Ajker Patrika

৫ আগস্ট হাসিনার পতনের দিন কী ঘটেছিল, উঠে এল জাতিসংঘের প্রতিবেদনে

৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার কাছের দৃশ্য।
৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার কাছের দৃশ্য।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জর্জরিত আওয়ামী লীগের দেড় দশকের বেশি সময়ের শাসনের অবসান ঘটেছে। কিন্তু ততক্ষণে হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে তার চিত্র উঠে এসেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রূপান্তরিত শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে সেদিন সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল আন্দোলনের সামনে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ওই দিনের ঘটনা পরম্পরা বর্ণনা করা হয়েছে। সেই কর্মসূচি ঠেকাতে সরকার সেদিন কী কী করেছিল এবং সারা দিন যা যা ঘটেছিল, তার একটি বিবরণ উঠে এসেছে ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে।

কর্মসূচি ঠেকাতে পরিকল্পনার জন্য আগের দিন (৪ আগস্ট) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুই দফায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। পুলিশের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার পতনের বিষয়ে পরদিন (৫ আগস্ট) সকাল থেকেই সেনাবাহিনী অবগত ছিল। কিন্তু পুলিশ জানত না বলে সরকারকে রক্ষা করতে তখনো সর্বাত্মকভাবে মাঠে ছিল।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রস্থলে বড় প্রতিবাদ মিছিলের পরিকল্পনার কথা নেতাদের প্রকাশ্য ঘোষণা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব জানতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে ৪ আগস্ট সকালে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক করেন। সেখানে সেনা, বিমান, নৌ, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই, পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধানেরা ছিলেন। হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বৈঠকে অংশ নেন। তাঁরা ‘মার্চ অন ঢাকা’ প্রতিরোধের জন্য আবার কারফিউ জারি ও তা বলবৎ করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, কোনো বিরতি ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য কঠোর কারফিউ চলবে। আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী একটি বিবৃতি দেন। ‘এই সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে দমন’ করতে তিনি দেশবাসীকে আহ্বান জানান।

৪ আগস্ট সন্ধ্যার পর গণভবনে আরেকটি বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, র‍্যাব ও আনসার/ভিডিপির প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও সেনাবাহিনীর কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল। বৈঠকে সেনাপ্রধান ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা ঢাকা রক্ষার বিষয়ে আবারও হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছিলেন।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের ঢাকার কেন্দ্রস্থলে প্রবেশে বাধা দিতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করার বিষয়ে বৈঠকে ঐক্যমত্য হয়েছিল। সেনাবাহিনী ও বিজিবি সাঁজোয়া যান ও সেনা মোতায়েন করে ঢাকার প্রবেশের পথগুলো অবরুদ্ধ করবে, বিক্ষোভকারীদের প্রবেশে বাধা দেবে। অন্যদিকে পুলিশ ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে নিয়ন্ত্রণ’ করবে।

গতকাল বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে তার চিত্র উঠে এসেছে
গতকাল বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে তার চিত্র উঠে এসেছে

শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) তৎকালীন মহাপরিচালক ৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে (রাত ১২টা ৫৫ মিনিট) বিজিবির মহাপরিচালককে পরপর দুটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠান। সেই বার্তাগুলোর হার্ড কপি পেয়েছে ওএইচসিএইচআর। এসবের তথ্য অনুসারে, প্রথমটি ছিল আন্দোলনের নেতাদের ফরোয়ার্ড করা সম্প্রচারিত বার্তা। এতে তাঁরা ঢাকায় প্রবেশের পথগুলো সম্পর্কে আন্দোলনকারী ছাত্র–জনতাকে জানিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় বার্তাটি প্রতিরক্ষা নির্দেশনার রূপরেখার একটি ভিডিও রয়েছে বলে মনে হয়। এতে প্রতিরক্ষার প্রথম ও দ্বিতীয় লাইন, একটি তৃতীয় দূরপাল্লার ইউনিট, একটি ব্যাকআপ ইউনিট, একটি পশ্চাদ্ভাগের বাহিনীর কথা বলা হয়েছে। ৫ আগস্ট সকালে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা মূলত দাঁড়িয়েছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাঁরা অর্পিত ভূমিকা পালন করেননি।

একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাক্ষ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেনা মোতায়েন করা হয়নি। আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, বিজিবি প্রতি ঘণ্টায় বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে প্রায় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার বিক্ষোভকারীকে ঢুকতে দিয়েছে, যা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল।

পরিস্থিতি নিয়ে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ভিডিও ফুটেজে ৫০০ থেকে ৬০০ বিক্ষোভকারী সেনাবাহিনীর বাধা ছাড়াই উত্তরা থেকে ঢাকার কেন্দ্রস্থলের দিকে আসতে দেখে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কিছু একটা গড়বড় হচ্ছে। চতুর্থ আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না।

বিক্ষোভকারীদের শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছাতে বাধা দিতে তখনো পুলিশ অনেক জায়গায় গুলি চালাচ্ছিল। পুলিশের একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘সেদিন সকাল থেকেই সেনাবাহিনী জানত, শেখ হাসিনার পতন হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ জানত না। তাই, পুলিশ তখনো সরকারকে রক্ষা করতে সর্বাত্মকভাবে মাঠে ছিল।’

বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গুলি করার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে ওএইচসিএইচআর। সবগুলোর ধরন ছিল একই। চানখাঁরপুলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা ও অন্যান্য পুলিশ রাইফেল থেকে প্রাণঘাতী গুলি করেছে। তবে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হতে চেষ্টা করা বিক্ষোভকারীদের থামাতে তাঁরা কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, পুলিশ যাকে দেখেছিল, তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল।

রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে বাড্ডায় যাওয়ার চেষ্টাকালে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ধাতব গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীরা আহত হন। ওই এলাকায় সকালে গুলিতে আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আজমপুরে পুলিশের গুলিতে আহত ১২ বছর বয়সী এক বালক বলেছে, পুলিশ ‘সব জায়গায় বৃষ্টির মতো গুলি চালাচ্ছিল।’ কীভাবে সে ওই স্থানে অন্তত এক ডজন মৃতদেহ দেখেছিল, সেই বর্ণনা করেছিল।

সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নিবৃত্ত ও আটক করতে প্রাথমিকভাবে তল্লাশিকেন্দ্র (চেকপোস্ট) বসিয়েছিল। যখন আরও বেশি বিক্ষোভকারী দেখা যায়, তখন অন্তত প্রথম দিকে পুলিশ কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। পরে প্রাণঘাতী গুলি ছোড়ে।

আহত বিক্ষোভকারীদের সাহায্য করতে গিয়ে গুলিতে আহত এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালান।

সাভার বাসস্ট্যান্ডের আশপাশে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়। এতে বিপুলসংখ্যক হতাহত হন। এক সাংবাদিক এলাকাটির বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাঁরা তাঁকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁদের জোর করে মোতায়েন করেছেন। কিন্তু সেই সাধারণ পুলিশ সদস্যরা আরও হতাহতের ঘটনা ঘটাতে চাননি।

ওই এলাকায় গুলি চালানোর ঘটনার আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শীও একটি ছেলের মৃতদেহ দেখেছেন। ছেলেটি ৫ আগস্ট নিহত হয়েছিল। এই প্রত্যক্ষদর্শী ওএইচসিএইচআরকে বলেছেন, ৫ আগস্ট ছিল ‘আমাদের (বিক্ষোভকারীদের) জন্য সবচেয়ে আনন্দের দিন, কিন্তু ছেলেটির মায়ের জন্য সবচেয়ে দুঃখের দিন।’

৫ আগস্ট সকালে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ ও আনসার সদস্যরা থানা ও এর কর্মকর্তাদের রক্ষায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করার নির্দেশ পান। তাঁরা থানার ভেতর এবং আশপাশে অবস্থান নিয়ে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারীর ওপর প্রাণঘাতী রাইফেল ও শটগান দিয়ে গুলি চালায়। তাঁরা ঢাকা মার্চের জন্য জড়ো হয়েছিলেন।

ঘটনাস্থলে মোতায়েন থাকা কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করেন। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হন। বহুসংখ্যক আহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন অটিস্টিক ছিলেন, তাঁর শরীরে দুটি গুলি লেগেছিল।

ওই এলাকায় মোতায়েন সেনা ইউনিটগুলো বিকেলের দিকে অল্প সময়ের জন্য পরিস্থিতি শান্ত করলেও পরে তারা সরে যায়। কিছুক্ষণ পরে থানার ফটকের বাইরে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের ওপর একটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। তারপর রাইফেল ও শটগান দিয়ে গুলি চালায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিও প্রমাণসহ সাক্ষ্যে এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, বাঁচার উপায় খুঁজতে গিয়ে অথবা পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেশ কিছু নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছেন। জনতাকে লক্ষ্য করে তাঁরা এলোপাতাড়ি গুলি চালাচ্ছিল।

৫ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনার বিদায় উদ্‌যাপনের সময় কিছু পুলিশ জনতার ওপর প্রাণঘাতী গুলি ছুড়ে। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশুও ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ও চিকিৎসার নথির বরাতে বলা হয়, উত্তরায় মা–বাবার সঙ্গে ‘বিজয় মিছিলে’ আসা ৬ বছর বয়সী একটি ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ভিডিও ও ছবিতে আনন্দের মুহূর্তগুলো দেখা যায়।

তবে সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলির শব্দে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এর ফলে জনতা পালিয়ে যায়। শিশুটির ঊরুতে গুলি লেগেছিল। পরে আহত অবস্থায় হাসপাতালে সে মারা যায়। শিশুটিকে কে গুলি করেছে, তা দেখতে পাননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিশৃঙ্খল দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হয়।

কাছাকাছি একটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্টেশন ছিল। কীভাবে পুলিশ কর্মকর্তারা বিক্ষোভ মিছিলের দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে অবস্থান নিয়েছিল, তা প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় উঠে এসেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিটি অন্যদের আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখেন। এর মধ্যে মাথায় গুলিবিদ্ধ আরেকটি ছেলে ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, উদ্‌যাপনকালে মিরপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে নিহত হয়।

৫ আগস্ট বিকেলে গাজীপুরে ১৪ বছর বয়সী একটি ছেলেকে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলিকরে পঙ্গু করা হয়। ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার বিক্ষোভকারীর মূলত একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করার সময় তার ডান হাতে গুলি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা নিরস্ত্র ছিলেন। তারা কোনো গুরুতর হুমকির কারণ ছিলেন না। নিরাপত্তা বাহিনী কোনো সতর্কতা ছাড়াই গুলি চালাতে শুরু করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। আনসার ফটকের কাছের রাস্তা অবরোধকারী জনতা আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যান।

ফরেনসিক প্রমাণে দেখা যায়, খুব কাছ থেকে ছেলেটিকে শটগানের পেলেট আঘাত করে। পাথর ছোড়ার অভিযোগে তাকে শায়েস্তা করার লক্ষ্য ছিল বন্দুকধারীর। তিনি বলেছিল, ‘তোর এই হাত আর পাথর মারতে পারবে না।’ ছেলেটির ডান হাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৪০টির বেশি শটগানের পেলেট বিদ্ধ হয়। হাড় ও কোষের বেশ ক্ষতি হয়।

আরেকটি ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরে। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা একজন নিরস্ত্র রিকশাচালককে আটক করে তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেন। পুলিশ মরদেহটি টেনে নিয়ে যায়। তারা সেই মরদেহটি আর ফেরত দেয়নি। পরিবার তাদের প্রিয়জনকে দাফন করতে, শোক পালন করতে পারেনি।

ওই রিকশাচালককে গুলি করা পুলিশ কর্মকর্তাকে গত সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিবারের এক সদস্য ওএইচসিএইচআর-এর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি ন্যায়বিচার, স্বাধীন তদন্ত ও মরদেহ ফেরত চাই।’

এদিকে ৫ আগস্ট বিকেলে বিক্ষোভকারীরা আশুলিয়া থানাকে নিশানা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিপুলসংখ্যক জনতা থানাটি ঘেরাও করে। পুলিশ বারবার পিছু হটার চেষ্টা করলেও তারা ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করতে করতে অগ্রসর হতে থাকে। জবাবে পুলিশ প্রাণঘাতী গুলিভর্তি সামরিক রাইফেল ব্যবহার করে নির্বিচার গুলি চালায়।

পুলিশ যখন নিজেদের সরে যাওয়ার পথ পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছিল, তখন এলোপাতাড়ি গুলি চলছিল। মারাত্মত সহিংস ব্যক্তিদের নিশানা না করে জনতাকে ভয় দেখানোর জন্য গুলি বেশি করে করা হচ্ছিল বলে মনে হয়। ফলে বিক্ষোভকারী ও পথচারীরা হতাহত হয়। ১৬ বছর বয়সী এক ছাত্রকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়, তার মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত লেগেছিল, তাকে অবশ করে দেয়।

ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে পুলিশ পরে গুলিবিদ্ধ মৃতদেহগুলো একটি ভ্যানে স্তূপ করে। তারা গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মনে হচ্ছিল, তারা কাজটি করেছে এই আশায় যে, মরদেহ পোড়ানোর বিষয়টি এই মিথ্যা ধারণা তৈরি করবে যে, এসব লোক আন্দোলনকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেট্রোর বিয়ারিং প্যাড পড়ে মৃত্যু: ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি, নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ১২
বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী মৃত্যুতে বন্ধ ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী মৃত্যুতে বন্ধ ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহতের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেট দুর্ঘটনায়স্থল পরিদর্শন এসে এসব কথা বলেন তিনি।

সড়ক উপদেষ্টা বলেন, মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে একজন পথচারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও দুজন পথচারী আহত হয়েছেন। আহত দুজনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহতের মরদেহ ওই হাসপাতালে আছে।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির সব দায়-দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করব। প্রাথমিকভাবে নিহত পরিবারকে ৫ লাখ টাকা সাহায্য দেওয়া হবে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের কেউ কর্মক্ষম থাকলে তাঁকে মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়া হবে।’

এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মেট্রোরেলের সাবেক এমডি ও সেতুসচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ কমিটিতে আরও আছেন বুয়েটের অধ্যাপক এবিএম তৌফিক হাসান, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)-র সহকারী অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাহিদুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব ও সড়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসফিয়া সুলতানা।

এই কমিটি ২ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে বলে জানান উপদেষ্টা।

সড়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কি নির্মাণ কাজের ত্রুটির জন্য হয়েছে, নাকি নাশকতামূলক কিছু ঘটেছে সেটি খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করবে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য সুপারিশ করবে।’

আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ব্যক্তি ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মেট্রোরেল চলাচলের মুহূর্তে ওপর থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড তাঁর মাথায় পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ডিউটিরত অবস্থায় কাছেই ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত গিয়ে দেখি, এক ব্যক্তি রাস্তায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।’

নিহত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা একটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। তাতে নাম লেখা আবুল কালাম এবং বাড়ি শরীয়তপুর। জন্মসাল ১৯৯০।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের কাজ কী, বারবার খুলে পড়া নিয়ে কেন উদ্বেগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ১৩
মেট্রোরেলসহ বৃহৎ সব উড়াল সড়কে বিয়ারিং প্যাড ব্যবহার করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
মেট্রোরেলসহ বৃহৎ সব উড়াল সড়কে বিয়ারিং প্যাড ব্যবহার করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে আজ রোববার দুপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি দেশের আধুনিক এই গণপরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াল। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে উড়ালপথের পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ কেজি ওজনের এই কাঠামোটি সরাসরি এক পথচারীর মাথায় পড়লে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনার পরপরই জননিরাপত্তা ও কারিগরি দিক বিবেচনা করে মেট্রোরেল চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এই দুর্ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো ঘটল। এর আগে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল, যার ফলে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১১ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে একই কাঠামোগত উপাদানের পুনরাবৃত্তিমূলক ত্রুটি মেট্রোরেলের মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন তুলেছে।

বিয়ারিং প্যাড: কাঠামোর মেরুদণ্ড এবং এর জটিল প্রকৌশল

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড (Metrorail Bearing Pads) হলো উড়ালপথের স্থায়িত্ব ও সুরক্ষার জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি বিশেষ ধরনের রাবার বা ইলাস্টোমেরিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। এটি সেতুর কাঠামোগত উপাদানগুলোর মধ্যে একটি কুশন বা কোমল সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করে।

বিয়ারিং প্যাডের মূল কাজগুলো কেবল ভার বহন করা নয়, বরং জটিল প্রকৌশলগত চাপ সামলানো। যেমন:

উল্লম্ব ভার বহন ও বণ্টন: এটি ট্রেন চলাচলের সময় সৃষ্ট বিপুল উল্লম্ব চাপ (Vertical Load) শোষণ করে এবং চাপটিকে সরাসরি কোনো একটি নির্দিষ্ট পিলারে কেন্দ্রীভূত না করে পুরো পিলারের মাধ্যমে সমানভাবে ভিত্তি বা মাটির দিকে ছড়িয়ে দেয়।

অনুভূমিক ও কৌণিক সরণ নিয়ন্ত্রণ: স্থিতিস্থাপকতার গুণে ভায়াডাক্টের অনুভূমিক সরণ (Horizontal Movement) বা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে এটি। তাপমাত্রা পরিবর্তন, ট্রেন চলাচলের গতি বা বাঁকের কারণে ভায়াডাক্টে যে সামান্য প্রসারণ, সংকোচন বা পার্শ্বীয় নড়াচড়া হয়, প্যাড সেই নড়াচড়ার চাপ শোষণ করে।

কম্পন শোষণ (Damping) : বিয়ারিং প্যাড একটি কার্যকর ‘শক অ্যাবজর্ভার’ হিসেবে কাজ করে। এটি মেট্রোরেল চলাচলের স্বাভাবিক কম্পনের বেশিরভাগ অংশ শোষণ করে, যা শুধু কাঠামোর দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করে না, বরং যাত্রীদের ভ্রমণও মসৃণ ও আরামদায়ক করে।

বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ: নকশা ও মান নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা

বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসাল্ট্যান্টের (বিআরটিসি) পরিচালক ড. সামছুল হক প্রথম দুর্ঘটনার সময়ই বলেছিলেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’। তাঁর মতে, একটি অত্যাধুনিক অবকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বারবার খুলে পড়ার অর্থ হলো নকশাগত ত্রুটি অথবা ব্যবহৃত উপাদানের গুণমানে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।

গভীরতর ঝুঁকি: বিয়ারিং প্যাড যদি স্থানচ্যুত হয়, তবে ট্রেন চলাচলের গতিশীল চাপ (Dynamic Stress) সরাসরি পিলারের সঙ্গে ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে গিয়ে পড়ে। এই ঘর্ষণ ও অস্বাভাবিক চাপ পিলারে সূক্ষ্ণ-ফাটল (Micro-fractures) তৈরি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে গোটা কাঠামোটিকেই ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। বিশেষত বাঁকযুক্ত স্থানে যেখানে চাপ স্বভাবতই বেশি তৈরি হয়, সেখানে উন্নত প্রযুক্তির অধিক চাপ সহনশীল প্যাড ব্যবহার করা অপরিহার্য।

ফার্মগেটের এই দুর্ঘটনা কেবল একটি প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা নয়, বরং এটি নগরবাসীর মধ্যে নিরাপদ যাতায়াত নিয়ে গভীর আস্থা সংকট তৈরি করতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

বিয়ারিং প্যাডের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল নির্মাণকালেই

২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভায়াডাক্টে ত্রুটির কারণে দীর্ঘ সময় আংশিক বন্ধ ছিল মেট্রোরেল চলাচল। ভায়াডাক্টের বিয়ারিং প্যাড নিয়ে নির্মাণের সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে এ ব্যাপারে আপত্তিও জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন অদৃশ্য কারণে কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ বিয়ারিং প্যাডই বসানো হয়।

বুয়েটের ল্যাবে পরীক্ষায় উত্তরা–আগারগাঁও অংশের দুটি প্যাকেজের জন্য আমদানি করা বিয়ারিং প্যাডের মান যথাযথ নয় বলে দেখা যায়। এসব বিয়ারিং প্যাড সরবরাহ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল–থাই। সে সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল, মেট্রোরেল প্রকল্পে নিম্নমানের বিয়ারিং প্যাড সরবরাহের ঘটনাটি ঘটেছিল উত্তরা–আগারগাঁও অংশের প্যাকেজ ৩ ও ৪–এর নির্মাণকাজে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজটি বাস্তবায়ন করছিল ইতালিয়ান–থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইতাল–থাই)।

মেট্রোরেলের উত্তরা–আগারগাঁও অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। যখন অভিযোগ ওঠে তত দিনে পিয়ার–ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বিয়ারিং প্যাড বসিয়ে প্রায় আট কিলোমিটার উড়ালপথ বসানো হয়ে গেছে। কিন্তু পরে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়নি।

বিয়ারিং প্যাডের কারিগরি মান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারার বিষয়টি উঠে আসার পর বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ এ উপকরণ মানহীন হলে তা গোটা অবকাঠামোটিকেই ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে। আজ মেট্রোরেলের দুর্ঘটনা সে কথাই প্রমাণ করল!

বিশেষজ্ঞরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, বিয়ারিং প্যাড কেবল সেতুর কাঠামোর রক্ষাকবচ নয়, এটি বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান গণপরিবহন ব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও জননিরাপত্তার প্রতীক। এই দুর্ঘটনা প্রমাণ করে, কেবল অবকাঠামো নির্মাণই যথেষ্ট নয়, গুণমান নিশ্চিতকরণ ও কঠোর নজরদারিই আধুনিক ব্যবস্থার সফলতার ভিত্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যুর ঘটনায় বেলা ১২টার দিকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর বেলা ৩টা থেকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আংশিক মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে।

আজ রোববার ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড ডিএমটিসিএল পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে দুপুরে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হবে খুব দ্রুততম সময়ে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আপাতত চালু হচ্ছে না। আজ চালু করা সম্ভব হবে না এই অংশ।’

ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে আজ দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে এক পথচারী মারা যান। এই ঘটনার পর থেকে মেট্রোরেল চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ব্যক্তি ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মেট্রোরেল চলাচলের মুহূর্তে ওপর থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড তাঁর মাথায় পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা একটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। তাতে নাম লেখা আবুল কালাম এবং বাড়ি শরীয়তপুর। জন্মসাল ১৯৯০। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।

তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ডিউটিরত অবস্থায় কাছেই ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত গিয়ে দেখি, এক ব্যক্তি রাস্তায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।’

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। এর ফলে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এই ঘটনায় বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয়বার বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ল।

মেট্রোরেলের লাইনের নিচে উড়ালপথের পিলারের সঙ্গে রাবারের বিয়ারিং প্যাড থাকে। এগুলোর প্রতিটির ওজন ১৪০ বা ১৫০ কেজি। এসব বিয়ারিং প্যাড ছাড়া ট্রেন চালালে উড়ালপথ দেবে যাওয়া কিংবা স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বইমেলা হবে কোনো সন্দেহ নেই, সময় নির্ধারণ বাংলা একাডেমির ব্যাপার: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কেমন বই মেলা চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কেমন বই মেলা চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এবারও বইমেলা যাতে খুব সুন্দর হয়। সময়ের ব্যাপারে আমি জানি না, বাংলা একাডেমি কি একই সময়ে করবে নাকি সময় একটু হেরফের করবে—সেটা বাংলা একাডেমির বিষয়। তবে মেলা হবে—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’

আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি আয়োজিত ‘কেমন বই মেলা চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় ১৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা এমন একটা বইমেলা চাই, যে বইমেলায় আমাদের সব মানুষের বই থাকবে। আমরা যারা বই লিখি, যে যেইটাই লিখুক কেন, যে কোনো ভিন্ন মতের লেখাই থাকুক না কেন, সবার বই যেন বইমেলায় থাকে। পাঠক বেছে নেবেন—উনি যেটা পড়তে চান, যে বই তাঁকে টানে উনি ওই বইটা কিনবেন।’

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা চাই এমন একটা মেলা, অবশ্যই সেটা বৈষম্যবিরোধী। কারও প্রতি যেন বৈষম্য না করা হয়। কেউ যেন এসে না বলেন যে না, আমার প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। আমি যে বইটা প্রকাশ করতে চাচ্ছি বা বিক্রি করতে চাচ্ছি, এটা এখানে করা যাচ্ছে না। এই কথাটা যেন না শোনা হয়।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এমন কোনো বইমেলা চাই না যেখানে ৪০ শতাংশ বই হচ্ছে একটা লোকের ওপরে। এমন একটা বইমেলার সময় গেছে, সামনে আপনি বই দেখবেন, সবই হচ্ছে শেখ পরিবারের বই। উনি টুঙ্গিপাড়ায় পুকুরের পাশে বসে আছেন, সেটা নিয়েও একটা বড় বই কেউ লিখে ফেলেছে। ওই বইগুলো ছিল—কোনোভাবে প্রতারণা করে কিছু টাকা-পয়সা কামানোর জন্য।’

সভায় জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান বলেন, ‘বইমেলাকে দলীয় বইমেলা হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছে। প্রতিটি স্টল, প্যাভেলিয়ন আওয়ামী দালালদের দেওয়া হয়েছিল। প্রকাশকেরা ছিল ফ্যাসিস্টদের দোসর। তবে এবারের বইমেলা হবে সবার।’

নির্বাচনের কারণে বইমেলা বন্ধের কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা হোক। নির্বাচনের কয়েক দিন বইমেলা বন্ধ রেখে। তা আবার কয়েক দিন বর্ধিত করা যেতে পারে। তা-ও যাতে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা বন্ধ না থাকে। এবারের বইমেলা না হলে মনে করা হবে, ফ্যাসিস্ট শক্তির দোসররা এটা জন্য জড়িত। তারাই ষড়যন্ত্র করে বইমেলা বন্ধ করতে চাইছে। সরকারের কাছে আবেদন বইমেলা যাতে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই হয়।’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাঈদ বারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কবি গাজীউল হাসান খান, ফয়েজ আলম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত