শুকিয়ে না যায়, যেন মাদ্রাসার হুজুর এসে নিতে পারেন। আজ সেটা নিয়ে মারামারি হয়, কে নেবে, কোথায় দেবে। আল্লাহর নামে কোরবানি হয়, কিন্তু তা নিয়ে হিংসা, ঝগড়া— এ কেমন ত্যাগ?
আমার বিশ্বাস ছিল, ঈদ মানুষকে এক করে। এখন মনে হয়, ঈদ মানুষকে আলাদা করে দিচ্ছে— কে কতোটা পারছে, কে কতোটা দেখাতে পারছে।
তবু আশায় থাকি। নতুন প্রজন্ম আসুক আবার অন্তরের রঙ নিয়ে। প্যাকেজ ঈদ না, প্রাণের ঈদ ফিরে আসুক। কে কত বড় গরু দিল, তা নিয়ে নয়— কে কাকে ভালোবাসলো, কে কার পাশে দাঁড়ালো, সেই গল্প হোক ঈদের গল্প। ঈদ তো শেষ পর্যন্ত কোরবানির নাম, আত্মত্যাগের নাম। যদি তা ভুলে যাই, তাহলে সবকিছুই শুধু আয়োজন হয়ে যাবে— আনন্দ নয়।
আমি জানি, আমি বুড়ো। আমার কথার ওজন নেই। কিন্তু আমি ইতিহাসের একজন সাক্ষী। বলার অধিকার আমার আছে। তাই বলি—যারা ঈদের ভেতরের সৌন্দর্য ভুলে যাচ্ছো, তারা ভবিষ্যৎ হারিয়ে ফেলবে। ঈদের আনন্দ তখন আর থাকবে না, শুধু থাকবে শোরগোল।
আসুন, অন্তরের ঈদ ফিরিয়ে আনি!
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে এক বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে একটি অভ্যুত্থানোত্তর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে রয়েছে এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র একধরনের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও বৈষম্যের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। আশা করা হয়েছিল, অরাজনৈতিক সরকারের বাজেটে
১ দিন আগেসংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত কোনো কোনো শিরোনাম ও সংবাদ বিশেষ আগ্রহ নিয়ে পড়তে চান পাঠক। আজকের পত্রিকায় ৩১ মে প্রকাশিত প্রধান শিরোনাম, ‘৬ মাসের টানাটানিতে ভোট’ শীর্ষক সংবাদটি সম্পর্কে আমাকে একজন সম্পাদক ফোন করে প্রশংসা করলেন। আমি বুঝতে পারলাম শিরোনামটি যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভোট নিয়ে জনগণের আগ
৩ দিন আগেঈদ—এই শব্দটির সঙ্গে অগণিত মানুষের হৃদয়ে যে অনুভব জাগে, তা আনন্দ, উৎসব আর মিলনের। ঘরে ঘরে নতুন জামা, সুস্বাদু খাবার, কোলাকুলি আর রঙিন খুশির চিত্র যেন ঈদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সেই পরিচিত দৃশ্যের বাইরে যে একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায়, তা হলো—ঈদ কি সবার জন্য একরকম? ঈদের দিন কি সকলের মুখেই সমান হাসি? ঈদের আনন
৩ দিন আগে১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঈদ এসেছিল। সেই ঈদের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একটা বিশেষ নাটক লিখেছিলাম। যুদ্ধরত শিল্পীদের অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়ে নাটকটি প্রচারিত হয়েছিল ঈদের আগের দিন। নাটকটির নাম ছিল ‘চান্দের তলোয়ার’। ঈদের চাঁদ সাধারণত আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। খুশির এই ঈদের বড় প্রতীক হলো চাঁদ।
৩ দিন আগে