Ajker Patrika

ধ্বংসস্তূপ ৩২ শূন্যে দাঁড়িয়ে সুধা সদন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ২০
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ৫ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দিয়েছে ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ৫ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দিয়েছে ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গত বুধবার রাতভর ভাঙচুর চলেছে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বর্ধিত তিন ভবনের বড় অংশও। এখন পড়ে রয়েছে ধ্বংসস্তূপ। ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে ধানমন্ডির ৫ নম্বরে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনও। তবে চার তলার এই ভবনের পুড়ে যাওয়া কিছু অংশ ছাড়া বাড়িটি অক্ষত রয়েছে। তবে বাড়িতে থাকা বই, বিভিন্ন আসবাবপত্র, লোহা, ইট, ভাঙা গ্রিল, কাঠ—যে যার মতো পেরেছে, নিয়ে গেছে।

ক্ষমতাচ্যুতির ৬ মাস পূর্তির দিন গত বুধবার শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যকে ঘিরে ওই রাতে ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে ধানমন্ডি ৩২-এ শেখ মুজিবের বাড়িতে ভাঙচুর শুরু হয়। রাতে একটি ক্রেন ও দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে ওই বাড়ি ভাঙা শুরু হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায় একটি এক্সকাভেটর। যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সেটিও সরিয়ে নেওয়া হয়।

৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ঠেকাতে পুলিশের কী উদ্যোগ ছিল? ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। গভীর রাত পর্যন্ত আমি নিজে সেখানে ছিলাম।’

গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ৩২ নম্বরের বাড়িটির রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। হাতুড়ি, শাবল, লোহা কাটার ব্লেড দিয়ে যে যার মতো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ইসমাইল নামের মোহাম্মদপুরের এক বাসিন্দা ভ্যানে করে এমন নানা মালপত্র বোঝাই করছিলেন। এসব কী করবেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভাঙারির দোকানে নিয়া বেচমু, কী করমু আর। সবাই নিতেছে, আমিও নিলাম যা পাইছি আইসা।’ ভবনের রড কাটছিলেন মালেক নামের একজন। তিনি বলেন, ‘ভাইঙাই তো ফেলতেছে, আমরা কিছু নিয়া যাই।’

বেলা যত বাড়তে থাকে ৩২ নম্বরের ভাঙা বাড়ি দেখতে তত বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। বেলা ৩টার দিকেও ওই ছয়তলা বর্ধিত জাদুঘরের ভবনটিতে শত শত মানুষকে ঢুকতে আর বের হতে দেখা যায়। তাঁদের কেউ ভবনটিতে থাকা বঙ্গবন্ধু-সম্পর্কিত বিভিন্ন বই হাতে করে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন। সামনের আধা ভাঙা ভবন দুটিতেও উৎসুক জনতার ঢল।

সুধা সদন পড়ে আছে খালি

৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার মধ্যেই বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডি ৫-এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে। গতকাল দুপুরে ভবনটির কোথাও কোথাও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এ সময় প্রচণ্ড তাপের মধ্যেও বাড়িটির ভেতর থেকে লোকজনকে যে যার মতো করে রড, সোফা, চেয়ার, টেবিলসহ আধা পোড়া আসবাব, এসি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের ভাঙা অংশ সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ডাকনাম ছিল সুধা মিয়া। তাঁর নামেই এ বাড়ির নামকরণ। সুধা সদনের সামনের ভবনের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা জানান, ২০০১ সালে বিরোধী দলে থাকাকালীন এবং ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত এ বাড়িতেই ছিলেন শেখ হাসিনা। এতোদিন এটি আওয়ামী লীগের গবেষণা সেলের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন দিবসে এ বাড়িতে মাঝেমধ্যে এসেছেন শেখ হাসিনা। তাঁর পুরো আমলে এ বাড়ির নিরাপত্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন থাকত।

গতকাল বেলা ১টার দিকে ধানমন্ডির ৫ রোডে সুধা সদনের গেটের সামনে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে মধ্যবয়সী এক নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁদের পোশাক-আশাক ছিল পশ্চিমা ধাঁচের। ওই নারীর এক ছেলে ও এক মেয়ের হাতে ছিল তিনটি ইট। আরেক মেয়ের হাতে ছিল শেখ হাসিনার পরিবারের একাধিক ছবি। তাদের মা জানান, সন্তানদের ভালো লেগেছিল বলেই এগুলো নিয়ে এসেছেন। ৩২ নম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় ভবন থেকে তিনটি ইট সংগ্রহ করেছেন বলে জানান ছেলে মেহেরান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশটা নেতাদের নয়, জনগণের। শেখ হাসিনা যা করেছেন তা ভুল। এই ইট তাঁর বাড়ি থেকে এনেছি। এখানে তাঁর আর কিছুই নেই। তিনি জীবনেও দেশে আসতে পারবেন না। ৩২ নম্বর ও সুধা সদন ভাঙচুরের মাধ্যমে ৫ আগস্ট পূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেন মেহেরানের মা।

আওয়ামী লীগ সন্দেহে নারীসহ দুজনকে গণপিটুনি

বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার মধ্যেই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উৎসুক জনতার ভিড়ে আওয়ামী লীগ সন্দেহে এক নারীসহ দুজনকে গণপিটুনি দিয়েছে ছাত্র-জনতা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় এক নারীকে এবং কথা বলার সময় ‘আপার বাড়ি’ বলায় এক পুরুষের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাদের মারতে মারতে ধানমন্ডি ৩২ থেকে প্রধান সড়কে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে এক ফটোসাংবাদিকসহ কিছু লোক তাদেরকে রিকশায় উঠিয়ে দেন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত