অনলাইন ডেস্ক
চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, এই ফোরামটি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয়। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। বিশ্ব সম্মিলিত পদক্ষেপের এক উদ্বেগজনক ঘাটতির সম্মুখীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ও জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন নিয়ম, প্রবিধান ও প্রযুক্তি শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে। এক দশক আগে যে অনুমানগুলো নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এত বেশি অনুভূত হয়নি।
২০০৭ সালে আমি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করার জন্য যোগ দিয়েছিলাম। আজ, আমি আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়েছি। আজ আমি এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক জাতিকে দেখেছে। আমাদের যুবসমাজ ও নাগরিকেরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যতিক্রমী দৃঢ়তা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
মাননীয় মহোদয়গণ,
এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্ন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ এজেন্ডার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, অগ্রগতি ধীর। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসডিজি অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন। এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতি হয়, যা তারা যে মোট ওডিএ (বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা) পায় তার কয়েকগুণ বেশি। সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য এশিয়ার একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের বাজেট, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিট-আমদানিনির্ভর (যেসব দেশের আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ সংকট দেখা দেয়। আমাদের টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করে। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা উন্নত অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা দেখতে পায়। আমাদের যুবকদের ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
আমরা আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে যা লাভের চেয়ে মানুষ ও গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, জলবায়ু দুর্যোগ-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পদ স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার বাইরে, অ-ঋণ সৃষ্টিকারী, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে একটি ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি একটি সতর্ক বার্তা ছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্যকে তুলে ধরেছে। এশিয়ার মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
উপাত্তভিত্তিক প্রযুক্তি, রোবোটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ সংস্থান ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে এটি অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়াকে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নারী ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, তার ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ চিত্র, মানব সভ্যতার স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন, অন্যদের মধ্যে, বিশ্ব চিন্তাভাবনাকে রূপ দিয়েছে, নৈতিকতা, শাসন এবং মানব আত্মা সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।
এশিয়া তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই সমৃদ্ধ হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি, বিশ্বকেও রূপ দিয়েছে। আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের চালিকাশক্তি। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি, একটি গতিশীল শক্তি তৈরি করে যা এই অঞ্চলকে তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এশিয়ার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিশাল সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। একটি ক্রমবর্ধমান কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে তরুণেরা, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার ও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানবপুঁজি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলকতাকে রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনো কম। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বহু-সংকটময় বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। গাজায় গণহত্যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরেও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিমদের উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি জানাতে শিবির পরিদর্শন করেছেন। যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরামে, এশিয়াকে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনো সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এই দুর্বল সমন্বয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান এবং পুনর্জন্মমূলক ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে উদ্ভাবন সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, ডেটা শেয়ার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ওপর সহযোগিতা অগ্রগতিকে চালিত করবে।
অবশেষে, মেধা সম্পদ এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করা আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে: একটি আত্ম-সংরক্ষণকারী এবং আত্ম-পুনর্বিন্যাসকারী সমাজরে দিকে এগিয়ে যেতে হলে। আমাদের ‘শূন্য-বর্জ্য’ জীবনযাত্রার নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
ভোগ কেবল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সামাজিক ব্যবসার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব একত্রিত হয়। বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে এশিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান হয়।
আমি সব সময় বলি, প্রতিটি যুবক-যুবতীর ‘থ্রি-জিরো বা তিন-শূন্য’ ধারণা সংবলিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেড়ে ওঠা উচিত—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে শূন্য বেকারত্ব। এটাই সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎ, যা আমাদের এশিয়ায় একসঙ্গে তৈরি করতে হবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, এই ফোরামটি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয়। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। বিশ্ব সম্মিলিত পদক্ষেপের এক উদ্বেগজনক ঘাটতির সম্মুখীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ও জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন নিয়ম, প্রবিধান ও প্রযুক্তি শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে। এক দশক আগে যে অনুমানগুলো নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এত বেশি অনুভূত হয়নি।
২০০৭ সালে আমি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করার জন্য যোগ দিয়েছিলাম। আজ, আমি আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়েছি। আজ আমি এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক জাতিকে দেখেছে। আমাদের যুবসমাজ ও নাগরিকেরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যতিক্রমী দৃঢ়তা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
মাননীয় মহোদয়গণ,
এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্ন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ এজেন্ডার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, অগ্রগতি ধীর। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসডিজি অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন। এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতি হয়, যা তারা যে মোট ওডিএ (বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা) পায় তার কয়েকগুণ বেশি। সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য এশিয়ার একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের বাজেট, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিট-আমদানিনির্ভর (যেসব দেশের আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ সংকট দেখা দেয়। আমাদের টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করে। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা উন্নত অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা দেখতে পায়। আমাদের যুবকদের ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
আমরা আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে যা লাভের চেয়ে মানুষ ও গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, জলবায়ু দুর্যোগ-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পদ স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার বাইরে, অ-ঋণ সৃষ্টিকারী, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে একটি ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি একটি সতর্ক বার্তা ছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্যকে তুলে ধরেছে। এশিয়ার মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
উপাত্তভিত্তিক প্রযুক্তি, রোবোটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ সংস্থান ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে এটি অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়াকে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নারী ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, তার ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ চিত্র, মানব সভ্যতার স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন, অন্যদের মধ্যে, বিশ্ব চিন্তাভাবনাকে রূপ দিয়েছে, নৈতিকতা, শাসন এবং মানব আত্মা সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।
এশিয়া তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই সমৃদ্ধ হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি, বিশ্বকেও রূপ দিয়েছে। আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের চালিকাশক্তি। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি, একটি গতিশীল শক্তি তৈরি করে যা এই অঞ্চলকে তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এশিয়ার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিশাল সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। একটি ক্রমবর্ধমান কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে তরুণেরা, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার ও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানবপুঁজি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলকতাকে রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনো কম। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বহু-সংকটময় বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। গাজায় গণহত্যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরেও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিমদের উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি জানাতে শিবির পরিদর্শন করেছেন। যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরামে, এশিয়াকে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনো সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এই দুর্বল সমন্বয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান এবং পুনর্জন্মমূলক ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে উদ্ভাবন সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, ডেটা শেয়ার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ওপর সহযোগিতা অগ্রগতিকে চালিত করবে।
অবশেষে, মেধা সম্পদ এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করা আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে: একটি আত্ম-সংরক্ষণকারী এবং আত্ম-পুনর্বিন্যাসকারী সমাজরে দিকে এগিয়ে যেতে হলে। আমাদের ‘শূন্য-বর্জ্য’ জীবনযাত্রার নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
ভোগ কেবল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সামাজিক ব্যবসার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব একত্রিত হয়। বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে এশিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান হয়।
আমি সব সময় বলি, প্রতিটি যুবক-যুবতীর ‘থ্রি-জিরো বা তিন-শূন্য’ ধারণা সংবলিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেড়ে ওঠা উচিত—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে শূন্য বেকারত্ব। এটাই সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎ, যা আমাদের এশিয়ায় একসঙ্গে তৈরি করতে হবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
পুরোনো যানবাহনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ধরনের যানবাহন পরিবেশদূষণের জন্য দায়ী নয়; বরং অপরিকল্পিত জ্বালানি ব্যবহার ও যন্ত্রাংশের অনিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য দায়ী। তাই যেসব গাড়ি ফিটনেস টেস্টে উত্তীর্ণ হবে না, সেগুলো চলাচলে অযোগ্য ঘোষণা
১ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে করা মানহানির মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে আজ রোববার এ আদেশ দেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান...
১ ঘণ্টা আগে৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলোচনা শেষ করা হবে জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংলাপের সমাপ্তি টানা কমিশনের প্রধান লক্ষ্য। সংলাপে আমরা ১০টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছি। ৭টি বিষয় অসমাপ্ত আছে আর ৩টি বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
৪ ঘণ্টা আগেনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বা আছেন কিংবা নিবন্ধন পেতে আবেদনের সময়ের মধ্যে কোনো নির্বাচনের প্রার্থী হতে আগ্রহী এমন কোনো ব্যক্তি যদি পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদনকারী কোনো সংস্থার প্রধান নির্বাহী কিংবা পরিচালনা পর্ষদে বা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হয়ে থাকেন, তাহলে সেটি যে নামেই হোক না...
৭ ঘণ্টা আগে