Ajker Patrika

ঘাটে ঘাটে মানুষের চাপ

মারুফ কিবরিয়া, ঢাকা
Thumbnail image

কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ছুটছেন কুদ্দুস মিয়া। ঘামছেন আর হাঁপাচ্ছেন। হাত ধরে আছেন শিশুপুত্রর। সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও ছুটছেন। গন্তব্য মুন্সিগঞ্জের মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাট। সেখান থেকে যাবেন মাদারীপুর। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে মাওয়া সংযোগ সড়ক থেকে কুদ্দুস মিয়া হেঁটেই যাচ্ছেন ঘাট পর্যন্ত। কারণ শিমুলিয়া ঘাটের ফটক পর্যন্ত পুরো সড়কে তীব্র যানজট। কুদ্দুস মিয়ার মতো এমন অসংখ্য মানুষ গতকাল বাড়ির উদ্দেশে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছাতে দুর্ভোগের শিকার হন।

সরকার গত বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউন শিথিল করায় মানুষ ব্যাপক হারে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সকাল থেকেই কেউ হেঁটে আর কেউবা ব্যাটারিচালিত রিকশাযোগে মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাটমুখী হন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এই চাপ। 

ঘাটে ফেরিতে যানবাহন আর লঞ্চ-স্পিডবোটে মানুষের চাপ। তবে ঈদে বাড়িফেরা যাত্রীদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে ছিলেন উদাসীন। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে বারবার ঘোষণা করা হলেও তা কেউ কানে তোলেননি।

লঞ্চে উঠতেই দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে হাজারো যাত্রীকে। পদ্মা পার হতে পারলেই যেন যুদ্ধ জয় হবে–এমনটাই ছিল তাঁদের মনোভাব। ফরিদপুরগামী যাত্রী শোভন বললেন, ‘মেন রাস্তা থেকে আসতে আধা ঘণ্টা লাগছে। ঘাট পর্যন্ত কোনো গাড়ি আসতে পারতেছে না। পুরাডা রাস্তাই জ্যাম। এখানে কখন লঞ্চে উঠব বুঝতে পারতেছি না। গরমও পড়ছে আজকে। খুব কষ্ট হইতাছে।’

লিয়াকত যাবেন মাদারীপুর। তিনি বলেন, ‘আগে ফেরিতে উঠতে চাইছিলাম। ওইখানে যেতে দেয় নাই। বলল লঞ্চের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু কত মানুষ দাঁড়াইছে এখানে। গরমের মধ্যে দাঁড়াইতেও পারতেছি না।’ 

ঝুমা বেগমের গন্তব্য গোপালগঞ্জে। ঢাকা থেকেই একটি বাসে চড়ে মাওয়া পর্যন্ত আসেন তিনি। কিন্তু বাস ফেরিতে হয়ে পদ্মা পার হবে না। ভোগান্তির শিকার ঝুমা বলেন, ‘বাসের হেলপার ভাড়া ফেরত দিয়ে বলতেছে আর যাবে না। এখন স্পিডবোটে করে যেতে হবে। কিন্তু এত গরমের মধ্যে কত মানুষ। খুব খারাপ লাগছে।’

বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নৌরুটে বর্তমানে ১৩টি ফেরি সচল রয়েছে। ঘাট এলাকায় পারাপারের জন্য যাত্রী ও পণ্যবাহী মিলিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দেড় হাজার যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল যানবাহন পারাপার করা হবে। তিনি বলেন, লঞ্চ চালু হওয়ায় ফেরিতে যাত্রী চাপ কমেছে।  

এদিকে শিমুলিয়ার চেয়ে পরিস্থিতি বেশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাটুরিয়া–আরিচা ঘাটে। আজকের পত্রিকার শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আরিচা-পাটুরিয়া নৌ-পথে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে নিয়োজিত থাকবে ছোট-বড় ১৯টি ফেরি ও ৩৩টি লঞ্চ। ঈদের তিন দিন আগে-পরে বন্ধ থাকবে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার। পরিবহন চালক-মালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেরি পারের জন্য আগে যানবাহনগুলোকে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হতো। কিন্তু এ চিত্র এখন বদলেছে। ফেরিঘাট এলাকায় একমুখী পদ্ধতিতে যানবাহন চলাচল করায় কাউকে আর যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত