� কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন
� পাঁচ মন্ত্রণালয়-বিভাগের নথিসহ সব পুড়ে ছাই
� উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক, তদন্ত কমিটি
� নাশকতার ইঙ্গিত, মুখ খুলতে চান না কেউ
� ট্রাকচাপায় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীর মৃত্যু
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গভীর রাতের আগুনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে পানি ছিটানোর জন্য পাইপ লাগাতে গিয়ে সড়কে ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন সোয়ানুর জামান নয়ন নামের ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। তবে ভয়াবহ এই আগুনের কারণ রহস্যঘেরা; যার কিনারা গতকাল রাত পর্যন্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ এটিকে নাশকতা বলেও অভিযোগ করেছেন। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে কারও দিকে ইঙ্গিত করেননি কেউ। ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকেও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলো দেখেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, আগুনে নয়তলাবিশিষ্ট ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা পুড়ে গেছে। এসব তলায় কিছুই অক্ষত নেই। কোথাও কোথাও দেয়ালের পলেস্তারা, সিঁড়ির ঢালাই খসে পড়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে গত বুধবার সাধারণ ছুটি থাকায় সচিবালয়ও বন্ধ ছিল। প্রশাসনের এই প্রাণকেন্দ্র সুরক্ষিত। বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পায়। দ্রুত ছয়টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে আরও ১৩টি ইউনিট যোগ দেয়। কিন্তু আগুন একপর্যায়ে ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে নবম তলায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে গতকাল সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুড়ে যাওয়া ফ্লোরগুলোয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আংশিক কার্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পুরো কার্যালয় রয়েছে। তবে ভবনটির পঞ্চম তলা থেকে নিচের দিকে আগুন ছড়ায়নি।
আগুনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সবকিছু পুড়ে গেছে। এই মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের কার্যালয় বনানীর সেতু ভবনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ।
সকাল থেকে সচিবালয়ে ঘুরে দেখা যায়, ৭ নম্বর ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরো। ভবনের দক্ষিণ পাশে কয়েকটি কবুতর মরে পড়ে আছে। আটতলায় একটি মৃত কুকুর পাওয়া গেছে। ভবনের চারটি প্রবেশপথে পাহারায় রয়েছে পুলিশ। চারজন উপদেষ্টা ছাড়া কাউকেই ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে ভবনের বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে চারটি ফ্লোর পুরো পুড়ে গেছে। শুধু তিনটি সিঁড়ির স্থান দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার কারণে ওই অংশগুলো আগুনের চিহ্ন ধারণ করে কালো হয়ে আছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের মতো করে তাদের করিডরে কাঠ ও বোর্ড দিয়ে ইন্টেরিয়র করেছে। ফলে আগুন দ্রুত পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকক্ষণ আগুন জ্বলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী বাইরে বের হওয়ার পর আগুন লাগার বিষয়টি বোঝা যায়। আগুন নেভাতে কেন এত সময় লাগল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেক কর্মকর্তা।
বিকেলে সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার যে অবস্থা, তাতে তাঁরা কেউই নিরাপদ নন।
সচিবালয়ের প্রতিটি স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায়। ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার পর থেকে ওই ভবনের সব সিসি ক্যামেরা অচল হয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যার দিকে সিসি ক্যামেরা সচল করতে আলাদা কেব্ল স্থাপনের কাজ চলছিল।
সচিবালয়ে বিভিন্ন ভবনের যেসব ফ্লোরে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবদের দপ্তর, সেখানে ফ্লোরের এক পাশে মন্ত্রী এবং আরেক পাশে সচিবের দপ্তর। বাইরে থেকে দেখলে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবের দপ্তরেই শুধু আগুন লেগেছে বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে পুড়েছে পুরো ফ্লোর।
বিকেল ৫টার দিকেও পোড়া ফ্লোরগুলো থেকে উৎকট গন্ধ আসছিল। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানি বিকেলেও ভবনের বিভিন্ন স্থান দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলোয় যেসব কর্মকর্তার দপ্তর, তাঁরা সচিবালয়ে ঢুকে আক্ষেপ করেন। নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও পুড়ে যাওয়ায় অনেকের মন খারাপ ছিল। একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নথির সঙ্গে কক্ষে থাকা তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসের সবই পুড়ে গেছে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, অফিসের কম্পিউটারে তাঁর ব্যক্তিগত ও খুব প্রয়োজনীয় ডেটা ছিল, সবই শেষ।
গতকাল সচিবালয়ের চিত্র ছিল একেবারে অচেনা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টার মধ্যে সচিবালয়ের সামনে আসার আগেই প্রবেশের সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয়ের ১ ও ২ নম্বর ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুধু ৫ নম্বর ফটক খুলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। ঢোকার পর অনেকে ৭ নম্বর ভবনের সামনে ভিড় করেন। কোনো গাড়ি সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
আগুনের কারণে ৭ নম্বর ভবন বিদ্যুৎহীন হওয়ার জেরে আরও কয়েকটি ভবনে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় সেসব ভবনে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়।
কাজ না থাকায় বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সময় কাটান। বেলা ১টার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ নম্বর ফটক দিয়ে সচিবালয় থেকে বের হতে থাকেন। অফিস ছুটির নির্ধারিত সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করেছেন।
সচিবালয়ে কোনো সাংবাদিক ও টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশ্য কড়াকড়ি শুরুর আগে কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মো. হামিদুর রহমান খান রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৭ নম্বর ভবনে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যালয় রয়েছে, আগামী রোববার থেকে সেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়ের করা বিকল্প ব্যবস্থায় অফিস করবেন। এখন ভবনটি নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে রয়েছে। সেখানে প্রবেশের অনুমতি পেলে ভবনটি আর ব্যবহার উপযোগী কি না, তা পরীক্ষা করা হবে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য তাঁরা সচিবালয়ে খালি জায়গা খুঁজছেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ভবনটি পরিদর্শন করেন। আসিফ মাহমুদ এ সময় সাখাওয়াত হোসেনকে বলেন, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।’ সাখাওয়াত হোসেন তাঁকে সান্ত্বনা দেন।
ঘটনাটি নাশকতা কি না, পরিদর্শনের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তের আগে এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কী হয়েছে, তা আমরা দেখব। পুরোটা তল্লাশির পর কিছু পাওয়া যায় কি না জানাব।’
৫ আগস্টের পর পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় তদন্ত হলে পেছনের কারণ জানা যাবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গতকাল পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। উপদেষ্টা পরিষদের গঠন করা উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরাও রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডকে দেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলে অভিহিত করেছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, বড়দিনের ছুটির দিন রাতে জনমানবহীন অবস্থায় সংঘটিত ঘটনাটি সুপরিকল্পিত বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে প্রতীয়মান হয়েছে। কারও কারও মতে এরূপ নাশকতামূলক কাজের পেছনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসরেরা জড়িত থাকতে পারে। তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় ঘটনাটি ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কী কী নথি পুড়েছে
আগুনে ওই চার ফ্লোরের কাগজের সব নথিই পুড়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এখন ই-নথিতে কাজ হয়। ফলে কম্পিউটার পুড়ে গেলেও এসব নথি সার্ভারে রয়েছে। তবে ই-নথি শুরুর আগে ম্যানুয়ালি যেসব কাজ হয়েছে, সেসব তথ্য-উপাত্ত পুড়েছে। সেগুলো আর পাওয়া যাবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ কী পরিমাণ নথি সেসব ফ্লোরে ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি হয়েছিল, সেগুলোর মূল কপিও পুড়ে গেছে। কিছু কিছু নকশাও পুড়ে গেছে।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথি কার্যক্রম অনলাইনে থাকায় আমরা সেগুলো উদ্ধার করতে পারব। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের পুরোটাই অ্যানালগভাবে হয়। তাই যে শাখাগুলোর নথি পুড়েছে, সেগুলোর কতটা উদ্ধার করা যাবে, তা নিরূপণে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একটা কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করে প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা
আগুনের ঘটনায় বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে জরুরি সভা করে উপদেষ্টা পরিষদ। পরে সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জরুরি বৈঠকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘটনাটি সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ, এটা আমাদের সবার নিরাপত্তার বিষয় এবং এখানে রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল থাকে।’
আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘আগুন আরও আগে নেভানো যেত কি না, আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়েছে কি না, কমিটির প্রতিবেদন না পেলে আমরা এগুলোর উত্তর দিতে পারব না। এ ঘটনার অবশ্যই একটা সুষ্ঠু এবং বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য থাকলে সরকার ব্যবস্থা নিত। আগুনের উৎসের বিষয়ে তদন্ত কমিটিই সঠিক বলতে পারবে। প্রাথমিক তথ্যের বিষয়টি সবাই জেনে গেছেন।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য একজন করে এসপি ও এএসপি এবং ৫৬০ জনের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
তদন্তে যত কমিটি
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান, বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর, অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত ও ইয়াসির আরাফাতকে সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। তবে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের পর এটি বাতিল করা হয়।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। গতকাল শ্রম মন্ত্রণালয় দুটি, স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ একটি কমিটি করেছে।

গভীর রাতের আগুনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে পানি ছিটানোর জন্য পাইপ লাগাতে গিয়ে সড়কে ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন সোয়ানুর জামান নয়ন নামের ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। তবে ভয়াবহ এই আগুনের কারণ রহস্যঘেরা; যার কিনারা গতকাল রাত পর্যন্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ এটিকে নাশকতা বলেও অভিযোগ করেছেন। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে কারও দিকে ইঙ্গিত করেননি কেউ। ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকেও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলো দেখেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, আগুনে নয়তলাবিশিষ্ট ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা পুড়ে গেছে। এসব তলায় কিছুই অক্ষত নেই। কোথাও কোথাও দেয়ালের পলেস্তারা, সিঁড়ির ঢালাই খসে পড়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে গত বুধবার সাধারণ ছুটি থাকায় সচিবালয়ও বন্ধ ছিল। প্রশাসনের এই প্রাণকেন্দ্র সুরক্ষিত। বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পায়। দ্রুত ছয়টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে আরও ১৩টি ইউনিট যোগ দেয়। কিন্তু আগুন একপর্যায়ে ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে নবম তলায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে গতকাল সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুড়ে যাওয়া ফ্লোরগুলোয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আংশিক কার্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পুরো কার্যালয় রয়েছে। তবে ভবনটির পঞ্চম তলা থেকে নিচের দিকে আগুন ছড়ায়নি।
আগুনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সবকিছু পুড়ে গেছে। এই মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের কার্যালয় বনানীর সেতু ভবনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ।
সকাল থেকে সচিবালয়ে ঘুরে দেখা যায়, ৭ নম্বর ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরো। ভবনের দক্ষিণ পাশে কয়েকটি কবুতর মরে পড়ে আছে। আটতলায় একটি মৃত কুকুর পাওয়া গেছে। ভবনের চারটি প্রবেশপথে পাহারায় রয়েছে পুলিশ। চারজন উপদেষ্টা ছাড়া কাউকেই ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে ভবনের বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে চারটি ফ্লোর পুরো পুড়ে গেছে। শুধু তিনটি সিঁড়ির স্থান দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার কারণে ওই অংশগুলো আগুনের চিহ্ন ধারণ করে কালো হয়ে আছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের মতো করে তাদের করিডরে কাঠ ও বোর্ড দিয়ে ইন্টেরিয়র করেছে। ফলে আগুন দ্রুত পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকক্ষণ আগুন জ্বলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী বাইরে বের হওয়ার পর আগুন লাগার বিষয়টি বোঝা যায়। আগুন নেভাতে কেন এত সময় লাগল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেক কর্মকর্তা।
বিকেলে সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার যে অবস্থা, তাতে তাঁরা কেউই নিরাপদ নন।
সচিবালয়ের প্রতিটি স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায়। ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার পর থেকে ওই ভবনের সব সিসি ক্যামেরা অচল হয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যার দিকে সিসি ক্যামেরা সচল করতে আলাদা কেব্ল স্থাপনের কাজ চলছিল।
সচিবালয়ে বিভিন্ন ভবনের যেসব ফ্লোরে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবদের দপ্তর, সেখানে ফ্লোরের এক পাশে মন্ত্রী এবং আরেক পাশে সচিবের দপ্তর। বাইরে থেকে দেখলে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবের দপ্তরেই শুধু আগুন লেগেছে বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে পুড়েছে পুরো ফ্লোর।
বিকেল ৫টার দিকেও পোড়া ফ্লোরগুলো থেকে উৎকট গন্ধ আসছিল। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানি বিকেলেও ভবনের বিভিন্ন স্থান দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলোয় যেসব কর্মকর্তার দপ্তর, তাঁরা সচিবালয়ে ঢুকে আক্ষেপ করেন। নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও পুড়ে যাওয়ায় অনেকের মন খারাপ ছিল। একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নথির সঙ্গে কক্ষে থাকা তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসের সবই পুড়ে গেছে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, অফিসের কম্পিউটারে তাঁর ব্যক্তিগত ও খুব প্রয়োজনীয় ডেটা ছিল, সবই শেষ।
গতকাল সচিবালয়ের চিত্র ছিল একেবারে অচেনা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টার মধ্যে সচিবালয়ের সামনে আসার আগেই প্রবেশের সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয়ের ১ ও ২ নম্বর ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুধু ৫ নম্বর ফটক খুলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। ঢোকার পর অনেকে ৭ নম্বর ভবনের সামনে ভিড় করেন। কোনো গাড়ি সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
আগুনের কারণে ৭ নম্বর ভবন বিদ্যুৎহীন হওয়ার জেরে আরও কয়েকটি ভবনে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় সেসব ভবনে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়।
কাজ না থাকায় বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সময় কাটান। বেলা ১টার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ নম্বর ফটক দিয়ে সচিবালয় থেকে বের হতে থাকেন। অফিস ছুটির নির্ধারিত সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করেছেন।
সচিবালয়ে কোনো সাংবাদিক ও টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশ্য কড়াকড়ি শুরুর আগে কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মো. হামিদুর রহমান খান রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৭ নম্বর ভবনে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যালয় রয়েছে, আগামী রোববার থেকে সেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়ের করা বিকল্প ব্যবস্থায় অফিস করবেন। এখন ভবনটি নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে রয়েছে। সেখানে প্রবেশের অনুমতি পেলে ভবনটি আর ব্যবহার উপযোগী কি না, তা পরীক্ষা করা হবে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য তাঁরা সচিবালয়ে খালি জায়গা খুঁজছেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ভবনটি পরিদর্শন করেন। আসিফ মাহমুদ এ সময় সাখাওয়াত হোসেনকে বলেন, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।’ সাখাওয়াত হোসেন তাঁকে সান্ত্বনা দেন।
ঘটনাটি নাশকতা কি না, পরিদর্শনের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তের আগে এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কী হয়েছে, তা আমরা দেখব। পুরোটা তল্লাশির পর কিছু পাওয়া যায় কি না জানাব।’
৫ আগস্টের পর পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় তদন্ত হলে পেছনের কারণ জানা যাবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গতকাল পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। উপদেষ্টা পরিষদের গঠন করা উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরাও রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডকে দেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলে অভিহিত করেছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, বড়দিনের ছুটির দিন রাতে জনমানবহীন অবস্থায় সংঘটিত ঘটনাটি সুপরিকল্পিত বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে প্রতীয়মান হয়েছে। কারও কারও মতে এরূপ নাশকতামূলক কাজের পেছনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসরেরা জড়িত থাকতে পারে। তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় ঘটনাটি ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কী কী নথি পুড়েছে
আগুনে ওই চার ফ্লোরের কাগজের সব নথিই পুড়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এখন ই-নথিতে কাজ হয়। ফলে কম্পিউটার পুড়ে গেলেও এসব নথি সার্ভারে রয়েছে। তবে ই-নথি শুরুর আগে ম্যানুয়ালি যেসব কাজ হয়েছে, সেসব তথ্য-উপাত্ত পুড়েছে। সেগুলো আর পাওয়া যাবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ কী পরিমাণ নথি সেসব ফ্লোরে ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি হয়েছিল, সেগুলোর মূল কপিও পুড়ে গেছে। কিছু কিছু নকশাও পুড়ে গেছে।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথি কার্যক্রম অনলাইনে থাকায় আমরা সেগুলো উদ্ধার করতে পারব। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের পুরোটাই অ্যানালগভাবে হয়। তাই যে শাখাগুলোর নথি পুড়েছে, সেগুলোর কতটা উদ্ধার করা যাবে, তা নিরূপণে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একটা কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করে প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা
আগুনের ঘটনায় বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে জরুরি সভা করে উপদেষ্টা পরিষদ। পরে সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জরুরি বৈঠকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘটনাটি সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ, এটা আমাদের সবার নিরাপত্তার বিষয় এবং এখানে রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল থাকে।’
আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘আগুন আরও আগে নেভানো যেত কি না, আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়েছে কি না, কমিটির প্রতিবেদন না পেলে আমরা এগুলোর উত্তর দিতে পারব না। এ ঘটনার অবশ্যই একটা সুষ্ঠু এবং বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য থাকলে সরকার ব্যবস্থা নিত। আগুনের উৎসের বিষয়ে তদন্ত কমিটিই সঠিক বলতে পারবে। প্রাথমিক তথ্যের বিষয়টি সবাই জেনে গেছেন।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য একজন করে এসপি ও এএসপি এবং ৫৬০ জনের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
তদন্তে যত কমিটি
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান, বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর, অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত ও ইয়াসির আরাফাতকে সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। তবে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের পর এটি বাতিল করা হয়।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। গতকাল শ্রম মন্ত্রণালয় দুটি, স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ একটি কমিটি করেছে।
� কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন
� পাঁচ মন্ত্রণালয়-বিভাগের নথিসহ সব পুড়ে ছাই
� উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক, তদন্ত কমিটি
� নাশকতার ইঙ্গিত, মুখ খুলতে চান না কেউ
� ট্রাকচাপায় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীর মৃত্যু
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গভীর রাতের আগুনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে পানি ছিটানোর জন্য পাইপ লাগাতে গিয়ে সড়কে ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন সোয়ানুর জামান নয়ন নামের ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। তবে ভয়াবহ এই আগুনের কারণ রহস্যঘেরা; যার কিনারা গতকাল রাত পর্যন্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ এটিকে নাশকতা বলেও অভিযোগ করেছেন। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে কারও দিকে ইঙ্গিত করেননি কেউ। ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকেও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলো দেখেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, আগুনে নয়তলাবিশিষ্ট ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা পুড়ে গেছে। এসব তলায় কিছুই অক্ষত নেই। কোথাও কোথাও দেয়ালের পলেস্তারা, সিঁড়ির ঢালাই খসে পড়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে গত বুধবার সাধারণ ছুটি থাকায় সচিবালয়ও বন্ধ ছিল। প্রশাসনের এই প্রাণকেন্দ্র সুরক্ষিত। বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পায়। দ্রুত ছয়টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে আরও ১৩টি ইউনিট যোগ দেয়। কিন্তু আগুন একপর্যায়ে ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে নবম তলায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে গতকাল সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুড়ে যাওয়া ফ্লোরগুলোয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আংশিক কার্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পুরো কার্যালয় রয়েছে। তবে ভবনটির পঞ্চম তলা থেকে নিচের দিকে আগুন ছড়ায়নি।
আগুনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সবকিছু পুড়ে গেছে। এই মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের কার্যালয় বনানীর সেতু ভবনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ।
সকাল থেকে সচিবালয়ে ঘুরে দেখা যায়, ৭ নম্বর ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরো। ভবনের দক্ষিণ পাশে কয়েকটি কবুতর মরে পড়ে আছে। আটতলায় একটি মৃত কুকুর পাওয়া গেছে। ভবনের চারটি প্রবেশপথে পাহারায় রয়েছে পুলিশ। চারজন উপদেষ্টা ছাড়া কাউকেই ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে ভবনের বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে চারটি ফ্লোর পুরো পুড়ে গেছে। শুধু তিনটি সিঁড়ির স্থান দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার কারণে ওই অংশগুলো আগুনের চিহ্ন ধারণ করে কালো হয়ে আছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের মতো করে তাদের করিডরে কাঠ ও বোর্ড দিয়ে ইন্টেরিয়র করেছে। ফলে আগুন দ্রুত পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকক্ষণ আগুন জ্বলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী বাইরে বের হওয়ার পর আগুন লাগার বিষয়টি বোঝা যায়। আগুন নেভাতে কেন এত সময় লাগল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেক কর্মকর্তা।
বিকেলে সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার যে অবস্থা, তাতে তাঁরা কেউই নিরাপদ নন।
সচিবালয়ের প্রতিটি স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায়। ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার পর থেকে ওই ভবনের সব সিসি ক্যামেরা অচল হয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যার দিকে সিসি ক্যামেরা সচল করতে আলাদা কেব্ল স্থাপনের কাজ চলছিল।
সচিবালয়ে বিভিন্ন ভবনের যেসব ফ্লোরে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবদের দপ্তর, সেখানে ফ্লোরের এক পাশে মন্ত্রী এবং আরেক পাশে সচিবের দপ্তর। বাইরে থেকে দেখলে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবের দপ্তরেই শুধু আগুন লেগেছে বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে পুড়েছে পুরো ফ্লোর।
বিকেল ৫টার দিকেও পোড়া ফ্লোরগুলো থেকে উৎকট গন্ধ আসছিল। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানি বিকেলেও ভবনের বিভিন্ন স্থান দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলোয় যেসব কর্মকর্তার দপ্তর, তাঁরা সচিবালয়ে ঢুকে আক্ষেপ করেন। নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও পুড়ে যাওয়ায় অনেকের মন খারাপ ছিল। একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নথির সঙ্গে কক্ষে থাকা তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসের সবই পুড়ে গেছে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, অফিসের কম্পিউটারে তাঁর ব্যক্তিগত ও খুব প্রয়োজনীয় ডেটা ছিল, সবই শেষ।
গতকাল সচিবালয়ের চিত্র ছিল একেবারে অচেনা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টার মধ্যে সচিবালয়ের সামনে আসার আগেই প্রবেশের সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয়ের ১ ও ২ নম্বর ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুধু ৫ নম্বর ফটক খুলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। ঢোকার পর অনেকে ৭ নম্বর ভবনের সামনে ভিড় করেন। কোনো গাড়ি সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
আগুনের কারণে ৭ নম্বর ভবন বিদ্যুৎহীন হওয়ার জেরে আরও কয়েকটি ভবনে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় সেসব ভবনে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়।
কাজ না থাকায় বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সময় কাটান। বেলা ১টার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ নম্বর ফটক দিয়ে সচিবালয় থেকে বের হতে থাকেন। অফিস ছুটির নির্ধারিত সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করেছেন।
সচিবালয়ে কোনো সাংবাদিক ও টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশ্য কড়াকড়ি শুরুর আগে কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মো. হামিদুর রহমান খান রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৭ নম্বর ভবনে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যালয় রয়েছে, আগামী রোববার থেকে সেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়ের করা বিকল্প ব্যবস্থায় অফিস করবেন। এখন ভবনটি নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে রয়েছে। সেখানে প্রবেশের অনুমতি পেলে ভবনটি আর ব্যবহার উপযোগী কি না, তা পরীক্ষা করা হবে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য তাঁরা সচিবালয়ে খালি জায়গা খুঁজছেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ভবনটি পরিদর্শন করেন। আসিফ মাহমুদ এ সময় সাখাওয়াত হোসেনকে বলেন, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।’ সাখাওয়াত হোসেন তাঁকে সান্ত্বনা দেন।
ঘটনাটি নাশকতা কি না, পরিদর্শনের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তের আগে এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কী হয়েছে, তা আমরা দেখব। পুরোটা তল্লাশির পর কিছু পাওয়া যায় কি না জানাব।’
৫ আগস্টের পর পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় তদন্ত হলে পেছনের কারণ জানা যাবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গতকাল পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। উপদেষ্টা পরিষদের গঠন করা উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরাও রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডকে দেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলে অভিহিত করেছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, বড়দিনের ছুটির দিন রাতে জনমানবহীন অবস্থায় সংঘটিত ঘটনাটি সুপরিকল্পিত বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে প্রতীয়মান হয়েছে। কারও কারও মতে এরূপ নাশকতামূলক কাজের পেছনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসরেরা জড়িত থাকতে পারে। তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় ঘটনাটি ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কী কী নথি পুড়েছে
আগুনে ওই চার ফ্লোরের কাগজের সব নথিই পুড়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এখন ই-নথিতে কাজ হয়। ফলে কম্পিউটার পুড়ে গেলেও এসব নথি সার্ভারে রয়েছে। তবে ই-নথি শুরুর আগে ম্যানুয়ালি যেসব কাজ হয়েছে, সেসব তথ্য-উপাত্ত পুড়েছে। সেগুলো আর পাওয়া যাবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ কী পরিমাণ নথি সেসব ফ্লোরে ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি হয়েছিল, সেগুলোর মূল কপিও পুড়ে গেছে। কিছু কিছু নকশাও পুড়ে গেছে।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথি কার্যক্রম অনলাইনে থাকায় আমরা সেগুলো উদ্ধার করতে পারব। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের পুরোটাই অ্যানালগভাবে হয়। তাই যে শাখাগুলোর নথি পুড়েছে, সেগুলোর কতটা উদ্ধার করা যাবে, তা নিরূপণে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একটা কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করে প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা
আগুনের ঘটনায় বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে জরুরি সভা করে উপদেষ্টা পরিষদ। পরে সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জরুরি বৈঠকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘটনাটি সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ, এটা আমাদের সবার নিরাপত্তার বিষয় এবং এখানে রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল থাকে।’
আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘আগুন আরও আগে নেভানো যেত কি না, আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়েছে কি না, কমিটির প্রতিবেদন না পেলে আমরা এগুলোর উত্তর দিতে পারব না। এ ঘটনার অবশ্যই একটা সুষ্ঠু এবং বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য থাকলে সরকার ব্যবস্থা নিত। আগুনের উৎসের বিষয়ে তদন্ত কমিটিই সঠিক বলতে পারবে। প্রাথমিক তথ্যের বিষয়টি সবাই জেনে গেছেন।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য একজন করে এসপি ও এএসপি এবং ৫৬০ জনের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
তদন্তে যত কমিটি
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান, বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর, অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত ও ইয়াসির আরাফাতকে সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। তবে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের পর এটি বাতিল করা হয়।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। গতকাল শ্রম মন্ত্রণালয় দুটি, স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ একটি কমিটি করেছে।

গভীর রাতের আগুনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে পানি ছিটানোর জন্য পাইপ লাগাতে গিয়ে সড়কে ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন সোয়ানুর জামান নয়ন নামের ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। তবে ভয়াবহ এই আগুনের কারণ রহস্যঘেরা; যার কিনারা গতকাল রাত পর্যন্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ এটিকে নাশকতা বলেও অভিযোগ করেছেন। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে কারও দিকে ইঙ্গিত করেননি কেউ। ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকেও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলো দেখেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, আগুনে নয়তলাবিশিষ্ট ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা পুড়ে গেছে। এসব তলায় কিছুই অক্ষত নেই। কোথাও কোথাও দেয়ালের পলেস্তারা, সিঁড়ির ঢালাই খসে পড়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে গত বুধবার সাধারণ ছুটি থাকায় সচিবালয়ও বন্ধ ছিল। প্রশাসনের এই প্রাণকেন্দ্র সুরক্ষিত। বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পায়। দ্রুত ছয়টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে আরও ১৩টি ইউনিট যোগ দেয়। কিন্তু আগুন একপর্যায়ে ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে নবম তলায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে গতকাল সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুড়ে যাওয়া ফ্লোরগুলোয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আংশিক কার্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পুরো কার্যালয় রয়েছে। তবে ভবনটির পঞ্চম তলা থেকে নিচের দিকে আগুন ছড়ায়নি।
আগুনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সবকিছু পুড়ে গেছে। এই মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের কার্যালয় বনানীর সেতু ভবনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ।
সকাল থেকে সচিবালয়ে ঘুরে দেখা যায়, ৭ নম্বর ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরো। ভবনের দক্ষিণ পাশে কয়েকটি কবুতর মরে পড়ে আছে। আটতলায় একটি মৃত কুকুর পাওয়া গেছে। ভবনের চারটি প্রবেশপথে পাহারায় রয়েছে পুলিশ। চারজন উপদেষ্টা ছাড়া কাউকেই ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে ভবনের বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে চারটি ফ্লোর পুরো পুড়ে গেছে। শুধু তিনটি সিঁড়ির স্থান দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার কারণে ওই অংশগুলো আগুনের চিহ্ন ধারণ করে কালো হয়ে আছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের মতো করে তাদের করিডরে কাঠ ও বোর্ড দিয়ে ইন্টেরিয়র করেছে। ফলে আগুন দ্রুত পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকক্ষণ আগুন জ্বলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী বাইরে বের হওয়ার পর আগুন লাগার বিষয়টি বোঝা যায়। আগুন নেভাতে কেন এত সময় লাগল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেক কর্মকর্তা।
বিকেলে সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার যে অবস্থা, তাতে তাঁরা কেউই নিরাপদ নন।
সচিবালয়ের প্রতিটি স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায়। ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার পর থেকে ওই ভবনের সব সিসি ক্যামেরা অচল হয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যার দিকে সিসি ক্যামেরা সচল করতে আলাদা কেব্ল স্থাপনের কাজ চলছিল।
সচিবালয়ে বিভিন্ন ভবনের যেসব ফ্লোরে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবদের দপ্তর, সেখানে ফ্লোরের এক পাশে মন্ত্রী এবং আরেক পাশে সচিবের দপ্তর। বাইরে থেকে দেখলে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবের দপ্তরেই শুধু আগুন লেগেছে বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে পুড়েছে পুরো ফ্লোর।
বিকেল ৫টার দিকেও পোড়া ফ্লোরগুলো থেকে উৎকট গন্ধ আসছিল। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানি বিকেলেও ভবনের বিভিন্ন স্থান দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলোয় যেসব কর্মকর্তার দপ্তর, তাঁরা সচিবালয়ে ঢুকে আক্ষেপ করেন। নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও পুড়ে যাওয়ায় অনেকের মন খারাপ ছিল। একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নথির সঙ্গে কক্ষে থাকা তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসের সবই পুড়ে গেছে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, অফিসের কম্পিউটারে তাঁর ব্যক্তিগত ও খুব প্রয়োজনীয় ডেটা ছিল, সবই শেষ।
গতকাল সচিবালয়ের চিত্র ছিল একেবারে অচেনা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টার মধ্যে সচিবালয়ের সামনে আসার আগেই প্রবেশের সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয়ের ১ ও ২ নম্বর ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুধু ৫ নম্বর ফটক খুলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। ঢোকার পর অনেকে ৭ নম্বর ভবনের সামনে ভিড় করেন। কোনো গাড়ি সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
আগুনের কারণে ৭ নম্বর ভবন বিদ্যুৎহীন হওয়ার জেরে আরও কয়েকটি ভবনে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় সেসব ভবনে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়।
কাজ না থাকায় বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সময় কাটান। বেলা ১টার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ নম্বর ফটক দিয়ে সচিবালয় থেকে বের হতে থাকেন। অফিস ছুটির নির্ধারিত সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করেছেন।
সচিবালয়ে কোনো সাংবাদিক ও টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশ্য কড়াকড়ি শুরুর আগে কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মো. হামিদুর রহমান খান রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৭ নম্বর ভবনে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যালয় রয়েছে, আগামী রোববার থেকে সেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়ের করা বিকল্প ব্যবস্থায় অফিস করবেন। এখন ভবনটি নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে রয়েছে। সেখানে প্রবেশের অনুমতি পেলে ভবনটি আর ব্যবহার উপযোগী কি না, তা পরীক্ষা করা হবে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য তাঁরা সচিবালয়ে খালি জায়গা খুঁজছেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ভবনটি পরিদর্শন করেন। আসিফ মাহমুদ এ সময় সাখাওয়াত হোসেনকে বলেন, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।’ সাখাওয়াত হোসেন তাঁকে সান্ত্বনা দেন।
ঘটনাটি নাশকতা কি না, পরিদর্শনের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তের আগে এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কী হয়েছে, তা আমরা দেখব। পুরোটা তল্লাশির পর কিছু পাওয়া যায় কি না জানাব।’
৫ আগস্টের পর পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় তদন্ত হলে পেছনের কারণ জানা যাবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গতকাল পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। উপদেষ্টা পরিষদের গঠন করা উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরাও রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডকে দেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলে অভিহিত করেছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, বড়দিনের ছুটির দিন রাতে জনমানবহীন অবস্থায় সংঘটিত ঘটনাটি সুপরিকল্পিত বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে প্রতীয়মান হয়েছে। কারও কারও মতে এরূপ নাশকতামূলক কাজের পেছনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসরেরা জড়িত থাকতে পারে। তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় ঘটনাটি ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কী কী নথি পুড়েছে
আগুনে ওই চার ফ্লোরের কাগজের সব নথিই পুড়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এখন ই-নথিতে কাজ হয়। ফলে কম্পিউটার পুড়ে গেলেও এসব নথি সার্ভারে রয়েছে। তবে ই-নথি শুরুর আগে ম্যানুয়ালি যেসব কাজ হয়েছে, সেসব তথ্য-উপাত্ত পুড়েছে। সেগুলো আর পাওয়া যাবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ কী পরিমাণ নথি সেসব ফ্লোরে ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি হয়েছিল, সেগুলোর মূল কপিও পুড়ে গেছে। কিছু কিছু নকশাও পুড়ে গেছে।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথি কার্যক্রম অনলাইনে থাকায় আমরা সেগুলো উদ্ধার করতে পারব। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের পুরোটাই অ্যানালগভাবে হয়। তাই যে শাখাগুলোর নথি পুড়েছে, সেগুলোর কতটা উদ্ধার করা যাবে, তা নিরূপণে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একটা কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করে প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা
আগুনের ঘটনায় বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে জরুরি সভা করে উপদেষ্টা পরিষদ। পরে সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জরুরি বৈঠকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘটনাটি সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ, এটা আমাদের সবার নিরাপত্তার বিষয় এবং এখানে রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল থাকে।’
আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘আগুন আরও আগে নেভানো যেত কি না, আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়েছে কি না, কমিটির প্রতিবেদন না পেলে আমরা এগুলোর উত্তর দিতে পারব না। এ ঘটনার অবশ্যই একটা সুষ্ঠু এবং বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য থাকলে সরকার ব্যবস্থা নিত। আগুনের উৎসের বিষয়ে তদন্ত কমিটিই সঠিক বলতে পারবে। প্রাথমিক তথ্যের বিষয়টি সবাই জেনে গেছেন।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য একজন করে এসপি ও এএসপি এবং ৫৬০ জনের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
তদন্তে যত কমিটি
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান, বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর, অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত ও ইয়াসির আরাফাতকে সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। তবে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের পর এটি বাতিল করা হয়।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। গতকাল শ্রম মন্ত্রণালয় দুটি, স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ একটি কমিটি করেছে।

জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্য
৮ ঘণ্টা আগে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক
১২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন।
ঐকমত্য কমিশন আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশ জমা দেবে। আগামী সংসদ সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো অনুমোদন না করলে কী হবে, তা নিয়ে কমিশন একটি বিকল্প প্রস্তাবও সুপারিশ করবে। সেখানে থাকবে বিশেষ আদেশ জারির পর সংবিধানসংক্রান্ত সব প্রস্তাব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিল তৈরি, পরে বিলের প্রশ্নে গণভোট এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের মেয়াদে বাস্তবায়িত না হলে বিলে থাকা বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
গতকাল সোমবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য কমিশনের প্রস্তুত করা সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তুত করা সুপারিশের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিশনের প্রধানকে সুপারিশগুলো আমরা অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।’
কমিশন সূত্র জানায়, চূড়ান্ত সুপারিশ অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। এর অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যে সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে। আদেশ জারির পর এর কিছু অংশ তাৎক্ষণিক এবং কিছু কিছু বিষয় পরে কার্যকর হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে, তা উল্লেখ থাকবে। জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আদেশের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে। তবে সেখানে কোনো দলের ভিন্নমতের বিষয় উল্লেখ থাকবে না। শুধু কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব/সিদ্ধান্তের উল্লেখ থাকবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করা হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। এগুলোর মধ্যে ৪৭টি প্রস্তাব সংবিধানসম্পর্কিত। মূলত এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে। এই প্রস্তাবগুলোর বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো না কোনো দলের ভিন্নমত আছে। এগুলোর মধ্যে ৭টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে বিএনপির।
কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে গণভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) উল্লেখ থাকবে না। সনদের ওপরই গণভোট হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই তা বাস্তবায়িত হবে। ‘গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদে পাস হলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আইনসভার উচ্চকক্ষ গঠন করার সুপারিশ করা হতে পারে’; যা আদেশে আলাদা করে উল্লেখ থাকতে পারে।
সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সনদের সংবিধানসম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো সমাধানে বাধ্যবাধকতা রাখতে বিকল্প আরেকটি প্রস্তাব কমিশন দেবে বলে সূত্র জানায়। বিকল্প সুপারিশে বলা হতে পারে, সংবিধানসংক্রান্ত সব সুপারিশ বিল আকারে আগামী চার মাসের মধ্যে সরকারকে তৈরি করতে বলা হবে। সে ক্ষেত্রে গণভোটে বিলটি দেওয়া হবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদ আলোচনার মাধ্যমে বিলের শব্দ বা বাক্য পরিবর্তন করতে পারবে, তবে স্পিরিট বা মূলভাব পরিবর্তন করা যাবে না। তবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে বিষয়গুলোর সমাধান না হলে ২৭১তম দিনে বিলগুলো সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে গণভোটে প্রশ্ন হতে পারে—জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না এবং গণভোট বিলের প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না।
গণভোটের সময় এবং আদেশ জারির সিদ্ধান্ত দেবে সরকার
গণভোটে জুলাই সনদের বৈধতা নেওয়ার প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতবিরোধ আছে। কমিশন সূত্র জানায়, গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে—এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে জারি করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। বিএনপি আদেশ জারির পক্ষে নয়। এই অবস্থায় আদেশটি রাষ্ট্রপতি নাকি প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারও সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে কমিশন।

জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন।
ঐকমত্য কমিশন আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশ জমা দেবে। আগামী সংসদ সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো অনুমোদন না করলে কী হবে, তা নিয়ে কমিশন একটি বিকল্প প্রস্তাবও সুপারিশ করবে। সেখানে থাকবে বিশেষ আদেশ জারির পর সংবিধানসংক্রান্ত সব প্রস্তাব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিল তৈরি, পরে বিলের প্রশ্নে গণভোট এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের মেয়াদে বাস্তবায়িত না হলে বিলে থাকা বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
গতকাল সোমবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য কমিশনের প্রস্তুত করা সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তুত করা সুপারিশের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিশনের প্রধানকে সুপারিশগুলো আমরা অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।’
কমিশন সূত্র জানায়, চূড়ান্ত সুপারিশ অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। এর অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যে সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে। আদেশ জারির পর এর কিছু অংশ তাৎক্ষণিক এবং কিছু কিছু বিষয় পরে কার্যকর হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে, তা উল্লেখ থাকবে। জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আদেশের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে। তবে সেখানে কোনো দলের ভিন্নমতের বিষয় উল্লেখ থাকবে না। শুধু কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব/সিদ্ধান্তের উল্লেখ থাকবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করা হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। এগুলোর মধ্যে ৪৭টি প্রস্তাব সংবিধানসম্পর্কিত। মূলত এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে। এই প্রস্তাবগুলোর বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো না কোনো দলের ভিন্নমত আছে। এগুলোর মধ্যে ৭টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে বিএনপির।
কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে গণভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) উল্লেখ থাকবে না। সনদের ওপরই গণভোট হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই তা বাস্তবায়িত হবে। ‘গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদে পাস হলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আইনসভার উচ্চকক্ষ গঠন করার সুপারিশ করা হতে পারে’; যা আদেশে আলাদা করে উল্লেখ থাকতে পারে।
সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সনদের সংবিধানসম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো সমাধানে বাধ্যবাধকতা রাখতে বিকল্প আরেকটি প্রস্তাব কমিশন দেবে বলে সূত্র জানায়। বিকল্প সুপারিশে বলা হতে পারে, সংবিধানসংক্রান্ত সব সুপারিশ বিল আকারে আগামী চার মাসের মধ্যে সরকারকে তৈরি করতে বলা হবে। সে ক্ষেত্রে গণভোটে বিলটি দেওয়া হবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদ আলোচনার মাধ্যমে বিলের শব্দ বা বাক্য পরিবর্তন করতে পারবে, তবে স্পিরিট বা মূলভাব পরিবর্তন করা যাবে না। তবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে বিষয়গুলোর সমাধান না হলে ২৭১তম দিনে বিলগুলো সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে গণভোটে প্রশ্ন হতে পারে—জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না এবং গণভোট বিলের প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না।
গণভোটের সময় এবং আদেশ জারির সিদ্ধান্ত দেবে সরকার
গণভোটে জুলাই সনদের বৈধতা নেওয়ার প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতবিরোধ আছে। কমিশন সূত্র জানায়, গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে—এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে জারি করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। বিএনপি আদেশ জারির পক্ষে নয়। এই অবস্থায় আদেশটি রাষ্ট্রপতি নাকি প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারও সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে কমিশন।

গভীর রাতের আগুনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক
১২ ঘণ্টা আগেবিভিন্ন মামলায় পরোয়ানা
আমানুর রহমান রনি, ঢাকা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়।
পলাতক এই ২৪ জনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার সূত্র বলছে, ওই ২৪ জনের বিরুদ্ধে এখনো ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি না হওয়ার কারণ জানা যায়নি। আবেদন পেলে ইন্টারপোল তাদের নিজস্ব নিয়মে আসামির সব নথি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে নোটিশ জারি করে। সাধারণত আবেদনের তিন সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ এর আগে ইন্টারপোলের কাছ থেকে জবাব পেয়েছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখনো তারা কিছু ক্ষেত্রে রেড নোটিশ জারি করেনি। হয়তো যাচাই-বাছাই করছে, এটা তাদের প্রক্রিয়া। তারা রেড নোটিশ জারি না করলেও বিচার থেমে থাকবে না। বিচার আসামির অনুপস্থিতিতেই হবে।
তিনি বলেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনতে সব প্রক্রিয়াও চালু রাখতে হবে। ইন্টারপোল এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের কূটনৈতিক ধারাও অব্যাহত রাখতে হবে।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনাসহ পলাতক ২৮ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ইন্টারপোলে আবেদন করেছে। এখন পর্যন্ত ইন্টারপোল তাঁদের মধ্যে মাত্র চারজনের নামে রেড নোটিশ জারি করেছে। তাঁরা হলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলার আসামি আরিফ সরকার, মহসিন মিয়া ও আওলাদ হোসেন। মহসিন মিয়াকে গত জুলাইয়ে দুবাই থেকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে আবেদন করা হলেও ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেডের বাংলাদেশের তালিকায় বেনজীর আহমেদের ছবি ও নাম এখনো উঠানো হয়নি।
যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল এখনো রেড নোটিশ জারি করেনি তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম ও তাঁর তিন ভাই এবং কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি), ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।
চলতি বছরের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দেশের কয়েকটি আদালতের নির্দেশে তাঁদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আবেদন করলেই ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে না। সংস্থাটি তাদের নিয়মে আসামির সব নথি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়। এনসিবি সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারপোলের কাছ থেকে জবাব পায়। এত দীর্ঘ সময় ঝুলিয়ে রাখে না। তিনি বলেন, আসামিরা কে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে ইন্টারপোল জানে, বাংলাদেশকে তথ্যও দিয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে রেড নোটিশের বিষয়ে সংস্থাটি এখনো কিছু জানায়নি।
ইন্টারপোলের সঙ্গে কাজ করা পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ইন্টারপোল রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে চায় না। বিভিন্ন দেশে সরকার পরিবর্তনের পর সাবেকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। দেশগুলো ইন্টারপোলের সহায়তা চায়। তাই এসব আবেদন ইন্টারপোল খুব সতর্কভাবে দেখে। ইন্টারপোল কোনো আবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায় না, নীরবতা পালন করে। যেসব আবেদনে তারা রেড নোটিশ জারি করে, সেগুলো দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে জানিয়ে দেয়।
এনসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ইন্টারপোল দুই ভাবে আবেদন মূল্যায়ন করে, জরুরি ও সাধারণ। কোনো দেশ জরুরি আবেদন করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয় সংস্থাটি। আর কম গুরুত্বপূর্ণ হলে ইন্টারপোলের ফ্রান্সের কমিটি সেটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় নেয়।
আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম শাহজাহান সাইফ বলেন, আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারপ্রক্রিয়া চলতে পারে। তবে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগও নিতে হবে।
ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট ৬ হাজার ৫১৭ জন ওয়ান্টেড ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ আছে, যার মধ্যে বাংলাদেশি ৬০ জন।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘ইন্টারপোল তাদের নিজস্ব আইনি কাঠামোর মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা নিয়মের মধ্যে থেকে তাদের কাছে আবেদন করেছি। তারা রেড নোটিশ জারি করবে কি না, এটা তাদের ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়।
পলাতক এই ২৪ জনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার সূত্র বলছে, ওই ২৪ জনের বিরুদ্ধে এখনো ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি না হওয়ার কারণ জানা যায়নি। আবেদন পেলে ইন্টারপোল তাদের নিজস্ব নিয়মে আসামির সব নথি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে নোটিশ জারি করে। সাধারণত আবেদনের তিন সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ এর আগে ইন্টারপোলের কাছ থেকে জবাব পেয়েছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখনো তারা কিছু ক্ষেত্রে রেড নোটিশ জারি করেনি। হয়তো যাচাই-বাছাই করছে, এটা তাদের প্রক্রিয়া। তারা রেড নোটিশ জারি না করলেও বিচার থেমে থাকবে না। বিচার আসামির অনুপস্থিতিতেই হবে।
তিনি বলেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনতে সব প্রক্রিয়াও চালু রাখতে হবে। ইন্টারপোল এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের কূটনৈতিক ধারাও অব্যাহত রাখতে হবে।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনাসহ পলাতক ২৮ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ইন্টারপোলে আবেদন করেছে। এখন পর্যন্ত ইন্টারপোল তাঁদের মধ্যে মাত্র চারজনের নামে রেড নোটিশ জারি করেছে। তাঁরা হলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলার আসামি আরিফ সরকার, মহসিন মিয়া ও আওলাদ হোসেন। মহসিন মিয়াকে গত জুলাইয়ে দুবাই থেকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে আবেদন করা হলেও ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেডের বাংলাদেশের তালিকায় বেনজীর আহমেদের ছবি ও নাম এখনো উঠানো হয়নি।
যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল এখনো রেড নোটিশ জারি করেনি তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম ও তাঁর তিন ভাই এবং কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি), ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।
চলতি বছরের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দেশের কয়েকটি আদালতের নির্দেশে তাঁদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আবেদন করলেই ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে না। সংস্থাটি তাদের নিয়মে আসামির সব নথি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়। এনসিবি সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারপোলের কাছ থেকে জবাব পায়। এত দীর্ঘ সময় ঝুলিয়ে রাখে না। তিনি বলেন, আসামিরা কে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে ইন্টারপোল জানে, বাংলাদেশকে তথ্যও দিয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে রেড নোটিশের বিষয়ে সংস্থাটি এখনো কিছু জানায়নি।
ইন্টারপোলের সঙ্গে কাজ করা পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ইন্টারপোল রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে চায় না। বিভিন্ন দেশে সরকার পরিবর্তনের পর সাবেকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। দেশগুলো ইন্টারপোলের সহায়তা চায়। তাই এসব আবেদন ইন্টারপোল খুব সতর্কভাবে দেখে। ইন্টারপোল কোনো আবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায় না, নীরবতা পালন করে। যেসব আবেদনে তারা রেড নোটিশ জারি করে, সেগুলো দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে জানিয়ে দেয়।
এনসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ইন্টারপোল দুই ভাবে আবেদন মূল্যায়ন করে, জরুরি ও সাধারণ। কোনো দেশ জরুরি আবেদন করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয় সংস্থাটি। আর কম গুরুত্বপূর্ণ হলে ইন্টারপোলের ফ্রান্সের কমিটি সেটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় নেয়।
আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম শাহজাহান সাইফ বলেন, আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারপ্রক্রিয়া চলতে পারে। তবে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগও নিতে হবে।
ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট ৬ হাজার ৫১৭ জন ওয়ান্টেড ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ আছে, যার মধ্যে বাংলাদেশি ৬০ জন।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘ইন্টারপোল তাদের নিজস্ব আইনি কাঠামোর মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা নিয়মের মধ্যে থেকে তাদের কাছে আবেদন করেছি। তারা রেড নোটিশ জারি করবে কি না, এটা তাদের ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’

গভীর রাতের আগুনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্য
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক
১২ ঘণ্টা আগেপবিত্র হজ পালন
আয়নাল হোসেন, ঢাকা

দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কোন দেশের কতজন হজ করতে পারবেন, তা নির্ধারণ করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। ওআইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ১ শতাংশ প্রতিবছর হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছেন। সে অনুযায়ী ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা পেয়ে আসছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নিবন্ধিত অনেকে ২০২০ সাল থেকে হজে যেতে পারেননি। করোনা অতিমারির ধাক্কা ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল। ২০২২ সালে হজে গিয়েছিলেন ৫৯ হাজার ৯০৯ জন। ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন, ২০২৪ সালে ৮৫ হাজার, ২০২৫ সালে ৮৭ হাজার ২০০ এবং আগামী বছরের (২০২৬ সালে) জন্য হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন ৭৩ হাজার ৪১৬ জন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে সরকারি হজ প্যাকেজ ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার থেকে ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ থেকে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০২৩ সালে শুধু এক প্যাকেজে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা ছিল।
২০২৪ সালে করা হয় ৫ লাখ ৭৮ হাজার থেকে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬৬ টাকা, ২০২৫ সালে করা হয় ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৭২০ থেকে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭০ টাকা এবং আগামী বছরের জন্য করা হয় ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ থেকে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।
এদিকে প্রতিবছরই সরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণার পরপরই বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকেরাও বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে আসছেন। তাঁরা বরাবরই উড়োজাহাজের ভাড়া কমানোর পক্ষে বলে আসছেন। তবে বর্তমানে সৌদি আরব অংশে সব ধরনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মোট খরচ বেড়েছে বলে তাঁরা জানান।
হজযাত্রী কোটা পূরণ হচ্ছে না কেন? জানতে চাইলে এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, অনেকেই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওমরাহ করছেন। এতে গ্রামগঞ্জের মানুষের ধারণা, তাঁদের হজ পালন হয়ে গেছে। এই কারণে অনেকে নিবন্ধন করার পরও তাঁদের টাকা ফেরত নিয়েছেন। গত বছর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার তিনজন বাসিন্দা হজ নিবন্ধন করার পরও হজে যাননি। পরে তাঁরা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওমরাহ পালন করে আসেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাওয়া হলে বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, উড়োজাহাজের ভাড়া অস্বাভাবিক বাড়া, সৌদি আরবে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়া, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা পরিশোধ করতে পারছে না, ব্যবসায় মন্দা ও এক বছর ধরে বিনিয়োগ প্রায় বন্ধের কারণে অনেকেই হজে যেতে পারছেন না। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে দেশে বিনিয়োগ স্থিতিশীল হবে এবং বেশি মানুষ হজে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশে হজযাত্রী কোটা পূরণ কেন হচ্ছে না, জানতে চাওয়া হয় ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের কাছে। তিনি তাঁর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দীকের মাধ্যমে জানান, সৌদি রোডম্যাপ অনুসারে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সূচি প্রায় দুই মাস এগিয়ে এসেছে। এর ফলে পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় অনেকে নিবন্ধন করতে পারেননি। ক্রমবর্ধমানহারে ওমরাহযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহযাত্রীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। এখন বছরে এ দেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ মুসলমান ওমরাহ পালন করে থাকেন। এবং কিছু ব্যাংকের তারল্যসংকটের কারণেও হজযাত্রী নিবন্ধন কমে থাকতে পারে।

দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কোন দেশের কতজন হজ করতে পারবেন, তা নির্ধারণ করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। ওআইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ১ শতাংশ প্রতিবছর হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছেন। সে অনুযায়ী ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা পেয়ে আসছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নিবন্ধিত অনেকে ২০২০ সাল থেকে হজে যেতে পারেননি। করোনা অতিমারির ধাক্কা ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল। ২০২২ সালে হজে গিয়েছিলেন ৫৯ হাজার ৯০৯ জন। ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন, ২০২৪ সালে ৮৫ হাজার, ২০২৫ সালে ৮৭ হাজার ২০০ এবং আগামী বছরের (২০২৬ সালে) জন্য হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন ৭৩ হাজার ৪১৬ জন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে সরকারি হজ প্যাকেজ ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার থেকে ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ থেকে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০২৩ সালে শুধু এক প্যাকেজে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা ছিল।
২০২৪ সালে করা হয় ৫ লাখ ৭৮ হাজার থেকে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬৬ টাকা, ২০২৫ সালে করা হয় ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৭২০ থেকে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭০ টাকা এবং আগামী বছরের জন্য করা হয় ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ থেকে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।
এদিকে প্রতিবছরই সরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণার পরপরই বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকেরাও বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে আসছেন। তাঁরা বরাবরই উড়োজাহাজের ভাড়া কমানোর পক্ষে বলে আসছেন। তবে বর্তমানে সৌদি আরব অংশে সব ধরনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মোট খরচ বেড়েছে বলে তাঁরা জানান।
হজযাত্রী কোটা পূরণ হচ্ছে না কেন? জানতে চাইলে এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, অনেকেই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওমরাহ করছেন। এতে গ্রামগঞ্জের মানুষের ধারণা, তাঁদের হজ পালন হয়ে গেছে। এই কারণে অনেকে নিবন্ধন করার পরও তাঁদের টাকা ফেরত নিয়েছেন। গত বছর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার তিনজন বাসিন্দা হজ নিবন্ধন করার পরও হজে যাননি। পরে তাঁরা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওমরাহ পালন করে আসেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাওয়া হলে বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, উড়োজাহাজের ভাড়া অস্বাভাবিক বাড়া, সৌদি আরবে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়া, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা পরিশোধ করতে পারছে না, ব্যবসায় মন্দা ও এক বছর ধরে বিনিয়োগ প্রায় বন্ধের কারণে অনেকেই হজে যেতে পারছেন না। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে দেশে বিনিয়োগ স্থিতিশীল হবে এবং বেশি মানুষ হজে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশে হজযাত্রী কোটা পূরণ কেন হচ্ছে না, জানতে চাওয়া হয় ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের কাছে। তিনি তাঁর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দীকের মাধ্যমে জানান, সৌদি রোডম্যাপ অনুসারে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সূচি প্রায় দুই মাস এগিয়ে এসেছে। এর ফলে পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় অনেকে নিবন্ধন করতে পারেননি। ক্রমবর্ধমানহারে ওমরাহযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহযাত্রীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। এখন বছরে এ দেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ মুসলমান ওমরাহ পালন করে থাকেন। এবং কিছু ব্যাংকের তারল্যসংকটের কারণেও হজযাত্রী নিবন্ধন কমে থাকতে পারে।

গভীর রাতের আগুনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্য
৮ ঘণ্টা আগে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক
১২ ঘণ্টা আগেদুই দশক পর জেইসি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আর পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন দেশটির জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম বিভাগ) মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সর্বশেষ জেইসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ দুই দশক পর আবার বৈঠক বসল, যা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন গতি এনেছে। বিশেষ করে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ উষ্ণ হতে শুরু করেছে।
সভা শেষে সাংবাদিকদের পাকিস্তানের পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ এখনো ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে, এর পরিমাণ বাড়ানো উচিত। আমরা বাংলাদেশ থেকে পাটসহ কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে চাই। ২০ বছর পর এই জেইসি বৈঠক হলো। একটি ইতিবাচক আলোচনার ধারা সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ সম্প্রসারণে কোথায় সম্ভাবনা আছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হবে।’
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আকাশ ও নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ আবার চালু, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি বৈঠকটিকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে উল্লেখ করেন।
বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জ্বালানি, উচ্চশিক্ষা, ব্যাংকিং, পর্যটন, ক্রীড়া ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। উভয় দেশই বন্দর ও লজিস্টিক সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় হ্রাস ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করে।
একই বৈঠকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পাকিস্তান হালাল অথরিটির (পিএইচএ) মধ্যে ‘হালাল বাণিজ্য সহযোগিতা’ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নূর এবং পাকিস্তানের পক্ষে ঢাকায় হাইকমিশনার ইমরান হায়দার।
বৈঠক শেষে উভয় দেশই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্বকে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে। সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী (দশম) জেইসি বৈঠক পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আর পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন দেশটির জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম বিভাগ) মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সর্বশেষ জেইসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ দুই দশক পর আবার বৈঠক বসল, যা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন গতি এনেছে। বিশেষ করে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ উষ্ণ হতে শুরু করেছে।
সভা শেষে সাংবাদিকদের পাকিস্তানের পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ এখনো ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে, এর পরিমাণ বাড়ানো উচিত। আমরা বাংলাদেশ থেকে পাটসহ কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে চাই। ২০ বছর পর এই জেইসি বৈঠক হলো। একটি ইতিবাচক আলোচনার ধারা সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ সম্প্রসারণে কোথায় সম্ভাবনা আছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হবে।’
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আকাশ ও নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ আবার চালু, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি বৈঠকটিকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে উল্লেখ করেন।
বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জ্বালানি, উচ্চশিক্ষা, ব্যাংকিং, পর্যটন, ক্রীড়া ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। উভয় দেশই বন্দর ও লজিস্টিক সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় হ্রাস ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করে।
একই বৈঠকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পাকিস্তান হালাল অথরিটির (পিএইচএ) মধ্যে ‘হালাল বাণিজ্য সহযোগিতা’ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নূর এবং পাকিস্তানের পক্ষে ঢাকায় হাইকমিশনার ইমরান হায়দার।
বৈঠক শেষে উভয় দেশই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্বকে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে। সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী (দশম) জেইসি বৈঠক পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে।

গভীর রাতের আগুনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্য
৮ ঘণ্টা আগে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে