Ajker Patrika

১৫ বছরে সড়ক-সেতুতে ৫০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৪: ৪১
১৫ বছরে সড়ক-সেতুতে ৫০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি

গত ১৫ বছরে সড়ক ও সেতু খাতে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। আজ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ‘সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবি। 

এতে বলা হয়, ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের মোট অর্থ বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর এই টাকার মধ্যে সার্বিকভাবে দুর্নীতির হার ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। 

গবেষণা সম্পন্ন করেছেন মো. মোস্তফা কামাল ও মো. জুলকার নাইন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। 

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের মধ্যে সমাপ্ত প্রকল্পসমূহ এই গবেষণার আওতাভুক্ত (এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরুর সময় ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত)। এই গবেষণায় সড়ক নির্মাণ, সড়ক উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ, সেতু উন্নয়ন (অনূর্ধ্ব ১৫০০ মিটার) ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ সম্পর্কিত প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সমাপ্ত প্রকল্পের সংখ্যা, ধরন, বরাদ্দ ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১০টি জোনের ১৩টি সার্কেলের ২১টি বিভাগীয় দপ্তরের (জেলা পর্যায়) আওতাধীন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। 

গবেষণায় ৭৩ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় বিশ্লেষণ; ভূমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি অবকাঠামো স্থানান্তর, বেতন, ভাতা, যানবাহন, স্টেশনারি, ইত্যাদি ব্যয় ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের শুধু নির্মাণ/উন্নয়নসংক্রান্ত কাজের প্রাক্কলিত গড় ব্যয়ের হার ৭৫ শতাংশ। শুধু নির্মাণ/উন্নয়নসংক্রান্ত কাজের প্রাক্কলিত ব্যয়ের পরিমাণ ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। 

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির পরিমাণ বেশি। প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের লাইসেন্স ভাড়া নেওয়া, কোনো ঠিকাদারের প্রাপ্ত কার্যাদেশ ক্রয়, নিয়মবহির্ভূতভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট নেওয়া, প্রতিযোগী ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতা বা স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যাদেশের মোট অর্থমূল্যের দুর্নীতি ২ থেকে ৬ শতাংশ। নির্মাণকাজের কার্যাদেশ প্রাপ্তি ও ঠিকাদারের বিল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘুষের পরিমাণ ১১ থেকে ১৪ শতাংশ। নির্মাণকাজে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতির হার ১০ থেকে ২০ শতাংশ। দরপত্র লাইসেন্স ভাড়া, কার্যাদেশ বিক্রয়, সমঝোতা, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্নীতির হার ২ থেকে ৬ শতাংশ নির্মাণকাজে প্রাক্কলিত দুর্নীতির পরিমাণ ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, যা ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ। 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক ও সেতু নির্মাণ ও উন্নয়নকাজে ঠিকাদার কর্তৃক চুক্তিমূল্যের ১০ থেকে ২০ শতাংশ। ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়ে প্রাক্কলিত দুর্নীতির পরিমাণ ১২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা থেকে ২৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। 

ঠিকাদার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদ এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। 

ঠিকাদারগণ নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে বা বিভিন্ন উপকরণ কম দেন; সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক/প্রকৌশলীরা এই অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ করে দেন। পাথরের ঘনত্ব কম দেওয়া, নিম্ন মানের বিটুমিন ব্যবহার বা কম দেওয়া, ট্যাক কোট বিটুমিন না দেওয়া বরাদ্দ থাকলেও বৃক্ষরোপণ, রোড সেফটি সাইন, রক্ষাপ্রদ কাজ, আর্থ ওয়ার্ক এবং সার্ফেসিং না করা/অর্ধসমাপ্ত রাখা। 

বলা হয়েছে, একটি প্রকল্পে বৃক্ষরোপণে ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও একটি গাছও লাগানো হয়নি। সড়কে উন্নয়ন কার্যক্রম চলাকালে প্রাপ্ত স্যালভেজ (পরিত্যক্ত উপকরণ) কম মূল্য দেখিয়ে বিক্রয় বা পুনরায় ব্যবহার ডাইভারশন রোড যথাযথভাবে না করে শুধু মাটি ফেলে সড়ক নির্মাণ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যবহার না করা। 

প্রকল্প বাস্তবায়নে জবাবদিহির ঘাটতি
টিআইবি বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা সরাসরি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আনুকূল্য পাওয়ায় নিম্নমানের কাজ করা বা প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না। 

ইজিপির তথ্য অনুসারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ঠিকাদারি কাজ পেতে জালিয়াতি করায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৩৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়; তবে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ প্রদান। কয়েকজন ঠিকাদারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত নেই। কিছু ঠিকাদারের রাজনৈতিক প্রভাব ও উচ্চ পর্যায়ে যোগসাজশ থাকার কারণে সওজের কর্মকর্তা ঠিকাদারদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। 

প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন ও মূল্যায়ন পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুবই নিম্ন মানের প্রকল্প প্রস্তাব ও ‘ফরমায়েশি’ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নের নজির রয়েছে। 

প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নে সওজের পরিকল্পনা উইংয়ের সম্পৃক্ততা কম; প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখার জন্য সওজের বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যালয় প্রধান কর্তৃক প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। কখনো কখনো খুব দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়নের চাপ আসে; প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর আগেই সুপারিশ চলে আসে। 

কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প অনুমোদন সভায় দ্রুততার সঙ্গে প্রস্তাব উত্থাপন এবং গোপনে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে সওজের কোনো কোনো কর্মকর্তা পরিকল্পনা কমিশনের কিছু কর্মচারীদের ২-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেয়। 

প্রকল্প প্রণয়নের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলন; এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো প্রাক্কলিত বাজেটের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত প্রাক্কলন হয়েছে। 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পে পরিচালক বানানো হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে একজন কর্মকর্তাকে ১২টি প্রকল্পের পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। বিগত পাঁচ বছরে সমাপ্ত প্রকল্পসমূহের ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রকল্প পাঁচ বছরের বেশি সময় নিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। সর্বোচ্চ ১৭ বছরে একটি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পসমূহের প্রাথমিক প্রাক্কলিত বাজেটের চেয়ে পরবর্তীতে সর্বোচ্চ ৯৩ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি প্রকল্পে একজন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদানের ৫ বছর ৯ মাস ১৬ দিন পর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়। 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ২৫টি প্রকল্পের কোনটিতেই পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ, অবস্থানগত ও পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়নি। এর বিপরীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ধরনের পদক্ষেপ দেখা যায়নি। 

প্রতিবেদন উপস্থাপন শেষে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জনস্বার্থে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে রাজনীতিবিদ, আমলা ও ঠিকাদারদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত রয়েছে। একেবারে নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত এসব দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের ঘুষ লেনদেনে ৪০-৪৩ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়। এখন ত্রিপক্ষীয় সিন্ডিকেট যদি আমরা ভাঙতে না পারি, তাহলে দুর্নীতিবিরোধী কোনো কার্যক্রম সফল হবে না।’ 
 
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের নানা প্রকল্পের তথ্য চাইতে গেলে অনেক তথ্য আমাদের দেওয়া হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা, যেসব তথ্য প্রকাশযোগ্য সেগুলো যেন প্রকাশ করা হয়। তবে বাস্তব কথা হলো-প্রতিষ্ঠানে কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে তবে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার তো পরিবর্তন হয়নি। তাই রাতারাতি পরিবর্তন আশা করছি না।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমাদের গবেষণা প্রতিবেদন শুধু দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নিয়ে হয়েছে। তবে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতেও কম-বেশি দুর্নীতি হয়েছে। এতে দেশীয় আমলাতন্ত্রের সঙ্গে বিদেশি আমলাতন্ত্রের যোগসাজশ হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে সারা দেশের ভূমি অফিসের নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩৮
অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে সারা দেশের ভূমি অফিসের নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গত সোমবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখা থেকে সব জেলা প্রশাসকদের পাঠানো এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ডরুমে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের সব উপজেলা ভূমি অফিস, রাজস্ব সার্কেল, ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ ধরনের আকস্মিক দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ যাবতীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

চিঠিতে সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ডরুমে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ উপজেলা ভূমি অফিস, রাজস্ব সার্কেল, ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে আকস্মিক অগ্নি দুর্ঘটনা, যে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা বিপর্যয় এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ যাবতীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

সব বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের চাওয়ার আগেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৩৫
ফাওজুল কবির খান। ফাইল ছবি
ফাওজুল কবির খান। ফাইল ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পেতে নানা হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতার মুখে পড়েন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা কিছুই পান না। এই জটিলতা দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যাতে চাওয়ার আগেই ক্ষতিপূরণ পান, সে ব্যাপারে বিআরটিএকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার এক অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে তেজগাঁওয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সড়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হচ্ছে এবং এই অভিযান আরও বাড়ানো হবে। তিনি গাড়ির মালিকদের ফিটনেস ঠিক রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন যানবাহন কোনো অবস্থাতেই সড়কে চলতে দেওয়া হবে না। কারণ, এটি দুর্ঘটনার বড় কারণ।’

মোটরসাইকেল বিষয়ে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ায় দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হেলমেট ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এবার জাতীয় সড়ক দিবস উপলক্ষে ১০ হাজার মোটরসাইকেল চালকের মধ্যে হেলমেট বিতরণ করা হবে, বিশেষ করে যেসব এলাকায় সড়ক নির্মাণকাজ চলছে বা মানুষ ভোগান্তিতে আছে।’

সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জন্য এক ধরনের গ্লানি ও ব্যর্থতা। ২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে গড়ে ২৭ জন নিহত ও ৩৮ জন আহত হন।’

উপদেষ্টার মতে, সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনাও বেড়েছে।

দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবার ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা তা পান না।’

উপদেষ্টা আরও জানান, বিআরটিএকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো চাওয়ার আগেই ক্ষতিপূরণের টাকা পায়।

সড়ক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা শুধু সড়ক বিভাগের দায়িত্ব নয়, বরং এটি করতে হবে সকল সংস্থার সমন্বয়ে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩২
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের বর্তমান পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন থেকে প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন না। লাইসেন্স দেওয়ার সব কমিটি বাতিল করে আন্তর্জাতিক মানে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে। লাইসেন্স পাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে অন্তত ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এর আয়োজন করবে সরকার। প্রশিক্ষণকালে প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতার ব্যবস্থাও থাকবে।

আজ বুধবার এক অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে তেজগাঁওয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উপদেষ্টা বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে চালকদের স্বীকৃত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। বর্তমানে বিআরটিসিসহ দেশে বেশ কয়েকটি বৈধ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, যেখান থেকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রশিক্ষণে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে—প্রথমত, সড়কের বিভিন্ন সাইন ও চিহ্ন সম্পর্কে জ্ঞান এবং দ্বিতীয়ত, যানবাহন সঠিকভাবে চালানো ও নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা। কারণ, বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে।

ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স-সংক্রান্ত কাজগুলো বিআরটিএ থেকে সরিয়ে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোর মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। এতে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা থাকবে না।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী মাসের মধ্যেই এই নতুন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার মূল কারণ প্রশিক্ষণহীন চালকেরা।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি সরাইল এলাকায় গিয়েছিলাম। যাওয়ার আগে সেখানে নিয়মিত যানজট ছিল, কিন্তু আমার পরিদর্শনের দুই দিন পর থেকেই আর জ্যাম নেই। আমার হাতে কোনো জাদুর কাঠি নেই—শুধু কিছু শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছি।’

এদিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ, বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে কাটবে ভোটের সংশয়, আশা আসিফ নজরুলের

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৪৫
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বাস্তব অগ্রগতিতে নির্বাচন নিয়ে ‘সব সংশয় কেটে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

আজ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘মাঠে-ঘাটে মানুষের মধ্যে আস্থার অভাব আছে কি না, আমি জানি না। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেভাবে অনৈক্য থাকে, তারা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে যেভাবে বলে, ওটার কারণে হয়তো নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় কাজ করছে। তবে আশা করি, আমরা যখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি দেখব, এ সম্পর্কে সব সংশয় খুব দ্রুত কেটে যাবে।’

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করতে প্রধান উপদেষ্টাকে পরামর্শ দেন বিএনপির নেতারা।

এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় যেটা বুঝেছি, উনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাননি। অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, সেটা বলেছে। তারা আমাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে। আমরা উনাদেরকে বলেছি, আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকাই পালন করছি। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার জন্য এমনকি প্রধান উপদেষ্টা এই নিশ্চয়তাও দিয়েছেন—জনপ্রশাসন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে বড় বদলির ব্যাপারটা উনি নিজে দেখবেন।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, এটা বলেনি। বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করতে। আমাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে। সে বিষয়ে তাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচনের সময় উপদেষ্টা পরিষদ ছোট হবে কি না, সেই প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ধরনের কথা কোথাও আলোচনা হয়নি। এটা উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনার বিষয়। নির্বাচনকালীন সরকার ছোট হবে কি না, এ ধরনের কোনো দাবিও কোনো মহল থেকে উত্থাপন হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত