নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদেরন অভিযোগের জবাব দিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আজ রোববার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
এতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ গত শুক্রবার একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন একাডেমির সচিবের কাছে লিখিত পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। জামিল আহমেদের উল্লিখিত কারণগুলোর মধ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের প্রতি কিছু অসত্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বিষয়েও অসত্য, মনগড়া ও ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক বক্তব্য রয়েছে।
উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে সৈয়দ জামিল আহমেদ একটি ভিডিও নির্মাণের বিষয়ে চিঠিপত্র ছাড়া টাকা প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয় ব্যাখা দিয়েছে এ রকম, ‘ভিডিও নির্মাণের বিষয়ে চিঠিপত্র ছাড়া টাকা প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগ বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও বানানো। গত ২০-২১ ফেব্রুয়ারি প্যারিসের ইউনেসকো সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস সংরক্ষণে বাংলাদেশের অবদান তুলে ধরে ১৫ মিনিটের ভিডিও এবং একটি লাইভ প্রোগ্রাম উপস্থাপন করা হয়। ভিডিওটি নির্মাণের জন্য গত ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে একটি পত্র প্রেরণ করা হয়। উন্নত কারিগরি সহায়তা এবং সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে ভিডিওটি নির্মাণের জন্য নিয়ম অনুযায়ী অগ্রিম কিছু অর্থ নির্মাতাকে দেওয়ার অনুরোধ করা হলে একাডেমির মহাপরিচালক অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, বাজেট বরাদ্দ না দিলে অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার অনুরোধ নাকচ করেন। অথচ মহাপরিচালক এর আগে সাধু মেলা আয়োজনের জন্য শুধু উপদেষ্টার মৌখিক কথায় প্রায় ৩৩ লাখ টাকার প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। পরবর্তী সময়ে এই বিষয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়। সাধারণত জরুরি বিবেচনায় মন্ত্রণালয় তার দপ্তর সংস্থাগুলো এ রকমভাবে কাজ এগিয়ে নেয়। কিন্তু এবার আগেই চিঠি দেওয়া হয়েছিল। শুধু তা–ই নয়, ইউনেসকোর প্রোগ্রাম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের জন্য উপদেষ্টা, ইউনেসকো সদর দপ্তর, বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভিডিও নির্মাতা, শিল্পকলা একাডেমিকে সংযুক্ত করে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান।’
শিল্পকলা একাডেমির কাজে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের কথাও বলেছিলেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য এ রকম, ‘মন্ত্রণালয় শিল্পকলা একাডেমির কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করেনি। একাডেমির কোনো কাজ মন্ত্রণালয় বন্ধ করতে বলেছে এ রকম কোনো নজির নেই। বরং সব সময় শিল্পকলার কাজকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কোনো কোনো জায়গায় যখন বাউলদের প্রোগ্রাম নিয়ে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তখন মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলা একাডেমিকে বাউলদের জন্য শিডিউলকৃত সাধু মেলার সংখ্যা দ্বিগুণ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া “রিমেম্বারিং জুলাই রেভল্যুশন” নামে ৮ বিভাগে প্রোডাকশন ওরিয়েন্টেড ফিল্ম মেকিং ওয়ার্কশপ পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে একদল বেসরকারি বিশেষজ্ঞ টিম এ জন্য কাজ করছে। এসব কাজে মন্ত্রণালয় সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও সমন্বয় করছে। পাশাপাশি জুলাই বিপ্লবকে কেন্দ্র করে ৮টি নতুন থিয়েটার ও একটি গেরিলা/ইনভিজিবল থিয়েটার নির্মাণের বিষয়েও মন্ত্রণালয় হতে শিল্পকলা একাডেমিকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মসূচিতে শিল্পকলা একাডেমির অনুরোধে মন্ত্রণালয় হতে সাধারণ বাজেটের বাইরেও বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং শিল্পকলা একাডেমিকে আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান ছাড়া কোনো রকম হস্তক্ষেপের কোনো নজির নেই। তাই যা তিনি বলেছেন তা অসত্য, তাঁর মনগড়া।’
গতকাল শনিবার লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে “ফোকাল পারসন” হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানা অপতৎপরতার কারণে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’
বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদের অভিযোগ অমূলক বলে জানিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘জুলাই বিপ্লবের পর শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত বাজেট বরাদ্দের বাইরেও সংস্কৃতি উপদেষ্টার ব্যক্তিগত আগ্রহে সাধু মেলা আয়োজন, জুলাই বিপ্লবের ওপর বিশেষ নাটক প্রযোজনা, মনীষী স্মৃতিমূলক অনুষ্ঠানসহ নানাবিধ অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোনো আর্থিক বছরে বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি নিতান্তই অর্থ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দের মিটিংয়ে রুটিন দায়িত্ব অনুযায়ী নেগোশিয়েশনের জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সব দপ্তরের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন। শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলার ভঙ্গুর শিল্পকলা একাডেমি ভবন মেরামত, সংস্কারসহ সর্বমোট ২০০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়। অর্থ সচিব মিটিংয়ের প্রথমে সব দপ্তর প্রধানের উদ্দেশে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা ও সীমাবদ্ধতার জন্য বাজেট কিছুটা কাটছাঁট করা হবে, তবে শিল্পকলা একাডেমির বিষয়ে বলা হয়েছে, আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্পকলা একাডেমির জন্য চলতি বছরের চেয়েও বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে মর্মে অবহিত করা হয়। এমনকি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও অর্থ বরাদ্দ করা হবে মর্মে নিশ্চিত হয়েছে। তাই অপর্যাপ্ত বাজেট বিষয়ে অভিযোগ নিতান্তই অমূলক ও প্রশাসনিক অদক্ষতার বহিঃপ্রকাশ।’
রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা প্রটোকলের তোয়াক্কা না করার অভিযোগ তোলা হয়েছে সৈয়দ জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে। মন্ত্রণালয় তাদের লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছে, ‘গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত মহড়ায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও আবহ সংগীত পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মহড়ায় আসতে না দিয়ে মিটিংয়ের নামে আটকে রাখেন সৈয়দ জামিল আহমেদ, যে মিটিং তিনি সকালে বা পরদিন বিকেলে করতে পারতেন। একই অনুষ্ঠানের পদক বিতরণে জাতীয় সংগীতে অংশগ্রহণকারী একজন সংগীতশিল্পীকে শুনানির নামে অংশ নিতে দেননি। সংশ্লিষ্ট শিল্পী একুশে পদকের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি কোনোভাবেই তাতে রাজি হননি। বরং তিনি তাকে বিষোদগার করেন।’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর একাডেমির সভা করার বিধান থাকা সত্ত্বেও পরিষদ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করতে উপদেষ্টা ৫ সপ্তাহ অহেতুক সময় নেন। অথচ একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর সভা করার বিধান রয়েছে। সৈয়দ জামিল আহমেদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। তাঁকে সচিব পদমর্যাদা প্রদান করা হয় ২১ নভেম্বর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫ ডিসেম্বর তাঁর চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে। উপদেষ্টা কর্তৃক তারিখ ও সময় নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পকলা একাডেমির ১২৫ তম পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় নাট্যশালার সেমিনারকক্ষে। উক্ত সভার কার্যবিবরণী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি হতে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয় ২৩ ডিসেম্বর। উক্ত কার্য বিবরণী অসম্পূর্ণ তথ্যসহ বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল বিধায় সংশোধন করে পাঠানোর জন্য এ বছরের ৯ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমিকে চিঠি দেওয়া হয়। শিল্পকলা একাডেমির সচিব সংশোধিত কার্যবিবরণী নিজ দায়িত্বে হাতে হাতে মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসেন ১২ জানুয়ারি। এরপর প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদনে ২০ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমিতে প্রেরণ করা হয়। সুতরাং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কালক্ষেপণের অভিযোগ সত্য নয়।’
এর আগে শিল্পকলা একাডেমির কাজে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতার একপর্যায়ে তিনি পদত্যাগের কথা জানান।
শিল্পকলার ডিজির পদত্যাগের ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফেসবুকে ফারুকী লেখেন, ‘আপাতত বলে রাখি, উনার (সৈয়দ জামিল আহমেদ) বলা অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল (মোকাবিলা) না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে।’
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদেরন অভিযোগের জবাব দিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আজ রোববার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
এতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ গত শুক্রবার একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন একাডেমির সচিবের কাছে লিখিত পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। জামিল আহমেদের উল্লিখিত কারণগুলোর মধ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের প্রতি কিছু অসত্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বিষয়েও অসত্য, মনগড়া ও ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক বক্তব্য রয়েছে।
উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে সৈয়দ জামিল আহমেদ একটি ভিডিও নির্মাণের বিষয়ে চিঠিপত্র ছাড়া টাকা প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয় ব্যাখা দিয়েছে এ রকম, ‘ভিডিও নির্মাণের বিষয়ে চিঠিপত্র ছাড়া টাকা প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগ বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও বানানো। গত ২০-২১ ফেব্রুয়ারি প্যারিসের ইউনেসকো সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস সংরক্ষণে বাংলাদেশের অবদান তুলে ধরে ১৫ মিনিটের ভিডিও এবং একটি লাইভ প্রোগ্রাম উপস্থাপন করা হয়। ভিডিওটি নির্মাণের জন্য গত ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে একটি পত্র প্রেরণ করা হয়। উন্নত কারিগরি সহায়তা এবং সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে ভিডিওটি নির্মাণের জন্য নিয়ম অনুযায়ী অগ্রিম কিছু অর্থ নির্মাতাকে দেওয়ার অনুরোধ করা হলে একাডেমির মহাপরিচালক অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, বাজেট বরাদ্দ না দিলে অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার অনুরোধ নাকচ করেন। অথচ মহাপরিচালক এর আগে সাধু মেলা আয়োজনের জন্য শুধু উপদেষ্টার মৌখিক কথায় প্রায় ৩৩ লাখ টাকার প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। পরবর্তী সময়ে এই বিষয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়। সাধারণত জরুরি বিবেচনায় মন্ত্রণালয় তার দপ্তর সংস্থাগুলো এ রকমভাবে কাজ এগিয়ে নেয়। কিন্তু এবার আগেই চিঠি দেওয়া হয়েছিল। শুধু তা–ই নয়, ইউনেসকোর প্রোগ্রাম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের জন্য উপদেষ্টা, ইউনেসকো সদর দপ্তর, বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভিডিও নির্মাতা, শিল্পকলা একাডেমিকে সংযুক্ত করে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান।’
শিল্পকলা একাডেমির কাজে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের কথাও বলেছিলেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য এ রকম, ‘মন্ত্রণালয় শিল্পকলা একাডেমির কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করেনি। একাডেমির কোনো কাজ মন্ত্রণালয় বন্ধ করতে বলেছে এ রকম কোনো নজির নেই। বরং সব সময় শিল্পকলার কাজকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কোনো কোনো জায়গায় যখন বাউলদের প্রোগ্রাম নিয়ে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তখন মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলা একাডেমিকে বাউলদের জন্য শিডিউলকৃত সাধু মেলার সংখ্যা দ্বিগুণ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া “রিমেম্বারিং জুলাই রেভল্যুশন” নামে ৮ বিভাগে প্রোডাকশন ওরিয়েন্টেড ফিল্ম মেকিং ওয়ার্কশপ পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে একদল বেসরকারি বিশেষজ্ঞ টিম এ জন্য কাজ করছে। এসব কাজে মন্ত্রণালয় সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও সমন্বয় করছে। পাশাপাশি জুলাই বিপ্লবকে কেন্দ্র করে ৮টি নতুন থিয়েটার ও একটি গেরিলা/ইনভিজিবল থিয়েটার নির্মাণের বিষয়েও মন্ত্রণালয় হতে শিল্পকলা একাডেমিকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মসূচিতে শিল্পকলা একাডেমির অনুরোধে মন্ত্রণালয় হতে সাধারণ বাজেটের বাইরেও বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং শিল্পকলা একাডেমিকে আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান ছাড়া কোনো রকম হস্তক্ষেপের কোনো নজির নেই। তাই যা তিনি বলেছেন তা অসত্য, তাঁর মনগড়া।’
গতকাল শনিবার লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে “ফোকাল পারসন” হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানা অপতৎপরতার কারণে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’
বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদের অভিযোগ অমূলক বলে জানিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘জুলাই বিপ্লবের পর শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত বাজেট বরাদ্দের বাইরেও সংস্কৃতি উপদেষ্টার ব্যক্তিগত আগ্রহে সাধু মেলা আয়োজন, জুলাই বিপ্লবের ওপর বিশেষ নাটক প্রযোজনা, মনীষী স্মৃতিমূলক অনুষ্ঠানসহ নানাবিধ অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোনো আর্থিক বছরে বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি নিতান্তই অর্থ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দের মিটিংয়ে রুটিন দায়িত্ব অনুযায়ী নেগোশিয়েশনের জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সব দপ্তরের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন। শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলার ভঙ্গুর শিল্পকলা একাডেমি ভবন মেরামত, সংস্কারসহ সর্বমোট ২০০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়। অর্থ সচিব মিটিংয়ের প্রথমে সব দপ্তর প্রধানের উদ্দেশে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা ও সীমাবদ্ধতার জন্য বাজেট কিছুটা কাটছাঁট করা হবে, তবে শিল্পকলা একাডেমির বিষয়ে বলা হয়েছে, আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্পকলা একাডেমির জন্য চলতি বছরের চেয়েও বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে মর্মে অবহিত করা হয়। এমনকি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও অর্থ বরাদ্দ করা হবে মর্মে নিশ্চিত হয়েছে। তাই অপর্যাপ্ত বাজেট বিষয়ে অভিযোগ নিতান্তই অমূলক ও প্রশাসনিক অদক্ষতার বহিঃপ্রকাশ।’
রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা প্রটোকলের তোয়াক্কা না করার অভিযোগ তোলা হয়েছে সৈয়দ জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে। মন্ত্রণালয় তাদের লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছে, ‘গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত মহড়ায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও আবহ সংগীত পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মহড়ায় আসতে না দিয়ে মিটিংয়ের নামে আটকে রাখেন সৈয়দ জামিল আহমেদ, যে মিটিং তিনি সকালে বা পরদিন বিকেলে করতে পারতেন। একই অনুষ্ঠানের পদক বিতরণে জাতীয় সংগীতে অংশগ্রহণকারী একজন সংগীতশিল্পীকে শুনানির নামে অংশ নিতে দেননি। সংশ্লিষ্ট শিল্পী একুশে পদকের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি কোনোভাবেই তাতে রাজি হননি। বরং তিনি তাকে বিষোদগার করেন।’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর একাডেমির সভা করার বিধান থাকা সত্ত্বেও পরিষদ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করতে উপদেষ্টা ৫ সপ্তাহ অহেতুক সময় নেন। অথচ একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর সভা করার বিধান রয়েছে। সৈয়দ জামিল আহমেদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। তাঁকে সচিব পদমর্যাদা প্রদান করা হয় ২১ নভেম্বর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫ ডিসেম্বর তাঁর চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে। উপদেষ্টা কর্তৃক তারিখ ও সময় নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পকলা একাডেমির ১২৫ তম পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় নাট্যশালার সেমিনারকক্ষে। উক্ত সভার কার্যবিবরণী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি হতে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয় ২৩ ডিসেম্বর। উক্ত কার্য বিবরণী অসম্পূর্ণ তথ্যসহ বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল বিধায় সংশোধন করে পাঠানোর জন্য এ বছরের ৯ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমিকে চিঠি দেওয়া হয়। শিল্পকলা একাডেমির সচিব সংশোধিত কার্যবিবরণী নিজ দায়িত্বে হাতে হাতে মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসেন ১২ জানুয়ারি। এরপর প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদনে ২০ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমিতে প্রেরণ করা হয়। সুতরাং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কালক্ষেপণের অভিযোগ সত্য নয়।’
এর আগে শিল্পকলা একাডেমির কাজে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতার একপর্যায়ে তিনি পদত্যাগের কথা জানান।
শিল্পকলার ডিজির পদত্যাগের ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফেসবুকে ফারুকী লেখেন, ‘আপাতত বলে রাখি, উনার (সৈয়দ জামিল আহমেদ) বলা অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল (মোকাবিলা) না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগের কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। আজ সোমবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ লিভ টু...
১৭ মিনিট আগেনীতিমালা ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এই ক্ষমতা প্রয়োগ সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক হবে না এবং নীতিমালা তৈরিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না— এই মর্মে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন।
১ ঘণ্টা আগেছাত্রলীগের নির্যাতনে প্রাণ হারানো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেবে সরকার। আজ সোমবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেতিন দিনের সরকারি সফরে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের উদ্দেশে আজ সোমবার ঢাকা ত্যাগ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সফরকালে তিনি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়োজিত বাংলাদেশি কন্টিনজেন্টগুলো ও সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করবেন।
৪ ঘণ্টা আগে