ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ভারতে গিয়ে খুন হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজ এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তাই খুনের খবর জানার পর পরিবার-পরিজনের বাইরে এলাকার নেতা-কর্মীদের বাইরে অনেক সাধারণ মানুষকে কাঁদতে দেখা গেছে।
এই জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এমপি আনারের অনেক দুর্নামও ছিল। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সোনা কারবারের অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই জীবন দিতে হলো তাঁকে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। আরও ৪০ বছর আগে থেকেই মাদক পাচারের অভিযোগ আছে তাঁর নামে। একসময় ওই অঞ্চলের চরমপন্থা রাজনীতির নিয়ন্ত্রণও তাঁর হাতে ছিল বলে এলাকায় প্রচার আছে। তিনটি খুনসহ প্রায় দুই ডজন মামলার আসামি ছিলেন তিনি।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি কালীগঞ্জ শহরের মধুগঞ্জ বাজার এলাকায় আনারের জন্ম। বাবার নাম ইয়াকুব আলী ও মায়ের নাম জহুরা খাতুন। মা-বাবা দুজনই মৃত।
শহরের মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৯০ স্নাতক পাস করেন আনার।
ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। অল্প বয়সে তিনি এ অঞ্চলের একজন জনপ্রিয় খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন।
আনার ১৯৯৩ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৪ সালে একই পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এ সময় তিনি রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে থাকেন। ওই বছরই ভারতে থাকা অবস্থায় কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তাঁর নামে ২১টি মামলা হয়। এর মধ্যে আছে তিনটি হত্যা, তিনটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা, ১০টি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা। ২০০৮ সালে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় তাঁর নাম ওঠে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের ভোটে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পরের বছর ২০০৯ সালে আনার কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় ইন্টারপোলের তালিকা থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহার হয়।
২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে ভোট করে প্রথমবার এমপি হন আনার। এরপর ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন তিনি। শেষবার বিজয়ী হওয়ার চার মাসের মাথায় ঘাতকের হাতে হত্যার স্বীকার হলেন।
এলাকায় প্রচার আছে, আনার একসময় দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে আনার মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। ভারতের বাগদা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বাঘাভাঙ্গা সীমান্তপথে চোরাচালান করতেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের কাজও করতেন।
এত অভিযোগ থাকলেও স্থানীয় জনগণের কাছে আনারের জনপ্রিয়তাও কম ছিল না। সংসদ সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তাঁর বেশ সুনাম ছিল। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা শুনতেন ও সমাধান করতেন। সাধারণত তিনি চলাচলের সময় পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা একা চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। সব থেকে আলোচিত বিষয় তাঁর নির্বাচনী এলাকায় কেউ মারা গেলে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতেন। এমনও হয়েছে, তিনি এক দিনে ১০ জন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন।
আর গতকাল এমপির খুনের খবর শুনে কালীগঞ্জে তাঁর বাড়িতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন এলাকার বাসিন্দা রমেন অধিকারী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমপির মতো ভালো মানুষ হয় না। তাঁকে কেউ হত্যা করতে পারে এটা কখনোই ভাবিনি। আমরা চাই যারা আমাদের এমপিকে হত্যা করেছে, তাদের যেন কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।’
এমপি আনারের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মী কালীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শিবলী নোমানী বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ আমরা জানতে পারছি না। তবে স্থানীয় কোনো শত্রুতা, রাজনৈতিক বিরোধ কিংবা ব্যবসায়িক কারণে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে।’
আরও পড়ুন:
ভারতে গিয়ে খুন হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজ এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তাই খুনের খবর জানার পর পরিবার-পরিজনের বাইরে এলাকার নেতা-কর্মীদের বাইরে অনেক সাধারণ মানুষকে কাঁদতে দেখা গেছে।
এই জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এমপি আনারের অনেক দুর্নামও ছিল। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সোনা কারবারের অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই জীবন দিতে হলো তাঁকে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। আরও ৪০ বছর আগে থেকেই মাদক পাচারের অভিযোগ আছে তাঁর নামে। একসময় ওই অঞ্চলের চরমপন্থা রাজনীতির নিয়ন্ত্রণও তাঁর হাতে ছিল বলে এলাকায় প্রচার আছে। তিনটি খুনসহ প্রায় দুই ডজন মামলার আসামি ছিলেন তিনি।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি কালীগঞ্জ শহরের মধুগঞ্জ বাজার এলাকায় আনারের জন্ম। বাবার নাম ইয়াকুব আলী ও মায়ের নাম জহুরা খাতুন। মা-বাবা দুজনই মৃত।
শহরের মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৯০ স্নাতক পাস করেন আনার।
ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। অল্প বয়সে তিনি এ অঞ্চলের একজন জনপ্রিয় খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন।
আনার ১৯৯৩ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৪ সালে একই পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এ সময় তিনি রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে থাকেন। ওই বছরই ভারতে থাকা অবস্থায় কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তাঁর নামে ২১টি মামলা হয়। এর মধ্যে আছে তিনটি হত্যা, তিনটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা, ১০টি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা। ২০০৮ সালে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় তাঁর নাম ওঠে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের ভোটে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পরের বছর ২০০৯ সালে আনার কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় ইন্টারপোলের তালিকা থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহার হয়।
২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে ভোট করে প্রথমবার এমপি হন আনার। এরপর ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন তিনি। শেষবার বিজয়ী হওয়ার চার মাসের মাথায় ঘাতকের হাতে হত্যার স্বীকার হলেন।
এলাকায় প্রচার আছে, আনার একসময় দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে আনার মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। ভারতের বাগদা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বাঘাভাঙ্গা সীমান্তপথে চোরাচালান করতেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের কাজও করতেন।
এত অভিযোগ থাকলেও স্থানীয় জনগণের কাছে আনারের জনপ্রিয়তাও কম ছিল না। সংসদ সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তাঁর বেশ সুনাম ছিল। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা শুনতেন ও সমাধান করতেন। সাধারণত তিনি চলাচলের সময় পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা একা চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। সব থেকে আলোচিত বিষয় তাঁর নির্বাচনী এলাকায় কেউ মারা গেলে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতেন। এমনও হয়েছে, তিনি এক দিনে ১০ জন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন।
আর গতকাল এমপির খুনের খবর শুনে কালীগঞ্জে তাঁর বাড়িতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন এলাকার বাসিন্দা রমেন অধিকারী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমপির মতো ভালো মানুষ হয় না। তাঁকে কেউ হত্যা করতে পারে এটা কখনোই ভাবিনি। আমরা চাই যারা আমাদের এমপিকে হত্যা করেছে, তাদের যেন কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।’
এমপি আনারের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মী কালীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শিবলী নোমানী বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ আমরা জানতে পারছি না। তবে স্থানীয় কোনো শত্রুতা, রাজনৈতিক বিরোধ কিংবা ব্যবসায়িক কারণে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে।’
আরও পড়ুন:
মাগুরার আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করার জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে গত ২৫ মার্চ গেজেট প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। সংশোধিত আইনে ধর্ষণের বিচারের সময়সীমা কমিয়ে ৯০ কার্যদিবসে...
৭ ঘণ্টা আগেপ্রায় ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে কাশ্মীর ইস্যু তুলে ধরে ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ তোলে পাকিস্তান। তবে বাংলাদেশের বিবৃতিতে এই ইস্যুর উল্লেখ না থাকলেও ঢাকা একাত্তরের গণহত্যা, ক্ষতিপূরণসহ একাধিক ঐতিহাসিক বিষয় উত্থাপন করে। বৈঠকে সার্ক পুনরুজ্জীবন এবং
১১ ঘণ্টা আগেবিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকারের জন্য অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন
১৩ ঘণ্টা আগেনারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেসব দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
১৪ ঘণ্টা আগে