Ajker Patrika

অ্যান্থনি মাসকারেনহাস: বাঙালির স্বাধীনতাযুদ্ধের মোড় বদলে দেন যে সাহসী সাংবাদিক

আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ২৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

‘ভাগ্য আব্দুল বারীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। পূর্ব পাকিস্তানের হাজার হাজার মানুষের মতো তিনিও একটি ভুল করেছিলেন, মারাত্মক ভুল— পাকিস্তানি সেনা টহলের চোখে পড়েন তিনি। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৪ বছর। তাকে ঘিরে ধরে পাকিস্তানি সশস্ত্র সেনারা, তিনি তখন ভয়ে কাঁপছিলেন— কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হবে।’

ভয়ার্ত ও লোমহর্ষক এই চিত্র তুলে ধরে শুরু হয় দক্ষিণ এশিয়ার সাংবাদিকতার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনের একটি। এর মধ্য দিয়েই পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ দমনের নামে সেনাবাহিনী যে নৃশংশ অভিযান চালাচ্ছিল, তার বাস্তব চিত্র প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়।

সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক। এর জন্য তাকে সবকিছু ফেলে সপরিবারে প্রাণ নিয়ে পাকিস্তান থেকে পালাতে হয়েছিল। সেই সাংবাদিক আর কেউ নন, তিনি অ্যান্থনি মাসকারেনহাস।

‘জেনোসাইড’ নামে শুধু এক শব্দের বিশাল মাস্টহেডে প্রতিবেদনটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে ১৯৭১ সালের ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের সানডে টাইমসে প্রকাশিত হয়। তাতে প্রতিবেদনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম দমন-পীড়নের তথ্য উঠে আসে। কিন্তু সেই দমন-পীড়ন ব্যর্থ হয়। ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।

মাসকারেনহাসের প্রতিবেদন যে এই বিজয়ে গুরুত্ব ভূমিকা রেখেছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তার প্রতিবেদনই বিশ্ববাসীকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং ভারতকে সামরিক পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে।

তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সানডে টাইমসের সম্পাদক হ্যারল্ড ইভান্সকে বলেছিলেন, ‘এই প্রতিবেদন আমাকে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে, ভারত সামরিক হস্তক্ষেপের প্রস্তুতির জন্য আমি ইউরোপ ও মস্কো সফরে কূটনৈতিক প্রচারণা চালাতে বাধ্য হয়েছি।’

তবে বাঙালিদের স্বাধীনতা অর্জন মাসকারেনহাসের মূল উদ্দেশ্য তা ছিল না। ইভান্স তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘তিনি (মাসকারেনহাস) কেবল একজন ভালো সাংবাদিক ছিলেন, যিনি সততার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন।’ কিন্তু এর জন্য তাকে বড় আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে চলে যেতে হয় তাকে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

একজন সাহসী সাংবাদিকের আত্মত্যাগ

১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরুর সময় পাকিস্তানের করাচির একজন সম্মানিত সাংবাদিক ছিলেন মাসকারেনহাস। সাংবাদিক হিসেবে শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। তিনি ছিলেন গোয়া বংশোদ্ভূত ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সদস্য। স্ত্রী ইভন মাসকারেনহাস ও পাঁচ সন্তান নিয়ে সুখের জীবন ছিল তাঁর।

কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন টিকেনি, ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে শুরু হয় সঙ্কট। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে নিরঙ্কুশ জয় পেলেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজি হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ বাড়তে থাকে এবং পর্যায়ে আওয়ামী লীগ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে।

এই আন্দোলন দমাতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় ব্যাপক গণহত্যা চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয় এবং এর প্রথম শিকার হয় জগন্নাথ হলের ছাত্র-শিক্ষকরা। এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহনী গ্রামের দিকে হামলা চালাতে থাকে। তাদের সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর লড়াই শুরু হয়।

শুরুর দিকে দমন-পীড়নের পরিকল্পনা সফল হবে বলে ধারণা করছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সরকারের এই ‘সাফল্যের গল্প’ তুলে ধরতে ৮ জন পাকিস্তানি সাংবাদিককে পূর্ব পাকিস্তানে আমন্ত্রণ জানায় সেনাবাহিনী। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অ্যান্থনি মাসকারেনহাস। বাকিরা সবাই তাঁদের উদ্দেশ্য সাধন ধরলেও মাসকারেনহাস বেঁকে বসেছিলেন, সত্য প্রকাশের কঠিন সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সত্য প্রকাশের ঝুঁকি

অ্যান্থনি মাসকারেনহাস যখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ফিরে করাচি গেলেন, তখন তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তার স্ত্রী ইভন বিবিসিকে বলেন, ‘আমি কখনোই তাকে এতটা হতাশ ও বিষণ্ণ দেখিনি। তিনি তখন বলছিলেন, তিনি প্রতিবেদন না লিখলে, তিনি আর কখনো কিছু লিখতে পারবেন না।’

পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সেন্সরশিপ ছিল কঠোর। মাসকারেনহাস জানতেন, তিনি দেশে বসে এই প্রতিবেদন লিখলে তাকে হত্যা করা হবে। তাই তিনি বোনের অসুস্থতার অজুহাতে লন্ডনে চলে যান। সরাসরি সানডে টাইমসের সম্পাদকের কাছে গিয়ে সব খুলে বলেন।

সম্পাদক ইভান্স বলেন, ‘তাঁর কথা এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ছিল, যে তার বক্তব্য শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কীভাবে পাকিস্তানি সেনারা সুপরিকল্পিত গণহত্যা চালাচ্ছিল, সেই বর্ণনা উঠে এসেছিল তাঁর কথায়।’ পাকিস্তানি সেনারা এটিকে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ বলে অভিহিত করেছিল।

বিপদের মুখে যেভাবে সপরিবারে পালান

কিন্তু যুগান্তকারী এই প্রতিবেদন ছাপার আগে পরিবারের নিরাপত্তার জন্য লন্ডনে থাকা নিশ্চিত করতে হয়েছিল মাসকারেনহাসকে। পরিকল্পনা ছিল, লন্ডন থেকে তিনি একটি টেলিগ্রাম পাঠালে স্ত্রী ও সন্তানরা করাচি থেকে পালাবেন। ওই টেলিগ্রাম বার্তার সংকেত ছিল, ‘অ্যানের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে’।

সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে তাঁর স্ত্রী ইভন বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে বার্তাটি পেলাম। আমি আমার সন্তানদের উঠিয়ে দিয়ে বললাম, ‘আমাদের এখনই লন্ডন যেতে হবে। আমরা তখন কাঁদছিলাম, যেন এক শোকযাত্রায় অংশ নিচ্ছি।

কিন্তু সন্দেহ থেকে বাঁচতে তার আগেই মাসকারেনহাসকে পাকিস্তানে ফিরতে হয়েছিল। পরে তিনি গোপনে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান ছাড়েন। লন্ডনে পৌঁছানোর পরদিন অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৩ জুন সানডে টাইমসের প্রথম পাতায় ‘Genocide’ শিরোনামে তাঁর প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের এই প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পাকিস্তান সরকার মাসকারেনহাসকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযুক্ত করে। তবে সাংবাদিক হিসেবে তাঁর সততা ও দক্ষতা অটুট ছিল। পাকিস্তান যে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে সেখবর ১৯৭৯ সালে তিনিই প্রথম প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের বন্ধু মাসকারেনহাস

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এখনও মাসকারেনহাসের সেই প্রতিবেদন সংরক্ষিত আছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মোফিদুল হক বলেন, ‘এটি যুদ্ধকালীন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিবেদন। আমাদের দেশ যখন বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন, ঠিক তখনই এটি প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন বিশ্ববাসীকে আমাদের দুর্দশার কথা জানাতে সাহায্য করে।’

ইভন মাসকারেনহাস ও তাঁর সন্তানরা আস্তে আস্তে নতুন জীবনে অভ্যস্ত হন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘লন্ডনের মানুষ খুবই গম্ভীর ছিল। করাচিতে আমরা হাসিখুশি ছিলাম, কিন্তু এখানে সবাই ছিল নীরব। কিন্তু আমরা কখনোই আমাদের সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত নই।

(অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের যুগান্তকারী প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিবিসির নিবন্ধ থেকে অনূদিত)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বিকেলে পানিতে ডুবে ৬ শিশুর মৃত্যু, পরিবারে শোকের ছায়া

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) ও রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় খেলা করার সময় পানিতে পড়ে ছয় শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়ন ও রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নে ঘটনা দুটি ঘটে। এতে ওইসব এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ বিকেলে অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের পশ্চিম আলীনগর এলাকায় বাড়িসংলগ্ন বিলের পাশে খেলা করছিল মিশকাত (৫), মাহিন (৬) ও সাত্তার তানিল মিয়া (৫)। হঠাৎ সবার অজান্তে তিন শিশু বিলে পড়ে ডুবে যায়।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিল থেকে মিশকাত ও মাহিনকে উদ্ধার করা হয়। পরে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে খবর পেয়ে অষ্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অপর শিশু তানিলের মরদেহ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে মাহিনের চাচা মোবারক হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতো তিন শিশু খেলাধুলা করছিল। কিন্তু কখন যে বিলের পানিতে ডুবে গেল, কেউ বোঝেনি। পরে তাদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে পানিতে প্রথমে দুজন, পরে অন্যজনকে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুঃখজনক খবর, একই বাড়ির তিনটা শিশুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

অপর দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নে একই দিন বিকেলে উত্তর পারুয়া গ্রামের একটি পুকুরে পড়ে মারা যায় তিন শিশু। তারা হলো সুমাইয়া আক্তার (৫), হাবীবা আক্তার (৬) ও জান্নাত আক্তার (৫)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলে খেলার ছলে তারা তিনজনই বাড়ির পাশে পুকুরে যায়। কিছুক্ষণ পর না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে পারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, ‘তিনটি নিষ্পাপ শিশুর এমন মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যমুনা অভিমুখী চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের পদযাত্রায় আবারও পুলিশের বাধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো, বিশেষ নিয়োগব্যবস্থা, স্বতন্ত্র কোটা সংরক্ষণসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ শুক্রবার আবারও যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবারের মতো আজও তাঁদের পদযাত্রা শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আজ বেলা ৩টার দিকে ‘চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ’-এর ব্যানারে পদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তা আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এর আগে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে যমুনা অভিমুখে থালাবাটি নিয়ে ভুখা মিছিল করেন প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। শাহবাগ থানার সামনে মিছিলটি পুলিশ আটকে দিলে সেখানেই বিক্ষোভ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

গত রোববার থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করা চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের ভাষ্য, শিক্ষিত, যোগ্য ও কর্মক্ষম যুব প্রতিবন্ধীরা দীর্ঘদিন ধরে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ন্যায্য অধিকারের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। তবে এখনো কর্মসংস্থানে অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিবন্ধী কোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের সদস্যসচিব আলিফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ দফা দাবিতে গত রোববার শাহবাগে অবস্থান করে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করা হয়। সেদিন পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। এরপর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের দাবি জানানো হয়। তাঁর কাছ থেকে কোনো সমাধান না পেয়ে আমরা বেশ কয়েকবার যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করি, কিন্তু পুলিশ আমাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখে।’

আলিফ হোসেন আরও বলেন, ‘আজও শাহবাগ থানার সামনে আমাদের পদযাত্রা আটকে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকজনকে পুলিশ মারধরও করেছে।’

‎‎এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ করা নিষেধ। তাই চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা দাবিদাওয়া নিয়ে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করায় তাঁদের আটকে দেওয়া হয়েছে।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বেকার, শিক্ষিত প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশে বিশেষ নিয়োগ দিতে হবে।

‎‎ ২. প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৫ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

‎ ৩. দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধীরা নিজেদের পছন্দমতো শ্রুতিলেখক (বিকল্প সহকারী) মনোনয়নের স্বাধীনতা পাবেন—এমনভাবে নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে।

৪. সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট পদসংখ্যায় নিশ্চিত নিয়োগ দিতে হবে।

‎৫. প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করতে হবে। সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৫ হলে তা ৩৭ বছর করতে হবে।

‎‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছে সরকার। ফলে আপাতত কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে না।

আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন কমিটির সভাপতি ও বিমানবন্দর পরিচালক এয়ার কমোডর মো. নুর-ই-আজম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করার প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের মতোই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা চলবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়।

বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক কিছু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে সরাসরি আকাশপথে সংযোগের পরিকল্পনাও ছিল সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২৭
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে সম্প্রতি খসড়া আইন অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট।

তথাকথিত ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ আরোপের নামে এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে, পূর্ব জেরুজালেমসহ দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কোনো অংশে ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেআইনি দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব, বিশেষ করে রেজল্যুশন ২৩৩৪-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দেওয়া অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন বা পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই মতামতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাধারণ জনগণকে, ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত