তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীন নয়টি সেতুতে সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে টোল আদায়। এসব সেতুর কোনোটি থেকে ২০ বছর, আবার কোনোটি থেকে ৩৩ বছরের বেশি সময় ধরে টোল আদায় করা হচ্ছিল। এতে সেতুগুলোর নির্মাণব্যয় অনেক আগেই উঠে গেছে দাবি করে গত ৫ আগস্টের পর থেকে টোল আদায় বন্ধ করে দেন পরিবহনশ্রমিক ও বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকে সারা দেশে নয়টি সেতুতে টোল আদায় একেবারেই বন্ধ রয়েছে। আর একটি সেতুতে আংশিক টোল আদায় করা হচ্ছে। টোল আদায় বন্ধ হয়ে যাওয়া সেতুগুলো হলো ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ সেতু, খুরশিদ মহল সেতু, বানার সেতু ও রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া সেতু, চাঁদপুরের চাঁদপুর সেতু, চট্টগ্রামের তৈলারদ্বীপ সেতু, ঢাকার ধরলা সেতু, কুষ্টিয়ার শহীদ মাসুদ রুমি সেতু এবং মুন্সিগঞ্জের তুলসীখালী মরিচা সেতু।
এ ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা সেতুর টোল আদায় করা হচ্ছে আংশিকভাবে। বড় যানবাহন টোল দিচ্ছে; কিন্তু অটোরিকশাগুলো ফ্রি যাচ্ছে, টোল দিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট জেলার সড়ক বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত মহানন্দা সেতু থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে ১৯৯৩ সাল থেকে। সেই হিসাবে ৩২ বছর ধরে সেতুটিতে টোল দিয়ে আসছে বিভিন্ন যানবাহন।
ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত শম্ভুগঞ্জ সেতু থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে ১৯৯২ সাল থেকে। ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি এরই মধ্যে নির্মাণ ব্যয়ের টাকা তুলে ফেলেছে। এরপরও তিন বছর পরপর সেতুটি ইজারা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু স্থানীয় নাগরিকেরা টোল আদায় বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র-জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেই সেতুর টোল আদায় বন্ধ করে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে সেতুটির টোল বক্সটি গুঁড়িয়ে দেন তাঁরা।
টোল আদায় বন্ধ থাকা অন্য সেতুগুলোর মধ্যে ২০০০ সাল থেকে রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া সেতু, ২০০৫ সালে টোল তোলা হচ্ছে তুলসীখালী মরিচা, শহীদ মাসুদ রুমি, তৈলারদ্বীপ এবং চাঁদপুর সেতু থেকে, ২০১৮ সাল থেকে বানার সেতু এবং ধরলা সেতু থেকে টোল আদায় করা হচ্ছিল। ৫ আগস্টের পর স্থানীয়দের বাধার মুখে সেতুর নির্ধারিত টোল তুলতে পারছে না সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।
জানা গেছে, সরকার পতনের পর এসব সেতুর টোল আদায়ের সঙ্গে যুক্ত অনেক ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। কিছু জায়গায় টোল বুথ ভাঙচুর করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণ টোল আদায়ে বাধা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে জেলার পরিবহনশ্রমিক সংগঠনের নেতারাও টোল আদায় করতে গেলে বাধা প্রদান করছেন। টোল আদায়ের কাজ নিতে চান রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। ফলে সংশ্লিষ্ট জেলার সড়ক বিভাগ অফিস থেকে টোল আদায়ে অপারগতার কথা জানিয়েছে সড়ক জনপথ অধিদপ্তরে।
কেন সেতুতে টোল আদায় হচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৫ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পলিটিক্যাল চাঁদাবাজদের খপ্পরে আছে এটা। টোল আদায় হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু চাঁদাবাজরা চাঁদা ঠিকই তুলছে সেতু থেকে। এগুলো আমাদের নজরে আছে এবং দেখছি কী করা যায়।’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের টোল শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে সেতু থেকে টোল আদায় করার জন্য। জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে, স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে বুঝিয়ে টোল আদায় কার্যক্রম আবার চালু করার জন্য। টোল বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু সেতুতে আদায়ের ঠিকাদার নিয়োগ ছিল। কিছু ঠিকাদার টোল আদায় করার জন্য একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন। আর কিছু সেতুতে সওজ বিভাগীয়ভাবে টোলা আদায় করত। এখন টোটালি টোল আদায় করা যাচ্ছে না।’
সওজ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ৬৭টি সেতু এবং ৪টি সড়ক থেকে টোল আদায় করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এসব সেতু থেকে বছরে টোল আদায়ের একটা টার্গেট থাকে সরকারের। ২০২২-২৩ অর্থবছরে টোল আদায়ের টার্গেট ছিল ১৩৫০ কোটি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের টার্গেট ছিল ১২৮৭ কোটি এবং ২০২৪-২৫ চলতি অর্থবছরে এই টার্গেট বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ১১-১২ শতাংশ টোল আদায় হয়েছে, যা অন্যান্য বছরের এ সময়ের তুলনায় অনেক কম।
সরকারের আয় বাড়াতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ওপর চলতি অর্থবছরে ২ হাজার কোটি টাকার টোল আদায়ের টার্গেট চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সওজের যেসব সেতু আছে, সেখান থেকে এত টাকা টোল তোলা কখনোই সম্ভব নয়। গড়ে ১ হাজার থেকে ১২০০ কোটি টাকার টোল আদায় হতে পারে বলে জানিয়েছেন সওজের রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা।
সওজ থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ের পথ হলো, সেতুর টোল আদায়। এখান থেকে ৯৫ শতাংশ রাজস্ব সরকার পেয়ে থাকে। এর বাইরে অ্যাপ্রোচ রোড এবং পরীক্ষাগারে বিভিন্ন টেস্ট বাবদ ঠিকাদারদের কাছ থেকে কিছু রাজস্ব পায় সরকার।
এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর আনুমানিক ৩০টি সেতুর টোল আদায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সওজ সেগুলো ধীরে ধীরে চালু করতে পেরেছে। তবে এখনো ৯টি সেতুর টোল চালু করতে পারেনি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে ভালো কোনো টেন্ডারে ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয় না। ওই এলাকার মাস্তানরা জোরজবরদস্তি করে টোলের ঠিকাদারি নিয়ে নেয় এবং চাঁদাবাজি করে। সে জন্য মানুষের মধ্যে টোল না দেওয়ার প্রবণতা আছে। টোল ছাড়া গাড়ি ব্যবহার করা যৌক্তিক হবে না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কোনো কমিটমেন্ট নেই। আমাদের দেশে টোল আদায় শুরু হলে সেটা সারাজীবন চলে এবং এটা একটা চাঁদাবাজির পর্যায়ে চলে যায়। সেই জায়গায় সওজকে অত্যন্ত বিচক্ষণতা এবং পেশাদারত্বের পরিচয় দিতে হবে।’
সেতুতে কত দিন টোল তুলবে সরকার:
সাধারণ মানুষের অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর একই সেতুতে টোল দিয়ে যাচ্ছি, তারপরেও কি সেতুর খরচ ওঠে না। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সওজের আওতায় যতগুলো সেতুতে টোল আদায় করা হয়, সেসব সেতু থেকে কত দিন টোল আদায় করা হবে, সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের সঠিক কোনো নির্দেশনা নেই।
কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু সেতু থেকে সরকারের রেভিনিউ আসে, ফলে খরচ উঠে গেলেই এটি বন্ধ করে দেওয়া হবে এমন কোনো নিয়ম কোথাও নেই। এ রকম কোনো পরিপত্র বা গাইডলাইন, সড়ক পরিবহন আইন বা টোল আদায় নিতিমালার কোথাও এ ধরনের কোনো কিছু বলা নেই। একটা সেতু থেকে কত বছর টোল আদায় করা হবে, তা নির্ধারিত নেই।
সরকার কত বছর টোল তুলতে পারে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেতুর টোল তোলার বিষয়টি বছরের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। টোল নীতিমালা অনুযায়ী কোন সেতু এবং সড়কের টোল তোলা হবে, সেটা বলা আছে। সেতু হওয়ার পর যাতায়াত সময় কমে যায়। মানুষ একটা সুবিধা পায়, সেটার একটা ভ্যালু তৈরি হয়। ফলে সরকার সেটার একটা চার্জ নেয়। সেতু মেরামত করতে টাকার প্রয়োজন হয়। টোলের টাকা দিয়ে সেটা করা হয়। ফলে টোল নীতিমালা অনুযায়ী সড়ক ও সেতুগুলোকে সঠিকভাবে রাখার জন্য রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে সরকার এটা ব্যবহার করে।’
সাধারণ ৩ পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হয়। অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ওঅ্যান্ডএম), ইজারা এবং বিভাগীয়। টোল আদায়ে ওঅ্যান্ডএম এবং ইজারা তিন বছরের জন্য দেওয়া হয়। তারপর আবার নবায়ন করা হয়। এই দুই পদ্ধতিতে টোল আদায় না করতে পারলে, সওজ থেকে বিভাগীয়ভাবে নিজেদের লোক দিয়ে আদায় করা হয়।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন ‘অবশ্যই টোল আদায়ের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকতে হবে। মেয়াদের পরও যদি টোল আদায় করা হয়, সেটা আর টোল থাকে না। সেটা চাঁদাবাজির পর্যায়ে চলে যায়। কারণ এটা তো মানুষের পকেট থেকে যাচ্ছে।’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীন নয়টি সেতুতে সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে টোল আদায়। এসব সেতুর কোনোটি থেকে ২০ বছর, আবার কোনোটি থেকে ৩৩ বছরের বেশি সময় ধরে টোল আদায় করা হচ্ছিল। এতে সেতুগুলোর নির্মাণব্যয় অনেক আগেই উঠে গেছে দাবি করে গত ৫ আগস্টের পর থেকে টোল আদায় বন্ধ করে দেন পরিবহনশ্রমিক ও বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকে সারা দেশে নয়টি সেতুতে টোল আদায় একেবারেই বন্ধ রয়েছে। আর একটি সেতুতে আংশিক টোল আদায় করা হচ্ছে। টোল আদায় বন্ধ হয়ে যাওয়া সেতুগুলো হলো ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ সেতু, খুরশিদ মহল সেতু, বানার সেতু ও রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া সেতু, চাঁদপুরের চাঁদপুর সেতু, চট্টগ্রামের তৈলারদ্বীপ সেতু, ঢাকার ধরলা সেতু, কুষ্টিয়ার শহীদ মাসুদ রুমি সেতু এবং মুন্সিগঞ্জের তুলসীখালী মরিচা সেতু।
এ ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা সেতুর টোল আদায় করা হচ্ছে আংশিকভাবে। বড় যানবাহন টোল দিচ্ছে; কিন্তু অটোরিকশাগুলো ফ্রি যাচ্ছে, টোল দিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট জেলার সড়ক বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত মহানন্দা সেতু থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে ১৯৯৩ সাল থেকে। সেই হিসাবে ৩২ বছর ধরে সেতুটিতে টোল দিয়ে আসছে বিভিন্ন যানবাহন।
ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত শম্ভুগঞ্জ সেতু থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে ১৯৯২ সাল থেকে। ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি এরই মধ্যে নির্মাণ ব্যয়ের টাকা তুলে ফেলেছে। এরপরও তিন বছর পরপর সেতুটি ইজারা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু স্থানীয় নাগরিকেরা টোল আদায় বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র-জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেই সেতুর টোল আদায় বন্ধ করে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে সেতুটির টোল বক্সটি গুঁড়িয়ে দেন তাঁরা।
টোল আদায় বন্ধ থাকা অন্য সেতুগুলোর মধ্যে ২০০০ সাল থেকে রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া সেতু, ২০০৫ সালে টোল তোলা হচ্ছে তুলসীখালী মরিচা, শহীদ মাসুদ রুমি, তৈলারদ্বীপ এবং চাঁদপুর সেতু থেকে, ২০১৮ সাল থেকে বানার সেতু এবং ধরলা সেতু থেকে টোল আদায় করা হচ্ছিল। ৫ আগস্টের পর স্থানীয়দের বাধার মুখে সেতুর নির্ধারিত টোল তুলতে পারছে না সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।
জানা গেছে, সরকার পতনের পর এসব সেতুর টোল আদায়ের সঙ্গে যুক্ত অনেক ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। কিছু জায়গায় টোল বুথ ভাঙচুর করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণ টোল আদায়ে বাধা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে জেলার পরিবহনশ্রমিক সংগঠনের নেতারাও টোল আদায় করতে গেলে বাধা প্রদান করছেন। টোল আদায়ের কাজ নিতে চান রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। ফলে সংশ্লিষ্ট জেলার সড়ক বিভাগ অফিস থেকে টোল আদায়ে অপারগতার কথা জানিয়েছে সড়ক জনপথ অধিদপ্তরে।
কেন সেতুতে টোল আদায় হচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৫ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পলিটিক্যাল চাঁদাবাজদের খপ্পরে আছে এটা। টোল আদায় হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু চাঁদাবাজরা চাঁদা ঠিকই তুলছে সেতু থেকে। এগুলো আমাদের নজরে আছে এবং দেখছি কী করা যায়।’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের টোল শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে সেতু থেকে টোল আদায় করার জন্য। জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে, স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে বুঝিয়ে টোল আদায় কার্যক্রম আবার চালু করার জন্য। টোল বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু সেতুতে আদায়ের ঠিকাদার নিয়োগ ছিল। কিছু ঠিকাদার টোল আদায় করার জন্য একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন। আর কিছু সেতুতে সওজ বিভাগীয়ভাবে টোলা আদায় করত। এখন টোটালি টোল আদায় করা যাচ্ছে না।’
সওজ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ৬৭টি সেতু এবং ৪টি সড়ক থেকে টোল আদায় করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এসব সেতু থেকে বছরে টোল আদায়ের একটা টার্গেট থাকে সরকারের। ২০২২-২৩ অর্থবছরে টোল আদায়ের টার্গেট ছিল ১৩৫০ কোটি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের টার্গেট ছিল ১২৮৭ কোটি এবং ২০২৪-২৫ চলতি অর্থবছরে এই টার্গেট বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ১১-১২ শতাংশ টোল আদায় হয়েছে, যা অন্যান্য বছরের এ সময়ের তুলনায় অনেক কম।
সরকারের আয় বাড়াতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ওপর চলতি অর্থবছরে ২ হাজার কোটি টাকার টোল আদায়ের টার্গেট চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সওজের যেসব সেতু আছে, সেখান থেকে এত টাকা টোল তোলা কখনোই সম্ভব নয়। গড়ে ১ হাজার থেকে ১২০০ কোটি টাকার টোল আদায় হতে পারে বলে জানিয়েছেন সওজের রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা।
সওজ থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ের পথ হলো, সেতুর টোল আদায়। এখান থেকে ৯৫ শতাংশ রাজস্ব সরকার পেয়ে থাকে। এর বাইরে অ্যাপ্রোচ রোড এবং পরীক্ষাগারে বিভিন্ন টেস্ট বাবদ ঠিকাদারদের কাছ থেকে কিছু রাজস্ব পায় সরকার।
এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর আনুমানিক ৩০টি সেতুর টোল আদায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সওজ সেগুলো ধীরে ধীরে চালু করতে পেরেছে। তবে এখনো ৯টি সেতুর টোল চালু করতে পারেনি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে ভালো কোনো টেন্ডারে ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয় না। ওই এলাকার মাস্তানরা জোরজবরদস্তি করে টোলের ঠিকাদারি নিয়ে নেয় এবং চাঁদাবাজি করে। সে জন্য মানুষের মধ্যে টোল না দেওয়ার প্রবণতা আছে। টোল ছাড়া গাড়ি ব্যবহার করা যৌক্তিক হবে না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কোনো কমিটমেন্ট নেই। আমাদের দেশে টোল আদায় শুরু হলে সেটা সারাজীবন চলে এবং এটা একটা চাঁদাবাজির পর্যায়ে চলে যায়। সেই জায়গায় সওজকে অত্যন্ত বিচক্ষণতা এবং পেশাদারত্বের পরিচয় দিতে হবে।’
সেতুতে কত দিন টোল তুলবে সরকার:
সাধারণ মানুষের অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর একই সেতুতে টোল দিয়ে যাচ্ছি, তারপরেও কি সেতুর খরচ ওঠে না। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সওজের আওতায় যতগুলো সেতুতে টোল আদায় করা হয়, সেসব সেতু থেকে কত দিন টোল আদায় করা হবে, সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের সঠিক কোনো নির্দেশনা নেই।
কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু সেতু থেকে সরকারের রেভিনিউ আসে, ফলে খরচ উঠে গেলেই এটি বন্ধ করে দেওয়া হবে এমন কোনো নিয়ম কোথাও নেই। এ রকম কোনো পরিপত্র বা গাইডলাইন, সড়ক পরিবহন আইন বা টোল আদায় নিতিমালার কোথাও এ ধরনের কোনো কিছু বলা নেই। একটা সেতু থেকে কত বছর টোল আদায় করা হবে, তা নির্ধারিত নেই।
সরকার কত বছর টোল তুলতে পারে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেতুর টোল তোলার বিষয়টি বছরের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। টোল নীতিমালা অনুযায়ী কোন সেতু এবং সড়কের টোল তোলা হবে, সেটা বলা আছে। সেতু হওয়ার পর যাতায়াত সময় কমে যায়। মানুষ একটা সুবিধা পায়, সেটার একটা ভ্যালু তৈরি হয়। ফলে সরকার সেটার একটা চার্জ নেয়। সেতু মেরামত করতে টাকার প্রয়োজন হয়। টোলের টাকা দিয়ে সেটা করা হয়। ফলে টোল নীতিমালা অনুযায়ী সড়ক ও সেতুগুলোকে সঠিকভাবে রাখার জন্য রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে সরকার এটা ব্যবহার করে।’
সাধারণ ৩ পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হয়। অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ওঅ্যান্ডএম), ইজারা এবং বিভাগীয়। টোল আদায়ে ওঅ্যান্ডএম এবং ইজারা তিন বছরের জন্য দেওয়া হয়। তারপর আবার নবায়ন করা হয়। এই দুই পদ্ধতিতে টোল আদায় না করতে পারলে, সওজ থেকে বিভাগীয়ভাবে নিজেদের লোক দিয়ে আদায় করা হয়।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন ‘অবশ্যই টোল আদায়ের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকতে হবে। মেয়াদের পরও যদি টোল আদায় করা হয়, সেটা আর টোল থাকে না। সেটা চাঁদাবাজির পর্যায়ে চলে যায়। কারণ এটা তো মানুষের পকেট থেকে যাচ্ছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তাঁদের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। এর জেরে আজ শুক্রবার
৮ ঘণ্টা আগেআওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে ছাত্রজনতা তাদের রুখে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির আহমেদ আলী কাসেমী। আজ শুক্রবার (২১ মার্চ) বায়তুল মোকাররমের সামনে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
১০ ঘণ্টা আগেঈদযাত্রায় বাস কাউন্টার থেকে যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা না হয় এবং চালকেরা যেন নিরাপদে গাড়ি চালনা করে সেই বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন।
১০ ঘণ্টা আগেজাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে আজ জুমার নামাজের পর বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে আগে থেকেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে অনেকে। তবে দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ‘পুনর্বাসন চেষ্টার’ প্রতিবাদেও বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগে