Ajker Patrika

আসন্ন বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় তরুণদের খাদ্য উৎপাদনে সম্পৃক্ত হতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

বাসস
আসন্ন বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় তরুণদের খাদ্য উৎপাদনে সম্পৃক্ত হতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী আসন্ন বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকট মোকাবিলায় খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে ‘জাতীয় যুব দিবস-২০২২’ উদ্বোধন এবং ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থাও বলছে—বিশ্বে খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। সে অবস্থায় বাংলাদেশকে এর থেকে মুক্ত রাখতে হলে আমাদের প্রতি ইঞ্চি জমি যেমন আবাদ করতে হবে, তেমনি খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমি আমাদের যুব সমাজকে আহ্বান করব যেন তাঁরা আরও উদ্যোগ নেন।’ তিনি বলেন, ‘তাঁরা যার যার এলাকাভিত্তিকও কাজ করতে পারেন। কেননা খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে আমরা যেমন নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারব তেমনি অনেক দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশকে সহায়তা করতে পারব। আমাদের মাটি উর্বর, আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের জনশক্তি; সেই জনশক্তিকেই আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’ 

যুবকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির দিকেই সরকারের দৃষ্টি নিবদ্ধ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তাদের মাঝে নেতৃত্বের যে গুণাবলি ও প্রতিভা আছে তা যেন বিকশিত হয় এবং তাদের কর্মদক্ষতা যেন দেশের কাজে লাগে সে জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতি জেলা উপজেলায় যুব কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তাঁরা যেন কাজ করতে পারে এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একটি প্রশিক্ষিত যুব শ্রেণি গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য।’ 

আমাদের দেশে এখন কত প্রশিক্ষিত যুব শ্রেণি রয়েছে তার ডেটাবেইস তৈরির প্রক্রিয়া চলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা হলে বোঝা যাবে কারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে এবং কারা এর বাইরে রয়েছে।’ তাদেরকেও তাঁর সরকার কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তিই আমাদের যুব সমাজ। আর আজকে পৃথিবীর অনেক দেশই বয়োবৃদ্ধের দেশ হয়ে গেছে। এখনো বাংলাদেশের একটা বিরাট কর্মক্ষম যুবসমাজ রয়ে গেছে, যেটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যুব সমাজের এই শক্তিকেই কাজে লাগাতেই তার সরকার ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে স্লোগান রাখে—“তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি”।’ 

প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার যুবসমাজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হালনাগাদ জ্ঞান দিয়ে গড়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, যাতে তারা পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রতিযোগিতার যোগ্য এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সক্ষম হয়।

তিনি ৬৪টি জেলায় ৬৪ হাজার যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনে ঋণ দেওয়ার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি এই উদ্যোগটি সময়োপযোগী। বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে বাঁচাতে পারব, যদি আমরা বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এবং সৌর শক্তি স্থাপন করতে পারি’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুবকদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সারা দেশে আমরা হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, বিশেষায়িত ল্যাব, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছি, যেখানে আমাদের যুব সমাজ প্রশিক্ষণ নিতে পারে। কারণ, আমি বিশ্বাস করি আমাদের যুব সমাজ মেধাবী এবং তারা সব কাজেই পারদর্শিতা দেখাতে পারবে।’ 

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘রূপকল্প-২১’ এর মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা তাঁর সরকারের একটি লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মাঝে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপন করেছি এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। আর এই মর্যাদা ধরে রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সে জন্য সরকার “ডেলটা প্ল্যান-২১০০” ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাতেই আমাদের এ দেশকে গড়ে তুলতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, ১৯৭১ সালে আমাদের যুবকরাই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেই আমাদের জন্য বিজয় অর্জন করেছে। সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের সব সময় মাথা উঁচু করে চলতে হবে।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করব নিজের শক্তি, মেধা সম্পদ দিয়ে। এই চিন্তা আমাদের যুবকদের মাঝে সব সময় থাকতে হবে। এটা সম্ভব হলেই জাতির পিতার ভাষায়, “বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না”।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

সাতকানিয়ায় ডাকাত পড়েছে বলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মারধর, নিহত ২

ইউএনওর সামনেই ৪ জামায়াত নেতাকে পেটালেন বিএনপি নেতারা

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত