Ajker Patrika

মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে: সুলতানা কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে: সুলতানা কামাল

নৃগোষ্ঠীদের ওপর নির্যাতন, হত্যা ও ভূমি দখলের বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, তাদের ওপর নির্যাতন, হত্যা, ভূমি দখল চলতেই থাকবে এটা হতে পারে না। তারা আন্দোলন করতে করতেই জীবন পার করবে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব জাতিবর্ণ নির্বিশেষে মানবাধিকার রক্ষা করা। আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। এর দায়ভার রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের বহন করতে হবে।

শ্যামনগরের হামলা ও হত্যার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, এগুলো যাতে আর না ঘটে সে জন্য সোচ্চার থাকতে হবে। মানুষের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ রাষ্ট্রকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সাতক্ষীরার নরেন্দ্র মুন্ডা হত্যা ও আদিবাসী ভূমি দখলের প্রতিবাদে ৯টি আদিবাসী ও নাগরিক সংগঠনের যৌথ আয়োজনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন চাই। যদি উন্নয়নের সুফল সব জনগোষ্ঠী সমানভাবে না পায় তাহলে সেটি কিসের উন্নয়ন। আমরা স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক সরকার চাই। একই সঙ্গে সকল মানুষের সমান অধিকার চাই।’

ক্ষমতায় টিকে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করছে সরকার। তারা চেতনার বাইরে গিয়ে মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস নীতি অনুসরণ করছে উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, যারা বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির কাছে সরকার নতি স্বীকার করেছে। 

বর্তমান সরকার মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় আসলেও তারা সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে বলে দাবি করেন সুলতানা কামাল। দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বিচারহীনতার কষ্টে এসব নির্যাতিতরা ভুগছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীর সমতা, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও পাঠ্যপুস্তকে সাম্য নীতি থেকে সরকার সরে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে কিন্তু তারা সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। অঙ্গীকার রক্ষা ও জনগণের অধিকার ও সম্মান রক্ষার বিষয়টি তারা যেন দেখেন। 

শ্যামনগরের হামলা ও হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, ‘পুলিশি ভূমিকার নিন্দা জানাতে জানাতে আমরা ক্লান্ত। আমরা চাই পুলিশ নিজেদের দিকে ফিরে তাকাক। কেন সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চাইতে হবে। সার্বিকভাবে পুলিশ ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কোন ঘটনারই সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারেনি।’ 

গত ১৯ আগস্ট জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসী মহলের হামলায় ১২ জন মুন্ডা সদস্য আহত হন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী ফনিন্দ্রনাথ। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার চাচা নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা মারা যান। জমিটি নিয়ে মামলা চলমান। আমরা বলেছিলাম কোর্টের রায় যা হবে তা মেনে নেব তার আগে কিছু নয়।’ ফনিন্দ্রনাথ দাবি করেন, তাদের মারধর করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কেউ হামলার পর এগিয়ে আসেনি। ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। 

ফনিন্দ্রনাথ জানান, হত্যা মামলার আসামি ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রধান আসামি রাশিদুল ও এবাদুলকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। অতি দ্রুত অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনের মূল প্রবন্ধে আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং অভিযোগ করেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর নয়। স্থানীয় জনগণ বলছে পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। মূল আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ অনেক দেরিতে এসেছে।

অবিলম্বে নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা হত্যার মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করেন উপস্থিত বক্তারা। এ ছাড়া সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে ৯টি দাবি ও সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, এএলআরডি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, কাপেং ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিস কেন্দ্র, স্বদেশ, সামস, হেড ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত