Ajker Patrika

জানুয়ারিতে ডলারের চাপ কেটে যাবে, আশা প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ২৩: ৪৯
জানুয়ারিতে ডলারের চাপ কেটে যাবে, আশা প্রধানমন্ত্রীর

আগামী জানুয়ারি মাস থেকে ডলারের চাপ যাতে কেটে যায় সেদিকে সরকার দৃষ্টি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ওপর একটা চাপ আছে। অবশ্য ঋণপত্র খোলার জন্য যে বাড়তি চাপ তা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি।’ 

আজ রোববার জাতীয় সংসদের ২০ তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। 

যে কোনো অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের তো ভুগতেই হবে। আমি তো বলেছি, আমাদের তৈরি থাকতে হবে যেকোনো অবস্থায়। আমরা তো দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে। মানুষ যেন সুস্থ থাকে।’ 

সরকার প্রধান তাঁর বক্তব্যে দেশের আমদানি–রপ্তানি পরিস্থিতি, রিজার্ভ, বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিসহ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। 

দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির বিশদ বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে সবাই আলোচনা করে। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন রিজার্ভ পাই ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা ক্ষমতায় এসে কিছুটা বাড়িয়েছিলাম—প্রায় ৪ বিলিয়নের কাছাকাছি চলে আসি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ পাই ৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন কিন্তু এত রিজার্ভ নিয়ে এত আলোচনা হয়নি। ৮ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে রিজার্ভ ছিল ১৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ দফা ক্ষমতা গ্রহণের সময়, ৭ জানুয়ারি ২০১৯, রিজার্ভ তখন রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সালের ৩০ জুন রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২১ সালের ৩০ জুন ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের ৩০ জুন ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা প্রায় ৪৮ বিলিয়নের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। করোনায় কমে যাওয়ার পর সবকিছু উন্মুক্ত হওয়ায় আমাদের আমদানি বাড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রিজার্ভ কমতে থাকল।’ 

সরকার প্রধান বলেন, ‘৩ নভেম্বরে আমাদের রিজার্ভ ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। আমাদের যে রিজার্ভ আছে সেটা নিয়ে অন্তত পাঁচ মাসের আমদানি করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তিন মাসের আমদানি করার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট।’ 

 ‘রিজার্ভ গেল কোথায়? শুধু বললে তো হবে না। আমরা বিনা পয়সায় করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছি। এই ভ্যাকসিন কিন্তু ডলার দিয়ে কিনতে হয়েছে। সিরিঞ্জ কিনতে হয়েছে। করোনাকালে চিকিৎসাকর্মীদের আলাদা ভাতা দিয়েছি।’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

সরকার সার্বিক বিষয়ে সতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে বসেছি। হ্যাঁ, সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। এখন থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই বিষয়টি পর্যালোচনা করা। ভবিষ্যতে আমাদের কী করণীয় সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের বিলাসদ্রব্যের আমদানি কমাতে হবে। বা এর ওপর আমাদের ট্যাক্সও বসাতে হবে বেশি করে।’ 

দেশবাসীকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দামি গাড়ি না চালালে...আমাদের আঙুর-আপেল না খেলে কী হয়? এখন তো আমাদের দেশীয় ফল প্রচুর আছে। আমাদের তরমুজ, আমড়া কত কিছু আছে। আমাদের নিজেদের তো আছে। সবাইকে বলব এই বিষয়ের প্রতি সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।’ 

সরকারের ঋণ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক নয় জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, ‘সরকারি ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৬ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আমরা কোনো দিনই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। আমরা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে যাই। আমরা কখনো ডিফল্টার হইনি। ভবিষ্যতেও ইনশাল্লাহ হব না।’ 

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অর্থনীতিটা ধরে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবাইকে বলব, প্রত্যেককে কিছুটা কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে। অর্থ সাশ্রয় করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ রাখতে হবে। মোবাইল, টিভি, টেলিফোন...যা কিছু। আসলে লালবাতিটা যদি জ্বলা থাকে বিল ওঠে। প্রতিটি পরিবার এ ব্যাপারে সচেতন হয়। এই সুইচগুলো বন্ধ রাখলে বিলটা কম উঠবে।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এক কোটি মানুষকে কার্ড দিয়েছি। তাদের ৩০ টাকা কেজিতে চাল দিয়ে যাচ্ছি। তেল, চিনি, ডাল কম মূল্যে সরবরাহ করে যাচ্ছি।’ 

দেশবাসীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনটা বাড়ানো। আমদানি করা জিনিসের ওপর নির্ভরশীলতাটা কমানো—সেই জিনিসটা আমাদের করতে হবে। সঙ্গে রপ্তানি বাড়ানো, কোন দেশে কী পণ্য রপ্তানি করা যায় তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’ 

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু এ জন্য প্রত্যেক ঘরে ঘরে ডেঙ্গুর বিষয়ে সুরক্ষা নিতে হবে। নিজের ঘরে যেন ডেঙ্গু উৎপন্ন না হয়। মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।’ 

বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পরিবহন ধর্মঘটের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাস মালিকেরা যদি বাস না চালায় তাহলে আমরা কী করতে পারি?’ 

 ২০১৩,২০১৪ ও ২০১৫ সালের ‘অগ্নি সন্ত্রাসের’ প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এই যাদের অবস্থা তাদের কী জনগণ ভোট দেবে? খালেদা জিয়া কেন জেলে? তিনি তো দুর্নীতির দায়ে জেলে। অর্থ পাচারে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। জানি না বাংলাদেশের মানুষ যদি ভোট দেয়, আমার কিছু বলার নেই।’ 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আমদানি পণ্য বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, সার, বীজ ও তেল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়ছে, পণ্য পাওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বেড়েছে। এতে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ বা যারা জ্বালানি তেল, গ্যাস, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে হয়, তাদের সকলেই সংকটে পড়েছে। তারপরও আমাদের সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ 

বাজেট দিয়ে সরকার দেশকে ভালোভাবে চালাচ্ছিল উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংকটের মধ্যে দেশের রিজার্ভ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে তার কিছু উত্তর দেব।’ 

বাজেটে সরকার ভর্তুকি ধরে রেখেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি, পরিবহন খরচ বাড়ায় ভর্তুকির চাহিদা বেড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা। আজকে সেখানে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যদি আমরা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ দিতে চাই তাহলে, এই ভর্তুকি দিতে হবে। জ্বালানি তেলে অতিরিক্ত ভর্তুকি লাগছে ১৯ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। খাদ্য আমদানিতে লাগছে ৪ হাজার কোটি টাকা। টিসিবিসহ জনবান্ধব কর্মসূচিতে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ৯ হাজার কোটি টাকা। ১ কোটি মানুষকে কার্ড দিয়েছি। স্বল্পমূল্যে তাদের খাদ্য দিচ্ছি। মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেই জন্য দিচ্ছি। কৃষি খাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি লাগছে ৪০ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা শুধু ভর্তুকি চাহিদা বেড়েছে।’ 

গ্যাসে প্রতি ঘন মিটারে ১০ টাকা ৬০ পয়সা করে ভোক্তা পর্যায়ে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও জানান, শিল্প কারখানার এলএনজির গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারে ৪৮ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সারের ভর্তুকির তথ্যও তুলে ধরেন তিনি। 

গত এক বছরে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। চাল, গম ও আটার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করে। আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন ব্যয় ৪০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান তিনি। 

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (জুলাই-অক্টোবর) আয় হয়েছে ১৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সাত শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে (জুলাই-অক্টোবর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে থেকে ২ শতাংশ বেশি। একই সময়ে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ২২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ কম। 

খাদ্য দ্রব্য রিজার্ভ থাকার পরেও বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমদানি করেছে সরকার। রাশিয়া বাধা সরিয়ে নেওয়ায় ইউক্রেন থেকে গম ও তেল আসা শুরু হয়েছে। দেশে আমন আউশ ধান সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ যেতে পারবেন না

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ‘একান্ত প্রয়োজন’ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ না করার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

বিদেশ ভ্রমণ-সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের আগের পরিপত্র এবং অর্থ বিভাগের গত ৮ জুলাইয়ের চিঠির বিষয়টি তুলে ধরে সম্প্রতি সরকারের সব সচিবের কাছে নতুন পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। পরিপত্রের অনুলিপি উপদেষ্টাদের একান্ত সচিবদেরও দেওয়া হয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, লক্ষ করা যাচ্ছে, জারিকৃত পরিপত্রগুলোর নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ না করে বিদেশ ভ্রমণের ঘটনা ঘটছে। মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিব একই সময়ে বৈদেশিক সফরে যাচ্ছেন। একই মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা একসঙ্গে বিদেশে যাচ্ছেন। এ ধরনের প্রস্তাব প্রায়ই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে, যা আগের নির্দেশনাগুলোর পরিপন্থী।

সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ-সংক্রান্ত আগের সব নির্দেশনা প্রতিপালনের নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘এখন থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত একান্ত অপরিহার্য কারণ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করার অনুরোধ করা হলো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তফসিল ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে, ভোট ফেব্রুয়ারিতে: ইসি আনোয়ারুল ইসলাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৯
নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে এবং ভোট গ্রহণ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে। রমজান মাস শুরুর আগেই নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে কমিশন কাজ করছে বলে তিনি জানান।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে পটুয়াখালী সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার এই তথ্য জানান।

ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে নির্বাচনের জন্য একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। আমরা রমজান মাসের আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গণভোটের দাবি প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘গণভোট নির্বাচনের আগে হবে না পরে হবে—এ বিষয়টি এখনো কমিশনের আলোচনায় আসেনি। সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কেও আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য পাইনি। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে তা যথাসময়ে জানানো হবে।’

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। আমরা সেই সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি।’

নির্বাচন কমিশনার আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে চাই।’

নির্বাচন কমিশনার আরও জানান, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচনী আচরণবিধি এবং নির্বাচনী প্রতীকের তালিকা ইতিমধ্যে হালনাগাদ করা হয়েছে।

ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কমিশন কিছু নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নভেম্বর মাস থেকে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে। কারাবন্দী ভোটারদেরও ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

এ সময় অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী এবং স্থানীয় প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে নির্বাচন কমিশনার জেলার কুয়াকাটায় একটি কর্মশালায় যোগ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক পরিস্থিতি: বিভেদে বাড়ছে উৎকণ্ঠা

  • দলগুলোর তৎপরতার কেন্দ্রে জনগণের স্বার্থ কতটা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে
  • শিক্ষার্থী ও তরুণেরাও এখন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ে
  • দেশের স্বার্থে দলগুলোকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখাতে হবে, মত বিশেষজ্ঞদের
অর্চি হক ও আব্দুল্লাহ আল গালিব, ঢাকা
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আট খণ্ডের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আট খণ্ডের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

রক্তাক্ত জুলাই অভ্যুত্থানের পর পুরোনো ব্যবস্থা ভেঙে নতুন রূপে দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন মানুষ। প্রত্যাশা ছিল, নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক বিভেদ ঘুচিয়ে সংস্কার সম্পন্ন হবে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসবে দেশে। কিন্তু জনপ্রত্যাশা পূরণের পথে না হেঁটে নানা বিষয়ে একে অপরের সঙ্গে বিবাদে জড়াচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটে দলগুলোর মধ্যে মতভেদ যেভাবে তীব্র হয়ে উঠেছে, তাতে জনমনে বিরক্তি-হতাশা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

নাগরিকদের অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলো বক্তব্য-বিবৃতি ও কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে অনড় অবস্থান জানান দিচ্ছে, তাতে প্রকৃত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, দলগুলোকে জনগণের কাছে ফিরে গিয়ে আস্থার জায়গা পুনর্গঠন করার এখনই উত্তম সময়। যেভাবেই হোক, দেশ ও জাতির স্বার্থে সমঝোতার ভিত্তিতে সংকটের অবসান ঘটাতে হবে।

নূরে আজম নামের একজন চাকরিজীবী বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় কখন স্বাভাবিক হবে, তা অনেকাংশে নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু একেক দল একেক মত নিয়ে এখন অনড় অবস্থানে রয়েছে। এতে নির্বাচন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে। জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পরও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন মতানৈক্য সাধারণ মানুষকে দ্বিধার মধ্যে ফেলেছে, অনেকেই এতে বিরক্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাহদিয়াব হোসেন দিহান বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল, সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন নিয়ে এখন সংশয় বিরাজ করছে—এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল সুশাসন, গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, রাজনৈতিক বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা এবং নিরাপত্তা সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা সময় অতিক্রম করছি।’

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা বেড়েছে অনেক গুণ। কিন্তু সে তৎপরতার কেন্দ্রে জনগণের স্বার্থ কতটা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দলগুলো নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে যে যার মতো সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিং করছে; কিন্তু কোনো পক্ষই এখনো দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখা স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পরে এসে প্রত্যাশার বিপরীতে বাস্তবতা মিলিয়ে মানুষ অনেকটাই দিশেহারা।

জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন-প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই নানা বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ চলে আসছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত সনদ চূড়ান্ত হয়েছে, তাতে স্বাক্ষরও করেছে সংলাপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ দল। কিন্তু এখন নতুন গন্ডগোল বেধেছে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও গণভোট নিয়ে। জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনা দলগুলো নভেম্বরেই জুলাই সনদের ওপর গণভোট চায়। দ্রুত সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির দাবিও করেছে দলগুলো। গতকাল শুক্রবারও খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় এক সমাবেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নভেম্বরে গণভোট দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।

তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গণভোট নভেম্বরেই হতে হবে এমন দাবি না করলেও তারাও চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হোক। দলটির বড় চাওয়া প্রধান উপদেষ্টার আদেশেই জুলাই সনদের বাস্তবায়ন। অন্যদিকে বিএনপি বলেছে, আদেশ জারির এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোটের পক্ষে দলটি। এ ছাড়া সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া কিছু সুপারিশ নিয়েও তীব্র আপত্তি জানিয়েছে দলটি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় চলে গেছে, গতকাল এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

তবে সরকারসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপদেষ্টা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের পক্ষে। তবে কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ অনুযায়ী বাস্তবায়ন আদেশ দেবে সরকার।

গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্যের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। কারণ, এ ধরনের মতানৈক্যের ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিঘ্নিত হবে কি না, এমন আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ আশা করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু এ ধরনের মতানৈক্য থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব, সে প্রশ্ন উঠছে মানুষের মনে। এটি রাজনৈতিক সংকটের আলামত।

এমন পরিস্থিতি উত্তরণের উপায় কী, জানতে চাইলে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, দলগুলোকে ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে হবে। না হয় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। দেশের স্বার্থে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জুলাই-উত্তর সময়ে বাংলাদেশ একটা রাজনৈতিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখানে খানিকটা টেনশন হতে পারে। তবে এই টেনশনের মধ্যেও আমি মনে করি, একটা বিষয়ে সবাই একমত আছে—সেটা হলো একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে, সবাই যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, সে রকম একটা নির্বাচন। আরও একটা জায়গায় সহমত আছে, তা হলো জুলাই সনদ। দ্বিমত যেটা দেখা যাচ্ছে, সেটি সনদ বাস্তবায়নের পথ নিয়ে। আমার ধারণা, এখনো আলাপ-আলোচনার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো বসে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা পদ্ধতি নিয়ে যদি একমত হতে পারে, তাহলে এই সাময়িক যে উত্তেজনা, বিভাজন থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে আমি মনে করি।’

জুলাই সনদ নিয়ে যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য ঐকমত্য কমিশনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মানবাধিকারকর্মী ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন। আমরা দেখলাম, ঐকমত্য কমিশন গঠন হলো; কিন্তু সেখানেও বিভেদ। পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আমলেই নেওয়া হলো না। যার নেতৃত্বে এই কমিশনটা চলছে, তার সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কমিশনে নারীদের একেবারেই উপেক্ষিত রাখা হয়েছে।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনই উত্তরণের পথ বলে জানান শিরীন হক। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সব ব্যাপারে ঐকমত্য হবে, তা আশা করা উচিত না। দলগুলোর নিজ নিজ আদর্শ আছে, মতাদর্শ আছে, দাবি-দাওয়া আছে, সেখানে তো পার্থক্য থাকবেই। কিন্তু মানুষ একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং শিগগিরই চায়। তাই সরকারের উচিত, নির্বাচনটা কীভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুন্দরভাবে হতে পারে, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অক্টোবরে বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ ও কারা হেফাজতে মৃত্যু: এমএসএফ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ২২
অক্টোবরে বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ ও কারা হেফাজতে মৃত্যু: এমএসএফ

অক্টোবরে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বরের চেয়ে বেশ খানিকটা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছিল ৫২টি। অক্টোবরে উদ্ধার হয়েছে ৬৬টি। অক্টোবরে কারা হেফাজতে ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

তবে অক্টোবরে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্মীয় সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনা কমেছে।

আজ শুক্রবার মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) অক্টোবর মাসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতা, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো ‘উদ্বেগজনক ও অস্থির’ জানিয়ে এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনায় হতাহত হয়েছিল ২৯৬ জন। অক্টোবরে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ৫৪৯ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিবর্তনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নিলেও আইনটি এখন পর্যন্ত বাতিল হয়নি; বরং এই আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। ফলে এ আইনে করা মামলার সংখ্যা বাড়ছে। গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বাড়ছে।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে ৩৬৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত মাসের চেয়ে ৭টি বেশি। এ মাসে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনা ৭২টি, দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনা ১৪টি এবং ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগের ঘটনা ৭। এর মধ্যে ৫ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত