বিবিসি বাংলায় সাক্ষাৎকার
অনলাইন ডেস্ক
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতারাই দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বাচন, ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল গঠনসহ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি প্রসঙ্গও।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁর প্রথম চেষ্টা ছিল দেশের ধ্বংসস্তূপ থেকে আসল চেহারাটা বের করে আনা। মানুষের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে আনা। এরপর আস্তে আস্তে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা। তাঁর প্রথম চিন্তাই ছিল সংস্কার।
তিনি বলেন, এর কারণ হলো, যে কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে, ফ্যাসিবাদী সরকার চলতে পেরেছে। ১৬ বছর ধরে চলতে পেরেছে, আমরা কিছুই করতে পারি নাই। তিন-তিনটা নির্বাচন হয়ে গেল, ভোটারের কোনো দেখা নাই। এই যে অসংখ্য রকমের দুর্নীতি এবং ব্যর্থতা, মিস রুল ইত্যাদি—সেখান থেকে আমরা কীভাবে টেনে বের করে আনব। টেনে বের করে আনতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো করতে হবে।
সংস্কার প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার তো এখনো শুরু করিনি...। গত ছয় মাসে বহু পরিবর্তন এসেছে। যে ধ্বংসাবশেষ থেকে এসেছিলাম, তার নতুন চেহারা আসছে। ভেসে উঠছে যে আমরা অর্থনীতি সহজ করেছি। দেশ-বিদেশের আস্থা অর্জন করেছি। এটা তো পরিষ্কার—সারা দুনিয়ায় আমরা আস্থা স্থাপন করতে পেরেছি। এটা কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না যে আমি অমুক দেশের আস্থা অর্জন করতে পারিনি। যে দেশেই বলুন, তারা আমাদের ওপর আস্থা স্থাপন করেছে। তারা বলছে, আমরা অতীতে যা করি নাই, তার চেয়ে বেশি করব এখন, যেহেতু আমরা দেখছি যে সুন্দরভাবে সরকার চলছে এখন। অবিশ্বাস্য রকমের সহায়তা দিয়েছে তারা।
ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা একটা অপরিচিত জগৎ, আমরা এসেছি। আমরা কোনো এক্সপার্ট এখানে এসে বসি নাই। আমরা এসেছি যার যার জগৎ থেকে, নিজের মতো করে চেষ্টা করছি কীভাবে করতে পারি। তার মধ্যে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। কিছু ভালো করেছে, কিছু ভালো করতে পারেনি। এটা হতে পারে। এটা আমি তো অস্বীকার করছি না।’
এ পর্যন্ত আত্মতৃপ্তি পাওয়ার মতো কোনো কাজ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনোটাই ভালো হয়নি সে অর্থে। যত ইচ্ছা আমাদের—আমাদের ইচ্ছা তো অনেক। রাতারাতি দেশ পরিবর্তন করতে চাই। সেটা তো আমরা পারি নাই। সময় লাগবে। আমরা চেয়েছিলাম যে এখনই আমরা সংলাপটা শুরু করব। এটাও পারি নাই। সংলাপ শুরু হতে হতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। এগুলো আর কী। যেগুলো সময়মতো আমরা করতে চেয়েছি, ওই সময়ে করতে পারিনি।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অবনতিটা কোন পয়েন্ট থেকে হয়েছে? এটা বলতে হবে তো আমাকে। আপনি বলছেন, অবনতি হয়েছে। কোন রেফারেন্স পয়েন্ট থেকে অবনতিটা হয়েছে? সেটা না দিলে তো আমরা বুঝতে পারব না।’ তিনি দাবি করেন, ‘অপরাধের পরিমাণ মোটেই বাড়েনি। আগের মতোই রয়েছে।’
পুলিশ বাহিনীকে কার্যকর করতে সময় লেগেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চেষ্টা করছি আমরা। সমস্যা আপনিও জানেন, আমিও জানি। প্রথম দিকে সমস্যা ছিল যে পুলিশ বাহিনী যাকে দিয়ে আমরা কাজ করাচ্ছিলাম, তারা ভয়ে রাস্তায় নামছিল না। দুই দিন আগে তারা এদেরকে গুলি করেছে। কাজেই মানুষ দেখলেই সে ভয় পায়। কাজেই তাকে ঠিক করতে করতেই আমাদের কয়েক মাস চলে গেছে। এখন মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। এখন আবার নিয়ম-শৃঙ্খলার দিকে আমরা রওনা হয়েছি। কাজ করতে থাকব।’
তবে প্রধান উপদেষ্টা স্বীকার করেন যে পুলিশকে এখনো সেভাবে সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি। তবে অনেক উন্নতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক এবং জাতীয় ঐক্য প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার তো অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। কেউ আমাকে অসমর্থন করছে, এ রকম কোনো খবর তো আমি পাই নাই এখনো। সবাই সমর্থন করছে, সবাই চাচ্ছে যে সুন্দরভাবে দেশ চলুক, তাদের সবার মধ্যে ঐক্য আছে। রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যে অনেক তফাত আছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরেছে। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই।’
ছাত্রদের রাজনৈতিক দল ও গঠন তাদের কার্যক্রমে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ আসছে কিছু মহল থেকে, এ প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার কোনো সহায়তা করে না। যে রাজনীতি করতে চায়, সে নিজেই ইস্তফা দিয়ে চলে গেছে। তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি ছিল সরকারের ভেতরে। যিনি রাজনীতি করতে মন স্থির করেছেন, তিনি ইস্তফা দিয়ে সরকার থেকে চলে গেছেন। উনি প্রাইভেট সিটিজেনশিপে রাজনীতি করবেন, কার বাধা দেওয়ার কী আছে?’
‘সরকার হিসেবে আমাদের কোনো পজিশন নাই। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ মোটেও সঠিক নয়’ বলেও জানিয়ে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
সেনাবাহিনীও সর্বাত্মকভাবে এই সরকারকে সহযোগিতা করছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
‘সবাই একসঙ্গে কাজ করতে না পারলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বা বিপন্ন হতে পারে।’ সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা ওনার বক্তব্য উনি বলবেন। আমার ওনাকে এনডোর্স করা না করার তো বিষয় না।’
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না? সরকারপ্রধান হিসেবে কী মনে করেন? এ প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা তো সব সময় থাকে। একটা পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে এটাকে আনসেটেল করার জন্য। এটা তো সব সময় থ্রেট আছেই। প্রতিক্ষণেই আছে, প্রতি জায়গাতেই আছে। কাজেই এটা তো সব সময় থাকবে।’
হুমকিটা কি আপনি বলছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ থেকে আসছে? এ প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ‘অবশ্যই। এটা তো অবভিয়াস। তারা মাঝে মাঝেই ঘোষণা করছে। বক্তৃতা দিচ্ছে। অ্যাড্রেস করছে। আপনি-আমরা সবাই শুনছি। মানুষ উত্তেজিত হচ্ছে।’
সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একেবারে প্রত্যেকটা সুপারিশ দেব। সুপারিশের সঙ্গে কথা থাকবে যে আপনার রাজনৈতিক দল এটা কি সমর্থন করে? এটাতে রাজি আছেন? রাজি থাকলে বলেন, রাজি না থাকলে বলেন। বা এই যে সুপারিশটা আছে, সেটার মধ্যে যদি কোনো একটা সংশোধনী এনে রাজি হবেন, সেটা বলেন। এটা কি নির্বাচনের আগে সংশোধন করা ঠিক হবে নাকি নির্বাচনের পরে—সব প্রশ্নের এখানেই সমাবেশ আছে।
‘রাজনৈতিক দলকে শুধু বলতে হবে কোনটা? সবকিছু মেলালে আমরা এটা ঠিক করব কোন সুপারিশে সবাই একমত হয়েছে। সেটা আলাদা করব যে এটাতে সবাই একমত হয়েছে। এ রকম যে সমস্ত সুপারিশে তারা একমত হয়েছে, সেগুলো আমরা আলাদা একটা কাগজে নিয়ে আসব যে এই সব বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। তবে এটাকে আমরা বলব একটা চার্টার–জুলাই চার্টার।
‘সবাইকে আহ্বান জানাব, আপনারা সবাই যেহেতু একমত হয়েছেন এটাতে সই করে দেন। জুলাই চার্টারের মতোই আমরা চলব। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচনটা হবে। নির্বাচনের আগে যেটা বলেছেন সেটা নির্বাচনের আগে হবে, যেটা নির্বাচনের পরে বলেছেন, সেটা নির্বাচনের পরে হবে। এটা আপনাদের বিষয়। কিন্তু আপনারা একমত হয়েছেন। সেই ঐকমত্যই আমরা গঠন করার চেষ্টা করছি।’
নির্বাচনটা এ বছরের মধ্যেই হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো সেটা ঘোষণা করে দিয়েছি। আবার নতুন করে বলার তো কিছু নাই।’
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘(সম্পর্ক) খুবই ভালো। আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয় নাই। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি, আমাদের সম্পর্ক সব সময় ভালো থাকবে। এখনো ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারব না। তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। অপপ্রচারের সূত্র কারা, সেটা অন্যরা বিচার করবে। কিন্তু এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল-বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি।’ ভারত সরকারের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইলন মাস্কের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলাপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা মূলত ছিল স্টারলিংক নিয়ে। এটা ব্যবসায়িক একটা সম্পর্কের বিষয় ছিল। সে বিষয়ে আমরা আলাপ করছি যে স্টারলিংকের কানেকশনটা আমরা নিতে চাই।’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি অত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। আমার বরাবরই পজিশন হলো যে আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার। আমরা সব ভাই ভাই। আমাদের এই দেশেই বাঁচতে হবে। এ দেশকেই বড় করতে হবে। কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিত, তার বিচার হতে হবে। এটুকুই শুধু।’
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার যোগাযোগ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘যখনই প্রয়োজন হয়। শুধু শুধু তো গিয়ে ওনার সময় নষ্ট করার দরকার নাই। যখনই দরকার হয়, আমি তো তাঁর কাছে যাই।’
সবশেষ রাজনীতি করার কোনো আকাঙ্ক্ষা আছে কি না, এ প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘প্রথম কথা, আমি রাজনৈতিক দল গঠন করি নাই। গঠন করার কথা বলেছিলাম। এবং দশ সপ্তাহ যাবৎ এই কথা জারি ছিল। দশ সপ্তাহ পর আমি বলেছি—না, আমি রাজনীতিতে যাব না। আমি বলেছি যে পলিটিকস ইজ নট মাই কাপ অব টি। এবং ওটা ওখানেই সমাপ্ত। এরপর আমাকে রাজনীতির কাছে কেউ টানতে পারেনি। সবাই চেষ্টা করেছে দেশের নেতৃত্ব নেন, আপনি প্রধানমন্ত্রী হন। সবাই চেষ্টা করেছে। আমি ওটা চাই নাই। আমি বলেছি, ওই চ্যাপটার শেষ। এই দশ সপ্তাহ-দ্যাটস এনাফ। কাজেই ওইভাবেই আছি এখন। এখানে আমি রাজনীতিতে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। রাজনীতি করিও না।’
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতারাই দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বাচন, ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল গঠনসহ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি প্রসঙ্গও।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁর প্রথম চেষ্টা ছিল দেশের ধ্বংসস্তূপ থেকে আসল চেহারাটা বের করে আনা। মানুষের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে আনা। এরপর আস্তে আস্তে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা। তাঁর প্রথম চিন্তাই ছিল সংস্কার।
তিনি বলেন, এর কারণ হলো, যে কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে, ফ্যাসিবাদী সরকার চলতে পেরেছে। ১৬ বছর ধরে চলতে পেরেছে, আমরা কিছুই করতে পারি নাই। তিন-তিনটা নির্বাচন হয়ে গেল, ভোটারের কোনো দেখা নাই। এই যে অসংখ্য রকমের দুর্নীতি এবং ব্যর্থতা, মিস রুল ইত্যাদি—সেখান থেকে আমরা কীভাবে টেনে বের করে আনব। টেনে বের করে আনতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো করতে হবে।
সংস্কার প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার তো এখনো শুরু করিনি...। গত ছয় মাসে বহু পরিবর্তন এসেছে। যে ধ্বংসাবশেষ থেকে এসেছিলাম, তার নতুন চেহারা আসছে। ভেসে উঠছে যে আমরা অর্থনীতি সহজ করেছি। দেশ-বিদেশের আস্থা অর্জন করেছি। এটা তো পরিষ্কার—সারা দুনিয়ায় আমরা আস্থা স্থাপন করতে পেরেছি। এটা কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না যে আমি অমুক দেশের আস্থা অর্জন করতে পারিনি। যে দেশেই বলুন, তারা আমাদের ওপর আস্থা স্থাপন করেছে। তারা বলছে, আমরা অতীতে যা করি নাই, তার চেয়ে বেশি করব এখন, যেহেতু আমরা দেখছি যে সুন্দরভাবে সরকার চলছে এখন। অবিশ্বাস্য রকমের সহায়তা দিয়েছে তারা।
ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা একটা অপরিচিত জগৎ, আমরা এসেছি। আমরা কোনো এক্সপার্ট এখানে এসে বসি নাই। আমরা এসেছি যার যার জগৎ থেকে, নিজের মতো করে চেষ্টা করছি কীভাবে করতে পারি। তার মধ্যে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। কিছু ভালো করেছে, কিছু ভালো করতে পারেনি। এটা হতে পারে। এটা আমি তো অস্বীকার করছি না।’
এ পর্যন্ত আত্মতৃপ্তি পাওয়ার মতো কোনো কাজ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনোটাই ভালো হয়নি সে অর্থে। যত ইচ্ছা আমাদের—আমাদের ইচ্ছা তো অনেক। রাতারাতি দেশ পরিবর্তন করতে চাই। সেটা তো আমরা পারি নাই। সময় লাগবে। আমরা চেয়েছিলাম যে এখনই আমরা সংলাপটা শুরু করব। এটাও পারি নাই। সংলাপ শুরু হতে হতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। এগুলো আর কী। যেগুলো সময়মতো আমরা করতে চেয়েছি, ওই সময়ে করতে পারিনি।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অবনতিটা কোন পয়েন্ট থেকে হয়েছে? এটা বলতে হবে তো আমাকে। আপনি বলছেন, অবনতি হয়েছে। কোন রেফারেন্স পয়েন্ট থেকে অবনতিটা হয়েছে? সেটা না দিলে তো আমরা বুঝতে পারব না।’ তিনি দাবি করেন, ‘অপরাধের পরিমাণ মোটেই বাড়েনি। আগের মতোই রয়েছে।’
পুলিশ বাহিনীকে কার্যকর করতে সময় লেগেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চেষ্টা করছি আমরা। সমস্যা আপনিও জানেন, আমিও জানি। প্রথম দিকে সমস্যা ছিল যে পুলিশ বাহিনী যাকে দিয়ে আমরা কাজ করাচ্ছিলাম, তারা ভয়ে রাস্তায় নামছিল না। দুই দিন আগে তারা এদেরকে গুলি করেছে। কাজেই মানুষ দেখলেই সে ভয় পায়। কাজেই তাকে ঠিক করতে করতেই আমাদের কয়েক মাস চলে গেছে। এখন মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। এখন আবার নিয়ম-শৃঙ্খলার দিকে আমরা রওনা হয়েছি। কাজ করতে থাকব।’
তবে প্রধান উপদেষ্টা স্বীকার করেন যে পুলিশকে এখনো সেভাবে সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি। তবে অনেক উন্নতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক এবং জাতীয় ঐক্য প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার তো অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। কেউ আমাকে অসমর্থন করছে, এ রকম কোনো খবর তো আমি পাই নাই এখনো। সবাই সমর্থন করছে, সবাই চাচ্ছে যে সুন্দরভাবে দেশ চলুক, তাদের সবার মধ্যে ঐক্য আছে। রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যে অনেক তফাত আছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরেছে। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই।’
ছাত্রদের রাজনৈতিক দল ও গঠন তাদের কার্যক্রমে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ আসছে কিছু মহল থেকে, এ প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার কোনো সহায়তা করে না। যে রাজনীতি করতে চায়, সে নিজেই ইস্তফা দিয়ে চলে গেছে। তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি ছিল সরকারের ভেতরে। যিনি রাজনীতি করতে মন স্থির করেছেন, তিনি ইস্তফা দিয়ে সরকার থেকে চলে গেছেন। উনি প্রাইভেট সিটিজেনশিপে রাজনীতি করবেন, কার বাধা দেওয়ার কী আছে?’
‘সরকার হিসেবে আমাদের কোনো পজিশন নাই। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ মোটেও সঠিক নয়’ বলেও জানিয়ে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
সেনাবাহিনীও সর্বাত্মকভাবে এই সরকারকে সহযোগিতা করছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
‘সবাই একসঙ্গে কাজ করতে না পারলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বা বিপন্ন হতে পারে।’ সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা ওনার বক্তব্য উনি বলবেন। আমার ওনাকে এনডোর্স করা না করার তো বিষয় না।’
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না? সরকারপ্রধান হিসেবে কী মনে করেন? এ প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা তো সব সময় থাকে। একটা পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে এটাকে আনসেটেল করার জন্য। এটা তো সব সময় থ্রেট আছেই। প্রতিক্ষণেই আছে, প্রতি জায়গাতেই আছে। কাজেই এটা তো সব সময় থাকবে।’
হুমকিটা কি আপনি বলছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ থেকে আসছে? এ প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ‘অবশ্যই। এটা তো অবভিয়াস। তারা মাঝে মাঝেই ঘোষণা করছে। বক্তৃতা দিচ্ছে। অ্যাড্রেস করছে। আপনি-আমরা সবাই শুনছি। মানুষ উত্তেজিত হচ্ছে।’
সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একেবারে প্রত্যেকটা সুপারিশ দেব। সুপারিশের সঙ্গে কথা থাকবে যে আপনার রাজনৈতিক দল এটা কি সমর্থন করে? এটাতে রাজি আছেন? রাজি থাকলে বলেন, রাজি না থাকলে বলেন। বা এই যে সুপারিশটা আছে, সেটার মধ্যে যদি কোনো একটা সংশোধনী এনে রাজি হবেন, সেটা বলেন। এটা কি নির্বাচনের আগে সংশোধন করা ঠিক হবে নাকি নির্বাচনের পরে—সব প্রশ্নের এখানেই সমাবেশ আছে।
‘রাজনৈতিক দলকে শুধু বলতে হবে কোনটা? সবকিছু মেলালে আমরা এটা ঠিক করব কোন সুপারিশে সবাই একমত হয়েছে। সেটা আলাদা করব যে এটাতে সবাই একমত হয়েছে। এ রকম যে সমস্ত সুপারিশে তারা একমত হয়েছে, সেগুলো আমরা আলাদা একটা কাগজে নিয়ে আসব যে এই সব বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। তবে এটাকে আমরা বলব একটা চার্টার–জুলাই চার্টার।
‘সবাইকে আহ্বান জানাব, আপনারা সবাই যেহেতু একমত হয়েছেন এটাতে সই করে দেন। জুলাই চার্টারের মতোই আমরা চলব। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচনটা হবে। নির্বাচনের আগে যেটা বলেছেন সেটা নির্বাচনের আগে হবে, যেটা নির্বাচনের পরে বলেছেন, সেটা নির্বাচনের পরে হবে। এটা আপনাদের বিষয়। কিন্তু আপনারা একমত হয়েছেন। সেই ঐকমত্যই আমরা গঠন করার চেষ্টা করছি।’
নির্বাচনটা এ বছরের মধ্যেই হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো সেটা ঘোষণা করে দিয়েছি। আবার নতুন করে বলার তো কিছু নাই।’
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘(সম্পর্ক) খুবই ভালো। আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয় নাই। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি, আমাদের সম্পর্ক সব সময় ভালো থাকবে। এখনো ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারব না। তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। অপপ্রচারের সূত্র কারা, সেটা অন্যরা বিচার করবে। কিন্তু এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল-বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি।’ ভারত সরকারের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইলন মাস্কের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলাপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা মূলত ছিল স্টারলিংক নিয়ে। এটা ব্যবসায়িক একটা সম্পর্কের বিষয় ছিল। সে বিষয়ে আমরা আলাপ করছি যে স্টারলিংকের কানেকশনটা আমরা নিতে চাই।’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি অত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। আমার বরাবরই পজিশন হলো যে আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার। আমরা সব ভাই ভাই। আমাদের এই দেশেই বাঁচতে হবে। এ দেশকেই বড় করতে হবে। কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিত, তার বিচার হতে হবে। এটুকুই শুধু।’
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার যোগাযোগ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘যখনই প্রয়োজন হয়। শুধু শুধু তো গিয়ে ওনার সময় নষ্ট করার দরকার নাই। যখনই দরকার হয়, আমি তো তাঁর কাছে যাই।’
সবশেষ রাজনীতি করার কোনো আকাঙ্ক্ষা আছে কি না, এ প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘প্রথম কথা, আমি রাজনৈতিক দল গঠন করি নাই। গঠন করার কথা বলেছিলাম। এবং দশ সপ্তাহ যাবৎ এই কথা জারি ছিল। দশ সপ্তাহ পর আমি বলেছি—না, আমি রাজনীতিতে যাব না। আমি বলেছি যে পলিটিকস ইজ নট মাই কাপ অব টি। এবং ওটা ওখানেই সমাপ্ত। এরপর আমাকে রাজনীতির কাছে কেউ টানতে পারেনি। সবাই চেষ্টা করেছে দেশের নেতৃত্ব নেন, আপনি প্রধানমন্ত্রী হন। সবাই চেষ্টা করেছে। আমি ওটা চাই নাই। আমি বলেছি, ওই চ্যাপটার শেষ। এই দশ সপ্তাহ-দ্যাটস এনাফ। কাজেই ওইভাবেই আছি এখন। এখানে আমি রাজনীতিতে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। রাজনীতি করিও না।’
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার অভাবে ১২ বছরের শিশু মিশকাতের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্যসচিব অথবা অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে...
১০ মিনিট আগেগত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর ভাটারার জে ব্লক এলাকায় ছুরিকাঘাতে আহত হওয়া সত্ত্বেও প্রবল সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভাটারা এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও কুখ্যাত ছিনতাইকারী মো. মোবারক হোসেন নাফিজকে গ্রেপ্তার...
১৯ মিনিট আগেযুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বৈদেশিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা ইউএসএআইডির ২ কোটি ৯০ লাখ (২৯ মিলিয়ন) ডলারের প্রকল্প দুই বাংলাদেশির মালিকানাধীন সংস্থাকে দেওয়ার দাবি সত্য নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে।
২৯ মিনিট আগেবাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় ১২৪ জন কর্মকর্তাকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে সহকারী পুলিশ সুপার থেকে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত ১০১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রয়েছেন।
৩১ মিনিট আগে