Ajker Patrika

৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে পুলিশের লোকজন হিন্দিতে কথা বলছিল—ট্রাইব্যুনালকে শহীদ ইয়াকুবের চাচা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৫৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে আজ বুধবার সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মো. ইয়াকুবের মা রহিমা আক্তার ও প্রতিবেশী চাচা শহীদ আহম্মেদ এবং নিহত ইসমামুল হকের ভাই মহিবুল হক। এ নিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্য দিলেন ছয়জন।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আজ বুধবার এই তিনজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। পরে তাঁদের জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। জেরা শেষে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২০ আগস্ট দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ইয়াকুবের চাচা শহীদ আহম্মেদ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘নাজিমুদ্দিন রোডে আমার বাড়ি। গত বছরের ৫ আগস্ট আমি, আমার ভাতিজা ইয়াকুব, আমার ছেলে সালমান, এলাকার রাসেল, সুমন, সোহেলসহ আরও অনেকে সকালে গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেই। সাড়ে ১১টার দিকে আমরা চানখাঁরপুল এলাকায় পৌঁছালে সেখানে হাজার হাজার লোক দেখতে পাই। চানখাঁরপুল মোড়ের উল্টা পাশে অনেক পুলিশ, ছাপা পোশাকধারী পুলিশও দেখি। পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনি। পুলিশ আমাদের বাধা দিচ্ছিল। এরপর তারা আমাদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি করলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই।

‘পরে আবার সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আমার পাশের একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে আমি সরিয়ে নিচ্ছিলাম। তখন আমাকে একজন বলে, “আপনার ভাতিজা ইয়াকুবের গায়ে গুলি লাগছে।’’ আমি ওই ছেলেকে অন্যজনের কাছে রেখে ভাতিজাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে ডাক্তার বলে, সে মারা গেছে।’

শহীদ আহম্মেদ আরও বলেন, ‘পরে জেনেছি, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আন্দোলনকারীদের গুলি করার নির্দেশ দেন। ডিএমপির মো. ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদের উপস্থিতিতে কনস্টেবল সুজন, নাসিরুল, ইমাজ গুলি করেছিল। আরও অনেকে ছিল। আমি অপরাধীদের বিচার চাই।’

নিহত ইয়াকুবের মা ৫৪ বছর বয়সী রহিমা আক্তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমার ছেলে নিউমার্কেটের একটি প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারিম্যান ছিল। সে গোপনে ছাত্র আন্দোলনে যেত। গত বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল নাজিমুদ্দিন রোডে আন্দোলনে গিয়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়। আমি পরে টিভি, ভিডিও ও বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছি, যারা গুলি করেছে, তারা ছাপা কাপড়ের পোশাক পরা ছিল। পুলিশের গুলিতে আমার ছেলে পড়ে যায়। প্রতিবেশী শহীদ এই দৃশ্য তাঁর মোবাইলে ধারণ করেছিল। আমি তা টিভি নিউজে দেখেছি।’

এ সময় গুলিতে মো. ইয়াকুবের ভূঁরি বের হয়ে যাওয়ার ভিডিও ট্রাইব্যুনালে দেখানো হয়। তা দেখে কেঁদে ওঠেন রহিমা আক্তার।

ইয়াকুবের মা আরও বলতে থাকেন, ‘আমি একটা জিন্দা লাশ হয়ে আছি...আমার বাবা, আমার সোনার টুকরা বাবা...আমি হাসিনা, কাউয়া কাদের আর যারা আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, যারা নির্দেশ দিয়েছিল, তাদের সবার বিচার চাই।’

৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের দিন চানখাঁরপুলে গুলিতে নিহত ১৭ বছর বয়সী ইসমামুল হকের ভাই মহিবুল হক আদালতকে বলেন, ‘সেদিন আমি চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে ছিলাম। আমার ভাই ইসমামুল হক চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে বলে তার মোবাইল ফোন থেকে একজন আমাকে জানায়। ইসমামুল চকবাজার গফুর সওদাগরের দোকানে কাজ করত। যান চলাচল বন্ধ থাকায় মাসহ আমরা পরদিন সকালে ঢাকায় আসি।

‘ঢাকায় এসে জানতে পারি, আমার ভাইকে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে আমরা ঢাকা মেডিকেলে যাই। সেখানে সিসিইউতে আমার ভাইয়ের সঙ্গে সামান্য কথাবার্তা হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে রাতে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭ তারিখ সকালে অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে সে মারা যায়। ডাক্তাররা পোস্টমর্টেম করেনি। আমরা ডেথ সার্টিফিকেটসহ ইসমামুলের লাশ নিয়ে চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে যাই এবং পরদিন দুবার জানাজা শেষে দাফন করি।’

মহিবুল হক আরও বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, এডিসি আক্তারুল ইসলাম, ইমরুল ও আরশাদের নির্দেশে সুজন হোসেন, নাসিরুল ইসলাম, ইমাজ হাসান ইমনসহ আরও অনেকে গুলি করেছে। আমি তাদের বিচার চাই। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলা যাবে না

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত