Ajker Patrika

বিদিশায় সরগরম জাপা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২১, ১৩: ৫৭
বিদিশায়  সরগরম  জাপা

না মাঠে, না কাজে—কোনো দিক দিয়ে আলোচনায় না এলেও পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিককে ঘিরে ঝড় উঠেছে জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। জি এম কাদেরের সমালোচনায় সব সময়ই মুখর বিদিশা। সুযোগ পেলেই নানা কথা বলে আলোচনায় আসেন। তবে বিদিশাকে নিয়ে কথাই বলতে চান না জাপার চেয়ারম্যান ও প্রয়াত এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের।

সম্প্রতি পুরোনো বিরোধ ভুলে রওশন এরশাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছিলেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা। এ ঘটনার রেশ কাটতে না–কাটতেই সন্তান এরিকের পরিচয় নিয়ে পাল্টা অভিযোগ এসেছে তাঁর বিরুদ্ধেও। সব মিলিয়ে বিদিশাকে ঘিরে বর্তমানে বেশ সরগরম রয়েছে জাপা।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাপার প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদ। তাঁর মৃত্যুর পরে জাপার চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে দুই পক্ষের টানাটানি শুরু হয়। ওই সময় এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান করতে তৎপর হন তাঁর সমর্থকেরা। পরে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান হন এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের। দলকে সুসংহত রাখতে রওশনকে পার্টির ‘চিফ প্যাট্রন’ করা হয়। পাশাপাশি রওশনবলয়ের নেতাদের পদপদবি দিয়ে ভাঙনের হাত থেকে দলকে বাঁচান জি এম কাদের। 

এ ঘটনার পরে পার্টিতে মোটামুটি একটা স্থিতাবস্থা ফিরলেও সময়ে সময়ে জি এম কাদেরের নেতৃত্ব নিয়ে নানা কথা বলে আসছিলেন বিদিশা সিদ্দিক। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘রওশন এরশাদ যেন আজীবন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, আমি সেটাই চাই।’

বিদিশার এই বক্তব্যের পরে কয়েক দিন ধরে দলে ও দলের বাইরে নানা কথা চাউর হচ্ছে। দলেও উঠেছে নানা প্রশ্ন। পুরোনো দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে হঠাৎ কেন বিদিশা রওশনের পক্ষে অবস্থান নিলেন? এ নিয়ে আলোচনার মাঝেই এরশাদের ছেলে শাহাতা জারাব এরশাদ এরিকের জন্মপরিচয় নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন এরিক।

রাজধানীর বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে এরশাদ ট্রাস্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাপার চেয়ারম্যান ও তাঁর চাচা জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন এরিক। তিনি বলেন, ‘আমার ও আমার মা বিদিশার যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে দায়ী থাকবেন চাচা জি এম কাদের।’ তাঁদের বিরুদ্ধে জি এম কাদের কিছু মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ করাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন এরিক।

সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, জাতীয় পার্টির অফিশিয়াল পেজে এরিক ও বিদিশার নিউজ শেয়ার করা হচ্ছে। সব ষড়যন্ত্রের জন্য জি এম কাদের দায়ী। এরিককে সরাতে পারলে তিনি সম্পদ দখল করতে পারবেন। তিনি বলেন, জি এম কাদের এরশাদ পরিবারকে ধ্বংস করার যড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। এরশাদের জীবদ্দশায় এরিকের জন্ম নিয়ে কোনো প্রশ্ন না করলেও এখন অসৎ উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর।

এরশাদের ব্যবসার অংশীদার ও তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত সাতক্ষীরা-৪ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ ও হুইপ এইচ এম গোলাম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এরশাদের সম্পত্তি বাগিয়ে নিতে বিদিশা সন্তান নিয়ে নাটক করছেন। এরিক এরশাদের ছেলে হতে পারে না। প্রমাণ করতে চাইলে তিনি (বিদিশা) আদালতে আসতে পারেন।’

এরিক ও এরশাদ ট্রাস্টের অভিযোগ বিষয়ে পাল্টা অভিযোগ করেছেন জাপার অনেক নেতা। তাঁদের অভিযোগ, এরশাদের জীবদ্দশায় বিদিশা এরিকের কোনো খোঁজখবর রাখতেন না। বিদিশার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে আরও অনেক দিন এরশাদ বেঁচে ছিলেন। এই সময়ে বিদিশা এরিকের কোনো খোঁজখবর রাখেননি। হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা দিন নিকেতনের বাসায় এরিক তাঁর মায়ের কাছে থেকেছেন। বাকি সময়টা প্রেসিডেন্ট পার্কে এরশাদের কাছেই ছিলেন। এরশাদ মারা গেলে হঠাৎ করেই প্রেসিডেন্ট পার্কে উঠলেন বিদিশা। এরপর থেকেই এরিকের প্রতি অতিমাত্রায় মনোযোগী হন বিদিশা।

ট্রাস্টের বিষয়েও অভিযোগ করে তাঁরা বলেন, ‘এরশাদ তাঁর সম্পত্তি ট্রাস্টে দিয়ে গেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, এরিকের ভরণপোষণ এই ট্রাস্ট থেকেই নির্বাহ করা হবে। বাকি টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার কথা বলে গেছেন এরশাদ। বিদিশা এখন সেই ট্রাস্টকে তাঁর নিজের লোকদের নিয়ে ইচ্ছেমতো সাজিয়েছেন, যেখানে এরশাদ পরিবারেরও কেউ নেই। সব ভুঁইফোড় লোকজন। আসলে সম্পত্তি বাগিয়ে নিতেই বিদিশা তৎপর রয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের বিশাল সম্পত্তি। এগুলো ভোগদখলের ব্যাপার-স্যাপার আছে। সন্তানের নামটা না দিলে তো এটা হয় না।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত