Ajker Patrika

সারা দেশে রেলকর্মীদের কর্মবিরতিতে বন্ধ ট্রেন, যাত্রী ভোগান্তি চরমে

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
কমলাপুর স্টেশন থেকে আজ মঙ্গলবার কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের (লোকোমাস্টার, গার্ড, টিটিই) ডাকা কর্মবিরতিতে সারা দেশেই ট্রেন চলাচল বন্ধ। এই অবস্থায় যাত্রী ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এমনকি কোথাও কোথাও ক্ষুব্ধ যাত্রীরা স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছেন। আবার অধিকাংশ যাত্রীই ট্রেন না থাকায় বাধ্য হয়ে বাসযোগে বা অন্যান্য যানবাহনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে ঢাকা ছেড়ে যায়নি কোনো যাত্রীবাহী ট্রেন। ফলে বাধ্য হয়েই যাত্রীরা বাসযোগে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ ভ্রমণ বাতিল করে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে টিকিটের ভাড়া ফেরত পাওয়া নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে।

টিকিটের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছেন যাত্রীরা। ভাঙচুরের পর টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে ফিরে যান তারা। আজ মঙ্গলবার সকালে স্টেশনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন কয়েক শ যাত্রী। সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চলে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ট্রেনে টিকিট পরীক্ষক বা টিটিইদের একটি কক্ষের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। অন্য কক্ষগুলোর দরজা তালাবদ্ধ ছিল। যাত্রীরা স্টেশনে পেতে রাখা কিছু চেয়ারও ভাঙচুর করেন। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। সেনাসদস্যদের হস্তক্ষেপে টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে ফিরে যান যাত্রীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যাত্রী জোনাকি আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি, তাঁর ছোট সন্তান এবং মা মিলে বনলতা এক্সপ্রেসে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাত্রা বাতিল হওয়ায় বাধ্য হয়েই বাসে যেতে হবে এখন ঢাকায়। কিন্তু ছোট বাচ্চা নিয়ে বাসে যাতায়াত অনেক কষ্টের। তিনি আরও জানান, আগামী বুধবার তাঁর সরকারি চাকরির মৌখিক পরীক্ষা। এমন সময়ে এসে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন।

ট্রেন না পেয়ে অনেক যাত্রী বাধ্য হয়েই বাসযোগ্য গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ট্রেন না পেয়ে অনেক যাত্রী বাধ্য হয়েই বাসযোগ্য গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামালপুর থেকে যমুনা এক্সপ্রেসে করে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় আসা রবিউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি জামালপুর থেকে রাত ৩টার পর যমুনা এক্সপ্রেসে করে রওনা হয়েছেন। তাঁর ভাগ্য ভালো যে, তিনি আসতে পেরেছেন। নইলে ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করে বাসের যাত্রী হয়ে ঢাকায় আসতে হতো।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক ময়েন উদ্দিন বলেন, ‘যাঁরা কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেছিলেন, তাঁদের কাউন্টার থেকেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর যাঁরা অনলাইনে টিকিট কাটেন, তাঁদের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখন স্টেশনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি এখন শান্ত।’

এদিকে, প্রতিদিন গড়ে ময়মনসিংহ থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেনে যাতায়াত করে প্রায় ৬ হাজার মানুষ। বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের কর্মবিরতির কারণে ট্রেন চলাচল না করায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে এই অঞ্চলের যাত্রীরা। আজ মঙ্গলবার সকালে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট করেও গন্তব্যে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। যথাসময়ে টিকিটের টাকা পেতেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের।

সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তিতে দুঃখ প্রকাশ করে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খান বলেন, ‘আন্দোলন মানেই ভোগান্তি। স্টেশনে আসা যাত্রীদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এই অঞ্চলে ২৮ জোড়া ট্রেনে প্রায় ৬ হাজার যাত্রী চলাচল করে। ট্রেন বন্ধ থাকায় সবাই ভোগান্তিতে পড়েছেন। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা-ও বলতে পারছি না।’

নাজমুল হক আরও বলেন, ‘যাঁরা আগে অনলাইনে টিকিট করেছেন, তাঁরা তিন দিনের মধ্যে টাকা ফেরত পাবেন। আর কাউন্টার থেকে যাঁরা টিকিট কেটেছেন, তারা সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকে টাকা ফেরত পাচ্ছেন।’

উল্লেখ্য, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স (ভাতা) যোগ করে পেনশন প্রদান এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতার নিরসন না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছে আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ প্রতিনিধি)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত