Ajker Patrika

গুলশানের সেই ফ্ল্যাট এখনো টিউলিপ সিদ্দিকের নামে, ডেইলি মেইলের দাবি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ২০: ৩৮
গুলশানের সেই ফ্লাট ভবনের নাম ‘সিদ্দিকস’, যা টিউলিপের বাবার পারিবারিক নাম
গুলশানের সেই ফ্লাট ভবনের নাম ‘সিদ্দিকস’, যা টিউলিপের বাবার পারিবারিক নাম

শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকার গুলশানের ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অসত্য তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছে ডেইলি মেইল। ওই ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। তাঁর দাবি, এমপি হওয়ার পরপরই তিনি ওই বাসা ছোট বোনের কাছে হস্তান্তর করেন।

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ ডেইলি মেইলকে বলেছেন, ২০০২ সালে বাবা-মায়ের কাছ থেকে ‘উপহার’ হিসেবে তিনি ওই ফ্ল্যাট পান। ২০১৫ সালের মে মাসে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফ্ল্যাটটি তিনি ‘বৈধভাবে’ বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর কাছে হস্তান্তর করেন।

এমপি হিসেবে পার্লামেন্টে দেওয়া টিউলিপের সম্পদের হিসাবে বলা হয়, পরিবারের একজনের সঙ্গে যৌথভাবে ওই সম্পত্তির মালিকানায় ছিলেন টিউলিপ। জুলাই মাসেই তা হস্তান্তর করার কথা বলা হয়েছে সেখানে।

২০১৫ সালের ৯ জুন টিউলিপ ‘হেবা’র মাধ্যমে ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা রূপন্তীকে দেন। সেখানে দাতা হিসেবে রিজওয়ানা সিদ্দিক (টিউলিপ সিদ্দিক); গ্রহীতা ছিলেন আজমিনা সিদ্দিক। দলিলে বলা হয়, ‘ভালোবাসা ও স্নেহ’ থেকে বোনকে সম্পত্তি হেবা দিতে চান তিনি।

দলিল অনুযায়ী, ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় কেনা গুলশানের ফ্ল্যাটটি আজমিনা সিদ্দিককে দেওয়া হয়। দলিলে ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ মালিকানা, স্বত্ব, অধিকার এবং একটি পার্কিং স্পেস হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে।

দলিল অনুযায়ী ফ্ল্যাটের অবস্থান, গুলশান রেসিডেনশিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর প্লটে। এটি ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ-পূর্ব পাশের একটি ফ্ল্যাট। দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দলিল সম্পন্ন হয়।

তবে ডেইলি মেইল দাবি করছে, ঢাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনুসন্ধান চালিয়ে তারা ভিন্ন তথ্য পেয়েছে। গত সপ্তাহে সেখানে সংরক্ষিত নথি তাদের প্রতিবেদক দেখেছেন। সেখানে টিউলিপকে এখনো ওই ফ্ল্যাটের মালিক, যা দুদকের অভিযোগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। গত ১০ মার্চ দুদক জানায়, গুলশানের ওই ফ্ল্যাট হস্তান্তরে টিউলিপ যে নোটারি ব্যবহার করেছেন, তদন্তে তা ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে।

সেই হেবা দলিলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। দুদককে দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি বলেছেন, টিউলিপের ফ্ল্যাট হস্তান্তরের হেবা দলিলটি তাঁর নোটারির নামে দেখানো হলেও স্বাক্ষর ‘তাঁর নয়’। হেবাদাতাকেও তিনি চেনেন না বলে দুদকের কাছে দাবি করেছেন।

বিশেষজ্ঞের বরাতে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেকর্ড করা না হলে ফ্ল্যাট বা সম্পত্তির হস্তান্তর বৈধ বলে গণ্য হয় না।

দুদকের দাবি, যেহেতু আইনজীবী অস্বীকার করেছেন এবং তাঁর স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন, তাই হেবা দলিলটি ‘ভুয়া’।

খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত
খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত

তবে টিউলিপের আইনজীবীর দাবি, যথানিয়মেই হেবা সম্পন্ন হয়। যেহেতু ফ্ল্যাটের ভাড়া তাঁর বোনই পেতেন। দুদকের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।

আইনজীবী পল থুয়েট ডেইলি মেইলকে বলেন, এ ক্ষেত্রে হেবা দলিলই যথেষ্ট বলে বাংলাদেশি আইন বিশেষজ্ঞ তাঁকে জানিয়েছেন। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের যে নথির কথা বলা হচ্ছে, তা ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’। টিউলিপ সিদ্দিক পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন—এমন দাবি ‘অসত্য ও অযৌক্তিক’।

গত বছর আগস্টে গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ব্রিটেনে তাঁর ভাগনির ‘উপহারের’ ফ্ল্যাট নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়। হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লন্ডনে সাত লাখ পাউন্ড দামের ফ্ল্যাট টিউলিপ সিদ্দিক ‘উপহার’ পান বলে খবর বের হয়। বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ।

এর আগে ২০২২ সালে ডেইলি মেইলের কাছে টিউলিপ দাবি করেন, তাঁর বাবা-মা ওই ফ্ল্যাট কিনে তাঁকে দিয়েছেন। তবে পরে স্যার লরি ম্যাগনাসের তদন্তে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে’ জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিলেন।

এদিকে গত সপ্তাহে এক এক্স পোস্টে টিউলিপ দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুদকের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’। সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে দুদক ‘হয়রানিমূলক’ প্রচার চালাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

ওই পোস্টে টিউলিপ বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের ঐতিহ্য আছে এখানে। তাদের যুক্তিসংগত যেকোনো প্রশ্নের জবাব আমি খুশিমনে দেব। কিন্তু আমাকে নোংরা রাজনীতিতে টেনে নামানোর চেষ্টায় জড়াব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি ব্রিটিশ নাগরিক ও পার্লামেন্টের গর্বিত সদস্য হিসেবে আমার কাজের মর্যাদা নষ্ট করে—এমন বাজে হয়রানিমূলক কিছু করার সুযোগও তাদের দেব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত