Ajker Patrika

অটিজম একাডেমি প্রকল্প

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে খরচ ২৮ কোটি টাকাও গচ্চায়

  • প্রকল্প অসমাপ্ত রেখেই সমাপ্তির সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
  • প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে সোমবার
  • ৭৩০ কোটির প্রকল্পে ১১ বছরে মোট খরচ ৯৫ কোটি টাকা
রাহুল শর্মা, ঢাকা 
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে খরচ ২৮ কোটি টাকাও গচ্চায়

অটিজম একাডেমির জন্য দক্ষ জনবল তৈরির অংশ হিসেবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে খরচ হয়েছে ২৮ কোটি টাকার বেশি। তবে অটিজম একাডেমি তৈরির অসমাপ্ত প্রকল্প সমাপ্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ অটিজম একাডেমি না করেই প্রকল্পটির ইতি টানতে চায় মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে আগামীকাল ৪ আগস্ট।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পটি এখানেই শেষ করা হলে শিক্ষকদের দেওয়া প্রশিক্ষণে ব্যয় করা পুরো অর্থই গচ্চা যাবে। কারণ, এই প্রশিক্ষণ তেমন কাজে আসবে না। অস্থায়ীভাবে পরিচালিত অটিজম একাডেমিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনও অনিশ্চয়তায় পড়বে। একই সঙ্গে অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যাগ্রস্ত শিশুদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগও বাধাগ্রস্ত হবে। ১১ বছরে প্রকল্পটিতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে গতকাল শনিবার প্রকল্প পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. নুরুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকারের। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। মাউশির সূত্র জানায়, দুই বছর মেয়াদি এই প্রকল্প শুরু হয় ২০১৪ সালে। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল ৭৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। পরে প্রকল্পে একাডেমি স্থাপন, প্রশিক্ষণ, সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ অন্যান্য বিষয় সংযোজনের সিদ্ধান্ত হয়। তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ১১ বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ডিপিপি সংশোধন করে খরচ বাড়িয়ে ৭৩০ কোটি ৬০ লাখ ১৭ হাজার টাকা করা হয়।

প্রকল্প সূত্র বলছে, গত ১১ বছরে এই প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে ৯৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাবদ খরচে হয়েছে ২৮ কোটি টাকার বেশি, জমি কেনা বাবদ ৩৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা খরচ হয়েছে সভা-সেমিনার, ভাড়া করা বাড়িতে ক্যাম্পাস পরিচালনা, ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের পেছনে এবং প্রকল্প পরিচালনায়। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ, বাস্তব অগ্রগতি ২০ শতাংশ।

সূত্র আরও বলেছে, অটিজম একাডেমি প্রকল্পটি শুরু থেকে নানা জটিলতায় পড়েছে। প্রথমে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই একর জমি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হলেও মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় তা অধিগ্রহণ করা যায়নি। পরে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য পূর্বাচলে ৩ দশমিক ৩৩ একর জমি চূড়ান্ত করা হয়। পরামর্শক সেবাপ্রতিষ্ঠান নিয়োগ-সংক্রান্ত মামলা, দরপত্রের রেট শিডিউল-সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘদিন প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি।

জানা যায়, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পটি সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল বৈঠক ডেকেছে পরিকল্পনা কমিশন।

অবশ্য ২৪ অক্টোবর প্রকল্পটি চালু রাখতে এবং অটিজম একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বানের অনুমতি দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছিলেন মাউশির তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম। চিঠিতে ভর্তি থাকা অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে পূর্বাচলে বরাদ্দ করা জমিতে সীমিত আকারে হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য দরপত্র আহ্বান করে নির্মাণকাজ শুরুর বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। চিঠিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণগুলোর বিশদ বিবরণও দেওয়া হয়েছিল।

প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ বিষয়ে জানতে মোবাইলে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস (খুদে বার্তা) করা হলেও সাড়া দেননি মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সৈয়দ মামুনুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ বিষয়ে আগামীকাল সোমবার পরিকল্পনা কমিশনে সভা রয়েছে। সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবিতে ‘তুর্কি এনজিও সমর্থিত’ সংগঠনের ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ মানচিত্রে ভারতের অংশ, বললেন জয়শঙ্কর

কালো জাদুর অভিযোগে মবের তাণ্ডব, এক পরিবারে পাঁচজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা

খিলগাঁওয়ে পুরি-শিঙাড়া বিক্রেতাকে পিটিয়ে হত্যা

ফ্লাইটে অসুস্থ ব্যক্তিকে সহযাত্রীর চড়, তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ

সাপের বিষে তৈরি যে মদ পাওয়া যায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত