Ajker Patrika

এলাকায় যেতে বিব্রতবোধ হয়, সংসদীয় কমিটিতে বললেন এমপিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৭ মে ২০২৩, ২০: ২২
এলাকায় যেতে বিব্রতবোধ হয়, সংসদীয় কমিটিতে বললেন এমপিরা

গ্রামীণ রাস্তার বেহাল দশার কারণে জনগণের কটূক্তি শুনতে হয় বলে সংসদীয় কমিটিতে দাবি করেছেন সংসদ সদস্যরা। সড়কের বেহাল দশার কারণে জনসাধারণের সমস্যা হচ্ছে। এমন অবস্থায় তাঁরা নির্বাচনী এলাকায় যেতে বিব্রত বোধ করেন বলেও দাবি করেন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আলোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কমিটির ১৫তম বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই আলোচনার বিষয়টি কার্যবিবরণী আকারে ৩ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তোলা হলে তা অনুমোদন দেওয়া হয়।

ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী জানান, ৯ হাজার কোটি টাকার চাহিদা থাকলেও মেরামত বা সংস্কারের জন্য পাওয়া যায় তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা।

প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘ওই টাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে উপজেলা সড়ক এবং পরবর্তীকালে গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মেরামত বা সংস্কারের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এসব কাজের ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়নের পর নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বাড়ার কারণে কাজের গতি মন্থর হয়। নির্মাণসামগ্রীর বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী মূল্য পুনর্নির্ধারণ হওয়ায় ওই কাজগুলো চলমান রয়েছে।’ 

কমিটির সদস্য শাহে আলম বলেন, ‘এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের গালিগালাজসহ নানা রকম কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। কিন্তু এ রাস্তা তৈরি, মেরামত এবং সংস্কারকাজের সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। তাঁর নির্বাচনী এলাকার প্রায় দু শ থেকে তিন শ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে এবং এসব রাস্তার মধ্যে অনেক রাস্তার কাজ শুরু হয়েও থেমে আছে।’

গ্রামীণ রাস্তাগুলোর বেহাল দশার কারণে জনসাধারণের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে বলে বৈঠকে দাবি করে কমিটির সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকায় যেতে বিব্রত বোধ হয়।’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এসব রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করার অনুরোধ জানান রাঙ্গা। একই সঙ্গে গ্রামীণ রাস্তার কাজ শুরুর আগে সংসদ সদস্যদের অবহিত করার পাশাপাশি তাঁদের দ্বারা উদ্বোধন করার প্রস্তাব করেন তিনি।

বিগত বন্যার কারণে সিলেটের রাস্তাগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি আগামী বর্ষার আগে এ সড়ক মেরামত ও সংস্কারের পরামর্শ দেন। 

পরে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামতের সুপারিশ আসে কমিটির পক্ষ থেকে। অবশ্য এ কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে বুধবারের বৈঠকের অগ্রগতি প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কের আওতাধীন সড়ক রয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫২ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক রয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৫১ কিলোমিটার, অর্থাৎ দেশের ৩৭ দশমিক ৩১ গ্রামীণ সড়ক পাকা।

বৃষ্টির পানি জমে রাস্তার যাতে ক্ষতি না হয়, সে জন্য প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন করে বেতনভুক্ত নারী কর্মী নিয়োজিত করা হয়েছে বলে ওই বৈঠকে জানান এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী। তবে, বৈঠকে উপস্থিত একাধিক এমপি কর্মী নিয়োগে অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে কর্মীরা ঠিকমতো কাজ করছেন না বলেও অভিযোগ করেন।

কমিটির সদস্য ছানোয়ার হোসেন জানান, নিয়োগকৃত নারীদের কাজের প্রয়োজনীয় কোদাল, ঝুড়ি না থাকায় তাঁরা সঠিকভাবে কাজ করছেন না। আর ইউনিয়ন পরিষদের কোনো ফান্ড না থাকায় সেখান থেকেও সরবরাহ করা হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহের পাশাপাশি তদারকির প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

কমিটির সভাপতি জানান, রাস্তায় অপসারণের জন্য ইউনিয়নপ্রতি যে ১০ জন নারী কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁদের দ্বারা তাঁর নির্বাচনী এলাকায় কোনো কর্মকাণ্ড হচ্ছে বলে তাঁর দৃষ্টিতে এখনো আসেনি।

ওই বৈঠকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা পৌর টার্মিনালের বাইরে রাস্তায় যত্রতত্র ট্রাক থেকে চাঁদা ওঠানোর অভিযোগ করে বলেন, এসব কারণে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। টার্মিনালের বাইরে মধ্যবর্তী কোনো অবস্থানে যাতে কোনো চাঁদা তোলা না হয়, সে ব্যাপারে কমিটির সুপারিশ প্রত্যাশার পাশাপাশি ইতিপূর্বে জারিকৃত চিঠির কপি আবারও পৌরসভাগুলোকে পাঠানোর অনুরোধ করেন। পরে কমিটি এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। 

মন্ত্রণালয় থেকে কমিটিকে জানানো হয়, পৌরসভার টার্মিনালের বাইরে কোনো সড়ক বা মহাসড়ক হতে টোল আদায় বন্ধ রাখার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ গত ২৫ সেপ্টেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এরপরও কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত