Ajker Patrika

মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা বদলে অধ্যাদেশ জারি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৫, ০০: ১১
মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা বদলে অধ্যাদেশ জারি

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরাসরি যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, তাঁদের মধ্যে মুজিবনগর সরকার, বীরাঙ্গনা এবং মুক্তিযুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসকদের সহায়কদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এর বাইরে অন্যদের মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে রাখা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করে বুধবার রাতে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যাঁরা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক উক্ত সময়ে যাঁদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে; এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

এর বাইরে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত সকল বীরাঙ্গনা এবং মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে যেসব বাংলাদেশের নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন।

এই শ্রেণিতে কারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

গেজেটে বলা হয়েছে, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যেসব বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং উক্ত সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স বা অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন; মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ; যাঁরা পরবর্তীকালে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন; স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সকল শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সকল বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে অনেককে আলাদা করা হলেও তাঁদের সুযোগ-সুবিধা কমবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত