Ajker Patrika

স্বাস্থ্যের জাহিদ মালেক বিমা খাতেও খলনায়ক

  • বিমা কিনে প্রতারিত মানিকগঞ্জ, সাভার ও ধামরাইয়ের অন্তত ৪০ হাজার গ্রাহক
  • পলিসির মেয়াদ পূর্তির পরও বিমার টাকা ফেরত পাচ্ছেন না অনেকেই
অরূপ রায়, সাভার 
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ১৪
জাহিদ মালেক
জাহিদ মালেক

মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্থানীয় এমপির পারিবারিক বিমা কোম্পানি হওয়ায় সানলাইফ ইনস্যুরেন্সে গণহারে বিনিয়োগ করেছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যের মতো বিমা খাতেও খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি ও তাঁর পরিবার। হাজার হাজার মানুষের বিমা দাবি পরিশোধ না করে বিক্রি করে দেন বিমা কোম্পানিটির শেয়ার।

অধিক মুনাফার জন্য ২০০৯ সালে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে ১২ বছরমেয়াদি পলিসি কিনেছিলেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের সালেহা বেগম। কিন্তু ১২ বছরের মেয়াদ পেরিয়ে ১৬ বছর হতে চলল, এখনো আমানতের টাকা ফেরত পাননি তিনি।

সালেহা বেগম ২০০৯ সালে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির দড়গ্রাম কার্যালয় থেকে ৫০ হাজার টাকার পলিসি কিনেছিলেন। মেয়াদ পূর্তির এক মাসের মধ্যে তাঁকে লাভসহ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল।

সালেহা বেগম বলেন, ‘১৯৮৬ সালে আমার স্বামী মারা যায়। এরপর থিকা আমার কষ্টের জীবন শুরু হয়। মাটি কাটছি, সুযোগ পাইলে পিঠা বিক্রি করছি। এইভাবে সংসারের খরচ মিটাইয়া কিছু কিছু সঞ্চয় করছি। এলাকার এক নেতার কথায় হেই ট্যাকা সানলাইফে জমা করছি। আমার এত

কষ্টের ট্যাকা আমি পাইতাছি না। চাইর বছর ধইরা এই অফিস হেই অফিস ঘুইরা জুতার তলি শেষ কইরা ফালাইছি। তাও ট্যাকা তুলবার পারি নাই।’

শুধু সালেহা বেগমই নন, মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলাসহ পাশের ঢাকা জেলার সাভার ও ধামরাই উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার গ্রাহক সালেহার মতো সানলাইফের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে মানিকগঞ্জেই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক। এসব গ্রাহকের কয়েক বছর ধরে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়সহ প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করে তাঁদের আমানতের টাকা তুলতে পারছেন না।

সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিটি ছিল মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পারিবারিক বিমা কোম্পানি। কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তাঁর বোন রুবিনা হামিদ। ২০২৩ সালে গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স ও তাঁর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছে সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা তাঁদের সব শেয়ার বিক্রি করে দেন। কিন্তু এর আগে থেকেই সানলাইফ কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে নানা টালবাহানা শুরু করে।

এদিকে মালিকানা হাতবদল হওয়ার পর গ্রিন ডেলটা কর্তৃপক্ষ সানলাইফের নামেই ওই বিমা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিচ্ছে না।

সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ডিপোজিট পেনশন স্কিমে মাসে ৫০০ টাকা করে জমা রাখতেন সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের অমূল্য মণি দাস। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনিও কোনো টাকা পাননি।

অমূল্য মণি দাস বলেন, ‘সানলাইফের দড়গ্রাম অফিসের ম্যানেজার নবীনুর বক্স গোলামের কথায় ২০০৮ সাল থেকে আমি ডিপোজিট পেনশন স্কিমে টাকা জমা করি। ২০১৮ সালে মেয়াদ পূর্তির পর থেকে দড়গ্রাম অফিসসহ ঢাকার হেড অফিসে অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। কিন্তু কোনো টাকাই আমি পাই নাই।’

জানতে চাইলে সানলাইফের দড়গ্রাম কার্যালয়ের তৎকালীন ব্যবস্থাপক ও জাতীয় পার্টির সাটুরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি নবীনুর বক্স গোলাম বলেন, ‘মেয়াদ পূর্তির পর কিছু গ্রাহক তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পেলেও অধিকাংশ গ্রাহকই পাননি।’

নবীনুর বক্স গোলাম আরও বলেন,‘শুধু গ্রাহকদের আমানতের টাকাই নয়, আমাদের কমিশনের টাকাসহ কর্মচারীদের বেতন আর দড়গ্রাম কার্যালয়ের ভাড়াও দেয়নি সানলাইফ কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বছর চারেক আগে দড়গ্রাম কার্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

সানলাইফের পলিসি কিনে প্রতারিত হয়েছেন সাটুরিয়া উপজেলার পানাইজুরি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ আলী। ২০১৯ সালে মেয়াদ পূর্তি হওয়ার পর গত ৫ বছরেও তাঁর আমানতের টাকা ফেরত পাননি।

ওয়াহেদ আলী বলেন, ‘সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাটুরিয়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ বেগমের অনুরোধে ২০০৭ সালে আমি, আমার পরিবারের আরও তিন সদস্যসহ এলাকার অনেকে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পলিসি কিনেছিলাম। কিন্তু আমরা কেউ আমানতের টাকা ফেরত পাইনি।’

যোগাযোগ করা হলে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমি সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের একজন কর্মী হিসেবে পানাইজুরি ও পাশের কমলপুর গ্রামের প্রায় অর্ধশত লোককে পলিসি কিনে দিয়েছিলাম। মেয়াদ পূর্তি হওয়ার পর তাঁদের ২৭ জন এখনো আমানতের টাকা ফেরত পাননি।’

মমতাজ বেগম আরও বলেন, ‘আমি একাধিকবার কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোনো টাকা ফেরত দেন না।’

সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের সাভার শাখার ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমার মাধ্যমে ১ হাজারের বেশি লোক সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের কোম্পানির পলিসি কিনেছিলেন। মেয়াদ পূর্তির পর তাঁদের অধিকাংশই আমানতের টাকা ফেরত পাননি। প্রধান কার্যালয় থেকে টাকা না দেওয়ায় আমি গ্রাহকদের চাপের মধ্যে পড়ি। এ অবস্থায় বছর পাঁচেক আগে সাভারের কার্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে অনেক গ্রাহকের আমানতের টাকা আমাকে পরিশোধ করতে হয়েছে।’

সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা নবকুমার মিত্র বলেন, ‘একশ্রেণির কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীদের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বছর পাঁচেক আগে মানিকগঞ্জসহ পাশের ধামরাই ও সাভার উপজেলার সব কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। একই কারণে মেয়াদ পূর্তি হওয়ার পরও হাজার হাজার গ্রাহক তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এর মধ্যে মানিকগঞ্জেরই রয়েছে অন্তত ২০ হাজার গ্রাহক।’

নবকুমার মিত্র আরও বলেন, ‘যেসব গ্রাহকের টাকা যথাযথভাবে জমা হয়েছে এবং প্রধান কার্যালয়ে তাঁর প্রমাণ আছে তাঁরা পর্যায়ক্রমে আমানতের টাকা ফেরত পেতে পারেন।’

যোগাযোগ করা হলে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সদ্য সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম রেজা বলেন, ‘মেয়াদ পূর্তির পর অনেক গ্রাহকই তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তবে যেসব গ্রাহক আমানতের টাকা ফেরত পাননি, তাঁরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। এভাবে কেউ কেউ তাঁদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সানলাইফের বিরুদ্ধে অনেক গ্রাহকের বিমা দাবি পরিশোধ না করার অভিযোগ আইডিআরএতে এসেছে। তবে সাভার-মানিকগঞ্জ এলাকার কোনো গ্রাহকের অভিযোগ আসেনি। তারপরও আজ বিষয়টি শুনলাম, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই অ্যানিস্টনের

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বিকেলে পানিতে ডুবে ৬ শিশুর মৃত্যু, পরিবারে শোকের ছায়া

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) ও রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় খেলা করার সময় পানিতে পড়ে ছয় শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়ন ও রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নে ঘটনা দুটি ঘটে। এতে ওইসব এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ বিকেলে অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের পশ্চিম আলীনগর এলাকায় বাড়িসংলগ্ন বিলের পাশে খেলা করছিল মিশকাত (৫), মাহিন (৬) ও সাত্তার তানিল মিয়া (৫)। হঠাৎ সবার অজান্তে তিন শিশু বিলে পড়ে ডুবে যায়।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিল থেকে মিশকাত ও মাহিনকে উদ্ধার করা হয়। পরে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে খবর পেয়ে অষ্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অপর শিশু তানিলের মরদেহ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে মাহিনের চাচা মোবারক হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতো তিন শিশু খেলাধুলা করছিল। কিন্তু কখন যে বিলের পানিতে ডুবে গেল, কেউ বোঝেনি। পরে তাদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে পানিতে প্রথমে দুজন, পরে অন্যজনকে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুঃখজনক খবর, একই বাড়ির তিনটা শিশুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

অপর দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নে একই দিন বিকেলে উত্তর পারুয়া গ্রামের একটি পুকুরে পড়ে মারা যায় তিন শিশু। তারা হলো সুমাইয়া আক্তার (৫), হাবীবা আক্তার (৬) ও জান্নাত আক্তার (৫)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলে খেলার ছলে তারা তিনজনই বাড়ির পাশে পুকুরে যায়। কিছুক্ষণ পর না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে পারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, ‘তিনটি নিষ্পাপ শিশুর এমন মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই অ্যানিস্টনের

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যমুনা অভিমুখী চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের পদযাত্রায় আবারও পুলিশের বাধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো, বিশেষ নিয়োগব্যবস্থা, স্বতন্ত্র কোটা সংরক্ষণসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ শুক্রবার আবারও যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবারের মতো আজও তাঁদের পদযাত্রা শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আজ বেলা ৩টার দিকে ‘চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ’-এর ব্যানারে পদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তা আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এর আগে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে যমুনা অভিমুখে থালাবাটি নিয়ে ভুখা মিছিল করেন প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। শাহবাগ থানার সামনে মিছিলটি পুলিশ আটকে দিলে সেখানেই বিক্ষোভ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

গত রোববার থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করা চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের ভাষ্য, শিক্ষিত, যোগ্য ও কর্মক্ষম যুব প্রতিবন্ধীরা দীর্ঘদিন ধরে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ন্যায্য অধিকারের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। তবে এখনো কর্মসংস্থানে অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিবন্ধী কোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের সদস্যসচিব আলিফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ দফা দাবিতে গত রোববার শাহবাগে অবস্থান করে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করা হয়। সেদিন পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। এরপর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের দাবি জানানো হয়। তাঁর কাছ থেকে কোনো সমাধান না পেয়ে আমরা বেশ কয়েকবার যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করি, কিন্তু পুলিশ আমাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখে।’

আলিফ হোসেন আরও বলেন, ‘আজও শাহবাগ থানার সামনে আমাদের পদযাত্রা আটকে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকজনকে পুলিশ মারধরও করেছে।’

‎‎এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ করা নিষেধ। তাই চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা দাবিদাওয়া নিয়ে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করায় তাঁদের আটকে দেওয়া হয়েছে।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বেকার, শিক্ষিত প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশে বিশেষ নিয়োগ দিতে হবে।

‎‎ ২. প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৫ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

‎ ৩. দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধীরা নিজেদের পছন্দমতো শ্রুতিলেখক (বিকল্প সহকারী) মনোনয়নের স্বাধীনতা পাবেন—এমনভাবে নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে।

৪. সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট পদসংখ্যায় নিশ্চিত নিয়োগ দিতে হবে।

‎৫. প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করতে হবে। সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৫ হলে তা ৩৭ বছর করতে হবে।

‎‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই অ্যানিস্টনের

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছে সরকার। ফলে আপাতত কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে না।

আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন কমিটির সভাপতি ও বিমানবন্দর পরিচালক এয়ার কমোডর মো. নুর-ই-আজম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করার প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের মতোই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা চলবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়।

বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক কিছু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে সরাসরি আকাশপথে সংযোগের পরিকল্পনাও ছিল সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই অ্যানিস্টনের

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২৭
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে সম্প্রতি খসড়া আইন অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট।

তথাকথিত ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ আরোপের নামে এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে, পূর্ব জেরুজালেমসহ দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কোনো অংশে ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেআইনি দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব, বিশেষ করে রেজল্যুশন ২৩৩৪-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দেওয়া অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন বা পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই মতামতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাধারণ জনগণকে, ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই অ্যানিস্টনের

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত