আজকের পত্রিকা ডেস্ক
চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, এই ফোরামটি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয়। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। বিশ্ব সম্মিলিত পদক্ষেপের এক উদ্বেগজনক ঘাটতির সম্মুখীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ও জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন নিয়ম, প্রবিধান ও প্রযুক্তি শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে। এক দশক আগে যে অনুমানগুলো নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এত বেশি অনুভূত হয়নি।
২০০৭ সালে আমি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করার জন্য যোগ দিয়েছিলাম। আজ, আমি আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়েছি। আজ আমি এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক জাতিকে দেখেছে। আমাদের যুবসমাজ ও নাগরিকেরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যতিক্রমী দৃঢ়তা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
মাননীয় মহোদয়গণ,
এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্ন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ এজেন্ডার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, অগ্রগতি ধীর। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসডিজি অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন। এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতি হয়, যা তারা যে মোট ওডিএ (বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা) পায় তার কয়েকগুণ বেশি। সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য এশিয়ার একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের বাজেট, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিট-আমদানিনির্ভর (যেসব দেশের আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ সংকট দেখা দেয়। আমাদের টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করে। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা উন্নত অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা দেখতে পায়। আমাদের যুবকদের ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
আমরা আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে যা লাভের চেয়ে মানুষ ও গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, জলবায়ু দুর্যোগ-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পদ স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার বাইরে, অ-ঋণ সৃষ্টিকারী, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে একটি ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি একটি সতর্ক বার্তা ছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্যকে তুলে ধরেছে। এশিয়ার মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
উপাত্তভিত্তিক প্রযুক্তি, রোবোটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ সংস্থান ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে এটি অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়াকে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নারী ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, তার ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ চিত্র, মানব সভ্যতার স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন, অন্যদের মধ্যে, বিশ্ব চিন্তাভাবনাকে রূপ দিয়েছে, নৈতিকতা, শাসন এবং মানব আত্মা সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।
এশিয়া তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই সমৃদ্ধ হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি, বিশ্বকেও রূপ দিয়েছে। আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের চালিকাশক্তি। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি, একটি গতিশীল শক্তি তৈরি করে যা এই অঞ্চলকে তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এশিয়ার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিশাল সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। একটি ক্রমবর্ধমান কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে তরুণেরা, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার ও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানবপুঁজি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলকতাকে রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনো কম। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বহু-সংকটময় বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। গাজায় গণহত্যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরেও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিমদের উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি জানাতে শিবির পরিদর্শন করেছেন। যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরামে, এশিয়াকে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনো সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এই দুর্বল সমন্বয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান এবং পুনর্জন্মমূলক ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে উদ্ভাবন সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, ডেটা শেয়ার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ওপর সহযোগিতা অগ্রগতিকে চালিত করবে।
অবশেষে, মেধা সম্পদ এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করা আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে: একটি আত্ম-সংরক্ষণকারী এবং আত্ম-পুনর্বিন্যাসকারী সমাজরে দিকে এগিয়ে যেতে হলে। আমাদের ‘শূন্য-বর্জ্য’ জীবনযাত্রার নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
ভোগ কেবল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সামাজিক ব্যবসার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব একত্রিত হয়। বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে এশিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান হয়।
আমি সব সময় বলি, প্রতিটি যুবক-যুবতীর ‘থ্রি-জিরো বা তিন-শূন্য’ ধারণা সংবলিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেড়ে ওঠা উচিত—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে শূন্য বেকারত্ব। এটাই সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎ, যা আমাদের এশিয়ায় একসঙ্গে তৈরি করতে হবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, এই ফোরামটি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয়। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। বিশ্ব সম্মিলিত পদক্ষেপের এক উদ্বেগজনক ঘাটতির সম্মুখীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ও জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন নিয়ম, প্রবিধান ও প্রযুক্তি শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে। এক দশক আগে যে অনুমানগুলো নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এত বেশি অনুভূত হয়নি।
২০০৭ সালে আমি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করার জন্য যোগ দিয়েছিলাম। আজ, আমি আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়েছি। আজ আমি এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক জাতিকে দেখেছে। আমাদের যুবসমাজ ও নাগরিকেরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যতিক্রমী দৃঢ়তা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
মাননীয় মহোদয়গণ,
এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্ন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ এজেন্ডার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, অগ্রগতি ধীর। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসডিজি অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন। এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতি হয়, যা তারা যে মোট ওডিএ (বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা) পায় তার কয়েকগুণ বেশি। সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য এশিয়ার একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের বাজেট, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিট-আমদানিনির্ভর (যেসব দেশের আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ সংকট দেখা দেয়। আমাদের টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করে। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা উন্নত অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা দেখতে পায়। আমাদের যুবকদের ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
আমরা আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে যা লাভের চেয়ে মানুষ ও গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, জলবায়ু দুর্যোগ-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পদ স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার বাইরে, অ-ঋণ সৃষ্টিকারী, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে একটি ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি একটি সতর্ক বার্তা ছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্যকে তুলে ধরেছে। এশিয়ার মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
উপাত্তভিত্তিক প্রযুক্তি, রোবোটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ সংস্থান ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে এটি অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়াকে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নারী ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, তার ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ চিত্র, মানব সভ্যতার স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন, অন্যদের মধ্যে, বিশ্ব চিন্তাভাবনাকে রূপ দিয়েছে, নৈতিকতা, শাসন এবং মানব আত্মা সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।
এশিয়া তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই সমৃদ্ধ হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি, বিশ্বকেও রূপ দিয়েছে। আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের চালিকাশক্তি। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি, একটি গতিশীল শক্তি তৈরি করে যা এই অঞ্চলকে তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এশিয়ার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিশাল সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। একটি ক্রমবর্ধমান কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে তরুণেরা, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার ও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানবপুঁজি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলকতাকে রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনো কম। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বহু-সংকটময় বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। গাজায় গণহত্যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরেও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিমদের উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি জানাতে শিবির পরিদর্শন করেছেন। যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরামে, এশিয়াকে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনো সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এই দুর্বল সমন্বয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান এবং পুনর্জন্মমূলক ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে উদ্ভাবন সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, ডেটা শেয়ার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ওপর সহযোগিতা অগ্রগতিকে চালিত করবে।
অবশেষে, মেধা সম্পদ এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করা আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে: একটি আত্ম-সংরক্ষণকারী এবং আত্ম-পুনর্বিন্যাসকারী সমাজরে দিকে এগিয়ে যেতে হলে। আমাদের ‘শূন্য-বর্জ্য’ জীবনযাত্রার নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
ভোগ কেবল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সামাজিক ব্যবসার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব একত্রিত হয়। বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে এশিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান হয়।
আমি সব সময় বলি, প্রতিটি যুবক-যুবতীর ‘থ্রি-জিরো বা তিন-শূন্য’ ধারণা সংবলিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেড়ে ওঠা উচিত—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে শূন্য বেকারত্ব। এটাই সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎ, যা আমাদের এশিয়ায় একসঙ্গে তৈরি করতে হবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, এই ফোরামটি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয়। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। বিশ্ব সম্মিলিত পদক্ষেপের এক উদ্বেগজনক ঘাটতির সম্মুখীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ও জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন নিয়ম, প্রবিধান ও প্রযুক্তি শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে। এক দশক আগে যে অনুমানগুলো নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এত বেশি অনুভূত হয়নি।
২০০৭ সালে আমি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করার জন্য যোগ দিয়েছিলাম। আজ, আমি আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়েছি। আজ আমি এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক জাতিকে দেখেছে। আমাদের যুবসমাজ ও নাগরিকেরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যতিক্রমী দৃঢ়তা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
মাননীয় মহোদয়গণ,
এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্ন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ এজেন্ডার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, অগ্রগতি ধীর। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসডিজি অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন। এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতি হয়, যা তারা যে মোট ওডিএ (বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা) পায় তার কয়েকগুণ বেশি। সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য এশিয়ার একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের বাজেট, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিট-আমদানিনির্ভর (যেসব দেশের আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ সংকট দেখা দেয়। আমাদের টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করে। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা উন্নত অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা দেখতে পায়। আমাদের যুবকদের ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
আমরা আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে যা লাভের চেয়ে মানুষ ও গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, জলবায়ু দুর্যোগ-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পদ স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার বাইরে, অ-ঋণ সৃষ্টিকারী, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে একটি ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি একটি সতর্ক বার্তা ছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্যকে তুলে ধরেছে। এশিয়ার মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
উপাত্তভিত্তিক প্রযুক্তি, রোবোটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ সংস্থান ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে এটি অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়াকে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নারী ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, তার ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ চিত্র, মানব সভ্যতার স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন, অন্যদের মধ্যে, বিশ্ব চিন্তাভাবনাকে রূপ দিয়েছে, নৈতিকতা, শাসন এবং মানব আত্মা সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।
এশিয়া তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই সমৃদ্ধ হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি, বিশ্বকেও রূপ দিয়েছে। আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের চালিকাশক্তি। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি, একটি গতিশীল শক্তি তৈরি করে যা এই অঞ্চলকে তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এশিয়ার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিশাল সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। একটি ক্রমবর্ধমান কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে তরুণেরা, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার ও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানবপুঁজি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলকতাকে রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনো কম। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বহু-সংকটময় বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। গাজায় গণহত্যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরেও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিমদের উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি জানাতে শিবির পরিদর্শন করেছেন। যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরামে, এশিয়াকে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনো সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এই দুর্বল সমন্বয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান এবং পুনর্জন্মমূলক ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে উদ্ভাবন সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, ডেটা শেয়ার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ওপর সহযোগিতা অগ্রগতিকে চালিত করবে।
অবশেষে, মেধা সম্পদ এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করা আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে: একটি আত্ম-সংরক্ষণকারী এবং আত্ম-পুনর্বিন্যাসকারী সমাজরে দিকে এগিয়ে যেতে হলে। আমাদের ‘শূন্য-বর্জ্য’ জীবনযাত্রার নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
ভোগ কেবল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সামাজিক ব্যবসার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব একত্রিত হয়। বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে এশিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান হয়।
আমি সব সময় বলি, প্রতিটি যুবক-যুবতীর ‘থ্রি-জিরো বা তিন-শূন্য’ ধারণা সংবলিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেড়ে ওঠা উচিত—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে শূন্য বেকারত্ব। এটাই সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎ, যা আমাদের এশিয়ায় একসঙ্গে তৈরি করতে হবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, এই ফোরামটি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয়। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। বিশ্ব সম্মিলিত পদক্ষেপের এক উদ্বেগজনক ঘাটতির সম্মুখীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ও জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন নিয়ম, প্রবিধান ও প্রযুক্তি শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছে। এক দশক আগে যে অনুমানগুলো নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এত বেশি অনুভূত হয়নি।
২০০৭ সালে আমি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করার জন্য যোগ দিয়েছিলাম। আজ, আমি আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়েছি। আজ আমি এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক জাতিকে দেখেছে। আমাদের যুবসমাজ ও নাগরিকেরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যতিক্রমী দৃঢ়তা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
মাননীয় মহোদয়গণ,
এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্ন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ এজেন্ডার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও, অগ্রগতি ধীর। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসডিজি অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন। এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক ক্ষতি হয়, যা তারা যে মোট ওডিএ (বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা) পায় তার কয়েকগুণ বেশি। সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য এশিয়ার একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের বাজেট, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিট-আমদানিনির্ভর (যেসব দেশের আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ সংকট দেখা দেয়। আমাদের টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীবাহিনী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করে। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা উন্নত অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা দেখতে পায়। আমাদের যুবকদের ভবিষ্যতের চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
আমরা আত্মঘাতী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে আমাদের সভ্যতা হুমকির মুখে। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে যা লাভের চেয়ে মানুষ ও গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, জলবায়ু দুর্যোগ-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল, যা ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পদ স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করছে। আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার বাইরে, অ-ঋণ সৃষ্টিকারী, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে একটি ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি একটি সতর্ক বার্তা ছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্যকে তুলে ধরেছে। এশিয়ার মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া উচিত।
উপাত্তভিত্তিক প্রযুক্তি, রোবোটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন আকার দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, সামর্থ্য এবং সম্পদ সংস্থান ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে এটি অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়াকে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নারী ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, তার ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ চিত্র, মানব সভ্যতার স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শন, অন্যদের মধ্যে, বিশ্ব চিন্তাভাবনাকে রূপ দিয়েছে, নৈতিকতা, শাসন এবং মানব আত্মা সম্পর্কে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।
এশিয়া তার বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই সমৃদ্ধ হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি, বিশ্বকেও রূপ দিয়েছে। আজ, এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের চালিকাশক্তি। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের পাশাপাশি, একটি গতিশীল শক্তি তৈরি করে যা এই অঞ্চলকে তার গভীর ঐতিহাসিক শিকড়কে সম্মান জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এশিয়ার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিশাল সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। একটি ক্রমবর্ধমান কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে তরুণেরা, উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার ও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানবপুঁজি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিনিয়োগ করতে হবে যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলকতাকে রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনো কম। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বহু-সংকটময় বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। গাজায় গণহত্যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরেও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিমদের উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি জানাতে শিবির পরিদর্শন করেছেন। যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হতে হবে।
বিশিষ্ট সুধীজন,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরামে, এশিয়াকে চারটি মূল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনো সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এই দুর্বল সমন্বয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান এবং পুনর্জন্মমূলক ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে উদ্ভাবন সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, ডেটা শেয়ার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ওপর সহযোগিতা অগ্রগতিকে চালিত করবে।
অবশেষে, মেধা সম্পদ এবং যুব শক্তিকে একত্রিত করা আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে: একটি আত্ম-সংরক্ষণকারী এবং আত্ম-পুনর্বিন্যাসকারী সমাজরে দিকে এগিয়ে যেতে হলে। আমাদের ‘শূন্য-বর্জ্য’ জীবনযাত্রার নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
ভোগ কেবল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সামাজিক ব্যবসার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব একত্রিত হয়। বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে যুব ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে এশিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান হয়।
আমি সব সময় বলি, প্রতিটি যুবক-যুবতীর ‘থ্রি-জিরো বা তিন-শূন্য’ ধারণা সংবলিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেড়ে ওঠা উচিত—শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে শূন্য বেকারত্ব। এটাই সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎ, যা আমাদের এশিয়ায় একসঙ্গে তৈরি করতে হবে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চলতি সপ্তাহের শেষে সরকারের কাছে জমা দিতে চায় তারা। বিষয়টি সামনে এলে রাজনীতিতে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দিক থেকে শক্ত অবস্থান চায় কমিশন।
৩১ মিনিট আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় টার্গেট করে হত্যার তথ্য সত্য নয় বলে ট্রাইব্যুনালে দাবি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ
৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তাদের চিঠিটি গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ)
৪ ঘণ্টা আগেদীর্ঘদিন ধরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) থাকা ৯ জন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনে তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়।
৫ ঘণ্টা আগেজুলাই সনদ বাস্তবায়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চলতি সপ্তাহের শেষে সরকারের কাছে জমা দিতে চায় তারা। বিষয়টি সামনে এলে রাজনীতিতে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দিক থেকে শক্ত অবস্থান চায় কমিশন।
সূত্র জানায়, কমিশন মনে করছে তারা বাস্তবায়নের যে সুপারিশই দিক না কেন, তা সব দল মানবে না। তা নিয়ে দলগুলোর প্রতিবাদ আসবেই। সব দলকে খুশি করার মতো সুপারিশ তৈরি করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারকে এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা না হলে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে নির্বাচন বিলম্বিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
জানতে চাইলে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মতামতের ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করব। আমাদের বিবেচনার দিক হচ্ছে, এটাকে বাস্তবায়নে সরকারের দিক থেকে যেন সুনির্দিষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।’
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২৪ অক্টোবরের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের উপায়ের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেবে কমিশন। সরকার যাতে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে পারে, সে তাগাদা দেওয়া হবে। কারণ কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর শেষ হচ্ছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করতে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাঁচ দিন বৈঠক করেছে। সেখানে দলগুলো একমত হতে পারেনি। এমন অবস্থায় কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে একটি সুপারিশ তৈরি করছে বলে জানা গেছে। যেখানে জুলাই সনদ নিয়ে বিশেষ আদেশ জারি এবং এর বৈধতা নিতে গণভোট আয়োজনের কথা থাকবে। এ ছাড়া থাকতে পারে পরবর্তী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দিয়ে সনদের সংবিধানসম্পর্কিত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে খসড়া আদেশটির নাম হতে পারে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ (সংবিধান)। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে আদেশের খসড়া তৈরি করে সরকারের কাছে
জমা দেবে কমিশন। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, আদেশ জারি নিয়ে কারসাজি ঠেকাতেই তারা পূর্ণাঙ্গ ড্রাফট সরকারকে দেবে।
সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মধ্যেই গণভোট কোন প্রশ্নে হবে, তা উল্লেখ থাকবে। সে ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ব্যালটে গণভোটের প্রশ্ন হতে পারে। সেখানে সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও সনদ বাস্তবায়ন চান কি না, এ রকম প্রশ্ন রাখা হতে পারে। আরেকটি হতে পারে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চান কি না, এ প্রশ্নে গণভোট। আরেকটি হতে পারে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে (পিআর) উচ্চকক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি জনগণ মানে কি না। গণভোটের সময় নির্ধারণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে।
১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪টি দল স্বাক্ষর করে। বাস্তবায়ন আদেশের টেক্সট না পাওয়ায় সনদে স্বাক্ষর করেনি এনসিপি। দলটিকে রাজি করাতে সরকার ও কমিশনের পক্ষ থেকে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গত রোববারও কমিশনের সঙ্গে এনসিপির তিন নেতার বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে। বাস্তবায়ন আদেশ জারির পরই দলটি সনদে স্বাক্ষর করবে বলে মনে করে কমিশন।
রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চলতি সপ্তাহের শেষে সরকারের কাছে জমা দিতে চায় তারা। বিষয়টি সামনে এলে রাজনীতিতে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দিক থেকে শক্ত অবস্থান চায় কমিশন।
সূত্র জানায়, কমিশন মনে করছে তারা বাস্তবায়নের যে সুপারিশই দিক না কেন, তা সব দল মানবে না। তা নিয়ে দলগুলোর প্রতিবাদ আসবেই। সব দলকে খুশি করার মতো সুপারিশ তৈরি করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারকে এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা না হলে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে নির্বাচন বিলম্বিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
জানতে চাইলে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মতামতের ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করব। আমাদের বিবেচনার দিক হচ্ছে, এটাকে বাস্তবায়নে সরকারের দিক থেকে যেন সুনির্দিষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।’
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২৪ অক্টোবরের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের উপায়ের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেবে কমিশন। সরকার যাতে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে পারে, সে তাগাদা দেওয়া হবে। কারণ কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর শেষ হচ্ছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করতে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাঁচ দিন বৈঠক করেছে। সেখানে দলগুলো একমত হতে পারেনি। এমন অবস্থায় কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে একটি সুপারিশ তৈরি করছে বলে জানা গেছে। যেখানে জুলাই সনদ নিয়ে বিশেষ আদেশ জারি এবং এর বৈধতা নিতে গণভোট আয়োজনের কথা থাকবে। এ ছাড়া থাকতে পারে পরবর্তী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দিয়ে সনদের সংবিধানসম্পর্কিত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে খসড়া আদেশটির নাম হতে পারে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ (সংবিধান)। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে আদেশের খসড়া তৈরি করে সরকারের কাছে
জমা দেবে কমিশন। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, আদেশ জারি নিয়ে কারসাজি ঠেকাতেই তারা পূর্ণাঙ্গ ড্রাফট সরকারকে দেবে।
সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মধ্যেই গণভোট কোন প্রশ্নে হবে, তা উল্লেখ থাকবে। সে ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ব্যালটে গণভোটের প্রশ্ন হতে পারে। সেখানে সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও সনদ বাস্তবায়ন চান কি না, এ রকম প্রশ্ন রাখা হতে পারে। আরেকটি হতে পারে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চান কি না, এ প্রশ্নে গণভোট। আরেকটি হতে পারে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে (পিআর) উচ্চকক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি জনগণ মানে কি না। গণভোটের সময় নির্ধারণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে।
১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪টি দল স্বাক্ষর করে। বাস্তবায়ন আদেশের টেক্সট না পাওয়ায় সনদে স্বাক্ষর করেনি এনসিপি। দলটিকে রাজি করাতে সরকার ও কমিশনের পক্ষ থেকে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গত রোববারও কমিশনের সঙ্গে এনসিপির তিন নেতার বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে। বাস্তবায়ন আদেশ জারির পরই দলটি সনদে স্বাক্ষর করবে বলে মনে করে কমিশন।
চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে...
২৭ মার্চ ২০২৫বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় টার্গেট করে হত্যার তথ্য সত্য নয় বলে ট্রাইব্যুনালে দাবি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ
৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তাদের চিঠিটি গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ)
৪ ঘণ্টা আগেদীর্ঘদিন ধরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) থাকা ৯ জন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনে তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়।
৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় টার্গেট করে হত্যার তথ্য সত্য নয় বলে ট্রাইব্যুনালে দাবি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে তিনি এ দাবি করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা এই মামলায় আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের গতকাল ছিল প্রথম দিন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচারকাজ চলছে। এই মামলার অপর আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন।
যুক্তিতর্কের শুরুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলেন আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আরমানের একটি ভিডিও দেখেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেম আলীর বিচার চলার সময় আরমানের সাক্ষাৎকারের ভিডিও সেটি। সেখানে আরমান বলেছেন, এ আইনে সাক্ষ্য আইনের সঠিক ব্যবহার না করতে পারাসহ ব্যাপক সীমাবদ্ধতার মধ্যে বিচার হচ্ছে; যা ন্যায়বিচারকে বিঘ্নিত করেছে। তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে তিনিও (আমির হোসেন) একমত পোষণ করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘সেই বক্তব্য কোন প্রেক্ষাপটে, সেটা আমরা কীভাবে বুঝব?’
আমির হোসেন বলেন, এ আইনে মূল যে এভিডেন্স অ্যাক্ট, সেটা প্রয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। সিআরপিসিও এ আইনে গ্রহণ করা যায় না। এ আইনে এমন একটি বিচার, যেখানে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে আসামিকে বলা হবে সাঁতার কাটার জন্য। ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা কি ঘটেছে? আপনি দেখান, এই সাক্ষ্যপ্রমাণ ভুল।’
আমির হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি, সিআরপিসি ও এভিডেন্স অ্যাক্ট অ্যাপ্লিকেবল হওয়া উচিত ছিল।’ তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ১ হাজার ৫০০ নিহত ও ২৫ হাজার আহত হয়েছে বলা হচ্ছে। কিন্তু আবু সাঈদ ছাড়া আর কোনো সংগঠক মারা যাননি। চাইলে তো শেখ হাসিনা তাঁর কর্মী বাহিনী দিয়ে, পুলিশ বাহিনী দিয়ে সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, নাহিদ ইসলামদের টার্গেট করে মেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু করেননি। তাই টার্গেট করে মারা হয়েছে, এটা সঠিক নয়।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘টার্গেট করে সবাইকে মেরে ফলতে হবে এমন ধারণা ঠিক নয়। ১৯৭১ সালে আমাদের যে টপ লিডার, তিনি তাদের পকেটে ছিলেন, তাঁকে মেরেছে? আ স ম আবদুর রবকে মারা হয়েছে? আরও যাঁরা নেতা ছিলেন, তাঁদের মারা হয়েছে? কোনো নেতা মরেননি। যারা টার্গেট করে, তাদের স্ট্র্যাটেজি থাকে কাকে মারবে, কতটুকু মারবে, কোথায় মারবে, কখন মারবে। আমির হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালে মারা যাবে কোথায়, নেতারা তো সব ভারতে ছিলেন। আর বৈধ আন্দোলনকেও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সরকারের আছে। বেশ কয়েকজনকে টার্গেট করে হত্যা করলেও তো আন্দোলন দুর্বল হয়ে যেত। তা তো করেনি।
পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী বলেন, ‘প্রসিকিউশন বলেছে, ৫২টি জেলায় আন্দোলনের ব্যাপকতা ছিল। অথচ সাক্ষী আনা হয়েছে ১৫-২০টি জেলা থেকে। তাই ব্যাপক মাত্রায় অপরাধ সংগঠনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, শুধু ঢাকা শহরে হলেও হবে, যাত্রাবাড়ীতে হলেও হবে। ওয়াইডলি। কোনো নির্দিষ্ট গ্রুপকে টার্গেট করলে হবে। আমির হোসেন বলেন, যাত্রাবাড়ীতে কমপক্ষে ২০ হাজার ছাত্র-জনতা ছিল। মারা গেছে কতজন, ২০ জন। আন্দোলন ছিল ভুল প্রক্রিয়ায়। কারণ, কোটাপদ্ধতি শেখ হাসিনা বিলোপ করেছিলেন। পরে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা পুনর্বহাল হয়। নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগের ওপর কোনো রকম প্রভাব ফেলতে পারে না।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, প্রভাব ফেলতে পারে না, কিন্তু নিষ্পত্তির ব্যবস্থা আছে। পরে এক দিনের মধ্যে শুনানির ব্যবস্থা করল কীভাবে? কোর্টকে যদি সহযোগিতা না করেন, সেটাই তো প্রভাব। আমির হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন, এমন কোনো ডকুমেন্ট কি এসেছে?’ ট্রাইব্যুনালে বলেন, ‘সব উপাদান সরকারের হাতে। আমরা এখন যে মামলা করছি, প্রসিকিউশন অফ থাকলে আমরা চালাতে পারব না। তাই উপাদান সব সরকারের হাতে।’ এ সময় আমির হোসেন বলেন, ‘তাহলে কি আমি ধরে নেব, এই বিচার রাষ্ট্র যা চাইবে, তা-ই হবে?’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, রাষ্ট্রের হাতে সুইচগুলো আছে। অনেক সুইচ আছে। আমির হোসেন বলেন, ‘তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি, এই সরকার কোনো সুইচ চাইলে এই ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রে ব্যবহারও করতে পারে।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘যদি আমার নিরাপত্তা বন্ধ করে দেয়, আমার গাড়ি বন্ধ করে দেয়, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়, আমরা কীভাবে চালাব? রাষ্ট্র আপনাকে আটকে রাখলে আপনি কীভাবে আসবেন? রাষ্ট্রের হাতে সে ব্যবস্থা আছে। রায়ের প্রশ্ন যখন আসবে, তখন আমরা সরকারকে কেয়ার করব না। আয়োজন সরকারকে করে দিতে হবে।’
যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে আমির হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসন ও ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে প্রসিকিউশন। কিন্তু সুশাসনের কথা বলা হয়নি। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের সময় কোনো দুঃশাসন ছিল না। ১৫ বছর ছিল আওয়ামী লীগের উন্নয়নের মহাসোপান। তাদের সময়ে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে রাষ্ট্রকে উন্নীত করার যে প্রচেষ্টা, তা বাস্তবায়নে অনেকটা সফল হয়েছেন শেখ হাসিনা। ফ্যাসিবাদ শব্দটি মূলত একতরফা বয়ান।’
ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন-গুম, বেআইনি আটক, মিথ্যা মামলা, অপহরণ—এই কাজগুলো কী? জবাবে আমির হোসেন বলেন, রাষ্ট্র চালাতে গেলে প্রয়োজনে অনেক সময় কঠোর হতে হয়। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে কিছু ভুলত্রুটি হয়। সব সঠিক না-ও হতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে আমির হোসেন বলেন, এই (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) শব্দটির ব্যবহার করেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আন্দোলন ছিল শেখ হাসিনার। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতেন সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি। বিএনপি তাদের সুবিধামতো বিচারপতিকে যাতে প্রধান বিচারপতি করা যায়, সে জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে দিল। এই কাজটি না করলে, শেখ হাসিনা যদি বিলোপ করতেন, তাহলে বলা যেত, শেখ হাসিনা ভুল করেছেন। বয়স বাড়িয়ে ডিজাইনের নির্বাচন করার চেষ্টা হয়েছিল। এটা থেকে প্রতীয়মান হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ভালো উদ্যোগ ছিল, যেটাকে বিনষ্ট করার একটা চেষ্টা ছিল। পরবর্তী সময়ে আইনের মাধ্যমে বাতিলের সিদ্ধান্ত আসে। তাই এটি শেখ হাসিনার কোনো কূটচাল ছিল না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় টার্গেট করে হত্যার তথ্য সত্য নয় বলে ট্রাইব্যুনালে দাবি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে তিনি এ দাবি করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা এই মামলায় আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের গতকাল ছিল প্রথম দিন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচারকাজ চলছে। এই মামলার অপর আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন।
যুক্তিতর্কের শুরুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলেন আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আরমানের একটি ভিডিও দেখেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেম আলীর বিচার চলার সময় আরমানের সাক্ষাৎকারের ভিডিও সেটি। সেখানে আরমান বলেছেন, এ আইনে সাক্ষ্য আইনের সঠিক ব্যবহার না করতে পারাসহ ব্যাপক সীমাবদ্ধতার মধ্যে বিচার হচ্ছে; যা ন্যায়বিচারকে বিঘ্নিত করেছে। তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে তিনিও (আমির হোসেন) একমত পোষণ করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘সেই বক্তব্য কোন প্রেক্ষাপটে, সেটা আমরা কীভাবে বুঝব?’
আমির হোসেন বলেন, এ আইনে মূল যে এভিডেন্স অ্যাক্ট, সেটা প্রয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। সিআরপিসিও এ আইনে গ্রহণ করা যায় না। এ আইনে এমন একটি বিচার, যেখানে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে আসামিকে বলা হবে সাঁতার কাটার জন্য। ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা কি ঘটেছে? আপনি দেখান, এই সাক্ষ্যপ্রমাণ ভুল।’
আমির হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি, সিআরপিসি ও এভিডেন্স অ্যাক্ট অ্যাপ্লিকেবল হওয়া উচিত ছিল।’ তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ১ হাজার ৫০০ নিহত ও ২৫ হাজার আহত হয়েছে বলা হচ্ছে। কিন্তু আবু সাঈদ ছাড়া আর কোনো সংগঠক মারা যাননি। চাইলে তো শেখ হাসিনা তাঁর কর্মী বাহিনী দিয়ে, পুলিশ বাহিনী দিয়ে সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, নাহিদ ইসলামদের টার্গেট করে মেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু করেননি। তাই টার্গেট করে মারা হয়েছে, এটা সঠিক নয়।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘টার্গেট করে সবাইকে মেরে ফলতে হবে এমন ধারণা ঠিক নয়। ১৯৭১ সালে আমাদের যে টপ লিডার, তিনি তাদের পকেটে ছিলেন, তাঁকে মেরেছে? আ স ম আবদুর রবকে মারা হয়েছে? আরও যাঁরা নেতা ছিলেন, তাঁদের মারা হয়েছে? কোনো নেতা মরেননি। যারা টার্গেট করে, তাদের স্ট্র্যাটেজি থাকে কাকে মারবে, কতটুকু মারবে, কোথায় মারবে, কখন মারবে। আমির হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালে মারা যাবে কোথায়, নেতারা তো সব ভারতে ছিলেন। আর বৈধ আন্দোলনকেও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সরকারের আছে। বেশ কয়েকজনকে টার্গেট করে হত্যা করলেও তো আন্দোলন দুর্বল হয়ে যেত। তা তো করেনি।
পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী বলেন, ‘প্রসিকিউশন বলেছে, ৫২টি জেলায় আন্দোলনের ব্যাপকতা ছিল। অথচ সাক্ষী আনা হয়েছে ১৫-২০টি জেলা থেকে। তাই ব্যাপক মাত্রায় অপরাধ সংগঠনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, শুধু ঢাকা শহরে হলেও হবে, যাত্রাবাড়ীতে হলেও হবে। ওয়াইডলি। কোনো নির্দিষ্ট গ্রুপকে টার্গেট করলে হবে। আমির হোসেন বলেন, যাত্রাবাড়ীতে কমপক্ষে ২০ হাজার ছাত্র-জনতা ছিল। মারা গেছে কতজন, ২০ জন। আন্দোলন ছিল ভুল প্রক্রিয়ায়। কারণ, কোটাপদ্ধতি শেখ হাসিনা বিলোপ করেছিলেন। পরে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা পুনর্বহাল হয়। নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগের ওপর কোনো রকম প্রভাব ফেলতে পারে না।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, প্রভাব ফেলতে পারে না, কিন্তু নিষ্পত্তির ব্যবস্থা আছে। পরে এক দিনের মধ্যে শুনানির ব্যবস্থা করল কীভাবে? কোর্টকে যদি সহযোগিতা না করেন, সেটাই তো প্রভাব। আমির হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন, এমন কোনো ডকুমেন্ট কি এসেছে?’ ট্রাইব্যুনালে বলেন, ‘সব উপাদান সরকারের হাতে। আমরা এখন যে মামলা করছি, প্রসিকিউশন অফ থাকলে আমরা চালাতে পারব না। তাই উপাদান সব সরকারের হাতে।’ এ সময় আমির হোসেন বলেন, ‘তাহলে কি আমি ধরে নেব, এই বিচার রাষ্ট্র যা চাইবে, তা-ই হবে?’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, রাষ্ট্রের হাতে সুইচগুলো আছে। অনেক সুইচ আছে। আমির হোসেন বলেন, ‘তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি, এই সরকার কোনো সুইচ চাইলে এই ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রে ব্যবহারও করতে পারে।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘যদি আমার নিরাপত্তা বন্ধ করে দেয়, আমার গাড়ি বন্ধ করে দেয়, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়, আমরা কীভাবে চালাব? রাষ্ট্র আপনাকে আটকে রাখলে আপনি কীভাবে আসবেন? রাষ্ট্রের হাতে সে ব্যবস্থা আছে। রায়ের প্রশ্ন যখন আসবে, তখন আমরা সরকারকে কেয়ার করব না। আয়োজন সরকারকে করে দিতে হবে।’
যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে আমির হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসন ও ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে প্রসিকিউশন। কিন্তু সুশাসনের কথা বলা হয়নি। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের সময় কোনো দুঃশাসন ছিল না। ১৫ বছর ছিল আওয়ামী লীগের উন্নয়নের মহাসোপান। তাদের সময়ে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে রাষ্ট্রকে উন্নীত করার যে প্রচেষ্টা, তা বাস্তবায়নে অনেকটা সফল হয়েছেন শেখ হাসিনা। ফ্যাসিবাদ শব্দটি মূলত একতরফা বয়ান।’
ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন-গুম, বেআইনি আটক, মিথ্যা মামলা, অপহরণ—এই কাজগুলো কী? জবাবে আমির হোসেন বলেন, রাষ্ট্র চালাতে গেলে প্রয়োজনে অনেক সময় কঠোর হতে হয়। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে কিছু ভুলত্রুটি হয়। সব সঠিক না-ও হতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে আমির হোসেন বলেন, এই (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) শব্দটির ব্যবহার করেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আন্দোলন ছিল শেখ হাসিনার। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতেন সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি। বিএনপি তাদের সুবিধামতো বিচারপতিকে যাতে প্রধান বিচারপতি করা যায়, সে জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে দিল। এই কাজটি না করলে, শেখ হাসিনা যদি বিলোপ করতেন, তাহলে বলা যেত, শেখ হাসিনা ভুল করেছেন। বয়স বাড়িয়ে ডিজাইনের নির্বাচন করার চেষ্টা হয়েছিল। এটা থেকে প্রতীয়মান হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ভালো উদ্যোগ ছিল, যেটাকে বিনষ্ট করার একটা চেষ্টা ছিল। পরবর্তী সময়ে আইনের মাধ্যমে বাতিলের সিদ্ধান্ত আসে। তাই এটি শেখ হাসিনার কোনো কূটচাল ছিল না।
চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে...
২৭ মার্চ ২০২৫রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চলতি সপ্তাহের শেষে সরকারের কাছে জমা দিতে চায় তারা। বিষয়টি সামনে এলে রাজনীতিতে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দিক থেকে শক্ত অবস্থান চায় কমিশন।
৩১ মিনিট আগেবাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তাদের চিঠিটি গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ)
৪ ঘণ্টা আগেদীর্ঘদিন ধরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) থাকা ৯ জন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনে তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়।
৫ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টাকে ৬ আন্তর্জাতিক সংগঠনের চিঠি
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তাদের চিঠিটি গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
সংস্থাগুলো হলো সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), নাগরিক সমাজের অধিকার রক্ষায় বিশ্ব সংগঠন দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক সংস্থা সিভিকাস, থাইল্যান্ডভিত্তিক রোহিঙ্গা নিয়ে নিয়োজিত মানবাধিকার সংগঠন ফোরটিফাই রাইটস, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
গত রোববার এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে। মৌলিক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার, আইনি সংস্কার, গুম এবং অন্যান্য নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ায় চিঠিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রসংশা করা হয়েছে।
চিঠিতে ১২টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে এবং এর আগের ১৫ বছরে যেসব গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতে করে বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ অন্যতম।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। বাক্স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার যাতে খর্ব না হয় সে জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৪ সালের আগস্টের আগে হওয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো পর্যালোচনা ও বাতিলের কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তাদের চিঠিটি গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
সংস্থাগুলো হলো সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), নাগরিক সমাজের অধিকার রক্ষায় বিশ্ব সংগঠন দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক সংস্থা সিভিকাস, থাইল্যান্ডভিত্তিক রোহিঙ্গা নিয়ে নিয়োজিত মানবাধিকার সংগঠন ফোরটিফাই রাইটস, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
গত রোববার এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে। মৌলিক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার, আইনি সংস্কার, গুম এবং অন্যান্য নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ায় চিঠিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রসংশা করা হয়েছে।
চিঠিতে ১২টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে এবং এর আগের ১৫ বছরে যেসব গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতে করে বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ অন্যতম।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। বাক্স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার যাতে খর্ব না হয় সে জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৪ সালের আগস্টের আগে হওয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো পর্যালোচনা ও বাতিলের কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে...
২৭ মার্চ ২০২৫রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চলতি সপ্তাহের শেষে সরকারের কাছে জমা দিতে চায় তারা। বিষয়টি সামনে এলে রাজনীতিতে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দিক থেকে শক্ত অবস্থান চায় কমিশন।
৩১ মিনিট আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় টার্গেট করে হত্যার তথ্য সত্য নয় বলে ট্রাইব্যুনালে দাবি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ
৩ ঘণ্টা আগেদীর্ঘদিন ধরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) থাকা ৯ জন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনে তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়।
৫ ঘণ্টা আগেবিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) থাকা ৯ জন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনে তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়।
সিনিয়র সচিব ও সচিবদের মধ্যে শফিউল আজিম, ড. এ কে এম মতিউর রহমান, ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ, মো. নূরুল আলম, মো. আজিজুর রহমান, মো. মিজানুর রহমান, মো. সামসুল আরেফিন, মো. মশিউর রহমান ও মো. মনজুর হোসেনকে জনস্বার্থে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। ওই ধারা অনুযায়ী কারও চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া ছাড়াই সরকার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারে। তবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হয়।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ৯ জন সিনিয়র সচিব ও সচিব অবসরকালীন সুবিধা পাবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজন সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর বেশ কয়েকজন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে ওএসডি করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) থাকা ৯ জন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনে তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়।
সিনিয়র সচিব ও সচিবদের মধ্যে শফিউল আজিম, ড. এ কে এম মতিউর রহমান, ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ, মো. নূরুল আলম, মো. আজিজুর রহমান, মো. মিজানুর রহমান, মো. সামসুল আরেফিন, মো. মশিউর রহমান ও মো. মনজুর হোসেনকে জনস্বার্থে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। ওই ধারা অনুযায়ী কারও চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া ছাড়াই সরকার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারে। তবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হয়।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ৯ জন সিনিয়র সচিব ও সচিব অবসরকালীন সুবিধা পাবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজন সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর বেশ কয়েকজন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে ওএসডি করা হয়।
চীনের হাইনান প্রদেশে চলমান বোয়াও ফোরাম অ্যানুয়াল কনফারেন্স-২০২৫ এ ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফোরামের কি-নোট স্পিকার বা মূল বক্তা ছিলেন তিনি। বক্তব্যে তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে বড় চারটি খাতে...
২৭ মার্চ ২০২৫রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চলতি সপ্তাহের শেষে সরকারের কাছে জমা দিতে চায় তারা। বিষয়টি সামনে এলে রাজনীতিতে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দিক থেকে শক্ত অবস্থান চায় কমিশন।
৩১ মিনিট আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় টার্গেট করে হত্যার তথ্য সত্য নয় বলে ট্রাইব্যুনালে দাবি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ
৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তাদের চিঠিটি গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ)
৪ ঘণ্টা আগে