বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় জালিয়াতির মামলায় আরও দুটি ধারা সংযোজন

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় জালিয়াতির অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় আরো দুটি ধারা সংযোজনের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান এই অনুমতি দেন।

দুটি ধারা হচ্ছে দন্ডবিধির ১২০ (বি) ও ৪২০। ১২০ (বি) ধারায় খায়রুল হকের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও ৪২০ ধারায় প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই খালেক মিয়া ধারা সংযোজনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য জানান।

ধারা সংযোজনের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামি এ বি এম খায়রুল বিচারক হিসেবে লোভের বশবর্তী হয়ে দুর্নীতিমূলক ও বিদ্বেষাত্মক এবং বেআইনিভাবে রায় দেওয়াসহ অসত্য ও জাল জালিয়াতি সৃষ্টি করেছে মর্মে বাদী এ অভিযোগের ভিত্তিতে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় মামলাটি রুজুর ধারাগুলোর পাশাপাশি দন্ডবিধির ১২০ (বি) ও ৪২০ ধারা সংযোজন করা একান্ত প্রয়োজন।

গত বছরের ২৭ আগস্ট রাতে শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম। মামলায় দণ্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারা উল্লেখ করা হয়েছিল।

দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা সরকারি কর্মচারীদের বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমে আইনের পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য শাস্তির বিধান দেয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী যদি বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমে আইনের পরিপন্থী কোনো রিপোর্ট, আদেশ, রায় বা সিদ্ধান্ত প্রদান করেন, যা তিনি আইন বিরোধী বলে জানেন, তাহলে তিনি ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারা জালিয়াতি সম্পর্কিত। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আদালতের কার্যবিবরণী বা নথিপত্র, জন্ম, বিয়ে বা মৃত্যুর নিবন্ধন বা কোনো সরকারি কর্মচারীর তৈরি করা কোনো নথি, বা কোনো কর্তৃপক্ষের তৈরি করা কোনো নথি জাল করে, তাহলে সেই ব্যক্তি এই ধারার অধীনে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে।

মুজাহিদুল ইসলাম সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ে জালিয়াতির অভিযোগ এনে মামলায় বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথায় প্রভাবিত হয়ে অবসর-পরবর্তী ভালো পদায়নের লোভে দুর্নীতিমূলকভাবে শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য ২০১১ সালের ১০ মে সংক্ষিপ্ত আদেশটি পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন রিট আবেদন করেন। সেই মামলার শুনানি করে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। রিট আবেদনকারী ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন আপিল বিভাগ। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু ওই বছর সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের সময় জালিয়াতি করা হয়।

গত বুধবার এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর খায়রুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি রিমান্ডে রয়েছেন। গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় ওইদিন রাতে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৯ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় করা মামলায় তাকে ভার্চুয়ালি গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।