Ajker Patrika

শ্রুতলেখকের জন্য ২৫ ভাগ বেশি সময় পাবেন পরীক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শ্রুতলেখকের জন্য ২৫ ভাগ বেশি সময় পাবেন পরীক্ষার্থী

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের নিয়োগ ও একাডেমিক পরীক্ষায় শ্রুতলেখক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক চতুর্থাংশ অতিরিক্ত সময় পাবেন তারা। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রুতলেখকদের যোগ্যতাও নির্ধারণ করা হচ্ছে এই নীতিমালায়। 

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আজ রোববার এ সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা উপস্থাপন করে মন্ত্রণালয়। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

নীতিমালা প্রণয়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় শ্রুতলেখকের বিধান চালু থাকলেও প্রতিটি কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পদ্ধতিতে এটা করে থাকে। প্রতিষ্ঠানভেদে শ্রুতলেখক নিয়োগের বিষয়টি ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। যার কারণে এই অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের ‍উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের শ্রুতলেখক নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন সাপেক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পত্র প্রেরণের সুপারিশ করা হয়েছে। 

জানা গেছে, এতে একাডেমিক ও নিয়োগ পরীক্ষায় শ্রুতলেখকের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ সময় বেশি পাবেন। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টা সময়ের বিপরীতে ১৫ মিনিট সময় অতিরিক্ত পাবেন। এক ঘণ্টার কম সময়ের পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সময় হবে আনুপাতিক হারে। তবে পরীক্ষার্থী প্রাপ্তি যতই কমই হোক না কেন, অতিরিক্ত সময়ে ন্যূনতম পাঁচ মিনিটের কম হবে না। 

যে সকল শিক্ষার্থীদের শ্রুতলেখকের প্রয়োজন হয় না, তবে ধীর গতিতে নিজ হাতে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, তারাও একই হারে অতিরিক্ত সময় পাবেন। 

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন না হলেও আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে কেউ নিজ হাতে লিখতে অপারগ হলে শ্রুতলেখকের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে চাইলে সিভিল সার্জন প্রদত্ত চিকিৎসা সনদ প্রদর্শন করে পরীক্ষা দিতে পারবেন। 

শ্রুতলেখকদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, পিএসসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী) ও জেএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্রুতলেখক হবে প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর চেয়ে একশ্রেণির নিম্নে অধ্যয়নরত যে কোনো শিক্ষার্থী। এসএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্রুতলেখক হবে জেএসসি পাস বা নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত যে কোনো শিক্ষার্থী। এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্রুতলেখক হবে এসএসসি পাশ বা একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত যে কোনো শিক্ষার্থী। স্নাতক বা ডিগ্রির ক্ষেত্রে শ্রুতলেখক হবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা একশ্রেণির নিম্নে এবং বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত যেকোনো শিক্ষার্থী। বিদ্যালয় ও কলেজসমূহে তাদের সাময়িকসহ অন্যান্য একাডেমিক পরীক্ষার শ্রুতলেখকের ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য হবে। 

এদিকে সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের চাকরির নিয়োগের পরীক্ষায় শ্রুতলেখক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির চেয়ে এক গ্রেড বা একধাপ নিম্নে শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন হবে বলে এতে বলা হয়। এ ছাড়া বিএড/বিপিএডসহ প্রফেশনাল কোর্সের ক্ষেত্রে উক্ত প্রফেশনাল কোর্স করেনি এমন যে কোনো সময় শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী শ্রুতলেখক হতে পারবে। 

নীতিমালায় বলা হয়েছে, একাডেমিক ও চাকরির ক্ষেত্রে পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নিজ উদ্যোগে শ্রুতলেখক সংগ্রহ করবেন। এ ক্ষেত্রে একাধিক শ্রুতলেখককে মনোনয়নের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। যাতে কেউ অসুস্থ হলে অপরজন তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। শ্রুতলেখকের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ হিসেবে মনোনয়নের সময় জমা দিতে হবে। 

নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রুতলেখক নিয়োগে অসহযোগিতা করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে, তা জবাবদিহির আওতায় আনা হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়। 

এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকৃত চা-শ্রমিক যাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতাধীন বরাদ্দকৃত ঘরের মালিক হতে পারে সে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করে। এতিমখানায় (সরকারি ও বেসরকারি) প্রদত্ত ক্যাপিটেশন গ্রান্ট যথাযথভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এতিমের সংজ্ঞায় ‘পিতৃহীন’ শব্দের পাশাপাশি ‘মাতৃহীন’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সুপারিশ করে। এ ছাড়া তাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করে। 

কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে যোগদান করেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান। এ ছাড়া এতে আরও অংশ নেন কমিটির সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন, বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন, আ ক ম সরওয়ার জাহান এবং আরমা দত্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত