Ajker Patrika

বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে ভারত-চীনকে বাঁধ নির্মাণের কথা বলা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image
আজ সোমবার ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের সার্কিট হাউসে বোর্ড সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সিয়ান নদী ও চীনের তিব্বত সীমান্তে বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে বাঁধ নির্মাণের কথা বলা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, ‘একদিকে পদ্মা, অন্যদিকে তিস্তায় পানি কমে গেছে। এখন যদি ব্রহ্মপুত্রের পানিও কমে যায়, তাহলে নদীমাতৃক বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যাবে এবং বড় ধরনের কম্প্রমাইজে পড়ব আমরা। কাজেই উভয় দেশের কাছে আমরা চাইব, আমাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে যেন কাজ করা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।’

আজ সোমবার ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পরে বেলা ২টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সিয়ান নদী ও চীনের তিব্বত সীমান্তে বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশে পানিসংকট ও খরায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, চীনের তিব্বতে সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে তথ্য চেয়ে চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে চীন আমাদের বলেছে, তাঁদের এ প্রকল্পে লোয়ার রিপারিয়ানে (নিম্ন জলজভূমি এলাকা) দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তারপরও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, তারা যেন তথ্য-উপাত্ত চায়। কারণ তথ্য-উপাত্ত না পেয়ে এখনো বলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে ভারতে যেখানে বাঁধ নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে।

নদী গবেষণার ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ১১০০-এর মতো হলেও এতগুলো নদী গবেষণায় মাত্র ৮৪ লাখ টাকার বাজেট হয় কীভাবে? একটা নদীর পেছনেই যদি ১ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। তাহলে সে কী গবেষণা করবে। গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজকে এত অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই। কাজেই আমরা চেষ্টা করব, আগামী বাজেটে পর্যাপ্ত না হলেও বড় বড় গবেষণার জন্য টাকা আনার।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর শেষে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর শেষে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। ছবি: আজকের পত্রিকা

নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটকে নতুন কাজের নির্দেশনা

নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটকে নতুন কয়েকটি কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটকে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেটা তাদের ভিজিবিলিটি বাড়াতে সহায়তা করবে। যেমন শিল্পপ্রবণ এলাকায় নদী কী পরিমাণ দূষিত হয়ে থাকে, ঢাকার বড় বড় নদীদূষণের বিষয়ে জিপিএস পয়েন্ট দিয়ে এই প্রতিষ্ঠান জানাবে। তাহলে দাতা সংস্থা থেকে লোন নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ইকোসিস্টেমের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে এবং এ বিষয়ে এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে বলা হয়েছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর শেষে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর শেষে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপদেষ্টা বলেন, কিছু কিছু গবেষণা সরকারি পর্যায়ে হয়ে থাকে। সে গবেষণাগুলো দেখা যায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য সংস্থা দিয়ে করিয়ে থাকে। কিন্তু আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে যেখানে এ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা রয়েছে, সেখানে কাজ করতে বলা হবে এবং সরকারি যে সংস্থাকেই চুক্তি দেওয়া হোক না কেন, সে বিষয় চুক্তিপত্রে লেখা থাকবে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর শেষে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর শেষে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিংসতার ক্ষেত্রে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সহিংসতার পেছনে কোনো উসকানি রয়েছে কি না, সে বিষয়ে সরকারি সংস্থা কাজ করছে বলে তিনি জানান।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশ গড়ার সময় যদি সহিংসতা-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া হয়, তা হলে সেটা কারও জন্য সুখকর হবে না। গণতন্ত্রে যাওয়ার পথটা এমনিতেই আমাদের জন্য খুব কঠিন। তারপরও যখন আমরা যাত্রা শুরু করেছি, কোনো অসহিষ্ণু আচরণ যেন তা বাধাগ্রস্ত না করতে পারে। এ জন্য সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ সব বিবাদের শান্তিপূর্ণ পথ রয়েছে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর শেষে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক এস এম আবু হুরায়রা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক তাহমিদুল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মোহাম্মদ ইউসুফ, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত