Ajker Patrika

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ থামিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে: ড. খলিলুর রহমান

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধের কারণে সেখানে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে যুদ্ধ থামাতে জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি তৎপরতা চলছে। যুদ্ধ থামানো গেলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু করা যেতে পারে। রোহিঙ্গা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান এ আশাবাদের কথা জানান।

আজ মঙ্গলবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রাখাইনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশ, মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে পরোক্ষভাবে আলোচনা চলছে—এমন ইঙ্গিত দিয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে মানবিক সহায়তা জাতিসংঘ যখন দেবে, যেটাতে আমরা [বাংলাদেশ] সাহায্য করব। সে সময়টাতে দুই পক্ষই যুদ্ধাবস্থা পরিহার করবে। খুব বেশি দেরি নেই সেটার।’

যুদ্ধাবস্থা থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হলে তখন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একটি বাস্তব আলোচনা শুরু হতে পারে, এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি।

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ৪ এপ্রিল মিয়ানমার সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মিং অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আলোচনার সূত্র ধরে খলিলুর রহমান এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য জাতিসংঘকে মাঝামাঝি রাখা হয়েছে। তারা এই দুপক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে। আমাদের দুপক্ষকে এক টেবিলে বসাচ্ছে।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে ছয় কিস্তিতে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দেয়। তারা ২ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা যাচাই-বাছাই করেছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে এসেছে, এটা তারা নিশ্চিত করেছে। বাকি ৭০ হাজারের ছবি ও নাম নিয়ে কিছু অসংগতি আছে। সেই অসংগতি দূর করার জন্য দুপক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাবে।

বাকি ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমার সরকার অতি দ্রুত পর্যালোচনা করবে, এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সেনাদের নিবর্তনমূলক কর্মকাণ্ডের মুখে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্তবর্তী পর্যটন জেলা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়।

রাখাইনের একটি বড় অংশ অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, এমন অবস্থায় সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে কি না, এমন প্রশ্নে খলিলুর রহমান বলেন, রাখাইন এখনো মিয়ানমারের সার্বভৌম এলাকার একটি অংশ। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া দেশটির সরকার ও আরাকান আর্মির একটি ঘোষিত অবস্থান। ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সে কারণে সরকার মনে করে, এই ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে সময় লাগবে। যাতে দ্রুততম সময়ে তারা যেতে পারে, সরকারের প্রচেষ্টা সে জন্যই।

যুদ্ধের কারণে আরাকানে রাখাইন ও রোহিঙ্গা দুই সম্প্রদায়ের অনেকেই না খেয়ে আছে। ওষুধপত্র পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি ঢাকা ও কক্সবাজার সফরে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য একটি ‘চ্যানেল’ খোলার ওপর জোর দেন। এ প্রসঙ্গে খলিলুর রহমান বলেন, রাখাইনের যে মানবিক সংকট, তা মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিকল্প নেই। সেই কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে। মিয়ানমার ও আরাকানে বাস্তবে যারা কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ও বাংলাদেশের বন্ধু দেশগুলো যারা আছে, তাদের সবার সঙ্গে মিলে সরকার এটা করবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, রোহিঙ্গারা যাতে অধিকার ও নিরাপত্তাসহ রাখাইনে যেতে পারে, তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দরকার। এ পরিবেশ তৈরির জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধির ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সহকারী প্রেস সচিব নাঈম আলী উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত