Ajker Patrika

বিভিন্ন মামলায় পরোয়ানা

হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে নোটিশ করেনি ইন্টারপোল

  • ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের নির্দেশে রেড নোটিশের আবেদন করে পুলিশ।
  • সাত মাসেও ইন্টারপোল নোটিশ জারি করেনি।
  • সাধারণত আবেদনের তিন সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে ইন্টারপোল।
আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩: ০১
শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়।

পলাতক এই ২৪ জনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার সূত্র বলছে, ওই ২৪ জনের বিরুদ্ধে এখনো ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি না হওয়ার কারণ জানা যায়নি। আবেদন পেলে ইন্টারপোল তাদের নিজস্ব নিয়মে আসামির সব নথি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে নোটিশ জারি করে। সাধারণত আবেদনের তিন সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ এর আগে ইন্টারপোলের কাছ থেকে জবাব পেয়েছে।

জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখনো তারা কিছু ক্ষেত্রে রেড নোটিশ জারি করেনি। হয়তো যাচাই-বাছাই করছে, এটা তাদের প্রক্রিয়া। তারা রেড নোটিশ জারি না করলেও বিচার থেমে থাকবে না। বিচার আসামির অনুপস্থিতিতেই হবে।

তিনি বলেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনতে সব প্রক্রিয়াও চালু রাখতে হবে। ইন্টারপোল এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের কূটনৈতিক ধারাও অব্যাহত রাখতে হবে।

সূত্র জানায়, শেখ হাসিনাসহ পলাতক ২৮ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ইন্টারপোলে আবেদন করেছে। এখন পর্যন্ত ইন্টারপোল তাঁদের মধ্যে মাত্র চারজনের নামে রেড নোটিশ জারি করেছে। তাঁরা হলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলার আসামি আরিফ সরকার, মহসিন মিয়া ও আওলাদ হোসেন। মহসিন মিয়াকে গত জুলাইয়ে দুবাই থেকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে আবেদন করা হলেও ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেডের বাংলাদেশের তালিকায় বেনজীর আহমেদের ছবি ও নাম এখনো উঠানো হয়নি।

যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল এখনো রেড নোটিশ জারি করেনি তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম ও তাঁর তিন ভাই এবং কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি), ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।

চলতি বছরের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দেশের কয়েকটি আদালতের নির্দেশে তাঁদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আবেদন করলেই ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে না। সংস্থাটি তাদের নিয়মে আসামির সব নথি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়। এনসিবি সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারপোলের কাছ থেকে জবাব পায়। এত দীর্ঘ সময় ঝুলিয়ে রাখে না। তিনি বলেন, আসামিরা কে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে ইন্টারপোল জানে, বাংলাদেশকে তথ্যও দিয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে রেড নোটিশের বিষয়ে সংস্থাটি এখনো কিছু জানায়নি।

ইন্টারপোলের সঙ্গে কাজ করা পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ইন্টারপোল রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে চায় না। বিভিন্ন দেশে সরকার পরিবর্তনের পর সাবেকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। দেশগুলো ইন্টারপোলের সহায়তা চায়। তাই এসব আবেদন ইন্টারপোল খুব সতর্কভাবে দেখে। ইন্টারপোল কোনো আবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায় না, নীরবতা পালন করে। যেসব আবেদনে তারা রেড নোটিশ জারি করে, সেগুলো দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে জানিয়ে দেয়।

এনসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ইন্টারপোল দুই ভাবে আবেদন মূল্যায়ন করে, জরুরি ও সাধারণ। কোনো দেশ জরুরি আবেদন করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয় সংস্থাটি। আর কম গুরুত্বপূর্ণ হলে ইন্টারপোলের ফ্রান্সের কমিটি সেটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় নেয়।

আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম শাহজাহান সাইফ বলেন, আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারপ্রক্রিয়া চলতে পারে। তবে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগও নিতে হবে।

ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট ৬ হাজার ৫১৭ জন ওয়ান্টেড ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ আছে, যার মধ্যে বাংলাদেশি ৬০ জন।

জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘ইন্টারপোল তাদের নিজস্ব আইনি কাঠামোর মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা নিয়মের মধ্যে থেকে তাদের কাছে আবেদন করেছি। তারা রেড নোটিশ জারি করবে কি না, এটা তাদের ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...