মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। ২০২৪ সালে দেশে রেকর্ড প্রায় ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা পাঠিয়েছেন বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম বড় খাত জনশক্তি রপ্তানির বাজার সীমিত হয়ে গেছে। গত বছর অভিবাসী কর্মী হিসেবে পাড়ি দেওয়া ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশির মধ্যে ৯০ শতাংশই গেছেন মাত্র পাঁচটি দেশে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুটিকয়েক দেশনির্ভর শ্রমবাজার দেশে অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর মধ্যে কোনো একটি দেশ অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করলে বা বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রেমিট্যান্সে।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে বিএমইটি’র ছাড়পত্র নিয়ে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮৬৯ জন কর্মী কাজের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। তাঁদের মধ্যে ৯ লাখ ৬৬২ জনই গেছেন সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। যা গত বছর মোট জনশক্তি রপ্তানির ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ জনশক্তি রপ্তানি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এই পাঁচ দেশের ওপর।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকী এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ ১৬৮টি দেশে কর্মী পাঠায়, এটি সরকারের দাবি হলেও ৯০ শতাংশের বেশি কর্মী যান গুটিকয়েক দেশে। বাকি দেশগুলোতে কর্মী পাঠানোর হার খুবই কম। আশঙ্কার বিষয়, প্রধান শ্রমবাজারগুলোতেও কর্মী রপ্তানি কমতে শুরু করেছে। নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধি ধীর হওয়ায় এরই মধ্যে ইউএই-তে কর্মী নিয়োগ কমে গেছে। প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরবেও শ্রমিকের চাহিদা কমেছে। মালয়েশিয়ায় যেসব শ্রমিক গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে চাকরি না পেয়ে দেশে ফিরেছেন। দেশটির শ্রমবাজার প্রায় বন্ধই বলা যায়। তিনি জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পেছনে একটি সিন্ডিকেট দায়ী।
কর্মী ভিসায় গত তিন বছরে বিদেশে গেছেন ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ হাজার বাংলাদেশি। এ সময়ে শুধু বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার সৌদি আরবে গেছেন ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫৬ জন। যা মোট কর্মী রপ্তানির অর্ধেকের বেশি।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিদেশে গেছেন ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন কর্মী। এর মধ্যে সৌদি আরব যান ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জন। ২০২৩ সালে মোট কর্মী রপ্তানি হয় ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন; সৌদি আরব যান ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন। গত বছর মোট ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৩ জনের মধ্যে সৌদি আরব গেছেন ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৪ জন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক বছরে সৌদি আরবে কর্মীদের বড় একটি অংশ গেছেন ফ্রি ভিসায়। তাঁদের কাজের কোনো চুক্তি নেই, কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তাও নেই। কাজ জোগাড় করে নিতে হয়। বেশি কর্মী যাওয়ায় দেশটিতে কাজের সুযোগ কমেছে। ফ্রি ভিসায় যাওয়া কর্মীদের অনেকে সপ্তাহে এক-দুই দিন কাজ করতে পারেন। আবার যাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিতে কাজ করছেন, তাঁরাও প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
বিগত বছরগুলোয় সৌদি আরব বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়ায় বর্তমানে অন্যান্য দেশের কর্মীদের নিয়োগ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান ও ভারতের শ্রমিকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ, দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ থেকে মূলত অদক্ষ ও স্বল্পদক্ষ শ্রমিক পাঠানো হয়।
সৌদি আরবের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় কর্মরত আছেন। চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে দেশটির শ্রমবাজার খুললে ওই বছর যান ৫০ হাজার ৯০ জন। ২০২৩ সালে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন। ২০২৪ সালে যান ৯৩ হাজার ৬৩২ জন।
সূত্র বলেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারও এখন অনিশ্চয়তায়। ২০২৪ সালের জুনে শ্রমবাজারটি আবার বন্ধ হয়েছে। মূলত বাংলাদেশি ও মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট অতিরিক্ত খরচে কর্মী নিয়োগ ও দেশটিতে যাওয়া অনেক শ্রমিক বেকার থাকায় বন্ধ হয় কর্মী রপ্তানি।
কাতার ২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক নিয়েছিল, যার একটি বড় অংশ ছিল বাংলাদেশি। কিন্তু বিশ্বকাপ-পরবর্তী চাকরির সংকটে এই শ্রমবাজারও বর্তমানে সংকুচিত হচ্ছে। কাতারে ২০২২ সালে ২৪ হাজার ৪৪৭ জন, ২০২৩ সালে ৫৬ হাজার ১৪৮ এবং ২০২৪ সালে ৭৪ হাজার ৪২২ জন বাংলাদেশি কর্মী গেছেন। তবে চলতি বছর কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, বিশ্বকাপ-পরবর্তী অবকাঠামোগত প্রকল্প কমে যাওয়ায় কাতারে নির্মাণ খাতে নিয়োগ কমেছে। পাশাপাশি দেশটি এখন বেশি দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত এক বছরে মালয়েশিয়া, ইউএই এবং ওমান তাদের শ্রমবাজার বন্ধ করে দিয়েছে। কাতার, কুয়েত এবং সৌদি আরব বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ কমিয়েছে। এ অবস্থায় অভিবাসন খাতের পতন ঠেকাতে প্রচলিত বাজার পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি নতুন বাজার সৃষ্টির দিকে সরকারের নজর বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কর্মী পাঠানো হয়েছে। গত কয়েক বছরে যাঁরা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগ কম বেতনে কাজ করছেন।
সিঙ্গাপুর দক্ষ শ্রমিক নিতে চায়, যা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। অনেক শ্রমিক সিঙ্গাপুরে যেতে আগ্রহী হলেও সুযোগ সীমিত। এর পরও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি কর্মী যাচ্ছেন। দেশটিতে ২০২২ সালে ৬৪ হাজার ৩৮৩ জন, ২০২৩ সালে ৫৩ হাজার ২৬৫ এবং ২০২৪ সালে ৫৬ হাজার ৮৭৮ জন বাংলাদেশি কর্মী গেছেন।
ইউএই–তে ২০২২ ও ২০২৩ সালে গেছেন যথাক্রমে ১ লাখ ১ হাজার ৭৭৫ ও ৯৮ হাজার ৪২২ জন বাংলাদেশি কর্মী। তবে ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ১৬৬ জনে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে গেছেন মাত্র ১ হাজার ১৫০ জন। নির্মাণ খাতে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় ইউএই-তে নিয়োগ কমেছে। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী বলেন, প্রচলিত শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি যদি বিকল্প বাজার তৈরি না করা যায়, তবে দেশের শ্রমবাজার গুরুতর সংকটে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ অবৈধভাবে সাগরপথে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করবে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, সরকার নতুন শ্রমবাজার খোঁজার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে রয়েছে—রাশিয়া, পর্তুগাল, মাল্টা, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ইরাক ও ইরান। এ জন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে প্রশিক্ষণ বাড়ানো এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করার উদ্যোগ রয়েছে।
বিএমইটি’র অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, বেশ কিছু নতুন শ্রমবাজার নিয়ে কাজ চলছে। রাশিয়া বর্তমানে এসব গন্তব্যের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। পাশাপাশি ইরাক ও ইরানেও কর্মী যাচ্ছেন। শুধু ইরাকেই ৫০ হাজারের বেশি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আরও খবর পড়ুন
দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। ২০২৪ সালে দেশে রেকর্ড প্রায় ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা পাঠিয়েছেন বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম বড় খাত জনশক্তি রপ্তানির বাজার সীমিত হয়ে গেছে। গত বছর অভিবাসী কর্মী হিসেবে পাড়ি দেওয়া ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশির মধ্যে ৯০ শতাংশই গেছেন মাত্র পাঁচটি দেশে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুটিকয়েক দেশনির্ভর শ্রমবাজার দেশে অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর মধ্যে কোনো একটি দেশ অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করলে বা বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রেমিট্যান্সে।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে বিএমইটি’র ছাড়পত্র নিয়ে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮৬৯ জন কর্মী কাজের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। তাঁদের মধ্যে ৯ লাখ ৬৬২ জনই গেছেন সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। যা গত বছর মোট জনশক্তি রপ্তানির ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ জনশক্তি রপ্তানি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এই পাঁচ দেশের ওপর।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকী এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ ১৬৮টি দেশে কর্মী পাঠায়, এটি সরকারের দাবি হলেও ৯০ শতাংশের বেশি কর্মী যান গুটিকয়েক দেশে। বাকি দেশগুলোতে কর্মী পাঠানোর হার খুবই কম। আশঙ্কার বিষয়, প্রধান শ্রমবাজারগুলোতেও কর্মী রপ্তানি কমতে শুরু করেছে। নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধি ধীর হওয়ায় এরই মধ্যে ইউএই-তে কর্মী নিয়োগ কমে গেছে। প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরবেও শ্রমিকের চাহিদা কমেছে। মালয়েশিয়ায় যেসব শ্রমিক গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে চাকরি না পেয়ে দেশে ফিরেছেন। দেশটির শ্রমবাজার প্রায় বন্ধই বলা যায়। তিনি জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পেছনে একটি সিন্ডিকেট দায়ী।
কর্মী ভিসায় গত তিন বছরে বিদেশে গেছেন ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ হাজার বাংলাদেশি। এ সময়ে শুধু বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার সৌদি আরবে গেছেন ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫৬ জন। যা মোট কর্মী রপ্তানির অর্ধেকের বেশি।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিদেশে গেছেন ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন কর্মী। এর মধ্যে সৌদি আরব যান ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জন। ২০২৩ সালে মোট কর্মী রপ্তানি হয় ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন; সৌদি আরব যান ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন। গত বছর মোট ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৩ জনের মধ্যে সৌদি আরব গেছেন ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৪ জন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক বছরে সৌদি আরবে কর্মীদের বড় একটি অংশ গেছেন ফ্রি ভিসায়। তাঁদের কাজের কোনো চুক্তি নেই, কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তাও নেই। কাজ জোগাড় করে নিতে হয়। বেশি কর্মী যাওয়ায় দেশটিতে কাজের সুযোগ কমেছে। ফ্রি ভিসায় যাওয়া কর্মীদের অনেকে সপ্তাহে এক-দুই দিন কাজ করতে পারেন। আবার যাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিতে কাজ করছেন, তাঁরাও প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
বিগত বছরগুলোয় সৌদি আরব বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়ায় বর্তমানে অন্যান্য দেশের কর্মীদের নিয়োগ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান ও ভারতের শ্রমিকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ, দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ থেকে মূলত অদক্ষ ও স্বল্পদক্ষ শ্রমিক পাঠানো হয়।
সৌদি আরবের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় কর্মরত আছেন। চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে দেশটির শ্রমবাজার খুললে ওই বছর যান ৫০ হাজার ৯০ জন। ২০২৩ সালে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন। ২০২৪ সালে যান ৯৩ হাজার ৬৩২ জন।
সূত্র বলেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারও এখন অনিশ্চয়তায়। ২০২৪ সালের জুনে শ্রমবাজারটি আবার বন্ধ হয়েছে। মূলত বাংলাদেশি ও মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট অতিরিক্ত খরচে কর্মী নিয়োগ ও দেশটিতে যাওয়া অনেক শ্রমিক বেকার থাকায় বন্ধ হয় কর্মী রপ্তানি।
কাতার ২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক নিয়েছিল, যার একটি বড় অংশ ছিল বাংলাদেশি। কিন্তু বিশ্বকাপ-পরবর্তী চাকরির সংকটে এই শ্রমবাজারও বর্তমানে সংকুচিত হচ্ছে। কাতারে ২০২২ সালে ২৪ হাজার ৪৪৭ জন, ২০২৩ সালে ৫৬ হাজার ১৪৮ এবং ২০২৪ সালে ৭৪ হাজার ৪২২ জন বাংলাদেশি কর্মী গেছেন। তবে চলতি বছর কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, বিশ্বকাপ-পরবর্তী অবকাঠামোগত প্রকল্প কমে যাওয়ায় কাতারে নির্মাণ খাতে নিয়োগ কমেছে। পাশাপাশি দেশটি এখন বেশি দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত এক বছরে মালয়েশিয়া, ইউএই এবং ওমান তাদের শ্রমবাজার বন্ধ করে দিয়েছে। কাতার, কুয়েত এবং সৌদি আরব বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ কমিয়েছে। এ অবস্থায় অভিবাসন খাতের পতন ঠেকাতে প্রচলিত বাজার পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি নতুন বাজার সৃষ্টির দিকে সরকারের নজর বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কর্মী পাঠানো হয়েছে। গত কয়েক বছরে যাঁরা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগ কম বেতনে কাজ করছেন।
সিঙ্গাপুর দক্ষ শ্রমিক নিতে চায়, যা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। অনেক শ্রমিক সিঙ্গাপুরে যেতে আগ্রহী হলেও সুযোগ সীমিত। এর পরও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি কর্মী যাচ্ছেন। দেশটিতে ২০২২ সালে ৬৪ হাজার ৩৮৩ জন, ২০২৩ সালে ৫৩ হাজার ২৬৫ এবং ২০২৪ সালে ৫৬ হাজার ৮৭৮ জন বাংলাদেশি কর্মী গেছেন।
ইউএই–তে ২০২২ ও ২০২৩ সালে গেছেন যথাক্রমে ১ লাখ ১ হাজার ৭৭৫ ও ৯৮ হাজার ৪২২ জন বাংলাদেশি কর্মী। তবে ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ১৬৬ জনে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে গেছেন মাত্র ১ হাজার ১৫০ জন। নির্মাণ খাতে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় ইউএই-তে নিয়োগ কমেছে। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী বলেন, প্রচলিত শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি যদি বিকল্প বাজার তৈরি না করা যায়, তবে দেশের শ্রমবাজার গুরুতর সংকটে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ অবৈধভাবে সাগরপথে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করবে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, সরকার নতুন শ্রমবাজার খোঁজার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে রয়েছে—রাশিয়া, পর্তুগাল, মাল্টা, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ইরাক ও ইরান। এ জন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে প্রশিক্ষণ বাড়ানো এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করার উদ্যোগ রয়েছে।
বিএমইটি’র অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, বেশ কিছু নতুন শ্রমবাজার নিয়ে কাজ চলছে। রাশিয়া বর্তমানে এসব গন্তব্যের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। পাশাপাশি ইরাক ও ইরানেও কর্মী যাচ্ছেন। শুধু ইরাকেই ৫০ হাজারের বেশি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আরও খবর পড়ুন
রাজধানীর পূর্বাচলে রাজউকের প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক
৭ মিনিট আগেবাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ শল্য চিকিৎসক ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মূলত গত বছরের জুলাই আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় চোখে আঘাত পাওয়া আন্দোলনকারীদের সুচিকিৎসা দেওয়া। এরই মধ্যে ব্রিটিশ চিকিৎসকেরা অন্তত ২০ জন জুলাইযোদ্ধা
২ ঘণ্টা আগেজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নের সবার লক্ষ্য এক। তবে সংস্কার বাস্তবায়নের পথ নিয়ে সামান্য ভিন্নতা আছে। আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করে যে সব জায়গায় ঐকমত্য আছে তার ভিত্তিতে দ্রুতই জাতীয় সনদ তৈরি করা যাবে। এই সনদ তৈরির মাধ্যমে জাতির রাষ্ট্র সংস্কারের...
২ ঘণ্টা আগেজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘আমরা সবাই একপক্ষ হয়ে চেষ্টা করছি রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য। আমাদের লক্ষ্য এক কিন্তু পথের ক্ষেত্রে সামান্য ভিন্নতা আছে। সেটা দূর করে, যে ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসনকে দূর করা গেছে, সে ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে পারি এবং অগ্রসর হতে পারি। এখনো ঐক্য
৩ ঘণ্টা আগে