Ajker Patrika

বঙ্গোপসাগর সংলাপ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি ইস্যুতে আটকে থাকবে না

# পারস্পরিক নির্ভরতার যে বাস্তবতা, তা বারবার সামনে চলে আসবে: প্রণয় ভার্মা

# সার্ক সক্রিয় করায় বাধা সরকারগুলো

# রাজনৈতিক উদ্দেশে সমস্যা জিইয়ে রাখা হচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। ছবি: সংগৃহীত
রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোনো একটি ইস্যুতে আটকে থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। আজ রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে এক সংলাপে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক কোনো একটি অ্যাজেন্ডা বা এক ইস্যুতে আটকে থাকতে পারে না। আমাদের পারস্পরিক নির্ভরতার যে বাস্তবতা, তা রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলেও বারবার সামনে চলে আসবে।’

‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন-২০২৪’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এ সংলাপের আয়োজক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। সংলাপের দ্বিতীয় দিনের এক অধিবেশনে প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্কের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, যেখানে উভয় দেশের জনগণই মূল অংশীজন।’

দুই দেশের সম্পর্কের পারস্পরিক নির্ভরতার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে। ভারত বিশ্বাস করে যে দুই দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পরস্পরের সঙ্গে জড়িত।

দুই দেশের মধ্যকার বহুমুখী সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাণিজ্য, পরিবহন ও জ্বালানি সংযোগ এবং মানুষে মানুষে সম্পৃক্ততার ক্রমাগত অগ্রগতির ওপর জোর দেন ভার্মা। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবর্তন-নির্বিশেষে আমাদের পারস্পরিক নির্ভরতা ও দ্বিপক্ষীয় মঙ্গলের বাস্তবতা নিজেকে পুনর্ব্যক্ত করতে থাকবে।’

হাইকমিশনার ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে সম্প্রতি নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনাকে দ্বিপক্ষীয় বিনিময়ের ক্ষেত্রে অব্যাহত অগ্রগতির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স দুই দেশের সম্পর্ক গভীর করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে, এমনটা মনে করেন তিনি।

আজ রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। ছবি:সংগৃহীত
আজ রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। ছবি:সংগৃহীত

সার্কের বাধা নীতিনির্ধারকেরা
দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর অনুষ্ঠিত অন্য এক অধিবেশনে বক্তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতার জন্য দেশগুলোর জনগণ নয়, বরং নীতিনির্ধারকেরা দায়ী। তাঁরা বলেন, এই অঞ্চলে শুধু ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ-পাকিস্তান, নেপাল-ভারত ও আফগানিস্তান-পাকিস্তানের মধ্যেও বিভিন্ন ইস্যু রয়েছে। বহু বছর ধরেই রাজনৈতিক উদ্দেশে এসব সমস্যা জিইয়ে রাখা হচ্ছে।

চীনের জিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পাকিস্তানের নাগরিক আমনা খান বলেন, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মানুষেরা একসঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। খাওয়াদাওয়া করে। মানুষের মধ্যে, জনগণের মধ্যে সমস্যা নেই। সমস্যা নীতিনির্ধারকদের।

ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ বলেন, সার্ক গঠনের পর চার দশক হলো। কিন্তু সেই অর্থে এর কোনো অগ্রগতি নেই। কোনো দেশের মধ্যে সংকট বা ব্যর্থতা থাকলে একটা সংস্থা থমকে যাবে, এটা হতে পারে না।

খারাপ সম্পর্কে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে
ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শক্তিশালী ও মাঝারি শক্তির দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার ওপর অনুষ্ঠিত অধিবেশনে বক্তারা বলেন, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের শক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। চীনের সামরিক সক্ষমতার সম্প্রসারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতও এই অঞ্চলের প্রতিবেশীদের ওপর প্রভাব বজায় রাখতে উন্মুখ। এগুলো ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ইস্যু।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি এ এন এম মুনিরুজ্জামান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই চীনের বিচরণ রয়েছে। এই অঞ্চলে শুধু ভারত বাদে সব দেশেরই চীনের সঙ্গে বিশাল ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।

ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, প্রতিবেশীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক থাকা উচিত। নাহলে প্রত্যেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৷

রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে আগত অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে আগত অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

দলগুলো দুর্নীতির ভাগ পায়
দুর্নীতির ওপর অনুষ্ঠিত এক অধিবেশনে বক্তারা বলেন, দুর্নীতি দক্ষিণ এশিয়ায় সমাজের অন্তর্নিহিত একটি বিষয়। মানুষ আইন ভাঙলে সুবিধা পায়। সে জন্য একধরনের যোগসাজশ গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলও সেখান থেকে ভাগ পায়।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতির অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, দুর্নীতির চক্র জিইয়ে রাখা ও নিজেদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ রাখতে হাজার হাজার মানুষ মেরে ফেলা বা গুম করে ফেলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব নেই। কিন্তু দুর্নীতি রোধ করার ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ নেই। কারণ, তারা নিজেরাই দুর্নীতিতে জড়িত।

সমাজে দুর্নীতি প্রোথিত থাকার উদাহরণ দিয়ে নেপালের পলিসি এন্ট্রাপ্রেনিউয়রস ইনকরপোরেটেডের পরিচালক অনুরাগ আচারিয়া বলেন, নেপালে গত কয়েক বছরে বড় ধরনের রাজনৈতিক ভাঙাগড়া হয়েছে। একের পর এক সরকার বদল হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি রয়েই গেছে। দুর্নীতির ফসল রাজনীতিকেরাই ভোগ করছেন।

রাজনৈতিক নতুন বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে যেটা হয়েছে সেটা হলো, দুর্নীতির বিকেন্দ্রীকরণ, এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাস্তবতা দেশটির তরুণদের জন্য আশাব্যঞ্জক নয়।

বিশ্বের ৮০টি দেশের লেখক, গবেষক, রাজনীতিক, কূটনীতিক, আমলা, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ সংলাপে অংশ নিচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তেজগাঁও বিমানবন্দরে এয়ার শো দেখতে জনস্রোত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৮
পুরাতন বিমানবন্দরে এয়ার শো দেখতে সকাল থেকেই মানুষের ভিড়। ছবি: ফেসবুক
পুরাতন বিমানবন্দরে এয়ার শো দেখতে সকাল থেকেই মানুষের ভিড়। ছবি: ফেসবুক

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে জমকালো ‘এয়ার শো’ দেখতে মানুষের ঢল নেমেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিমানবন্দরমুখী মানুষের স্রোত দেখা যায়। তবে নির্ধারিত সময়ের পরও এয়ার শো শুরু না হওয়ায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন হাজারো দর্শক।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল পৌনে ১০টার দিকে আগারগাঁও-সংলগ্ন পুরোনো বিমানবন্দরের ফটকে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে সবাইকে একে একে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ততক্ষণে শত শত পরিবার, শিশু ও উৎসুক জনতা বিমানবন্দরে প্রবেশ করে ভিড় জমিয়েছে।

আগত দর্শনার্থীদের হাতে শোভা পাচ্ছে জাতীয় পতাকা। অনেকের কপালে বাঁধা জাতীয় পতাকার আদলের ফিতা কিংবা ‘বিজয় দিবস’ লেখা কাপড়। অনেকেই পরিবারের সঙ্গে লাল-সবুজের পোশাক পরে এসেছে বিজয় উৎসবের এই বিশেষ প্রদর্শনী উপভোগ করতে।

গতকাল সোমবার এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়েছিল মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে এই জমকালো এয়ার শো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এয়ার শো শুরু হয়নি। জনসমাগম হলেও অনুষ্ঠান শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তথ্যবিবরণীতে সরকার জানিয়েছে, এই এয়ার শো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। একই সঙ্গে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর ও এর আশপাশ এলাকায় আজ কোনো প্রকার ড্রোন না ওড়ানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিজয়ের ৫৪তম বছর উপলক্ষে এয়ার শোতে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে প্যারাট্রুপিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের শেষ ৬ জন পোশাকে নিজেদের নেমপ্লেটের পরিবর্তে সুদানের ইউএন ঘাঁটিতে নিহত ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের নেমপ্লেট পরে প্যারাট্র‍্যুপিং করবেন।

এই ৫৪ জনের একজন আশিক চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) বর্তমান নির্বাহী চেয়ারম্যান। আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মহান বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি।

এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদর্শন করে এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। এরপর রাষ্ট্রপতি সেখানে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি বের হয়ে যাওয়ার পর জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ৬টা ৫৬ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা।

বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও সরকারপ্রধান স্মৃতিসৌধে উপস্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্য, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও তিন বাহিনীর প্রধানেরা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপরই জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আজ ১৬ ডিসেম্বর। ৫৫তম মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই দিনেই আমরা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুদকের তদন্ত: ৭ দেশে জাবেদের আরও ৬১৫ সম্পদের সন্ধান

  • কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ সাতটি দেশে বিপুল সম্পদ।
  • নতুন ৩৮১টিসহ যুক্তরাজ্যে মোট সম্পদ ৭২৪টি।
  • নতুনগুলোসহ মোট ১ হাজার ১০০টি সম্পদের নথি দুদকের হাতে।
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩২
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ছবি: সংগৃহীত

পাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদ গড়ে আলোচনায় থাকা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নতুন করে ৬১৫টি সম্পদের তথ্য পাওয়ার গেছে। কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ সাতটি দেশে বিপুল এই সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নতুন করে ৬১৫টি সম্পদের নথিসহ মোট ১ হাজার ১০০টির মতো সম্পদের নথি রয়েছে তাদের কাছে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি এবং তাঁর নামে থাকা কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স। আর এসব সম্পদ রয়েছে প্রায় ১০টি দেশে। সম্পদগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা।

বিএফআইইউ ও দুদকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে যে ৬১৫টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, তার বেশির ভাগই যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে ৩৮১টি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এর আগে একই দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে ৩৪৩টি সম্পদের তথ্য পায় দুদক। সব মিলিয়ে শুধু যুক্তরাজ্যেই তাঁর ৭২৪টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেল।

এ ছাড়া, কম্বোডিয়ায় ১১১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৪৮ মার্কিন ডলার। মালয়েশিয়ায় ৪৭টি সম্পদ পাওয়া গেছে, যার বাজারমূল্য ১০ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ২৪২ ডলার। ফিলিপাইনে ২টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯০ পেসো, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ কোটি টাকা। ভারতের হরিয়ানা, উত্তর চব্বিশপরগনাসহ দেশটিতে মোট ১১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৪ ডলার।

সাইফুজ্জামান জাবেদের নামে থাইল্যান্ডে ২৪টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৩৬ কোটি ৩১ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯ থাই বাত। যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪টি সম্পদ ও ২টি কোম্পানির লাইসেন্স রয়েছে। ভিয়েতনামে ৩০টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুরে সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ। সুইজারল্যান্ডেও তাঁর সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নেতৃত্বে থাকা দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা তাঁর যে অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করছি, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে এক হাজারের বেশি সম্পদ থাকার নথি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি নথিতেই ভিয়েতনামে তাঁর ৩০টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা বলেন, সাইফুজ্জামান জাবেদ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচারের মাধ্যমে সম্পদ তৈরি করেন। অবৈধ অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের টাকা তিনি তাঁর সেসব দেশের এজেন্ট দিয়ে সংগ্রহ করেছেন, পরে দেশে প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে টাকা পরিশোধ করেছেন। তিনি জানান, জাবেদ তাঁর পাচারের অর্থ দিয়ে ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কোম্পানি ও ব্যবসা গড়ে তোলেন। পরে সেগুলো যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেন।

পাচারের অর্থ দেশে আনার বিষয়ে কথা বলেছেন দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পাচার করা অর্থ ফেরত আনার জন্য যথাযথ আইনিপ্রক্রিয়া শেষ করে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স পাঠাতে হবে। যদিও যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়, তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকলে এটি সহজ হয়। আমাদের এমন চুক্তি নেই বললেই চলে। এ কারণে পাচারের অর্থ ফেরত আনা বেশ কঠিন।’

মঈদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি বলব, প্রক্রিয়া যত কঠিনই হোক, দুদককে সঠিক প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের অর্থগুলো পাচার হয়ে যেসব দেশে যায়, সেসব দেশ দুর্নীতির সূচকে অত্যন্ত ভালো অবস্থানে। কিন্তু পাচারের অর্থ যখন তাদের দেশে যায়, তখন তারা তা ফেরতে সহযোগিতা না করে উল্টো সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছে। এটা তাদের দ্বৈত নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।’

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাজ্যে জাবেদ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে দুদক। এ লক্ষ্যে সে দেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে দুদক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রক্তসাগর পাড়ি দিয়ে পুব আকাশে স্বাধীনতার সূর্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বেলা পৌনে ১১টায় উপকণ্ঠ থেকে মূল ঢাকা শহরে প্রবেশ করেন বিজয়ী মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সেনারা। অন্যদিকে শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ে চলতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি।

১৫ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সদর্প বিচরণের শেষ দিন। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই কার্যত ঢাকায় পাকিস্তানি দুর্গের পতনের ক্ষণগণনা চলছিল। উপায় না দেখে পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান আবদুল্লাহ খান নিয়াজি শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ১৫ তারিখ আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দলিল এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার জন্য ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকব ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা এসে পৌঁছান। বিকেল ৪টার আগেই বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীর দুটি ইউনিটসহ মোট চার ব্যাটালিয়ন সেনা ঢাকায় প্রবেশ করে। সঙ্গে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকার এত দিনের জনবিরল সড়কগুলো ক্রমেই জনাকীর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে। সবার মুখে একাত্তরের পরিচিতি রণধ্বনি’ জয় বাংলা’।

কারফিউ জারি থাকলেও মানুষ তার পরোয়া না করে রাস্তায় বেরিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। পাকিস্তানি বাহিনীর নয় মাসের গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের পর মুক্তির আনন্দে তাঁরা তখন আত্মহারা। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর কয়েক লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে তাঁরা পেয়েছেন নতুন দেশ—বাংলাদেশ। বিজয়ের আনন্দ, স্বজন হারানোর শোক আর অজানা আগামীর প্রত্যাশায় সবার মনে এক বিচিত্র অনুভূতি। এর মধ্যেও ঘটে কিছু দুঃখজনক ঘটনা। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পলায়নপর কিছু পাকিস্তানি সেনা ও বিহারি এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে অনেক বাঙালিকে হতাহত করে।

বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার, ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও অন্য সামরিক কর্মকর্তারা বিমানে ঢাকা অবতরণ করেন। এর কিছু সময় পরই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল উৎফুল্ল জনতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারত মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানি সমরাধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজি। পাকিস্তানি বাহিনীর দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হলো বাংলাদেশ। সগর্বে জায়গা করে নিল বিশ্বের মানচিত্রে।

ঢাকায় ১৬ ডিসেম্বরই ধীরে ধীরে সবাই জানতে পারেন আগের কয়েক দিনে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, লেখকসহ বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর। নিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনাদের এদেশীয় সহযোগীরা তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল; কিন্তু কেউই আর ফিরে আসেননি। দেশের এই মেধাবী, কৃতী সন্তানদের পরিণতির কথা ভেবে জনমনে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ। পরদিনই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমির বীভৎস দৃশ্যের খবর। রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বিভিন্ন জায়গার অনেক বধ্যভূমিতে পাওয়া যায় নির্যাতিত মানুষের ক্ষতবিক্ষত দেহ। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের অনেকের হাত বা চোখ বাঁধা, বেয়নেট বা গুলিতে বিদ্ধ লাশের খোঁজ মেলে রায়েরবাজারে। বিজয়ের আনন্দের মধ্যে এই শোকের খবর, বধ্যভূমির ভয়াবহ দৃশ্য স্তম্ভিত করে মানুষকে।

এদিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই কাজে লেগে যায় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার। ১৬ ডিসেম্বরই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত প্রবাসী সরকার সদর দপ্তর থেকে গোটা দেশে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে। নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলি পাঠানো শুরু হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ায় শুরু হয় পুরো সরকারের দেশে ফেরার প্রক্রিয়াও। ৭ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই উনিশটি জেলার জন্য জেলা প্রশাসকদের মনোনয়ন ও নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছিল। শুরু হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের নতুন কঠিন যুদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত