Ajker Patrika

সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে মার্কিন ‘লিহে’ আইনে সম্মতিতে আরও সময় চায় ঢাকা

তাসনিম মহসিন, ঢাকা
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ২২: ২৯
সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে মার্কিন  ‘লিহে’ আইনে সম্মতিতে আরও সময় চায় ঢাকা

বাংলাদেশের সামরিক ও নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান অব্যাহত রাখতে দেশটির ‘লিহে’ আইন মেনে চলার বিষয়ে ঢাকার সম্মতি চেয়েছে ওয়াশিংটন। এতে নীতিগতভাবে সম্মতও হয়েছে বাংলাদেশ। তবে এ বিষয়ে জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দ্বিতীয় দফায় সময় চেয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরও সময় চেয়েছে বাংলাদেশ।’ 

জানা গেছে, বাংলাদেশের সামরিক খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে লিহে আইন মেনে চলার শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয় দেশটি। আর ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। তবে বাংলাদেশ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেয়। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখন যুক্তরাষ্ট্রকে আবার সময় বাড়াতে বলা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ‘লিহে (Leahy) আইন’ বলে ১৯৬১ সালের একটি আইন রয়েছে। এ আইন অনুযায়ী, অন্য দেশের কোনো নিরাপত্তা সংস্থা বা বাহিনী যদি নির্যাতন, আইনবহির্ভূত হত্যা, গুম ও ধর্ষণজনিত কোনো সহিংস অপরাধ বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে ওই সংস্থাকে কোনো অনুদান দিতে পারে না মার্কিন সরকার। 

সম্প্রতি আইনটিতে একটি সংশোধনী আনা হয়েছে। সে অনুযায়ী, অনুদানপ্রাপ্ত দেশগুলোর কোন সংস্থা অনুদানের অর্থ পাচ্ছে, সেটি জানার জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে একটি ধারা সংযোজিত হয়েছে। এর ফলে মার্কিন সামরিক অনুদানপ্রাপ্ত দেশগুলোর সঙ্গে এই চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। এ ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনো সংস্থা বা বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের ওই অনুদান পাবে না। 

ফলত কোন দেশকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বা নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা করলে তাদের দেওয়া অনুদানের অর্থ সেই দেশের কোথায় ও কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে হবে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই আইনটি যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হবে। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইনের সব খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আর সব শব্দ ও ভাষাগত বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করা হচ্ছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র যে সময় দিয়েছে, তার মধ্যে এ আইনের সব পর্যালোচনা শেষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে আরও সময় চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আরও আলোচনা করে উত্তর দেওয়া হবে। 

এ দফায় কত দিন সময় চাওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে কোনো তথ্য দিতে চাননি ওই কর্মকর্তা। তবে নোট ভারবালের মাধ্যমে এর উত্তর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

জানা গেছে, বর্তমানে এই লিহে আইনের সঙ্গে যুক্ত থাকলে বাংলাদেশের কী লাভ। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মৌলিক যে নীতিগুলো রয়েছে সেগুলোর সঙ্গে সেটি সাংঘর্ষিক কি না, তা পর্যালোচনা করে দেখছে বাংলাদেশ সরকার। এ ক্ষেত্রে দেশের আইন ও পরিস্থিতিই অগ্রাধিকার পাবে বলে জানাচ্ছে একাধিক সূত্র। 

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতনের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। আর এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে বলেও উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র। লিহে আইনে সম্মত হতে এ বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের উৎস জনতে চাইবে বাংলাদেশ। যাতে আত্মপক্ষ সমর্থনে পর্যাপ্ত সময় ও তথ্য দেওয়া যায়। 

সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে বা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনার শর্তও জুড়ে দিতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আত্মপক্ষ সমর্থনের বিষয়ে পর্যাপ্ত সময় চাইবে। কোন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং নিজস্ব অবস্থান ব্যাখ্যার জন্য পর্যাপ্ত সময় চাইবে বাংলাদেশ। 

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৪০ কোটি টাকা (প্রায় ৭ দশমিক ৫ কোটি ডলার) অনুদান পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রয়েছে ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং এবং আন্তর্জাতিক মিলিটারি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। ওই ৬৪০ কোটি টাকার একটি বড় অংশ বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের যে উদ্যোগ রয়েছে, সেটি শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি ‘হ্যামিলটন কাটারস’ নৌজাহাজ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ৫০টি ‘মাল্টি রোল আরমার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৫ থেকে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা (সাড়ে ৪ কোটি ডলার) ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি ২০১২ সালে ১৮ কোটি ডলার ব্যয়ে চারটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। 

২০২০ সালের জুলাই মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বৈদেশিক সহায়তা পাবে না।

এ ছাড়া গত ১০ ডিসেম্বর র‌্যাবের ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ ঘটনায় এ বাহিনী, এর সাবেক প্রধান, বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত