সুলতান মাহমুদ, ঢাকা

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘মা না হওয়ার’ শর্ত বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সরকারি চাকরির আশায় অনেক নারী সন্তান নেননি, কেউ গর্ভপাত করিয়েছেন, অনেকের স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, সন্তান না নেওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে অনেককে। পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও অনেকে বিয়ে পিছিয়েছেন। চার বছর পর হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় সাত হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী এখন চরম হতাশায় ভুগছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সারা দেশে এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আজকের পত্রিকার সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন এই চার বছরের করুণ অভিজ্ঞতার কথা।

খুলনা বিভাগের এক চাকরিপ্রার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি চাকরির আশায় আমরা লাইফটাই শেষ! খুলনা অঞ্চলে বাড়ি হলেও এখন থাকতে হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে, অনেকটা একা। কাজ করছি একটি বেসরকারি সংস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সার্কুলারটা হয় ২০২০ সালে মার্চে এবং আমার বিয়ে হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার ভাই নাই। বাসায় আমার বৃদ্ধ মা, বাবা ও ছোট দুই বোন আছে। অভাবের সংসার। পরিবারের পুরো দায়িত্ব আমার ওপর। মা-বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। পড়ালেখা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। হোস্টেলে এক বেলার ভাত দুই বেলা খাইছি। কখনো এক দিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে নষ্ট না করে পরের দিন খাইছি। আমি তিন-চারটা ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি। সরকারি চাকরি হয়নি। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যখন বিয়ে হয়, করোনার মধ্যে আমি আবেদন করেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করার জন্য। ২৭ সেপ্টেম্বর চাকরিটা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিয়ের পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্বশুরবাড়ি যাই। আর ২৫ সেপ্টেম্বর হাতের মেহেদির লাল দাগ নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে চলে আসি চাকরিতে যোগ দিতে। বিয়ের আগে শুনেছি, আমার স্বামী ব্যবসা করে। করোনার কারণে নাকি তার ব্যবসা মাইর গেছে। সে বর্তমানে বেকার। সংসার রেখে আমি চলে এসেছি টেকনাফে। সার্কুলার হলেই আমি আবেদন করতাম এবং চেষ্টা করতাম পড়াশোনার।’
‘এদিকে শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে চাপ দেয় বাচ্চা নেওয়ার জন্য। আমি বাচ্চা নেই না। কারণ, চাকরিতে শর্ত আছে, বাচ্চা নেওয়া যাবে না। আমি স্বামীকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি। বাচ্চা কয়েক দিন পরেও নেওয়া যাবে। চাকরিটা যদি হয়। এটা আমার জীবনের শেষ সরকারি চাকরির আবেদন। একটা পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলতে শুরু করল, এই মেয়ে সংসার করবে না। অন্য কারও সঙ্গে হয়তো সম্পর্ক আছে। এই মেয়ে চলে যাবে। যে কারণে বাচ্চা নিচ্ছে না। এই অপবাদও আমি নিয়েছি। এভাবে সময় পার করছিলাম। ২০২৩ সালে পরীক্ষা হলো। এর মধ্যে বাচ্চা কনসিভ হয়। যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, তখন গর্ভের বয়স ছয় মাস। রিটেন পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর চলে আসলে, আমি মেডিসিন খেয়ে ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি। শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির কাউকে বলি না। বলি, আমি পড়ে গিয়েছিলাম। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। ওদিকে স্বামী বেকার। বাবা-মাকে দেখতে হয়। বাচ্চার জন্য যদি আমার চাকরি না হয়! অ্যাবরশন হওয়ার পর অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বাচ্চা না নেওয়ায় স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। স্বামীর সঙ্গে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। পাঁচ মাস আগে স্বামীর সঙ্গে শেষ একবার যোগাযোগ হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। আমরা সেপারেশনে যাব এ রকম অবস্থায় আছি, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি।’
তিনি ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বলেন, ‘এখন চার বছর পর নিয়োগ বাতিল করল। আমি এখন কী করব! আমার বাচ্চা গেল, স্বামী গেল! এখন স্বামীর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই। এদিকে আমার বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে। আমার কথা, যারা দুর্নীতি করেছে বা যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য আমি সবকিছু কেন হারাব। নোটিশ বাতিল করে আমাদের ভাইভার ফল প্রকাশ করা হোক।’
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না—এমন শর্ত দিয়ে ২০২০ সালে ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সেখানে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ১ হাজার ৮০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিন লাখের বেশি নারী ওই পদের জন্য আবেদন করেন। আর ওই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ১১ মে। পরে ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে ১৪ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন-সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ভুক্তভোগী কয়েকজন।
হাইকোর্টে রিট
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা পরিপত্র কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বাস্থ্যসচিব, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ চার বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চার নিয়োগপ্রত্যাশীর রিটে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) এই রুল জারি করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রুলের শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দিক বা না দিক, ওই দিন শুনানি হবে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সাড়ে তিন বছর পর এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ না করে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, ওই (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) পদে নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ করতে হয়। ইতিমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছে, আমরা রিটে উল্লেখ করেছি। এখন আবার লিখিত পরীক্ষা হলে আবার ব্যয় হবে। আর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ পেতে আরও তিন বছর লেগে যেতে পারে নিয়োগপ্রত্যাশীদের।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে সারা দেশে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ২ হাজার ৬৭৬টি শূন্য ছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এই জবটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এরা (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদান করে থাকে। এদের কারণে সরকার মাতৃমৃত্যু, প্রসূতিমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে পেরেছে। এই জায়গাটায় সাকসেস আছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এই জায়গায় পাবলিক ইন্টারেস্ট আছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ইন্টারেস্ট আছে। তিনি বলেন, কোনো কথাবার্তা নাই, সচিব পরিবর্তনে হঠাৎ মনে হলো রিটেন নেবে। যদি রিটেন নেয়, তাহলে ভাইভা নিল কেন? রিটেনে গন্ডগোল, তাহলে তখনই বাতিল করত। তাঁর প্রশ্ন, রিটেন পরীক্ষায় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তাহলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
একই ভুক্তভোগী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ছিটমহলের বাসিন্দা ফৌজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাই। এর আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আমাদের আবেদন করার কোনো সুযোগ ছিল না। নাগরিকত্ব লাভের পর সরকারি একাধিক চাকরিতে আবেদন করে তিনটিতে ভাইভায় অংশ নিই। আগের দুটিতে চাকরি হয়নি। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ছিল সরকারি চাকরির জন্য আমার শেষ ভাইভা পরীক্ষা। এরই মধ্যে বয়স ৩০ শেষ হয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আর কোনো সুযোগও নেই। এফডব্লিউভি পদে নিয়োগের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না বলে একটি শর্ত দেওয়া ছিল। যে কারণে বিয়ে করিনি। যখন আবেদন করি তখন বয়স ২৭ বছর ছিল, এখন ৩০ বছরের বেশি। হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় আমি হতাশ। আমি এখন কী করব জানি না। আমি পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের এই নোটিশ মানি না।’
জয়পুরহাটের একজন প্রার্থী চাকরির আশায় বিয়ের আট বছরেও সন্তান নেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর স্বামী-সংসার সামাল দিয়ে সরকারি চাকরির আশায় পড়ালেখা করি। ২০২০ সালের মার্চে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে সার্কুলার হলে গত চার বছর আমরা বাচ্চা নিইনি। কেননা, যদি বাচ্চা কনসিভ করি, আর যদি চাকরির পরীক্ষা হয়ে যায়, আর যদি টিকে যাই, তাহলে গর্ভধারণের কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ব। এ কারণে আমরা বাচ্চা নেইনি।’
পরিচিত অনেক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে ভাইভা ভালো দিয়েছে। যে কারণে বাচ্চা নষ্ট করেছে।’ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে আট বছর হয়েছে। প্রথম দিকে সরকারি চাকরির আশায় পড়াশোনার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর এই সার্কুলারে আবেদন করার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর যখন রিটেন দিয়ে টিকে যাই এবং ভাইভা দিই; এরপর তো বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবতেও পারিনি। এই কারণে যে হয়তো আমার চাকরিটা হয়ে যাবে। তারপর যখন ভাইভা দেওয়ার পর সাত মাস কেটে গেল, ওনারা রেজাল্ট দিচ্ছিলেন না। তারপর আমরা বারবার আন্দোলন করেছি। তখন ওনারা বিষয়টি দেখে ওই শর্ত বাতিল করেছে। এর আগে আমাদের সাড়ে তিন বছর জীবন থেকে চলে গেছে। ওনারা এখন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বাতিল করছে। ওনারা কি আমাদের চারটি বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন! আমরা চাকরির আশায় এত দিন বাচ্চা নেইনি। এখন আমাদের বাচ্চা নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাহলে এই দায়ভার কেন আমরা চাকরিপ্রার্থীরা নেব?’
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ৩০ হয়ে গেছে। আমার চাকরির বয়স শেষ। আমি বাচ্চাও নিলাম না। এই নিয়োগটা বাতিল করে মেয়েদের জন্য একটি হতাশাজনক বার্তা দিচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ওনারা নিয়োগ যদি বাতিলই করবে, তাহলে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করত! চার বছর কেন নিল? আমাদের এই চারটা বছর কে ফিরিয়ে দেবে?’
চাকরির আশায় গর্ভপাত করিয়েছেন জামালপুরের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বাচ্চা আছে। বয়স ১০ বছর। ২০১৪ সালে ওর জন্ম। ২০১৯ সালে বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কনসিভ করি। দুই মাস পর মার্চে সার্কুলার হয়। পরে অ্যাবরশন করে ফেলি। পরে অক্লান্ত পরিশ্রম করি। যে কারণে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করি। ভাইভা পরীক্ষায়ও আমি ভালো করেছি। আমাকে ১২টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি ৮টি প্রশ্নের উত্তর ভালো করে দিয়েছি। একটির উত্তর মোটামুটি দিয়েছি। আমি আশাবাদী যে চাকরিটা আমার হবে। এখন তীরে এসে তরি ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমি কী করব? আমার ৩০ বছর শেষ হয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এ চাকরিটা পাওয়ার আশায় বাচ্চাটা অ্যাবরশন করলাম। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলো। তাদের (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর) অযৌক্তিক শর্ত পালন করতে গিয়ে আমার এই সমস্যাগুলো হয়েছে। এই নিয়োগটা বাতিল করায় পরিবারে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি। নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি।’
জামালপুরের এই নারী বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এখন নিয়োগটা বাতিল করছে। দুর্নীতি করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করেছেন। তাঁদের শাস্তি হোক। আমরা কেন শাস্তি পাব? আমরা চাই, নিয়োগ বাতিলের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে আমাদের ফল প্রকাশ করা হোক।’

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘মা না হওয়ার’ শর্ত বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সরকারি চাকরির আশায় অনেক নারী সন্তান নেননি, কেউ গর্ভপাত করিয়েছেন, অনেকের স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, সন্তান না নেওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে অনেককে। পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও অনেকে বিয়ে পিছিয়েছেন। চার বছর পর হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় সাত হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী এখন চরম হতাশায় ভুগছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সারা দেশে এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আজকের পত্রিকার সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন এই চার বছরের করুণ অভিজ্ঞতার কথা।

খুলনা বিভাগের এক চাকরিপ্রার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি চাকরির আশায় আমরা লাইফটাই শেষ! খুলনা অঞ্চলে বাড়ি হলেও এখন থাকতে হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে, অনেকটা একা। কাজ করছি একটি বেসরকারি সংস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সার্কুলারটা হয় ২০২০ সালে মার্চে এবং আমার বিয়ে হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার ভাই নাই। বাসায় আমার বৃদ্ধ মা, বাবা ও ছোট দুই বোন আছে। অভাবের সংসার। পরিবারের পুরো দায়িত্ব আমার ওপর। মা-বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। পড়ালেখা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। হোস্টেলে এক বেলার ভাত দুই বেলা খাইছি। কখনো এক দিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে নষ্ট না করে পরের দিন খাইছি। আমি তিন-চারটা ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি। সরকারি চাকরি হয়নি। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যখন বিয়ে হয়, করোনার মধ্যে আমি আবেদন করেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করার জন্য। ২৭ সেপ্টেম্বর চাকরিটা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিয়ের পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্বশুরবাড়ি যাই। আর ২৫ সেপ্টেম্বর হাতের মেহেদির লাল দাগ নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে চলে আসি চাকরিতে যোগ দিতে। বিয়ের আগে শুনেছি, আমার স্বামী ব্যবসা করে। করোনার কারণে নাকি তার ব্যবসা মাইর গেছে। সে বর্তমানে বেকার। সংসার রেখে আমি চলে এসেছি টেকনাফে। সার্কুলার হলেই আমি আবেদন করতাম এবং চেষ্টা করতাম পড়াশোনার।’
‘এদিকে শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে চাপ দেয় বাচ্চা নেওয়ার জন্য। আমি বাচ্চা নেই না। কারণ, চাকরিতে শর্ত আছে, বাচ্চা নেওয়া যাবে না। আমি স্বামীকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি। বাচ্চা কয়েক দিন পরেও নেওয়া যাবে। চাকরিটা যদি হয়। এটা আমার জীবনের শেষ সরকারি চাকরির আবেদন। একটা পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলতে শুরু করল, এই মেয়ে সংসার করবে না। অন্য কারও সঙ্গে হয়তো সম্পর্ক আছে। এই মেয়ে চলে যাবে। যে কারণে বাচ্চা নিচ্ছে না। এই অপবাদও আমি নিয়েছি। এভাবে সময় পার করছিলাম। ২০২৩ সালে পরীক্ষা হলো। এর মধ্যে বাচ্চা কনসিভ হয়। যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, তখন গর্ভের বয়স ছয় মাস। রিটেন পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর চলে আসলে, আমি মেডিসিন খেয়ে ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি। শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির কাউকে বলি না। বলি, আমি পড়ে গিয়েছিলাম। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। ওদিকে স্বামী বেকার। বাবা-মাকে দেখতে হয়। বাচ্চার জন্য যদি আমার চাকরি না হয়! অ্যাবরশন হওয়ার পর অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বাচ্চা না নেওয়ায় স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। স্বামীর সঙ্গে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। পাঁচ মাস আগে স্বামীর সঙ্গে শেষ একবার যোগাযোগ হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। আমরা সেপারেশনে যাব এ রকম অবস্থায় আছি, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি।’
তিনি ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বলেন, ‘এখন চার বছর পর নিয়োগ বাতিল করল। আমি এখন কী করব! আমার বাচ্চা গেল, স্বামী গেল! এখন স্বামীর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই। এদিকে আমার বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে। আমার কথা, যারা দুর্নীতি করেছে বা যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য আমি সবকিছু কেন হারাব। নোটিশ বাতিল করে আমাদের ভাইভার ফল প্রকাশ করা হোক।’
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না—এমন শর্ত দিয়ে ২০২০ সালে ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সেখানে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ১ হাজার ৮০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিন লাখের বেশি নারী ওই পদের জন্য আবেদন করেন। আর ওই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ১১ মে। পরে ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে ১৪ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন-সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ভুক্তভোগী কয়েকজন।
হাইকোর্টে রিট
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা পরিপত্র কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বাস্থ্যসচিব, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ চার বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চার নিয়োগপ্রত্যাশীর রিটে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) এই রুল জারি করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রুলের শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দিক বা না দিক, ওই দিন শুনানি হবে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সাড়ে তিন বছর পর এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ না করে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, ওই (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) পদে নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ করতে হয়। ইতিমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছে, আমরা রিটে উল্লেখ করেছি। এখন আবার লিখিত পরীক্ষা হলে আবার ব্যয় হবে। আর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ পেতে আরও তিন বছর লেগে যেতে পারে নিয়োগপ্রত্যাশীদের।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে সারা দেশে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ২ হাজার ৬৭৬টি শূন্য ছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এই জবটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এরা (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদান করে থাকে। এদের কারণে সরকার মাতৃমৃত্যু, প্রসূতিমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে পেরেছে। এই জায়গাটায় সাকসেস আছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এই জায়গায় পাবলিক ইন্টারেস্ট আছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ইন্টারেস্ট আছে। তিনি বলেন, কোনো কথাবার্তা নাই, সচিব পরিবর্তনে হঠাৎ মনে হলো রিটেন নেবে। যদি রিটেন নেয়, তাহলে ভাইভা নিল কেন? রিটেনে গন্ডগোল, তাহলে তখনই বাতিল করত। তাঁর প্রশ্ন, রিটেন পরীক্ষায় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তাহলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
একই ভুক্তভোগী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ছিটমহলের বাসিন্দা ফৌজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাই। এর আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আমাদের আবেদন করার কোনো সুযোগ ছিল না। নাগরিকত্ব লাভের পর সরকারি একাধিক চাকরিতে আবেদন করে তিনটিতে ভাইভায় অংশ নিই। আগের দুটিতে চাকরি হয়নি। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ছিল সরকারি চাকরির জন্য আমার শেষ ভাইভা পরীক্ষা। এরই মধ্যে বয়স ৩০ শেষ হয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আর কোনো সুযোগও নেই। এফডব্লিউভি পদে নিয়োগের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না বলে একটি শর্ত দেওয়া ছিল। যে কারণে বিয়ে করিনি। যখন আবেদন করি তখন বয়স ২৭ বছর ছিল, এখন ৩০ বছরের বেশি। হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় আমি হতাশ। আমি এখন কী করব জানি না। আমি পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের এই নোটিশ মানি না।’
জয়পুরহাটের একজন প্রার্থী চাকরির আশায় বিয়ের আট বছরেও সন্তান নেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর স্বামী-সংসার সামাল দিয়ে সরকারি চাকরির আশায় পড়ালেখা করি। ২০২০ সালের মার্চে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে সার্কুলার হলে গত চার বছর আমরা বাচ্চা নিইনি। কেননা, যদি বাচ্চা কনসিভ করি, আর যদি চাকরির পরীক্ষা হয়ে যায়, আর যদি টিকে যাই, তাহলে গর্ভধারণের কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ব। এ কারণে আমরা বাচ্চা নেইনি।’
পরিচিত অনেক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে ভাইভা ভালো দিয়েছে। যে কারণে বাচ্চা নষ্ট করেছে।’ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে আট বছর হয়েছে। প্রথম দিকে সরকারি চাকরির আশায় পড়াশোনার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর এই সার্কুলারে আবেদন করার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর যখন রিটেন দিয়ে টিকে যাই এবং ভাইভা দিই; এরপর তো বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবতেও পারিনি। এই কারণে যে হয়তো আমার চাকরিটা হয়ে যাবে। তারপর যখন ভাইভা দেওয়ার পর সাত মাস কেটে গেল, ওনারা রেজাল্ট দিচ্ছিলেন না। তারপর আমরা বারবার আন্দোলন করেছি। তখন ওনারা বিষয়টি দেখে ওই শর্ত বাতিল করেছে। এর আগে আমাদের সাড়ে তিন বছর জীবন থেকে চলে গেছে। ওনারা এখন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বাতিল করছে। ওনারা কি আমাদের চারটি বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন! আমরা চাকরির আশায় এত দিন বাচ্চা নেইনি। এখন আমাদের বাচ্চা নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাহলে এই দায়ভার কেন আমরা চাকরিপ্রার্থীরা নেব?’
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ৩০ হয়ে গেছে। আমার চাকরির বয়স শেষ। আমি বাচ্চাও নিলাম না। এই নিয়োগটা বাতিল করে মেয়েদের জন্য একটি হতাশাজনক বার্তা দিচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ওনারা নিয়োগ যদি বাতিলই করবে, তাহলে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করত! চার বছর কেন নিল? আমাদের এই চারটা বছর কে ফিরিয়ে দেবে?’
চাকরির আশায় গর্ভপাত করিয়েছেন জামালপুরের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বাচ্চা আছে। বয়স ১০ বছর। ২০১৪ সালে ওর জন্ম। ২০১৯ সালে বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কনসিভ করি। দুই মাস পর মার্চে সার্কুলার হয়। পরে অ্যাবরশন করে ফেলি। পরে অক্লান্ত পরিশ্রম করি। যে কারণে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করি। ভাইভা পরীক্ষায়ও আমি ভালো করেছি। আমাকে ১২টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি ৮টি প্রশ্নের উত্তর ভালো করে দিয়েছি। একটির উত্তর মোটামুটি দিয়েছি। আমি আশাবাদী যে চাকরিটা আমার হবে। এখন তীরে এসে তরি ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমি কী করব? আমার ৩০ বছর শেষ হয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এ চাকরিটা পাওয়ার আশায় বাচ্চাটা অ্যাবরশন করলাম। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলো। তাদের (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর) অযৌক্তিক শর্ত পালন করতে গিয়ে আমার এই সমস্যাগুলো হয়েছে। এই নিয়োগটা বাতিল করায় পরিবারে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি। নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি।’
জামালপুরের এই নারী বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এখন নিয়োগটা বাতিল করছে। দুর্নীতি করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করেছেন। তাঁদের শাস্তি হোক। আমরা কেন শাস্তি পাব? আমরা চাই, নিয়োগ বাতিলের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে আমাদের ফল প্রকাশ করা হোক।’
সুলতান মাহমুদ, ঢাকা

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘মা না হওয়ার’ শর্ত বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সরকারি চাকরির আশায় অনেক নারী সন্তান নেননি, কেউ গর্ভপাত করিয়েছেন, অনেকের স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, সন্তান না নেওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে অনেককে। পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও অনেকে বিয়ে পিছিয়েছেন। চার বছর পর হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় সাত হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী এখন চরম হতাশায় ভুগছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সারা দেশে এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আজকের পত্রিকার সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন এই চার বছরের করুণ অভিজ্ঞতার কথা।

খুলনা বিভাগের এক চাকরিপ্রার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি চাকরির আশায় আমরা লাইফটাই শেষ! খুলনা অঞ্চলে বাড়ি হলেও এখন থাকতে হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে, অনেকটা একা। কাজ করছি একটি বেসরকারি সংস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সার্কুলারটা হয় ২০২০ সালে মার্চে এবং আমার বিয়ে হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার ভাই নাই। বাসায় আমার বৃদ্ধ মা, বাবা ও ছোট দুই বোন আছে। অভাবের সংসার। পরিবারের পুরো দায়িত্ব আমার ওপর। মা-বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। পড়ালেখা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। হোস্টেলে এক বেলার ভাত দুই বেলা খাইছি। কখনো এক দিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে নষ্ট না করে পরের দিন খাইছি। আমি তিন-চারটা ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি। সরকারি চাকরি হয়নি। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যখন বিয়ে হয়, করোনার মধ্যে আমি আবেদন করেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করার জন্য। ২৭ সেপ্টেম্বর চাকরিটা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিয়ের পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্বশুরবাড়ি যাই। আর ২৫ সেপ্টেম্বর হাতের মেহেদির লাল দাগ নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে চলে আসি চাকরিতে যোগ দিতে। বিয়ের আগে শুনেছি, আমার স্বামী ব্যবসা করে। করোনার কারণে নাকি তার ব্যবসা মাইর গেছে। সে বর্তমানে বেকার। সংসার রেখে আমি চলে এসেছি টেকনাফে। সার্কুলার হলেই আমি আবেদন করতাম এবং চেষ্টা করতাম পড়াশোনার।’
‘এদিকে শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে চাপ দেয় বাচ্চা নেওয়ার জন্য। আমি বাচ্চা নেই না। কারণ, চাকরিতে শর্ত আছে, বাচ্চা নেওয়া যাবে না। আমি স্বামীকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি। বাচ্চা কয়েক দিন পরেও নেওয়া যাবে। চাকরিটা যদি হয়। এটা আমার জীবনের শেষ সরকারি চাকরির আবেদন। একটা পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলতে শুরু করল, এই মেয়ে সংসার করবে না। অন্য কারও সঙ্গে হয়তো সম্পর্ক আছে। এই মেয়ে চলে যাবে। যে কারণে বাচ্চা নিচ্ছে না। এই অপবাদও আমি নিয়েছি। এভাবে সময় পার করছিলাম। ২০২৩ সালে পরীক্ষা হলো। এর মধ্যে বাচ্চা কনসিভ হয়। যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, তখন গর্ভের বয়স ছয় মাস। রিটেন পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর চলে আসলে, আমি মেডিসিন খেয়ে ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি। শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির কাউকে বলি না। বলি, আমি পড়ে গিয়েছিলাম। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। ওদিকে স্বামী বেকার। বাবা-মাকে দেখতে হয়। বাচ্চার জন্য যদি আমার চাকরি না হয়! অ্যাবরশন হওয়ার পর অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বাচ্চা না নেওয়ায় স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। স্বামীর সঙ্গে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। পাঁচ মাস আগে স্বামীর সঙ্গে শেষ একবার যোগাযোগ হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। আমরা সেপারেশনে যাব এ রকম অবস্থায় আছি, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি।’
তিনি ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বলেন, ‘এখন চার বছর পর নিয়োগ বাতিল করল। আমি এখন কী করব! আমার বাচ্চা গেল, স্বামী গেল! এখন স্বামীর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই। এদিকে আমার বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে। আমার কথা, যারা দুর্নীতি করেছে বা যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য আমি সবকিছু কেন হারাব। নোটিশ বাতিল করে আমাদের ভাইভার ফল প্রকাশ করা হোক।’
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না—এমন শর্ত দিয়ে ২০২০ সালে ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সেখানে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ১ হাজার ৮০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিন লাখের বেশি নারী ওই পদের জন্য আবেদন করেন। আর ওই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ১১ মে। পরে ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে ১৪ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন-সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ভুক্তভোগী কয়েকজন।
হাইকোর্টে রিট
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা পরিপত্র কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বাস্থ্যসচিব, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ চার বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চার নিয়োগপ্রত্যাশীর রিটে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) এই রুল জারি করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রুলের শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দিক বা না দিক, ওই দিন শুনানি হবে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সাড়ে তিন বছর পর এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ না করে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, ওই (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) পদে নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ করতে হয়। ইতিমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছে, আমরা রিটে উল্লেখ করেছি। এখন আবার লিখিত পরীক্ষা হলে আবার ব্যয় হবে। আর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ পেতে আরও তিন বছর লেগে যেতে পারে নিয়োগপ্রত্যাশীদের।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে সারা দেশে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ২ হাজার ৬৭৬টি শূন্য ছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এই জবটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এরা (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদান করে থাকে। এদের কারণে সরকার মাতৃমৃত্যু, প্রসূতিমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে পেরেছে। এই জায়গাটায় সাকসেস আছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এই জায়গায় পাবলিক ইন্টারেস্ট আছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ইন্টারেস্ট আছে। তিনি বলেন, কোনো কথাবার্তা নাই, সচিব পরিবর্তনে হঠাৎ মনে হলো রিটেন নেবে। যদি রিটেন নেয়, তাহলে ভাইভা নিল কেন? রিটেনে গন্ডগোল, তাহলে তখনই বাতিল করত। তাঁর প্রশ্ন, রিটেন পরীক্ষায় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তাহলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
একই ভুক্তভোগী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ছিটমহলের বাসিন্দা ফৌজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাই। এর আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আমাদের আবেদন করার কোনো সুযোগ ছিল না। নাগরিকত্ব লাভের পর সরকারি একাধিক চাকরিতে আবেদন করে তিনটিতে ভাইভায় অংশ নিই। আগের দুটিতে চাকরি হয়নি। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ছিল সরকারি চাকরির জন্য আমার শেষ ভাইভা পরীক্ষা। এরই মধ্যে বয়স ৩০ শেষ হয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আর কোনো সুযোগও নেই। এফডব্লিউভি পদে নিয়োগের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না বলে একটি শর্ত দেওয়া ছিল। যে কারণে বিয়ে করিনি। যখন আবেদন করি তখন বয়স ২৭ বছর ছিল, এখন ৩০ বছরের বেশি। হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় আমি হতাশ। আমি এখন কী করব জানি না। আমি পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের এই নোটিশ মানি না।’
জয়পুরহাটের একজন প্রার্থী চাকরির আশায় বিয়ের আট বছরেও সন্তান নেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর স্বামী-সংসার সামাল দিয়ে সরকারি চাকরির আশায় পড়ালেখা করি। ২০২০ সালের মার্চে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে সার্কুলার হলে গত চার বছর আমরা বাচ্চা নিইনি। কেননা, যদি বাচ্চা কনসিভ করি, আর যদি চাকরির পরীক্ষা হয়ে যায়, আর যদি টিকে যাই, তাহলে গর্ভধারণের কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ব। এ কারণে আমরা বাচ্চা নেইনি।’
পরিচিত অনেক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে ভাইভা ভালো দিয়েছে। যে কারণে বাচ্চা নষ্ট করেছে।’ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে আট বছর হয়েছে। প্রথম দিকে সরকারি চাকরির আশায় পড়াশোনার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর এই সার্কুলারে আবেদন করার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর যখন রিটেন দিয়ে টিকে যাই এবং ভাইভা দিই; এরপর তো বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবতেও পারিনি। এই কারণে যে হয়তো আমার চাকরিটা হয়ে যাবে। তারপর যখন ভাইভা দেওয়ার পর সাত মাস কেটে গেল, ওনারা রেজাল্ট দিচ্ছিলেন না। তারপর আমরা বারবার আন্দোলন করেছি। তখন ওনারা বিষয়টি দেখে ওই শর্ত বাতিল করেছে। এর আগে আমাদের সাড়ে তিন বছর জীবন থেকে চলে গেছে। ওনারা এখন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বাতিল করছে। ওনারা কি আমাদের চারটি বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন! আমরা চাকরির আশায় এত দিন বাচ্চা নেইনি। এখন আমাদের বাচ্চা নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাহলে এই দায়ভার কেন আমরা চাকরিপ্রার্থীরা নেব?’
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ৩০ হয়ে গেছে। আমার চাকরির বয়স শেষ। আমি বাচ্চাও নিলাম না। এই নিয়োগটা বাতিল করে মেয়েদের জন্য একটি হতাশাজনক বার্তা দিচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ওনারা নিয়োগ যদি বাতিলই করবে, তাহলে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করত! চার বছর কেন নিল? আমাদের এই চারটা বছর কে ফিরিয়ে দেবে?’
চাকরির আশায় গর্ভপাত করিয়েছেন জামালপুরের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বাচ্চা আছে। বয়স ১০ বছর। ২০১৪ সালে ওর জন্ম। ২০১৯ সালে বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কনসিভ করি। দুই মাস পর মার্চে সার্কুলার হয়। পরে অ্যাবরশন করে ফেলি। পরে অক্লান্ত পরিশ্রম করি। যে কারণে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করি। ভাইভা পরীক্ষায়ও আমি ভালো করেছি। আমাকে ১২টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি ৮টি প্রশ্নের উত্তর ভালো করে দিয়েছি। একটির উত্তর মোটামুটি দিয়েছি। আমি আশাবাদী যে চাকরিটা আমার হবে। এখন তীরে এসে তরি ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমি কী করব? আমার ৩০ বছর শেষ হয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এ চাকরিটা পাওয়ার আশায় বাচ্চাটা অ্যাবরশন করলাম। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলো। তাদের (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর) অযৌক্তিক শর্ত পালন করতে গিয়ে আমার এই সমস্যাগুলো হয়েছে। এই নিয়োগটা বাতিল করায় পরিবারে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি। নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি।’
জামালপুরের এই নারী বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এখন নিয়োগটা বাতিল করছে। দুর্নীতি করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করেছেন। তাঁদের শাস্তি হোক। আমরা কেন শাস্তি পাব? আমরা চাই, নিয়োগ বাতিলের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে আমাদের ফল প্রকাশ করা হোক।’

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘মা না হওয়ার’ শর্ত বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সরকারি চাকরির আশায় অনেক নারী সন্তান নেননি, কেউ গর্ভপাত করিয়েছেন, অনেকের স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, সন্তান না নেওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে অনেককে। পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও অনেকে বিয়ে পিছিয়েছেন। চার বছর পর হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় সাত হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী এখন চরম হতাশায় ভুগছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সারা দেশে এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আজকের পত্রিকার সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন এই চার বছরের করুণ অভিজ্ঞতার কথা।

খুলনা বিভাগের এক চাকরিপ্রার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি চাকরির আশায় আমরা লাইফটাই শেষ! খুলনা অঞ্চলে বাড়ি হলেও এখন থাকতে হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে, অনেকটা একা। কাজ করছি একটি বেসরকারি সংস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সার্কুলারটা হয় ২০২০ সালে মার্চে এবং আমার বিয়ে হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার ভাই নাই। বাসায় আমার বৃদ্ধ মা, বাবা ও ছোট দুই বোন আছে। অভাবের সংসার। পরিবারের পুরো দায়িত্ব আমার ওপর। মা-বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। পড়ালেখা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। হোস্টেলে এক বেলার ভাত দুই বেলা খাইছি। কখনো এক দিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে নষ্ট না করে পরের দিন খাইছি। আমি তিন-চারটা ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি। সরকারি চাকরি হয়নি। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যখন বিয়ে হয়, করোনার মধ্যে আমি আবেদন করেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করার জন্য। ২৭ সেপ্টেম্বর চাকরিটা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিয়ের পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্বশুরবাড়ি যাই। আর ২৫ সেপ্টেম্বর হাতের মেহেদির লাল দাগ নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে চলে আসি চাকরিতে যোগ দিতে। বিয়ের আগে শুনেছি, আমার স্বামী ব্যবসা করে। করোনার কারণে নাকি তার ব্যবসা মাইর গেছে। সে বর্তমানে বেকার। সংসার রেখে আমি চলে এসেছি টেকনাফে। সার্কুলার হলেই আমি আবেদন করতাম এবং চেষ্টা করতাম পড়াশোনার।’
‘এদিকে শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে চাপ দেয় বাচ্চা নেওয়ার জন্য। আমি বাচ্চা নেই না। কারণ, চাকরিতে শর্ত আছে, বাচ্চা নেওয়া যাবে না। আমি স্বামীকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি। বাচ্চা কয়েক দিন পরেও নেওয়া যাবে। চাকরিটা যদি হয়। এটা আমার জীবনের শেষ সরকারি চাকরির আবেদন। একটা পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলতে শুরু করল, এই মেয়ে সংসার করবে না। অন্য কারও সঙ্গে হয়তো সম্পর্ক আছে। এই মেয়ে চলে যাবে। যে কারণে বাচ্চা নিচ্ছে না। এই অপবাদও আমি নিয়েছি। এভাবে সময় পার করছিলাম। ২০২৩ সালে পরীক্ষা হলো। এর মধ্যে বাচ্চা কনসিভ হয়। যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, তখন গর্ভের বয়স ছয় মাস। রিটেন পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর চলে আসলে, আমি মেডিসিন খেয়ে ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি। শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির কাউকে বলি না। বলি, আমি পড়ে গিয়েছিলাম। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। ওদিকে স্বামী বেকার। বাবা-মাকে দেখতে হয়। বাচ্চার জন্য যদি আমার চাকরি না হয়! অ্যাবরশন হওয়ার পর অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বাচ্চা না নেওয়ায় স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। স্বামীর সঙ্গে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। পাঁচ মাস আগে স্বামীর সঙ্গে শেষ একবার যোগাযোগ হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। আমরা সেপারেশনে যাব এ রকম অবস্থায় আছি, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি।’
তিনি ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বলেন, ‘এখন চার বছর পর নিয়োগ বাতিল করল। আমি এখন কী করব! আমার বাচ্চা গেল, স্বামী গেল! এখন স্বামীর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই। এদিকে আমার বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে। আমার কথা, যারা দুর্নীতি করেছে বা যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য আমি সবকিছু কেন হারাব। নোটিশ বাতিল করে আমাদের ভাইভার ফল প্রকাশ করা হোক।’
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না—এমন শর্ত দিয়ে ২০২০ সালে ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সেখানে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ১ হাজার ৮০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিন লাখের বেশি নারী ওই পদের জন্য আবেদন করেন। আর ওই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ১১ মে। পরে ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে ১৪ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন-সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ভুক্তভোগী কয়েকজন।
হাইকোর্টে রিট
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা পরিপত্র কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বাস্থ্যসচিব, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ চার বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চার নিয়োগপ্রত্যাশীর রিটে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) এই রুল জারি করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রুলের শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দিক বা না দিক, ওই দিন শুনানি হবে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সাড়ে তিন বছর পর এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ না করে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, ওই (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) পদে নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ করতে হয়। ইতিমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছে, আমরা রিটে উল্লেখ করেছি। এখন আবার লিখিত পরীক্ষা হলে আবার ব্যয় হবে। আর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ পেতে আরও তিন বছর লেগে যেতে পারে নিয়োগপ্রত্যাশীদের।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে সারা দেশে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ২ হাজার ৬৭৬টি শূন্য ছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এই জবটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এরা (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদান করে থাকে। এদের কারণে সরকার মাতৃমৃত্যু, প্রসূতিমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে পেরেছে। এই জায়গাটায় সাকসেস আছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এই জায়গায় পাবলিক ইন্টারেস্ট আছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ইন্টারেস্ট আছে। তিনি বলেন, কোনো কথাবার্তা নাই, সচিব পরিবর্তনে হঠাৎ মনে হলো রিটেন নেবে। যদি রিটেন নেয়, তাহলে ভাইভা নিল কেন? রিটেনে গন্ডগোল, তাহলে তখনই বাতিল করত। তাঁর প্রশ্ন, রিটেন পরীক্ষায় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তাহলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
একই ভুক্তভোগী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ছিটমহলের বাসিন্দা ফৌজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাই। এর আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আমাদের আবেদন করার কোনো সুযোগ ছিল না। নাগরিকত্ব লাভের পর সরকারি একাধিক চাকরিতে আবেদন করে তিনটিতে ভাইভায় অংশ নিই। আগের দুটিতে চাকরি হয়নি। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ছিল সরকারি চাকরির জন্য আমার শেষ ভাইভা পরীক্ষা। এরই মধ্যে বয়স ৩০ শেষ হয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আর কোনো সুযোগও নেই। এফডব্লিউভি পদে নিয়োগের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না বলে একটি শর্ত দেওয়া ছিল। যে কারণে বিয়ে করিনি। যখন আবেদন করি তখন বয়স ২৭ বছর ছিল, এখন ৩০ বছরের বেশি। হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় আমি হতাশ। আমি এখন কী করব জানি না। আমি পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের এই নোটিশ মানি না।’
জয়পুরহাটের একজন প্রার্থী চাকরির আশায় বিয়ের আট বছরেও সন্তান নেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর স্বামী-সংসার সামাল দিয়ে সরকারি চাকরির আশায় পড়ালেখা করি। ২০২০ সালের মার্চে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে সার্কুলার হলে গত চার বছর আমরা বাচ্চা নিইনি। কেননা, যদি বাচ্চা কনসিভ করি, আর যদি চাকরির পরীক্ষা হয়ে যায়, আর যদি টিকে যাই, তাহলে গর্ভধারণের কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ব। এ কারণে আমরা বাচ্চা নেইনি।’
পরিচিত অনেক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে ভাইভা ভালো দিয়েছে। যে কারণে বাচ্চা নষ্ট করেছে।’ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে আট বছর হয়েছে। প্রথম দিকে সরকারি চাকরির আশায় পড়াশোনার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর এই সার্কুলারে আবেদন করার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর যখন রিটেন দিয়ে টিকে যাই এবং ভাইভা দিই; এরপর তো বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবতেও পারিনি। এই কারণে যে হয়তো আমার চাকরিটা হয়ে যাবে। তারপর যখন ভাইভা দেওয়ার পর সাত মাস কেটে গেল, ওনারা রেজাল্ট দিচ্ছিলেন না। তারপর আমরা বারবার আন্দোলন করেছি। তখন ওনারা বিষয়টি দেখে ওই শর্ত বাতিল করেছে। এর আগে আমাদের সাড়ে তিন বছর জীবন থেকে চলে গেছে। ওনারা এখন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বাতিল করছে। ওনারা কি আমাদের চারটি বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন! আমরা চাকরির আশায় এত দিন বাচ্চা নেইনি। এখন আমাদের বাচ্চা নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাহলে এই দায়ভার কেন আমরা চাকরিপ্রার্থীরা নেব?’
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ৩০ হয়ে গেছে। আমার চাকরির বয়স শেষ। আমি বাচ্চাও নিলাম না। এই নিয়োগটা বাতিল করে মেয়েদের জন্য একটি হতাশাজনক বার্তা দিচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ওনারা নিয়োগ যদি বাতিলই করবে, তাহলে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করত! চার বছর কেন নিল? আমাদের এই চারটা বছর কে ফিরিয়ে দেবে?’
চাকরির আশায় গর্ভপাত করিয়েছেন জামালপুরের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বাচ্চা আছে। বয়স ১০ বছর। ২০১৪ সালে ওর জন্ম। ২০১৯ সালে বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কনসিভ করি। দুই মাস পর মার্চে সার্কুলার হয়। পরে অ্যাবরশন করে ফেলি। পরে অক্লান্ত পরিশ্রম করি। যে কারণে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করি। ভাইভা পরীক্ষায়ও আমি ভালো করেছি। আমাকে ১২টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি ৮টি প্রশ্নের উত্তর ভালো করে দিয়েছি। একটির উত্তর মোটামুটি দিয়েছি। আমি আশাবাদী যে চাকরিটা আমার হবে। এখন তীরে এসে তরি ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমি কী করব? আমার ৩০ বছর শেষ হয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এ চাকরিটা পাওয়ার আশায় বাচ্চাটা অ্যাবরশন করলাম। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলো। তাদের (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর) অযৌক্তিক শর্ত পালন করতে গিয়ে আমার এই সমস্যাগুলো হয়েছে। এই নিয়োগটা বাতিল করায় পরিবারে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি। নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি।’
জামালপুরের এই নারী বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এখন নিয়োগটা বাতিল করছে। দুর্নীতি করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করেছেন। তাঁদের শাস্তি হোক। আমরা কেন শাস্তি পাব? আমরা চাই, নিয়োগ বাতিলের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে আমাদের ফল প্রকাশ করা হোক।’

আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মী রাকিবুল আজম। সেদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি নেন।
১৪ মিনিট আগে
ভূমি অফিসে গিয়ে মানুষকে এখনো হয়রানি হতে হয় বলে স্বীকার করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। এ জন্য অনলাইনে সব ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া জনগণকে সহজে ভূমিসেবা দিতে সব জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে জানিয়েছেন তিনি।
৩৬ মিনিট আগে
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
৩ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে আজ রোববার দুপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি দেশের আধুনিক এই গণপরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াল। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে উড়ালপথের পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। ১৪০ থেকে ১৫০ কেজির....
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সাবেক কর্মীর প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমানসহ তিনজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রৌনক জাহান তাকি এই আদেশ দেন বলে নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।
তিনি বলেন, আসামি তিনজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়া অন্য দুজন হলেন গ্রামীণফোনের ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফজলুল হক ও চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার সায়িদা হোসেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মী রাকিবুল আজম। সেদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি নেন।
পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের ২৬ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়।
মামলার অভিযোগ বলা হয়, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গ্রামীণফোন কোম্পানি লিমিটেডে চাকরি করতেন রাকিবুল আজম। চাকরিরত অবস্থায় ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আউটসোর্সিংয়ের রক্ষিত টাকা কর্মচারীদের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই আউটসোর্সিংয়ের কাজের জন্য কোম্পানির কাছে বাদীর ৮ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৮ টাকা পাওনা হয়।
গত বছরের ১০ নভেম্বর বাদীকে তাঁর পাওনা টাকা দেওয়ার জন্য ডাকা হয়। টাকা আনতে গেলে আসামিরা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বাদীর স্বাক্ষর নেন। কিন্তু বাদীর পাওনা টাকা ফেরত না দিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেন আসামি তিনজন।

সাবেক কর্মীর প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমানসহ তিনজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রৌনক জাহান তাকি এই আদেশ দেন বলে নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।
তিনি বলেন, আসামি তিনজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়া অন্য দুজন হলেন গ্রামীণফোনের ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফজলুল হক ও চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার সায়িদা হোসেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মী রাকিবুল আজম। সেদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি নেন।
পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের ২৬ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়।
মামলার অভিযোগ বলা হয়, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গ্রামীণফোন কোম্পানি লিমিটেডে চাকরি করতেন রাকিবুল আজম। চাকরিরত অবস্থায় ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আউটসোর্সিংয়ের রক্ষিত টাকা কর্মচারীদের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই আউটসোর্সিংয়ের কাজের জন্য কোম্পানির কাছে বাদীর ৮ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৮ টাকা পাওনা হয়।
গত বছরের ১০ নভেম্বর বাদীকে তাঁর পাওনা টাকা দেওয়ার জন্য ডাকা হয়। টাকা আনতে গেলে আসামিরা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বাদীর স্বাক্ষর নেন। কিন্তু বাদীর পাওনা টাকা ফেরত না দিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেন আসামি তিনজন।

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদ
২৬ জানুয়ারি ২০২৪
ভূমি অফিসে গিয়ে মানুষকে এখনো হয়রানি হতে হয় বলে স্বীকার করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। এ জন্য অনলাইনে সব ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া জনগণকে সহজে ভূমিসেবা দিতে সব জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে জানিয়েছেন তিনি।
৩৬ মিনিট আগে
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
৩ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে আজ রোববার দুপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি দেশের আধুনিক এই গণপরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াল। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে উড়ালপথের পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। ১৪০ থেকে ১৫০ কেজির....
৩ ঘণ্টা আগেবিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

ভূমি অফিসে গিয়ে মানুষকে এখনো হয়রানি হতে হয় বলে স্বীকার করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। এ জন্য অনলাইনে সব ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া জনগণকে সহজে ভূমিসেবা দিতে সব জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে জানিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘জনবান্ধব ভূমিসেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানান ভূমিসচিব। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) উদ্যোগে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অটোমেটেড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এই সেমিনারের আয়োজন করে।
ভূমিসচিব বলেন, ‘ভূমিসেবার বিভিন্ন পর্যায়ে দালাল রয়েছে। কিন্তু ভূমির সব কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় করে না, আইন মন্ত্রণালয়ও করে। কিন্তু অভিযোগের তীর আমাদের দিকেই আসে। মানুষ ভূমি অফিসে হয়রানির শিকার হয়—এটা স্বীকার করছি। তাই আমরা ভেবেছি, কীভাবে ঘরে বসে সেবা নিশ্চিত করা যায়। তাহলেই অফিসভিত্তিক হয়রানি কমবে।’
সারা দেশে বর্তমানে ৮১৭টি ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র চালু রয়েছে জানিয়ে সালেহ আহমেদ বলেন, ‘নাগরিকের চাওয়া-পাওয়ার অনেকটাই পূরণ হয়েছে। আমরা অনেক কাজ করেছি, তবে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে জনগণ সহজে ভূমিসেবা পেতে পারেন।’
ভূমিসচিব জানান, সারা দেশে ভূমিসংক্রান্ত প্রায় ১০ লাখ মামলা রয়েছে এবং প্রতিদিন কয়েক হাজার মামলা হচ্ছে। ভূমিসংক্রান্ত মামলার প্রায় ৮০ শতাংশই জরিপকেন্দ্রিক। সিএস জরিপ করতে ৫২ বছর লেগেছিল। এখন জরিপ করতে এত সময় লাগবে না, জোনিং করা হয়েছে। বালুমহালের জন্য আলাদা ইউনিট করা হয়েছে। ফলে বালুমহাল নিয়ে সব অপরাধ বন্ধ না হলেও কমে এসেছে।
সালেহ আহমেদ বলেন, ‘আমরা অ্যাপ চালু করেছি, যার মাধ্যমে পরচা সংগ্রহ, নকশা পাওয়া, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সবই ঘরে বসে করা যায়। একসময় বালুমহাল নিয়ে বিশৃঙ্খলা ছিল, এখন একটি শাখার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পুরোপুরি শৃঙ্খলা না ফিরলেও অনেকটাই কমেছে।’
সেমিনারে ভূমিসংক্রান্ত ডিজিটাল সেবার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অটোমেটেড ভূমিসেবার সুফল ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন ঘরে বসে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছেন। ফলে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৩৭৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৮৬ কোটি টাকা।’
সেমিনারে জানানো হয়, ১৬১২২ হটলাইনের নম্বরের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা ভূমিসংক্রান্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই কল সেন্টার দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার কল গ্রহণ করছে। আগের অর্থবছরের থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ২২ কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৭৩ কেটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে।
বিএসআরএফ সভাপতি মাসউদুল হকের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল সেমিনার সঞ্চালনা করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সেমিনারে উপস্থিতি ছিলেন।

ভূমি অফিসে গিয়ে মানুষকে এখনো হয়রানি হতে হয় বলে স্বীকার করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। এ জন্য অনলাইনে সব ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া জনগণকে সহজে ভূমিসেবা দিতে সব জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে জানিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘জনবান্ধব ভূমিসেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানান ভূমিসচিব। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) উদ্যোগে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অটোমেটেড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এই সেমিনারের আয়োজন করে।
ভূমিসচিব বলেন, ‘ভূমিসেবার বিভিন্ন পর্যায়ে দালাল রয়েছে। কিন্তু ভূমির সব কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় করে না, আইন মন্ত্রণালয়ও করে। কিন্তু অভিযোগের তীর আমাদের দিকেই আসে। মানুষ ভূমি অফিসে হয়রানির শিকার হয়—এটা স্বীকার করছি। তাই আমরা ভেবেছি, কীভাবে ঘরে বসে সেবা নিশ্চিত করা যায়। তাহলেই অফিসভিত্তিক হয়রানি কমবে।’
সারা দেশে বর্তমানে ৮১৭টি ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র চালু রয়েছে জানিয়ে সালেহ আহমেদ বলেন, ‘নাগরিকের চাওয়া-পাওয়ার অনেকটাই পূরণ হয়েছে। আমরা অনেক কাজ করেছি, তবে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে জনগণ সহজে ভূমিসেবা পেতে পারেন।’
ভূমিসচিব জানান, সারা দেশে ভূমিসংক্রান্ত প্রায় ১০ লাখ মামলা রয়েছে এবং প্রতিদিন কয়েক হাজার মামলা হচ্ছে। ভূমিসংক্রান্ত মামলার প্রায় ৮০ শতাংশই জরিপকেন্দ্রিক। সিএস জরিপ করতে ৫২ বছর লেগেছিল। এখন জরিপ করতে এত সময় লাগবে না, জোনিং করা হয়েছে। বালুমহালের জন্য আলাদা ইউনিট করা হয়েছে। ফলে বালুমহাল নিয়ে সব অপরাধ বন্ধ না হলেও কমে এসেছে।
সালেহ আহমেদ বলেন, ‘আমরা অ্যাপ চালু করেছি, যার মাধ্যমে পরচা সংগ্রহ, নকশা পাওয়া, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সবই ঘরে বসে করা যায়। একসময় বালুমহাল নিয়ে বিশৃঙ্খলা ছিল, এখন একটি শাখার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পুরোপুরি শৃঙ্খলা না ফিরলেও অনেকটাই কমেছে।’
সেমিনারে ভূমিসংক্রান্ত ডিজিটাল সেবার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অটোমেটেড ভূমিসেবার সুফল ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন ঘরে বসে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছেন। ফলে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৩৭৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৮৬ কোটি টাকা।’
সেমিনারে জানানো হয়, ১৬১২২ হটলাইনের নম্বরের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা ভূমিসংক্রান্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই কল সেন্টার দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার কল গ্রহণ করছে। আগের অর্থবছরের থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ২২ কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৭৩ কেটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে।
বিএসআরএফ সভাপতি মাসউদুল হকের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল সেমিনার সঞ্চালনা করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সেমিনারে উপস্থিতি ছিলেন।

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদ
২৬ জানুয়ারি ২০২৪
আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মী রাকিবুল আজম। সেদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি নেন।
১৪ মিনিট আগে
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
৩ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে আজ রোববার দুপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি দেশের আধুনিক এই গণপরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াল। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে উড়ালপথের পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। ১৪০ থেকে ১৫০ কেজির....
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেটে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন তিনি।
সড়ক উপদেষ্টা জানান, মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে একজন পথচারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও দুজন আহত হয়েছেন। আহত দুজনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহত ব্যক্তির মরদেহ ওই হাসপাতালে আছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির সব দায়দায়িত্ব আমরা নেব। প্রাথমিকভাবে নিহত পরিবারকে ৫ লাখ টাকা সাহায্য দেওয়া হবে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের কেউ কর্মক্ষম থাকলে তাঁকে মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়া হবে।’
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মেট্রোরেলের সাবেক এমডি ও সেতুসচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটিতে আরও আছেন বুয়েটের অধ্যাপক এ বি এম তৌফিক হাসান, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সহকারী অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাহিদুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব ও সড়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসফিয়া সুলতানা।
কমিটি দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে বলে জানান উপদেষ্টা।
সড়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নির্মাণকাজের ত্রুটির জন্য হয়েছে নাকি নাশকতামূলক কিছু ঘটেছে, সেটি খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করবে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সুপারিশ করবে।’
আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ব্যক্তি ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মেট্রোরেল চলাচলের সময় ওপর থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড তাঁর মাথায় পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ডিউটিরত অবস্থায় কাছেই ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত গিয়ে দেখি, এক ব্যক্তি রাস্তায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।’
নিহত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা একটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। তাতে নাম লেখা আবুল কালাম এবং বাড়ি শরীয়তপুর। জন্মসাল ১৯৯০।

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেটে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন তিনি।
সড়ক উপদেষ্টা জানান, মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে একজন পথচারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও দুজন আহত হয়েছেন। আহত দুজনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহত ব্যক্তির মরদেহ ওই হাসপাতালে আছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির সব দায়দায়িত্ব আমরা নেব। প্রাথমিকভাবে নিহত পরিবারকে ৫ লাখ টাকা সাহায্য দেওয়া হবে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের কেউ কর্মক্ষম থাকলে তাঁকে মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়া হবে।’
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মেট্রোরেলের সাবেক এমডি ও সেতুসচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটিতে আরও আছেন বুয়েটের অধ্যাপক এ বি এম তৌফিক হাসান, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সহকারী অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাহিদুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব ও সড়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসফিয়া সুলতানা।
কমিটি দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে বলে জানান উপদেষ্টা।
সড়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নির্মাণকাজের ত্রুটির জন্য হয়েছে নাকি নাশকতামূলক কিছু ঘটেছে, সেটি খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করবে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সুপারিশ করবে।’
আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ব্যক্তি ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মেট্রোরেল চলাচলের সময় ওপর থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড তাঁর মাথায় পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ডিউটিরত অবস্থায় কাছেই ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত গিয়ে দেখি, এক ব্যক্তি রাস্তায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।’
নিহত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা একটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। তাতে নাম লেখা আবুল কালাম এবং বাড়ি শরীয়তপুর। জন্মসাল ১৯৯০।

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদ
২৬ জানুয়ারি ২০২৪
আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মী রাকিবুল আজম। সেদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি নেন।
১৪ মিনিট আগে
ভূমি অফিসে গিয়ে মানুষকে এখনো হয়রানি হতে হয় বলে স্বীকার করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। এ জন্য অনলাইনে সব ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া জনগণকে সহজে ভূমিসেবা দিতে সব জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে জানিয়েছেন তিনি।
৩৬ মিনিট আগে
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে আজ রোববার দুপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি দেশের আধুনিক এই গণপরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াল। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে উড়ালপথের পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। ১৪০ থেকে ১৫০ কেজির....
৩ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে আজ রোববার দুপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি দেশের আধুনিক এই গণপরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াল। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে উড়ালপথের পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। ১৪০ থেকে ১৫০ কেজির এই কাঠামো এক পথচারীর মাথায় পড়লে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনার পরপরই জননিরাপত্তা এবং কারিগরি দিক বিবেচনা করে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এই দুর্ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো ঘটল। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। ফলে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১১ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে একই কাঠামোগত উপাদানের পুনরাবৃত্তিমূলক ত্রুটি মেট্রোরেলের মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন তুলেছে।
বিয়ারিং প্যাড: কাঠামোর মেরুদণ্ড এবং এর জটিল প্রকৌশল
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড (Metrorail Bearing Pads) হলো উড়ালপথের স্থায়িত্ব ও সুরক্ষার জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি বিশেষ ধরনের রাবার বা ইলাস্টোমেরিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। এটি সেতুর কাঠামোগত উপাদানগুলোর মধ্যে একটি কুশন বা কোমল সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করে।
বিয়ারিং প্যাডের মূল কাজগুলো কেবল ভার বহন করা নয়, বরং জটিল প্রকৌশলগত চাপ সামলানো। যেমন:
উল্লম্ব ভার বহন ও বণ্টন: এটি ট্রেন চলাচলের সময় সৃষ্ট বিপুল উল্লম্ব চাপ (Vertical Load) শোষণ করে এবং চাপটিকে সরাসরি কোনো একটি নির্দিষ্ট পিলারে কেন্দ্রীভূত না করে পুরো পিলারের মাধ্যমে সমানভাবে ভিত্তি বা মাটির দিকে ছড়িয়ে দেয়।
অনুভূমিক ও কৌণিক সরণ নিয়ন্ত্রণ: স্থিতিস্থাপকতার গুণে ভায়াডাক্টের অনুভূমিক সরণ (Horizontal Movement) বা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে এটি। তাপমাত্রা পরিবর্তন, ট্রেন চলাচলের গতি বা বাঁকের কারণে ভায়াডাক্টে যে সামান্য প্রসারণ, সংকোচন বা পার্শ্বীয় নড়াচড়া হয়, প্যাড সেই নড়াচড়ার চাপ শোষণ করে।
কম্পন শোষণ (Damping) : বিয়ারিং প্যাড একটি কার্যকর ‘শক অ্যাবজরভার’ হিসেবে কাজ করে। এটি মেট্রোরেল চলাচলের স্বাভাবিক কম্পনের বেশির ভাগ অংশ শোষণ করে, যা শুধু কাঠামোর দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করে না, বরং যাত্রীদের ভ্রমণও মসৃণ ও আরামদায়ক করে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ: নকশা ও মান নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা
বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালট্যান্টের (বিআরটিসি) পরিচালক ড. সামছুল হক প্রথম দুর্ঘটনার সময়ই বলেছিলেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’। তাঁর মতে, একটি অত্যাধুনিক অবকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বারবার খুলে পড়ার অর্থ হলো নকশাগত ত্রুটি অথবা ব্যবহৃত উপাদানের গুণমানে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
গভীরতর ঝুঁকি: বিয়ারিং প্যাড যদি স্থানচ্যুত হয়, তবে ট্রেন চলাচলের গতিশীল চাপ (Dynamic Stress) সরাসরি পিলারের সঙ্গে ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে গিয়ে পড়ে। এই ঘর্ষণ ও অস্বাভাবিক চাপ পিলারে সূক্ষ্ম-ফাটল (Micro-fractures) তৈরি করতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে গোটা কাঠামোটিকেই ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। বিশেষত বাঁকযুক্ত স্থানে যেখানে চাপ স্বভাবতই বেশি তৈরি হয়, সেখানে উন্নত প্রযুক্তির অধিক চাপ সহনশীল প্যাড ব্যবহার করা অপরিহার্য।
ফার্মগেটের এই দুর্ঘটনা একটি প্রযুক্তিগত ব্যর্থতাই শুধু নয়, বরং এটি নগরবাসীর মধ্যে নিরাপদ যাতায়াত নিয়ে গভীর আস্থা সংকট তৈরি করবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
বিয়ারিং প্যাডের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল নির্মাণকালেই
২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভায়াডাক্টে ত্রুটির কারণে দীর্ঘ সময় আংশিক বন্ধ ছিল মেট্রোরেল চলাচল। ভায়াডাক্টের বিয়ারিং প্যাড নিয়ে নির্মাণের সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে এ ব্যাপারে আপত্তিও জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন অদৃশ্য কারণে কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ বিয়ারিং প্যাডই বসানো হয়।
বুয়েটের ল্যাবে পরীক্ষায় উত্তরা-আগারগাঁও অংশের দুটি প্যাকেজের জন্য আমদানি করা বিয়ারিং প্যাডের মান যথাযথ নয় বলে দেখা যায়। এসব বিয়ারিং প্যাড সরবরাহ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই। সে সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল, মেট্রোরেল প্রকল্পে নিম্নমানের বিয়ারিং প্যাড সরবরাহের ঘটনাটি ঘটেছিল উত্তরা-আগারগাঁও অংশের প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর নির্মাণকাজে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজটি বাস্তবায়ন করছিল ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইতাল-থাই)।
মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। যখন অভিযোগ ওঠে, তত দিনে পিয়ার-ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বিয়ারিং প্যাড বসিয়ে প্রায় আট কিলোমিটার উড়ালপথ বসানো হয়ে গেছে। কিন্তু পরে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়নি।
বিয়ারিং প্যাডের কারিগরি মান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারার বিষয়টি উঠে আসার পর বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ এই উপকরণ মানহীন হলে তা গোটা অবকাঠামোটিকেই ঝুঁকির মুখে ফেলবে। আজ মেট্রোরেলের দুর্ঘটনা সে কথাই প্রমাণ করল!
বিশেষজ্ঞরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, বিয়ারিং প্যাড কেবল সেতুর কাঠামোর রক্ষাকবচ নয়, এটি বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান গণপরিবহন ব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও জননিরাপত্তার প্রতীক। এই দুর্ঘটনা প্রমাণ করে, কেবল অবকাঠামো নির্মাণই যথেষ্ট নয়, গুণমান নিশ্চিতকরণ এবং কঠোর নজরদারিই আধুনিক ব্যবস্থার সফলতার ভিত্তি।

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে আজ রোববার দুপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি দেশের আধুনিক এই গণপরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াল। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে উড়ালপথের পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। ১৪০ থেকে ১৫০ কেজির এই কাঠামো এক পথচারীর মাথায় পড়লে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনার পরপরই জননিরাপত্তা এবং কারিগরি দিক বিবেচনা করে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এই দুর্ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো ঘটল। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। ফলে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১১ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে একই কাঠামোগত উপাদানের পুনরাবৃত্তিমূলক ত্রুটি মেট্রোরেলের মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন তুলেছে।
বিয়ারিং প্যাড: কাঠামোর মেরুদণ্ড এবং এর জটিল প্রকৌশল
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড (Metrorail Bearing Pads) হলো উড়ালপথের স্থায়িত্ব ও সুরক্ষার জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি বিশেষ ধরনের রাবার বা ইলাস্টোমেরিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। এটি সেতুর কাঠামোগত উপাদানগুলোর মধ্যে একটি কুশন বা কোমল সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করে।
বিয়ারিং প্যাডের মূল কাজগুলো কেবল ভার বহন করা নয়, বরং জটিল প্রকৌশলগত চাপ সামলানো। যেমন:
উল্লম্ব ভার বহন ও বণ্টন: এটি ট্রেন চলাচলের সময় সৃষ্ট বিপুল উল্লম্ব চাপ (Vertical Load) শোষণ করে এবং চাপটিকে সরাসরি কোনো একটি নির্দিষ্ট পিলারে কেন্দ্রীভূত না করে পুরো পিলারের মাধ্যমে সমানভাবে ভিত্তি বা মাটির দিকে ছড়িয়ে দেয়।
অনুভূমিক ও কৌণিক সরণ নিয়ন্ত্রণ: স্থিতিস্থাপকতার গুণে ভায়াডাক্টের অনুভূমিক সরণ (Horizontal Movement) বা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে এটি। তাপমাত্রা পরিবর্তন, ট্রেন চলাচলের গতি বা বাঁকের কারণে ভায়াডাক্টে যে সামান্য প্রসারণ, সংকোচন বা পার্শ্বীয় নড়াচড়া হয়, প্যাড সেই নড়াচড়ার চাপ শোষণ করে।
কম্পন শোষণ (Damping) : বিয়ারিং প্যাড একটি কার্যকর ‘শক অ্যাবজরভার’ হিসেবে কাজ করে। এটি মেট্রোরেল চলাচলের স্বাভাবিক কম্পনের বেশির ভাগ অংশ শোষণ করে, যা শুধু কাঠামোর দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করে না, বরং যাত্রীদের ভ্রমণও মসৃণ ও আরামদায়ক করে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ: নকশা ও মান নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা
বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালট্যান্টের (বিআরটিসি) পরিচালক ড. সামছুল হক প্রথম দুর্ঘটনার সময়ই বলেছিলেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’। তাঁর মতে, একটি অত্যাধুনিক অবকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বারবার খুলে পড়ার অর্থ হলো নকশাগত ত্রুটি অথবা ব্যবহৃত উপাদানের গুণমানে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
গভীরতর ঝুঁকি: বিয়ারিং প্যাড যদি স্থানচ্যুত হয়, তবে ট্রেন চলাচলের গতিশীল চাপ (Dynamic Stress) সরাসরি পিলারের সঙ্গে ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে গিয়ে পড়ে। এই ঘর্ষণ ও অস্বাভাবিক চাপ পিলারে সূক্ষ্ম-ফাটল (Micro-fractures) তৈরি করতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে গোটা কাঠামোটিকেই ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। বিশেষত বাঁকযুক্ত স্থানে যেখানে চাপ স্বভাবতই বেশি তৈরি হয়, সেখানে উন্নত প্রযুক্তির অধিক চাপ সহনশীল প্যাড ব্যবহার করা অপরিহার্য।
ফার্মগেটের এই দুর্ঘটনা একটি প্রযুক্তিগত ব্যর্থতাই শুধু নয়, বরং এটি নগরবাসীর মধ্যে নিরাপদ যাতায়াত নিয়ে গভীর আস্থা সংকট তৈরি করবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
বিয়ারিং প্যাডের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল নির্মাণকালেই
২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভায়াডাক্টে ত্রুটির কারণে দীর্ঘ সময় আংশিক বন্ধ ছিল মেট্রোরেল চলাচল। ভায়াডাক্টের বিয়ারিং প্যাড নিয়ে নির্মাণের সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে এ ব্যাপারে আপত্তিও জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন অদৃশ্য কারণে কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ বিয়ারিং প্যাডই বসানো হয়।
বুয়েটের ল্যাবে পরীক্ষায় উত্তরা-আগারগাঁও অংশের দুটি প্যাকেজের জন্য আমদানি করা বিয়ারিং প্যাডের মান যথাযথ নয় বলে দেখা যায়। এসব বিয়ারিং প্যাড সরবরাহ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই। সে সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল, মেট্রোরেল প্রকল্পে নিম্নমানের বিয়ারিং প্যাড সরবরাহের ঘটনাটি ঘটেছিল উত্তরা-আগারগাঁও অংশের প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর নির্মাণকাজে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজটি বাস্তবায়ন করছিল ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইতাল-থাই)।
মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। যখন অভিযোগ ওঠে, তত দিনে পিয়ার-ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বিয়ারিং প্যাড বসিয়ে প্রায় আট কিলোমিটার উড়ালপথ বসানো হয়ে গেছে। কিন্তু পরে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়নি।
বিয়ারিং প্যাডের কারিগরি মান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারার বিষয়টি উঠে আসার পর বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ এই উপকরণ মানহীন হলে তা গোটা অবকাঠামোটিকেই ঝুঁকির মুখে ফেলবে। আজ মেট্রোরেলের দুর্ঘটনা সে কথাই প্রমাণ করল!
বিশেষজ্ঞরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, বিয়ারিং প্যাড কেবল সেতুর কাঠামোর রক্ষাকবচ নয়, এটি বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান গণপরিবহন ব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও জননিরাপত্তার প্রতীক। এই দুর্ঘটনা প্রমাণ করে, কেবল অবকাঠামো নির্মাণই যথেষ্ট নয়, গুণমান নিশ্চিতকরণ এবং কঠোর নজরদারিই আধুনিক ব্যবস্থার সফলতার ভিত্তি।

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদ
২৬ জানুয়ারি ২০২৪
আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মী রাকিবুল আজম। সেদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি নেন।
১৪ মিনিট আগে
ভূমি অফিসে গিয়ে মানুষকে এখনো হয়রানি হতে হয় বলে স্বীকার করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। এ জন্য অনলাইনে সব ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া জনগণকে সহজে ভূমিসেবা দিতে সব জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে জানিয়েছেন তিনি।
৩৬ মিনিট আগে
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
৩ ঘণ্টা আগে