Ajker Patrika

সংলাপে সাংবাদিকেরা

আস্থা অর্জন করাই ইসির বড় চ্যালেঞ্জ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আস্থা ফেরানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-ভিত্তিক অপপ্রচার ও গুজব মোকাবিলা করাই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা। এসব মোকাবিলার পাশাপাশি নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ এবং প্রার্থীদের আচরণবিধি প্রতিপালনে মেরুদণ্ড শক্ত করে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে বলেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে নির্বাচনে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সঠিক তথ্য মূলধারার গণমাধ্যমকে তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহের পরামর্শ দিয়েছেন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে ইসির আয়োজিত সংলাপে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা এসব পরামর্শ দেন।

সংলাপে কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ প্রতিটা নির্বাচনী এলাকায় পেশাজীবী, এলাকার গণ্যমান্য শিক্ষক, তরুণ, মুরব্বিদের নিয়ে একটি কমিটি করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এই কমিটি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগপর্যন্ত সবকিছু নজরদারি করবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে কমিশনের অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানান তিনি।

দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, আগামী নির্বাচন যাতে কেউ বানচাল করতে না পারে, সে জন্য দৃঢ়তা দেখাতে হবে। সাংবাদিক নীতিমালা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এটা দয়া করে সংশোধন করেন। গণমাধ্যমকে শত্রু হিসেবে না নিয়ে সহযোগী হিসেবে দেখেন।

আজকের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, পরিকল্পিতভাবে হলফনামার তথ্যগুলো ওয়েবসাইটে অনেক পরে আপলোড করা হয়। এতে ওই প্রার্থী নিয়ে কোনো কিছু বলার থাকে না। প্রার্থীরা জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হলফনামা ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে।

কামরুল হাসান আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সামনে প্রকাশ্যে একধরনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু কেন্দ্রের ভেতরে বা অন্য বিভিন্ন জায়গায় অনেক গোপন নির্দেশ দিয়ে থাকে। এই কমিশন যেহেতু একটা স্বচ্ছ নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসছে, কমিশনের কাছে অনুরোধ থাকবে, কোনো ধরনের কোনো গোপন নির্দেশনা যেন না দেওয়া হয়।

প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাঠিন্য অবলম্বন করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে। আশা করি ভালো ভোট হবে।

ডিবিসি টিভির সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য গোপন করা হয়, ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। হলফনামা যেটা দিল আমরা জানি ভুয়া, কিন্তু ইসি আর সেটা তদন্ত করে দেখল না, সেটা হলে তো আর হলফনামা দেওয়ার দরকার নেই।

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, ১২টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে গুটিকয়েক ছাড়া বাকি সব নির্বাচন বিতর্কিত ছিল। নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের মেরুদণ্ড শক্ত করে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।

খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, মবের রাজনীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সেই জায়গাটায় কোথায় বাধা। যারা বিগত তিনটা নির্বাচন করেছে, তারাই এবারও করবে। কাজেই সেই জায়গাটায় ইসির পক্ষ থেকে কঠিন বার্তা যেতে হবে।

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, এবারের নির্বাচনে বোঝা যাচ্ছে অর্থ ও বলপ্রয়োগ অনেক হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দুর্বল, প্রশাসনের অবস্থাও দুর্বল। এই অবস্থায় নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে, এ নিয়ে আশঙ্কা রয়ে গেছে।

দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার হেড অব নিউজ জিয়াউল হক বলেন, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকেরা প্রবেশ করে যেন কোনো বাধা ও হয়রানির শিকার না হন এবং তাঁদের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা হয়।

সংলাপে অন্যদের মধ্যে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক আবু তাহের, সারাবাংলাডটনেট-এর হেড অব নিউজ গোলাম সামদানী, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম-এর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু, দৈনিক খবর সংযোগ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম, আরএফইডির সভাপতি কাজী জেবেল, নয়া দিগন্ত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, জাগো নিউজের সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক, ঢাকামেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল, একাত্তর টিভির বার্তা প্রধান শফিক আহমেদ, যমুনা টিভির জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, চ্যানেল আই অনলাইনের সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান, এটিএন নিউজের হেড অব ইনপুট শহিদুল আজম, বৈশাখী টিভির বার্তা প্রধান কবির সুমন নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেন।

স্বাগত বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আজকের এই সংলাপ কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং মিডিয়ার মতামত নিয়েই নির্বাচন কমিশন সামনে এগিয়ে যেতে চায়। কমিশন আয়নার মতো স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় বলেও জানান তিনি।

ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় এই সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতে আত্মহত্যা করা পুলিশকে ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে তদন্ত কর্মকর্তারও আত্মহত্যা, রেখে গেলেন তিন পাতার ‘সুইসাইড নোট’

অব্যাহতি চাওয়ার পর মাউশি মহাপরিচালক আজাদ খানকে ওএসডি

‘জুলাই যোদ্ধাকে’ জুলাই ফাউন্ডেশনে পাইপ দিয়ে মারধর, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের হারে বাংলাদেশের বিদায়, হামজার হতাশা

এবার দলগুলো পেল চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্র

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত