Ajker Patrika

১১ মাসে ৫৪৮ নারী ও কন্যাশিশু হত্যা

  • ১১ মাসে ৪৯০ ধর্ষণ।
  • বিচারের আগেই বিদেশে পালিয়ে যায় আসামি।
  • ধর্ষণকারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধের দাবি।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এগারো মাসে ৫৪৮ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আর যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় ২৯ জনকে। এই ১১ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৯০ জন।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল নিবন্ধে এ সব তথ্য জানানো হয়।

‘পারিবারিক আইনে সমতা আনি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করি’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, ‘আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন ও হত্যার তালিকা করে থাকি। এ সংক্রান্ত মামলার সঙ্গেও আমরা সম্পৃক্ত হই। একেকটি মামলার রায় পেতে ১৫-২০ বছর লেগে যায়। দেখা যায়, বিচারের আগেই বিদেশে পালিয়ে যায় আসামি।’

লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ৩৬ জন কন্যাসহ ২ হাজার ৩৬২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত ১১ মাসে নারী ও কন্যার বিরুদ্ধে নানা ধরনের সহিংসতার মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে নারী হত্যার ঘটনা।

ইউএন উইমেন এর তথ্যসূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই সারা পৃথিবীতে প্রতি ১০ মিনিটে একজন নারী অথবা কন্যা পরিবারের সদস্য এবং তার সঙ্গী দ্বারা হত্যার শিকার হয়েছে। অমানবিক, পাশবিক, নৃশংস এসব ঘটনায় নারীর অগ্রযাত্রায় সৃষ্টি হয় পাহাড় সমান প্রতিবন্ধকতা। নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় শুধু ব্যক্তি নারী নয়, পরিবার, সমাজ এবং পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা একটি দীর্ঘকালীন চলমান সামাজিক ব্যাধি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক উদ্বেগজনক কিছু বিষয়। নারীর মানবাধিকার বিরোধী পরিস্থিতি তৈরির একটি প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্নতার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, নারীর প্রতি বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী, ভিন্ন লিঙ্গের মানুষের প্রতি ঘৃণা আর বিদ্বেষের সংস্কৃতির ক্রম বিস্তার ঘটছে। ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন সংস্কৃতির বিরুদ্ধে উগ্র মৌলবাদের উত্থান ঘটছে আশঙ্কাজনকভাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনায় আমরা দেখছি, যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গঠিত অভিযোগ কমিটিগুলোকে অকার্যকর করার একটি অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট কর্তৃক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পর শান্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

নারী আন্দোলনের দাবির পরও এখনো যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা হয়নি। একটি বৈষম্যহীন সমাজ, রাষ্ট্র গড়ার অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে—নারীর প্রতি সব প্রকার বৈষম্য এবং সহিংসতার অবসান। সমাজের গভীরে বিস্তৃত ক্ষতিকর নানা প্রথা, পারিবারিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে অসমতার চর্চা, বৈষম্যমূলক আইন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা, ব্যক্তি মানুষের মননে প্রোথিত নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের পরিবর্তন না হলে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধ অসম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষণকারীর সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ের উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘সালিসের মাধ্যমে বিয়ের উদ্যোগ নিয়ে অনেক সময় ধর্ষণ মামলা মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কোনো ক্রিমিনাল (ফৌজদারি) অপরাধের বিচার সালিসের মাধ্যমে হতে পারে না। আমরা এমনও দেখি, কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারক অনেক ক্ষেত্রে মীমাংসা করে ফেলছেন। কিন্তু এটা আমাদের আইনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।’

সংবাদ সম্মেলনে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—পরিবারের সব ক্ষেত্রে পুত্র ও কন্যার সম অধিকার নিশ্চিত করা। বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা, বিদ্যমান আইনগুলোর ব্যাপক প্রচার ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত