Ajker Patrika

লম্বা ছুটিতে ঘরমুখী মানুষ

  • বাস ও রেলস্টেশনে বাড়তি ভিড়, সদরঘাটে লঞ্চে চাপ কম
  • মহাসড়কে গাড়ির চাপ আছে, তবে ভোগান্তি তেমন নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সরকারি চাকরিজীবীদের ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে আজ। টানা ৯ দিনের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন অনেকে। অফিস ছুটির পর গতকাল গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ছবি: জাহিদুল ইসলাম
সরকারি চাকরিজীবীদের ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে আজ। টানা ৯ দিনের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন অনেকে। অফিস ছুটির পর গতকাল গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

কয়েক দিন পরেই ঈদ। শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। আজ শুক্রবার থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি কাটাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। বেসরকারি চাকুরেদের অনেকেরও ছুটি সপ্তাহখানেকের মতো। লম্বা এই ছুটি প্রিয়জনের সান্নিধ্যে কাটাতে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরছে নগরবাসী।

ঈদের আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কর্মদিবস। বিকেলের পর থেকে তাই রাজধানীর বাস ও রেলস্টেশন এবং লঞ্চঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। মহাসড়কে বড় যানজট না হলেও, রাজধানী থেকে বের হতে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের।

গতকাল বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে কাউন্টারের সামনে এবং রেলস্টেশনগুলোতেও ছিল অপেক্ষমাণ মানুষদের ভিড়। লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় থাকলেও স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে গেছে বেশির ভাগ লঞ্চ। রাজধানী ছাড়তে ঝক্কি-ঝামেলা থাকলেও ঈদের আনন্দে বাড়িফেরা মানুষদের মুখে ছিল আনন্দের ছাপ।

রাজধানীর কমলাপুর থেকে গতকাল ৭০টির মতো ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৪৩টি আন্তনগর, ২৪টি মেইল কমিউটার। এসব ট্রেনের সঙ্গে দুটি বিশেষ ট্রেনও যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন করছে রেল।

কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নীলসাগর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস এবং নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেন এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যে যাত্রা করেছে। এতে এসব ট্রেনের যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী নীলা চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি ছাড়বে বলে বাসা থেকে ভোরে রওনা হয়ে কমলাপুর এসেছি। কিন্তু এসে দেখি ট্রেন সময়মতো ছাড়েনি। এমনিতেই স্টেশনে যাত্রীর চাপ বেশি, তারপর আবার বসে থাকা; এটা একটা কষ্টকর বিষয়।’

রেলস্টেশন ঘুরে আরও দেখা যায়, যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকায় বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করেছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। তিন স্তরের চেকিং শেষে যাত্রীকে স্টেশনে ঢুকতে হচ্ছে। টিকিট ছাড়া কাউকে স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মো. শাহাদাত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুক্রবার যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীদের আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণের জন্যই বিনা টিকিটের বিষয়টিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিকেলের পরে যাত্রীদের চাপ বাড়লেও কেউ যেন ট্রেনের ছাদে উঠতে না পারে, সে বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে। বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। আশা করি যাত্রীদের ভোগান্তি হবে না।’

পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চে দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী পরিবহন কমেছে। তবে ঈদের সময় বাড়ে যাত্রীর চাপ। গতকাল সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের ভিড় দেখা যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চে দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী পরিবহন কমেছে। তবে ঈদের সময় বাড়ে যাত্রীর চাপ। গতকাল সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের ভিড় দেখা যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মহাসড়কে নেই ভোগান্তি

রাজধানী ছাড়তে বাসের যাত্রীরা গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ভিড় জমিয়েছে। শহর থেকে বের হওয়ার মুখগুলোতে যানজট হওয়ার কারণে টার্মিনাল থেকে গাড়িগুলো বের হতে সময় লাগছে। এতে বাসের কাউন্টারে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত বাসে ওঠার জন্য।

গতকাল সকালের দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে মদনপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকায় ট্রাক ঢুকতে না দেওয়ার কারণে এই মহাসড়কে জট তৈরি হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে সব মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে, তবে কোথাও বড় ধরনের যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ঈদযাত্রায় এখনো ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়নি। মহাসড়কে জট না থাকায় অনেকটা স্বস্তিতেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন যাত্রীরা।

গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, ‘ঈদে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটবে না। ঈদকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সতর্ক থাকবে। ঈদের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে যাবে। তাদের যাত্রাটা আনন্দদায়ক করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। হাইওয়ে পুলিশ খুব সক্রিয় রয়েছে।’

সড়কপথে ঈদযাত্রার বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, ‘সড়কপথে এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নভাবেই চলছে। আমাদের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। টার্মিনালগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটেরা আদালত পরিচালনা করছেন। বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পেলে জরিমানা করা হচ্ছে। আশা করছি সড়কপথে এবার ঈদযাত্রা ভোগান্তি ছাড়াই শেষ হবে।’

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন আছে। দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে চৌদ্দগ্রামে আমজাদের বাজার পর্যন্ত এই অংশে কোনো রকম যানজট ছাড়াই স্বস্তিতে ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ।

ঢাকা থেকে কুমিল্লা আসা নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে কুমিল্লায় দেড় ঘণ্টায় এসেছেন। এত তাড়াতাড়ি ঈদের সময় বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি তিনি।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কলকারখানার ছুটিতে কর্মজীবী মানুষ গ্রামের বাড়িতে শুরু করেছেন। গতকাল গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ শিল্প-কলকারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। দিনভর মহাসড়ক দুটিতে ঘরমুখো মানুষের ভিড় এবং যানবাহনের চাপ থাকলেও কোথাও যানজট দেখা যায়নি। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও যানজটমুক্ত রাখতে মহাসড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীরা।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী যাবের সাদেক জানান, কালিয়াকৈর চন্দ্র এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যানজট নিরসনের জন্য প্রায় ৬০০ পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছে। এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর ও শ্রীপুর এলাকা এবং কাপাসিয়া থানা ও কালীগঞ্জ এলাকায় সড়ক মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ ও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে।

ঈদযাত্রা যাতে শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত স্বস্তিদায়ক থাকে সে জন্য কাজ করছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি)। জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেছেন, গাজীপুর মহানগরের যানজট ও জনজট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যানজট নিরসনে কোনো অবস্থাতেই মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে উঠতে দেওয়া হবে না।

সদরঘাটে ভিড় নেই

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ঈদের সময় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এ বছর ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে নেই চিরচেনা সেই ভিড়। তবে এবার উপচে পড়া ভিড় না থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করছে যাত্রীরা।

বিআইডব্লিউটিএ ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৩৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে গেছে। অন্য দিকে টার্মিনালে ভিড়েছে ৭৮টি লঞ্চ। এ ছাড়া এ বছর ঈদযাত্রায় প্রায় ১৭৫টি লঞ্চ যাত্রীসেবা দিচ্ছে।

লঞ্চমালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও যাত্রী পরিবহন (যাপ) সংস্থার সদস্য হামজা লাল শেখ বলেন, টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। তবে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমাদের ১৭৫টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাত্রীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, টার্মিনালে এখনো যাত্রীর চাপ বাড়েনি। তবে যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিতে ইতিমধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার আমলে গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলাম: আহসান এইচ মনসুর

আলোচনায় ড. ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী দেখার আকাঙ্ক্ষা, আইনি পথ কী

এক দশক পর প্রকাশ্যে গায়িকা ডাফি, শোনালেন অপহরণ ও ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা

তিস্তায় বড় প্রকল্প নিয়ে সতর্ক থাকার তাগিদ

জাতীয় ঈদগাহে যাবেন না রাষ্ট্রপতি, ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়বেন বঙ্গভবনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত