Ajker Patrika

ডিসি সম্মেলন শুরু

অরাজনৈতিক প্রকল্পে অনাপত্তি

  • উদ্বোধনের পর মুক্ত আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
  • বেসরকারি স্কুল-কলেজের পর্ষদ নতুন করে গঠনের নির্দেশনা।
  • সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে আলোচনা।
  • স্বাস্থ্য খাতে জনবল সংকটের কথা জানিয়েছেন ডিসিরা।
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৫৪
অরাজনৈতিক প্রকল্পে অনাপত্তি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্প ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে যেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, অসমাপ্ত এমন ভালো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনে নতুন করে তাঁদের পরিকল্পনা পাঠাতে বলা হয়েছে।

রাজধানীতে গতকাল রোববার শুরু হওয়া তিন দিনের ডিসি সম্মেলনে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কার্যালয়ে এ সম্মেলন উদ্বোধন করে ডিসিদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও এর আওতাধীন দপ্তরের কার্য-অধিবেশনেও অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক অধিবেশনগুলো হয়েছে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে।

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডিসি সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সম্মেলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন ডিসি জানান, সরকার পরিবর্তনের পর বিগত সরকারের সময় নেওয়া অনেক প্রকল্প স্থবির অবস্থায় রয়েছে। এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বেশ কয়েকজন ডিসি এ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা চান। তখন ডিসিদের জানানো হয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল– এমন প্রকল্প বাদ দিয়ে অন্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা নেই।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্য-অধিবেশন শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও একই কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে অনেক প্রকল্পের ঠিকাদার টাকা নিয়ে চলে যাওয়ায় অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক অসমাপ্ত প্রকল্প রয়েছে। এমন প্রকল্পগুলো কীভাবে আবার শুরু করা যায়, সে বিষয়ে ডিসিদের বলা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন জনহিতকর প্রকল্প বাস্তবায়ন যেন বিঘ্নিত না হয়, তাঁরা সে নির্দেশনা দিয়েছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে স্থানীয় প্রকল্পের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে সেই অবস্থা নেই বলে ডিসিদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। রাস্তাঘাট, সেতু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণসহ স্থানীয়ভাবে কী ধরনের প্রকল্প নেওয়া দরকার, সে বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিতেও ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের নির্দেশ: গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে রয়েছে।

এসব পরিচালনা পর্ষদ নতুন করে গঠন করতে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছে। এখানে যারা ছিল তারা চলে গেছে। চর দখলের মতো নতুন প্রভাবশালীরা সেটা দখলের চেষ্টা করেছে। আমরা পরিচালনা পর্ষদগুলো ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করেছিলাম। ডিসি, ইউএনওদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু এত দায়িত্ব তাঁদের পক্ষে পালন করা খুবই কঠিন। এ কারণে আমরা তাঁদেরকে পরামর্শ দিয়েছি, পরিচালনা পর্ষদগুলো আবার শুরু করে দিতে।’

রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে স্থানীয়ভাবে সৎ, ভালো মানুষ এবং সরকারি চাকুরে ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে এই পর্যদ গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন উপদেষ্টা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে বিএ পাস এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি থাকার নিয়ম করে দেওয়ার বিষয়টিও ডিসিদের মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এ বছর পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও বিতরণ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, যে বিষয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হবে, সেসব বিষয়ের বই ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে চলে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। প্রান্তিক স্কুলগুলোতে যেন আগে বই যায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘তাঁদের (ডিসি) সামনে নির্বাচন আসছে এবং সেই নির্বাচনকে কী করে সুষ্ঠু করা যায়। আমাদের সরকারের প্রধান কাজ তো সবার দাবিদাওয়া মেটানো নয়; বরং একটি সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাতে উত্তরণ হয়, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হয়, সে ক্ষেত্রে ডিসিরা সব থেকে বেশি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘আগের জেলা প্রশাসকেরা তাঁদের শহরের জন্য একটি স্মৃতি রেখে যেতেন। আমি ডিসিদের তাঁদের শহরে একটি করে নিদর্শন রেখে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। আজকাল সবকিছুই রাজনীতিকদের নামে হয়, প্রশাসকদের নামে কিছু হয় না। অন্তর্বর্তী সরকারে যাঁরা আছেন তাঁদের নামেও কিন্তু কোথাও কিছু হবে না। আমরা কোনো ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চাই না। আমাদের একমাত্র কাজ হলো সুন্দর নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়া।’

শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অনলাইনভিত্তিক বদলির ব্যবস্থা চালু, তাঁদের জন্য ভাতা বাড়ানো এবং বকেয়া অবসর-সুবিধা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ উদ্যোগ: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্য-অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য খাতে জনবলের অভাবের কথা ডিসিরা বলেছেন। কোথাও ৫০০ শয্যার জায়গায় ১ হাজার ২০০ রোগী থাকছে। কোথাও কোথাও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি প্রতিষ্ঠার চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের বেআইনি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, এসব ক্ষেত্রে ডিসিরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে যেন আমাদের স্বাস্থ্যকাঠামোর পাশে থাকেন, সে বিষয়ে বলা হয়েছে। যে জনবলকাঠামো, সেটা নিয়ে আরও ভালো স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব, আমরা তাঁদের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছি।’

বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আমরা দেখছি এন্ট্রি পদে ৫ হাজারের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ পদ এবং অন্যান্য আধুনিক হাসপাতালগুলোতে পদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পদ সৃষ্টি এবং এর আর্থিক সংশ্লেষ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা ইতিমধ্যে ৫ হাজার পদ সৃষ্টির জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিয়ে যেটুকু অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, ১২-১৪ হাজার আহতের তুলনায় তা খুবই কম। অসন্তোষের মাত্রা কোনোভাবেই ১ শতাংশও নয়।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৪০ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা কখনোই টাকার দিকে তাকাননি। আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের চিকিৎসা করানোর জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসকদের আনা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও আওতাধীন সংস্থাসম্পর্কিত অধিবেশনে সব বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাসংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে নিষ্পন্ন করা, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জে ইপিজেড নির্মাণ, নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্মাণকাজ শেষ করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিবেশনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য এনজিওগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ওয়ার্কফোর্স তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত